ইন্তিহান্স

ব্রবীআ্রনাথ ঠাকুর

বিশ্বভারতী গ্রল্থালক্ বক্ষিমচজ্্র চট্টোপাধ্যায় শ্রীটউ

শ্রপ্রবোধচন্দ্র সেন শ্রীপুলিনবিহারা সেন -কতক সংকলিত

প্রকাশ ১২ আবণ ১৩৬২

লে!ক শিক্ষা-গ্রন্থমাল।

প্রকাশক শ্রপুলিনবিহারী সেন বিশ্বভারতী ৬৩ দ্বাব্ুকানাথ ঠাকুর লেন। কলিকাতা মুদ্রক শ্রপ্রভাতচন্্র রায় শ্ীগৌরাঙ্গ প্রেস লিমিটেড চিপ্তামণি দাস লেন। কালকাত।

ম্২০১

ভারতবর্ষের ইতিহাস ভারতবর্ষে ইতিহাসের ধারা শিবাজী মারাঠা জাঁতি শিবাজী গুরু গোবিন্দসিংহ ভাঁরত-ইতি হাস-চর্চ]

পরিশিষ্ট

কাজের লোক কে

বীর শুরু

শিখস্বাধংনত।

ঝান্পীর রানী

পরিশিষ্ট

এঁতিহাসিক যৎকিঞ্চিত সিরাজদ্দৌল। : সিরাজদ্দৌলা :

এতিহাসিক চিত্র এতিহাসিক চিত্র : সুচনা এ্রস্থব-সমালোচনা : ভারতবর্ষে মুসলমান রাজত্বের ইতিবৃত্ত মুশিদাবাদ-কাহিনী

ভারতবর্ষের ইতিহাস ইতিহাসকথ।!

€৬ ৬১

ভারতবর্ষের ইতিহাস

ভারতবর্ষের ঘে ইতিহাস আমর! পড়ি এবং মুখস্থ করিয়! পরীক্ষা! দিই, তাহ! ভারতবর্ষের নিশীথকালের একট দু'স্বপ্নকাহিনী মাত্র। কোথা হইতে কাহার! আসিল, কাটাক|টি মারামারি পড়িয়|! গেল, বাপে-ছেলেনর ভাইয়ে-ভাইয়ে সিংহাসন লইয়] টানাটানি চলিতে লাগিল, এক দল যদি বাঁ যায় কোথ। হইতে আর-এক দল উঠিয়৷ পড়ে_- পাঠান মোগল পর,গিজ ফরাসী ইংরাজ সকলে মিলিয়! এই স্বপ্নকে উত্তরোন্তর জটিল করিয়। তুলিয়াছে।

কিন্তু এই রক্তবর্ণে রঞ্জিত পরিবওমান স্বপ্দৃশ্ঠপটের দ্বারা ভারতবর্ষকে আচ্ছন্ন করিয়! দেখিলে যথার্থ ভারতবর্ষকে দেখ! হয় না। ভারতবাসী কোথায়, এসকল ইতিহাস তাহার কোনো উত্তর দেয় না। যেন ভারতবাসী নাই, কেবল যাহার! কাটাকাটি খুনাখুনি করিয়াছে তাহারাই আছে।

তখনকার ছুদিনেও এই কাটাকাটি খুনাখুনিই যে ভারতবর্ষের প্রধানতম ব্যাপার, তাহা নহে ঝড়ের দিনে যে ঝড়ই সর্বপ্রধান ঘটনা, তাহ তাহার গর্জন সবেও স্বীকার করা যায় না। সেদিনও সেই পুলিসমাচ্ছন্ন আকাশের মধ্যে পল্লীর গৃহে গৃহে যে জন্ম মৃত্যু সখ ছুঃখের প্রবাহ চলিতে থাকে, তাহ! ঢাক1 পড়িলেও মানুষের পক্ষে তাহাই প্রধান। কিন্ত বিদেশী পথিকের কাছে এই ঝড়টাই প্রধান, এই ধূলিজালই তাহার চক্ষে আর-সমস্তই গ্রাস করে; কারণ, গে ঘরের ভিতরে নাই, মে ঘরের বাহিরে। সেইজন্য বিদেশীর ইতিহামে এই ধুলির কথা, ঝড়ের কথাই

ইতিহাস

পাই; ঘরের কথা কিছুমাত্র পাই না। সেই ইতিহাস পড়িলে মনে হয়, ভারতবর্ষ তখন ছিল না, কেবল মোগল-পাঠানের গর্জনমুখর বাত্যাবর্ত শুষ্ক পত্রের ধবজ] তুলিয়া উত্তর হইতে দক্ষিণে এবং পশ্চিম হইতে পূর্বে রিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতেছিল।

কিন্তু বিদেশ যখন ছিল দেশ তখনো! ছিল, নহিলে এই-সমস্ত উপদ্রবের মধ্যে কবীর নানক চৈতন্য তুকারাম ইহাদিগকে জন্ম দিল কে? তখন ঘে কেবল দিলি এবং আগ্র! ছিল তাহা! নহে, কাশী এবং নবদীপও ছিল। তখন প্রকৃত ভারতবর্ষের মধ্যে যে জীবনন্োত বহিতেছিল, যে চেষ্টার তরঙ্গ উঠিতেছিল, যে সামাজিক পরিবর্তন ঘটিতেছিল, তাহার বিবরণ ইতিহাসে পাওয়া যায় ন1।

কিন্তু বর্তমান পাঠযগ্রন্থের বহির্ভত সেই ভারতবর্ষের সঙ্গেই আমাদের যোগ। সেই যোগের বহুবর্ষকালব্যাপী এতিহাসিক স্তর বিলুপ্ত হইয়। গেলে আমাদের হৃদয় আশ্রয় পায় না। আমর] ভারতবর্ষের আগাছ।- পরগাছ। নহি, বু শত শতাব্দীর মধ্য দিয়! আমাদের শতসততআ্ব শিকড় ভারতবর্ষের মর্মস্থান অধিকার করিয়া আছে। কিন্ত ছুরদুষ্টক্রমে এমন ইতিহাস আমাদিগকে পড়িতে হয় যে, ঠিক সেই কথাটাই আমাদের ছেলের] ভূলিয়া যায়। মনে হয়, ভারতবর্ষের মধ্যে আমরা বেন কেহই না, আগন্তকবর্গ ঘেন সব।

নিজের দেশের সঙ্গে নিজের সম্বন্ধ এইরূপ অকিঞ্চিষকর বলিয়। জানিলে, কোথ] হইতে আমর! প্রাণ আকর্ষণ করিব। এরূপ অবস্থায় বিদেশকে স্বদেশের স্থানে বসাইতে আমাদের মনে দিধামাত্র হয় না, ভারতবর্ষের অগৌরবে আমাদের প্রাণান্তকর লজ্জাবোধ হইতে পারে ন]। আমরা অনায়াসেই বলিয়া থাকি, পূর্বে আমাদের কিছুই ছিল না এবং

ভারতবর্ষের ইতিহাস

এখন আমাদিগকে অশন-বসন আচার-ব্যবহার সমস্তই বিদেশীর কাছ হইতে ভিক্ষা করিয়া লইতে হইবে।

যে-সকল দেশ ভাগাবান্‌ তাহার] চিরন্তন স্বদেশকে দেশের ইতিহাসের মধ্যেই খুঁজিয়া পায়, বালককালে ইতিহাসই দেশের সহিত তাহাদের পরিচয়-সাধন করাইয়া দেয়। আমাদের ঠিক তাহার উলটা। দেশের ইতিহাসই আমাদের শ্বদেশকে আচ্ছন্ন করিয়৷ রাখিয়াছে। মামুদের আক্রমণ হইতে লও. কার্জনের সাআাজ্যগর্বোদ্গার-কাল পধন্ত বে-কিছু ইতিহাসকথা তাহ] ভারতবর্ষের পক্ষে বিচিত্র কুঙেলিকা, তাহ স্বদেশ সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টির সহায়ত করে না, দৃষ্টি আবৃত করে মাত্র। তাহা এমন স্থানে কৃত্রিম আলোক ফেলে যাহাতে আমাদের দেশের দিকটাই আমাদের চোখে অন্ধকার হইয়! যায়। সেই অন্ধকারের মধ্যে নবাবের বিলাস- শালার দীপালোকে নূর্তকীর মণিভূষণ জ্লিয়। উঠে; বাদশাহের স্বরাপাত্রের রক্তিম ফেনোচ্ছাস উন্মন্ততার জাগররক্ত দীপ্ত নেত্রের ন্যায় দেখ! দেয়। সেই অন্ধকারে আমাদের প্রাচীন দেবমন্দিররিকল মস্তক আবৃত করে, এবং সুলতান-প্রেরসী্দের শ্বেতমর্মররচিত কারুথচিত কবরচুড়া নক্ষত্রলোক চুম্বন করিতে উদ্যত হয়। সেই অন্ধকারের মধ্যে অশ্বের ক্ষুরধবশি, তস্তীর বৃংহিত, অক্ব্ের ঝন্ঝনা, হুদুরব্যাপী শিবিরের তরঙ্গিত পাওুরতা, কিংখাব- আস্তরণের স্বর্ন ট, মনজিদের ফেনবুদ্রুদাকীর পাষাণমণ্ডপ, খোঁজা প্রহরী- রক্ষিত প্রাসাদ-অন্তঃপুরে রহস্কনিকেতনের নিস্তন্ধ মৌন, এ-সমস্তই বিচিত্র শব্দে বর্ণে ভাবে যে প্রকাণ্ড ইন্ত্রজাল রচনা! করে, তাহাকে ভারতবর্ষের ইতিহাস বল্য়া লাভ কী? তাহা ভারতবর্ষের পুণ্যমন্ত্রে পুঁথিটিকে একটি অপরূপ আরব্য উপন্যাস দিয়! মুড়িয়া রাখিয়াছে ; সেই পুথিখানি কেহ খোলে না, সেই আরব্য উপন্তাসেরই প্রত্যেক ছত্র ছেলেরা

ইতিহাস

মুখস্থ করিরা লয়। তাহার পরে প্রলয়রাত্রে এই মোগলসাম্রাজ্য যুখন মমূর্য, তখন শ্মশানস্থলে দূরাগত গৃপ্রগণের পরস্পরের মধ্যে যে-সকল চাতুরী প্রবঞ্চন! হানাহানি পড়িয়া! গেল তাহাও কি ভারতবর্ষের ইতিবৃত্ত? এবং তাহার পর হইতে পাঁচ পাঁচ বংসরে বিভক্ত ছক-কাট1 শতরঞ্চের মতো ইংরাজশাসন, ইহার মধ্যে ভারতবর্ষ আরে! ক্ষুদ্র; বস্তত শতরঞ্চের সহিত ইহার প্রভেদ এই যে, ইহার ঘরগুলি কালোয় সাদায় সমান বিভক্ত নহে, ইহার পনেরে! আনাই সাদা আমরা পেটের অন্নের বিনিময়ে সুশাসন স্থবিচার সুশিক্ষা সমস্তই একটি বৃহৎ হোঁয়াইট্যাওয়ে-লেডল'র দৌকান হইতে কিনিয়া লইতেছি, আর-সমস্ত দৌকানপাট বন্ধ। এই কারখানাটির বিচার হইতে বাণিজ্য পর্যন্ত সমস্তই স্থ হইতে পারে, কিন্তু ইহার মধ্যে কেরানিশালার এক কোণে আমাদের ভারতবর্ষের স্থান অতি ষংলামান্ত

ইতিহাস সকল দেশে সমান হইবেই, কুসংস্কার বর্জন ন] করিলে নয়। যে ব্যক্তি রথচাইল্ডের জীবনী পড়িয়। পাকিয়া গেছে সে খৃস্টের জীবনীর বেলায় তীহার হিসাবের খাতাপত্র আপিসের ডায়ারি তলব করিতে পারে ; যদি সংগ্রহ করিতে ন। পারে, তবে তাহার অবজ্ঞা জন্মিবে এবং সে বলিবে, যাহার এক পয়সার সংগতি ছিল ন। তাহার আবার জীবনী কিসের? তেমান ভারতবর্ষের রাষ্ট্রীয় দফতর হইতে তাহার রাজবংশমালা জয়পরাজয়ের কাগজপত্র ন1 পাইলে ধাহার1 ভারতবর্ষের ইতিহাস সমন্ধে হতাশ্বাস হইয়া পড়েন এবং বলেন, যেখানে পলিটিক্স নাই সেখানে আবার হিস্টি, কিসের, তাহার! ধানের খেতে বেগুন খুজিতে যান এবং না পাইলে মনের ক্ষোভে ধানকে শশ্তের মধ্যেই গণ্য করেন না। সকল খেতের আবাদ এক নহে, ইহা! জানিয়। যে ব্যক্তি যথাস্থানে উপযুক্ত শস্তের প্রত্যাশ! করে সেই প্রাজ্ঞ।

ভারতবর্ষের ইতিহাস

যিশ্রুস্টের হিসাবের খাত। দেখিলে তাহার প্রতি অবজ্ঞ৷ জন্মিতে পারে, কিন্ত তাহার অন্য বিষয় সন্ধান করিলে খাতাপত্র সমস্ত নগণ্য হইয়া! যায়। তেমনি রাষ্রীয় ব্যাপারে ভারতবর্ষকে দীন বলির! জানিয়াও অন্য বিশেষ দিক হইতে সে দীনতাকে তুচ্ছ করিতে পারা যায়। ভারতবর্ষের সেই নিজের দিক হইতে ভারতবর্ষকে না দেখিয়া আমর! শিশুকাল হইতে তাহাকে খর্ব করিতেছি নিজে খর্ব হইতেছি। ইত্রাজের ছেলে জানে, তাহার বাপ-পিতামহ অনেক যুন্ধজয় দেশ-অধিকার বাণিজ্য-ব্যবসায় করিয়াছে; সেও নিজেকে রণগৌরব ধনগৌরব রাঙ্গযগৌরবের অধিকারী করিতে চায়। আমরা জানি, আমাদের পিতামহগণ দেশ-অধিকার বাণিজ্যবিস্তার করেন নাই। এইটে জানাইবার জন্যই ভারতবর্ষের ইতিহাস। তীহার। কী করিয়াছিলেন জানি না, স্থৃতরাং আমরা কী করিব তাহাও জানি নাঁ। স্থৃতরাং পরের নকল করিতে হয়। ইহার জন্ত কাহাকে দোষ দিব? ছেলেবেল| হইতে আমর] যে প্রণালীতে যে শিক্ষা পাই তাহাতে প্রতিদিন দেশের সহিত আমাদের বিচ্ছেদ ঘটিয়া, ক্রমে দেশের বিরুদ্ধে আমাদের বিজ্লোহভাব জন্মে।

আমাদের দেশের শিক্ষিত. লোক্রোও ক্ষণে ক্ষণে হতবুদ্ধির ন্যায় বলিয়! উঠেন, দেশ তুমি কাহাকে বল, আমাদের দেশের বিশেষ ভাবট! কী, তাহা কোথায় আছে, তাহ। কোথায় ছিল? প্রশ্ন করিয়া! ইহার উত্তর পাওয়া যায় না। কারণ, কথাটা] এত ু্ত্র, এত বৃহৎ যে, ইহা কেবলমাত্র যুক্তির ঘারা বোধগম্য নহে। ইংরাজ বল, ফরাসী বল, কোনো দেশের লোকই আপনার দেশীয় ভাবটি কী, দেশের মূল মর্মস্থানটি কোথায়, তাহা এক কথায় ব্যক্ত করিতে পারে না; তাহ! দেহস্থিত প্রাণের স্ায় প্রত্যক্ষ সত্য, অথচ প্রাণের ন্যায় সংজ্ঞ। ধারণার পক্ষে দুর্গম তাহা শিশুকাল

ইতিহাস

হইতে আমাদের জ্ঞানের ভিতর, আমাদের প্রেমের ভিতর, আমাদের কল্পনার ভিতর নান! অলক্ষ্য পথ দিয়া নানা আকারে প্রবেশ করে। সে তাহার বিচিত্র শক্তি দিয়া আমাদিগকে নিগুটভাবে গড়িয়া তোলে; আমাদের অতীতের সহিত বর্তমানের ব্যবধান ঘটিতে দেয় ন1; তাহাঁরই প্রসাদে আমরা বৃহৎ, আমর] বিচ্ছিন্ন নহি। এই বিচিত্র উদ্যমসম্পন্ন গুপ্ পুরাতনী শক্তিকে সংশয়ী জিজ্ঞান্থর কাছে আমর। সংজ্ঞার দ্বারা দুই-চার কথায় ব্যক্ত করিব কী করিয়|?

(ভারতবর্ষের প্রধান সার্থকত! কী, কথার স্পষ্ট উত্তর যদি কেহ' জিজ্ঞাসা করেন সে উত্তর আছে; ভারতবর্ষের ইতিহাস সেই উত্তরকেই সমর্থন করিবে ভারতবর্ষের চিরদিনই একমাত্র চেষ্টা দেখিতেছি, প্রভেদের মধ্যে এক্যস্থাপন করা, নান! পথকে একই লক্ষ্যের অভিমুখীন করিয়া দেওয়া এবং বহুর মধ্যে এককে নিঃসংশয়বূপে অন্তরতররূপে উপলব্ধি করা, বাহিরে যে-সকল পার্থক্য প্রতীয়মান হয় তাহাকে নষ্ট না করিয়া! তাহার ভিতরকার নিগুঢ় যোগকে অধিকার করা

এই এককে প্রত্যক্ষ করা এবং এক্যবিস্তারের চেষ্টা করা ভারতবর্ষের পক্ষে একাস্ত স্বাভাবিক। তাহার এই স্বভাবই তাহাকে চিরদিন রাষ্রগৌরবের প্রতি উদাসীন করিয়াছে। কারণ, রাষ্ট্রগৌরবের মূলে বিরোধের ভাব যাহার! পরকে একান্ত পর বলিয়া! সর্বাস্তঃকরণে অনুভব না করে, তাহার! রাষ্্রগৌরবলাভকে জীবনের চরম লক্ষ্য বলিয়া মনে করিতে পারে না পরের বিরুদ্ধে আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করিবার যে চেষ্টা তাহাই পোলিটিক্যাল উন্নতির ভিত্তি; এবং পরের শহিত আপনার সন্ন্ধবন্ধন নিজের ভিতরকার বিচিত্র বিভাগ বিরোধের মধ্যে সামপ্রস্য- স্থাপনের চেষ্টা, ইহাই ধর্ম নৈতিক সামাজিক উন্নতির ভিত্তি। যুরোগীয়

ভারতবর্ষের ইতিহাস

সভ্যতা! যে এঁক্যকে আশ্রয় করিয়াছে তাহা বিরোধমূলক ; ভারতব্ীয় সভ্যতা ঘে এঁক্যকে আশ্রয় করিয়াছে তাহা মিলনমূলক যুরোপীয় পোলিটিক্যাল এক্যের ভিতরে, যে বিরোধের ফাস রহিয়াছে তাহ! তাহাকে পরের বিরুদ্ধে টানিয়া রাখিতে পারে, কিন্ক তাহাকে নিজের মধ্যে সামগ্শ্য দিতে পারে না। এইজন্য তাহ! ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে, রাজায় প্রজায়, ধনীতে দরিদ্র, বিচ্ছেদ বিরোধকে সর্ধদ| জাগ্রত করিয়াই রাখিয়াছে। তাহার সকলে মিলিয়! যে নিজ নিজ নির্দিষ্ট অধিকারের দ্বারা সমগ্র সমাজকে বহন করিতেছে তাহ নয়, তাহার! পরস্পরের প্রতিকূল-_ যাহাতে কোনে। পক্ষের বলবৃদ্ধি না হয়, অপর পক্ষের ইহাই প্রাণপণ সতর্ক চেষ্ট।। কিন্তু সকলে মিলিয়| যেখানে ঠেলাঠেলি করিতেছে সেখানে বলের সামঞ্স্ত হইতে পারে ন।; সেখানে কালক্রমে জনসংখ্যা যোগ্যতার অপেক্ষা বড়ে। হইয়া উঠে, উদ্যম গুণের অপেক্ষ। শ্রেষ্ঠত। লাভ করে এবং বাণিজ্যের ধনসংহতি গৃহস্থের ধনভাগ্ারগুলিকে অভিভূত করিয়! ফেলে ; এইরূপে সমাজের সামঞ্তম্ত নষ্ট হইয়া! যায় এবং এই-সকল বিসদৃশ বিরোধী অঙ্গগুলিকে কোনোমতে জোড়াতাড়। দিয়] রাখিবার জন্য গবর্মেন্ট কেবলই আইনের পর আইন স্টি করিতে থাকে। ইহ! অবশ্স্তাবী কারণ, বিরোধ যাহার বীজ বিরোধই তাহার শশ্ত ; মাঝখানে যে পরিপুষ্ঠ পল্লবিত ব্যাপারটিকে দেখিতে পাওয়। যায় তাহ। এই বিরোধ- শন্তেরই প্রাণবান্‌ বলবান্‌ বৃক্ষ

ভারতবর্ষ বিসদৃশকে সম্বন্ববন্ধনে বীধিবার চেষ্টা করিয়াছে যেখানে যথার্থ পার্থক্য আছে সেখানে সেই পার্থকাকে যথাযোগ্য স্থানে বিন্যস্ত করিয়। সংযত করিয়া, তবে তাহাকে একাদান করা সম্ভব। সকলেই এক হইল বলিয়। আইন করিলেই এক হয় না। যাহারা এক হইবার

ইতিহাস

নহে তাহাদের মধ্যে সম্বন্বস্থাপনের উপায় তাহাদিগকে পৃথক্‌ অধিকাট্রের মধ্যে বিভক্ত করিয়া! দেওয়]। পৃথকৃকে বলপূর্বক এক করিলে তাহার! একদিন বলপূর্বক বিচ্ছিন্ন হইয়া যায়, সেই বিচ্ছেদের সময় প্রলয় ঘটে ভারতবর্ষ মিলনসাধনের এই রহস্য জানিত। ফরাসীবিদ্রোহ গায়ের জোরে মানবের সমস্ত পার্থক্য রক্ত দিয়] মুছিয়! ফেলিবে, এমন স্পর্ধা করিয়াছিল) কিন্তু ফল উল্ট1 হইয়াছে, যুরোপে রাজশক্তি প্রজাশক্তি ধনশক্তি জনশক্তি ক্রমেই অত্যন্ত বিরুদ্ধ হইয়! উঠিতেছে। ভারতবর্ষের লক্ষ্য ছিল সকলকে এঁক্স্থত্রে আবদ্ধ করা, কিন্তু তাহার উপায় ছিল স্বতত্ত্র। ভারতবর্ষ সমাজের সমস্ত প্রতিযোগী বিরোধী শক্তিকে সীমাবদ্ধ বিভক্ত করিয়া সমাজকলেবরকে এক এবং বিচিত্র কর্মের উপযোগী করিয়াছিল; নিজ নিজ অধিকারকে ক্রমাগতই লঙ্ঘন করিবার চেষ্টা করিয়! বিরোধ- বিশৃঙ্খল! জাগ্রত করিয়৷ রাখিতে দেয় নাই। পরম্পর প্রতিযোগিতার পথেই সমাজের কল শক্তিকে অহরহ সংগ্রামপরায়ণ করিয়! তুলিয়া ধর্ম কর্ম গৃহ সমস্তকেই আবতিত আবিল উদ্ভ্রান্ত করিয়া রাখে নাই। এক্যনির্ণয় মিলনসাধন এবং শাস্তি স্থিতির মধ্যে পরিপূর্ণ পরিণতি মুক্তি -লাভের অবকাশ, ইহাই ভারতবর্ষের লক্ষ্য ছিল।

বিধাতা ভারতবর্ষের মধ্যে বিচিত্র জাতিকে টানিয়া আনিয়াছেন। ভারতবর্ষায় আর্ধ যে শক্তি পাইয়াছে সেই শক্তি চর্চা করিবার অবসর ভারতবর্ষ অতি প্রাচীন কাল হইতেই পাইয়াছে। এক্যমূলক যে সভ্যতা মানবজাতির চরম সভ্যতা, ভারতবর্ষ চিরদিন ধরিয়! বিচিত্র উপকরণে তাহার ভিত্তি নির্মাণ করিয়! আসিয়াছে পর বলিয়। সে কাহাকেও দূর করে নাই, অনার্য বলিয়া কাহাকেও বহিষ্কৃত করে নাই, অসংগত বলিয়৷ সে কিছুকেই উপহাস করে নাই। ভারতবর্ষ সমস্তই গ্রহণ

ভারতবর্ষের ইতিহাস

করিয়াছে, সমস্তই স্বীকার করিয়াছে এত গ্রহণ করিয়াও আত্মরক্ষা করিতে হইলে এই পুপঞ্ভীভূত সামগ্রীর মধ্যে নিজের ব্যবস্থা, নিজের শৃঙ্খল] স্থাপন করিতে হয়; পশুযুদ্ভূমিতে পশুদলের মতে! ইহাদিগকে পরস্পরের উপর ছাঁড়ির! দিলে চলে 'না। ইহাদিগকে বিহিত নিয়মে বিভক্ত স্বতন্ত্র করিয়া একটি মূলভাবের দ্বারা বদ্ধ করিতে হয়। উপকরণ যেখানকার হউক, সেই শৃঙ্খল! ভারতবর্ষের, নেই মূলভাবটি ভারতবর্ষের ; সুরোপ পরকে দূর করিয়া, উৎপাদন করিয়া, সমাজকে নিরাপদ রাখিতে চায়__ আমেরিক1 অস্ট্রেলিয়! নিরুজিলাগু. কেপ্কলনিতে তাহার পরিচয় আমর] আজ পধস্ত পাইতেছি। ইহার কারণ, তাহার নিজের সমাজের মধ্যে একটি স্থবিহিত শৃঙ্খলার ভাব নাই; তাহার নিজেরই ভিন্ন সম্প্রদায়কে সে যখোচিত স্থান দিতে পারে নাই এবং যাহারা সমাজের অঙ্গ তাহাদের অনেকেই সমাজের বোঝার মতে। হইয়াছে; এরূপ স্থলে বাহিরের লোককে সে সমাজ নিজের কোন্থানে আশ্রয় দিবে? আত্মীয়ই যেখানে উপদ্রব করিতে উদ্যত সেখানে বাহিরের লোককে কেহ স্থান দিতে চায় না। যে সমাজে শৃঙ্খল! আছে, এঁক্যের বিধান আছে, সকলের স্বতন্ত্র স্থান অধিকার আছে, সেই সমাজেই পরকে আপন করিয়া! লওয়া সহজ। হয় পরকে কাটিয়া! মারিয়৷ খেদাইয়! নিজের সমাজ সভ্যতাকে রক্ষা করা, নয় পরকে নিজের বিধানে সংযত করিয়! হুবিহিত শৃঙ্খলার মধ্যে স্থান করিয়া দেওয়া, এই ছুই রকম হইতে পারে। যুরোপ প্রথম প্রণালীটি অবলম্বন করিয়া! সমস্ত বিশ্বের সঙ্গে বিরোধ উমুক্ত করিয়। রাখিয়াছে, ভারতবর্ষ দ্বিতীয় প্রণালী অবলম্বন করিয়া সকলকেই ক্রমে ক্রমে ধীরে ধীরে আপনার করিয়া লইবার চেষ্টা করিয়াছে যদি ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা থাকে, যদি ধর্মকেই মানবসভ্যতার চরম আদর্শ

টা

ইতিহাস

বলিয়া স্থির কর! যায়, তবে ভারতবর্ষের প্রণালীকেই শ্রেষ্ঠতা দ্দিতে হইবে।

পরকে আপন করিতে প্রতিভার প্রয়োজন অন্ের মধ্যে প্রবেশ করিবার শক্তি এবং অন্তকে সম্পূর্ন আপনার করিয়া লইবার ইন্ত্রজাল, ইহাই প্রতিভার নিজন্ব ভারতবর্ষের মধ্যে সেই প্রতিভা আমর। দেখিতে পাই। ভারতবর্ষ অপংকোচে অন্যের মধ্যে প্রবেশ করিয়াছে এবং অনায়াসে অন্যের সামগ্রী নিজের করিয়। লইয়াছে। বিদেশী যাহীকে পৌন্তুলিকত| বলে ভারতবর্ষ তাহাকে দেখিয়! ভীত হয় নাই, নাসা কুঞ্চিত করে নাই। ভারতবর্ষ পুিন্দ শবর ব্যাধ প্রভৃতিদের নিকট হইতে বাঁভৎস সামগ্রী গ্রহণ করিয়। তাহার মধ্যে নিজের ভাব বিস্তার করিয়াছে, তাহার মধ্য দিয়াও নিজের আধ্যাত্মিকতাকে অভিব্যক্ত করিয়াছে। ভারতবর্ধ কিছুই ত্যাগ করে নাই এবং গ্রহণ করিয়া! সকলই আপনার করিয়াছে।

এই এক্যবিস্তার শৃঙ্খলাস্থাপন কেবল সমাজব্যবস্থায় নহে, ধর্মনীতিতেও দেখি। গীতায় জ্ঞান প্রেম কর্মের মধ্যে যে সম্পূর্ন সামগ্রন্স্থাপনের চেষ্টা দেখি তাহা বিশেষন্ধপে ভারতবর্ষের যুরোপে রিলিজন বলিয় যে শব আছে ভারতবর্ষীপ্ন ভাষার তাহার অঙ্থবাদ অসম্ভব; কারণ ভারতবর্ষ ধর্মের মধ্যে মানপিক বিচ্ছেদ ঘটিতে বাধ! দিয়াছে_- আমাদের বুদ্ধি বিশ্বান আচরণ, আমাদের ইহকাল পরকাল, সমস্ত জড়াইয়াই ধর্ম। ভারতবর্ষ তাহাকে খণ্ডিত কারয়। কোনোটাকে পোশাকি এবং কোনোটাকে আটপৌরে করির| রাখে নাই। হাতের জীবন, পারের জীবন, মাথার জীবন, উদরের জীবন যেমন আলাদ। নয়, বিশ্বাসের ধর্ম, আচরণের ধর্ম, রবিবারের ধর্ম, অপর ছয় দিনের ধর্ম, গির্জার

১০

ভারতবর্ষের ইতিহাস

ধর্ম এবং গৃহের ধর্মে ভারতবর্ষ ভেদ ঘটাইয়! দেয় নাই। ভারতবর্ষের ধর্ম সমন্ত সমাজেরই ধর্ম; তাহার মূল মাটির ভিতরে এবং মাথা আকাশের মধ্যে; তাহার মূলকে স্বতন্ত্র মাথাকে স্বতন্ত্র করিয়! ভারতবর্ষ দেখে নাই; ধর্মকে ভারতবর্ষ ছ্যুলোকভূলোকব্যাপী, মানবের সমস্ত জীবন- ব্যাপী একটি বৃহৎ বনম্পতিরূপে দেখিয়াছে।

পৃথিবীর সভ্যসমাজের মধ্যে ভারতবর্ষ নানাকে এক করিবার আপদর্শরূপে বিরাগ করিতেছে, তাহার ইতিহাস হইতে ইহাই প্রতিপন্ন হইবে। এককে বিশ্বের মধ্যে নিজের আত্মার মধ্যে অনুভব করিয়! সেই এককে বিচিত্রের মধ্যে স্থাপন করা, জ্ঞানের দ্বার আবিষ্কার কর।, কর্মের দ্বার! প্রতিষ্ঠিত কর। প্রেমের দ্বার উপলব্ধি কর! এবং জীবনের দ্বারা প্রচার করা-- নান! বাধাবিপত্তি ছূর্গতিহ্থগতির মধ্যে ভারতবর্ষ ইহাই করিতেছে ইতিহাসের ভিতর দিয় যখন ভারতের সেই চিরস্তন ভাবট অনুভব করিব তথন আমাদের বঙমানের সহিত অতীতের বিচ্ছেদ বিলুপ্ত হইবে

১১

ভারতবর্ষে ইতিহাসের ধারা

সমস্ত বিশ্বব্যাপারের মধ্যেই একট। নিশ্বাস প্রশ্বাস, নিমেষ উন্মেষ, নিদ্রা জাগরণের পালা আছে; একবার ভিতরের দিকে একবার বাহিরের দ্রিকে নামাঁউঠার ছন্দ নিয়তই চলিতেছে থাম এবং চলার অবিরত যোগেই বিশ্বের গতিক্রিয়া সম্পার্দিত। বিজ্ঞান বলে, বস্তমাত্রই সছিত্র, অর্থাৎ “আছে এবং "নাই" এই দুইয়ের সমষ্টিতেই তাহার অস্তিত্ব এই আলোক অন্ধকার, প্রকাশ অপ্রকাশ এমনি ছন্দে ছন্দে যতি রাখিয়া চলিতেছে যে, তাহাতে স্থষ্টিকে বিচ্ছিন্ন করিতেছে না, তাহাকে তালে তালে অগ্রসর করিতেছে

ঘড়ির ফলকটার উপরে মিনিটের কীাট1 ঘণ্টার কাটার দিকে তাকাইলে মনে হয় তাহা অবাধে একটান। চলিয়াছে কিন্বা চলিতেছেই না। কিন্তু সেকেণ্ডের কাটা লক্ষ্য করিলেই দেখা যায় তাহা টিকৃটিক্‌ করিয়া লাফ দিয়া দিয়! চলিতেছে দৌলনদগুটা যে একবার বামে খামিয়া দক্ষিণে বায়, আবার দক্ষিণে থামিয়া বামে আসে, তাহা ওই সেকেণ্ডের তালে লয়েই ধর] পড়ে বিশ্বব্যাপারে আমর! ওই মিনিটের কাটা, ঘড়ির কাটাটাকেই দেখি, কিন্তু যদি তাহার অগুপরিমাঁণ কাঁলের সেকেণ্ডের কাটাটাকে দেখিতে পাইতাম তবে দেখিতাম বিশ্ব নিমেষে নিমেষে থামিতেছে চলিতেছে-_ তাহার একটান1| তানের মধ্যে পলকে পলকে লয় পড়িতেছে। স্থির ছন্বদোলকটির এক প্রান্তে হা” অন্ত প্রান্তে 'ন1, এক প্রান্তে এক অন্ত প্রান্তে ছুই, এক প্রান্তে আকর্ষণ অন্ত প্রান্তে বিকর্ষণ, এক প্রান্তে কেন্দ্রের অভিমুখী অন্য প্রান্তে কেন্দ্রের প্রতিমুখী শক্তি। তর্কশাস্থ্রে এই বিরোধকে মিলাইবার জন্য আমর1 কত মতবাদের অসাধ্য ব্যায়ামে প্রবৃত্ত, কিন্তু হ্ৃষ্টিশাস্থ্রে ইহারা সহজেই মিলিত হ্ইয়। বিশ্বরহস্তকে অনির্বচনীয় করিয়া! তুলিতেছে।

১৭

ভারতবর্ষে ইতিহাসের ধারা

শক্তি জিনিসট1 যদি একলা থাকে তবে সে নিজের একঝোক1 জোরে কেবল একট দীর্ঘ লাইন ধরিয়া ভীষণ উদ্ধতবেগে সোজা চলিতে থাকে» ডাইনে বাঁয়ে জ্রক্ষেপমাত্র করে ন1; কিন্তু শক্তিকে জগতে একাধিপত্য দেওয়া হয় নাই বলিয়াই, বরাবর তাহাকে জুড়িতে জোড়া হইয়াছে বলিয়াই, ছুইয়ের উলট1 টানে বিশ্বের সকল জিনিসই নম্র হইয়া, গোল হইয়া, স্থসম্পূর্ণ হইতে পারিয়াছে। সোজা লাইনের সমাপ্তিহীনতা, সোজ। লাইনের অতি তীব্র তীক্ষ রুশত বিশ্বপ্রকৃতির নহে); গোল আকারের সুন্দর পরিপুষ্ট পরিসমাপ্তিই বিশ্বের স্বভাবগত। এই এক শক্তির একাগ্র সোজ রেখায় স্ষ্টি হয় না তাহা কেবল ভেদ করিতে পারে, কিন্তু কোনো-কিছুকেই ধরিতে পারে না, বেড়িতে পারে না, তাহা একেবারে রিক্ত, তাহা প্রলয়েরই রেখা; রুদ্রের প্রলয়পিনাকের মতে। তাহাতে কেবল একই স্থুর, তাহাতে সংগীত নাই; এইজন্য শক্তি একক হ্ইয়! উঠিলেই তাহ! বিনাশের কারণ হইয়া উঠে। ছুই শক্তির যোগেই বিশ্বের যত-কিছু ছন্দ। আমাদের এই জগংকাব্য মিত্রাক্ষর__ পদে পদে তাহার জুড়ি-জুড়ি মিল।

বিশ্বপ্রকৃতির মধ্যে এই ছন্দটি যত স্পষ্ট এবং বাঁধাহীন, মানবপ্ররুতির মধ্যে তেমন নহে সেখানেও এই সংকোচন প্রসারণের তব্টি আছে _-কিন্তু তাহার সামগ্রশ্তটিকে আমরা সহজে রাখিতে পারি না। বিশ্বের গানে তালটি সহঙ্জ, মানুষের গানে তালটি বহু সাধনার সামগ্রী। আমর! অনেক সময়ে দ্বন্দের এক প্রীস্তে আসিয়! এমনি ঝুকিয়। পড়ি যে অন্ত প্রান্তে ফিরিতে বিলম্ব হয়; তখন তাল কাটিয়া যায়, প্রাণপণে ক্রি সারিয়া লইতে গলদ্ঘর্ম হইয়! উঠিতে হয়। এক দিকে আত্ম এক দিকে পর, এক দ্বিকে অর্জন এক দিকে বর্জন, এক দিকে সংযম এক দিকে স্বাধীনতা, এক দিকে

১৩

ইতিহাস

আচার এক দিকে বিচার মানুষকে টানিতেছে ; এই ছুই টানার +তাল বাঁচাইয়া সমে আসিয়া পৌছিতে শেখাই মন্যযত্ের শিক্ষা; এই তাল- অভ্যাসের ইতিহাসই মানুষের ইতিহাস ভারতবর্ষে সেই তালের সাধনার. ছবিটিকে স্পষ্ট করিয়! দেখিবার স্থুযোগ আছে।

গ্রীস রোম ব্যাবিলন প্রভৃতি সমস্ত পুরাতন মহাসভ্যতার গোড়াতেই একট। জাতিসংঘাত আছে। এই জাতিসংঘাতের বেগেই মানুষ পরের ভিতর দিয়া আপনার ভিতরে পুরামাত্রায় জাগিয়া উঠে। এইরূপ সংঘাতেই মানুষ বুটিক হইতে যৌগিক বিকাশ লাভ করে এবং তাহাকেই বলে সভ্যতা]

পর্দা উঠিবামাত্র ভারতবর্ষের ইতিহাসের প্রথমাঙ্কেই আমরা আধ- অনার্ধের প্রচণ্ড জাতিসংঘাত দেখিতে পাই। এই সংঘাতের প্রথম প্রবল বেগে অনার্ধের প্রতি আর্ধের যে বিদ্বেষ জাগিয়াছিল তাহারই ধাক্কায় আর্ধের] নিজের মধ্যে নিজে সংহত হইতে পারিল।

এইরূপ সংহত হইবার অপেক্ষা ছিল। কারণ, ভারতবর্ষে আর্ষের! কালে কালে দলে দলে প্রবেশ করিতেছিলেন। তীহাদের সকলেরই গোত্র দেবত1 মন্ত্র যে একই ছিল তাহা নহে। বাহির হইতে যদি একট] প্রবল আঘাত তাহাদিগকে বাধ] ন1 দিত তবে এই আর্-উপনিবেশ দেখিতে দেখিতে নানা শাখা-প্রতিশাখায় সম্পূর্ণ বিভক্ত হইয়া বিক্ষিপ্ত হইয়া] যাইত। তাহারা আপনাদিগকে এক বলিয়! জানিতে পারিত ন]। আপনাদের সামান্য বাহ্‌ ভেদপগুলিকেই বড়ো করিয়া দেখিত। পরের সঙ্গে লড়াই করিতে গিয়াই আধের! আপনাকে আপন বলিয়া উপলব্ধি করিলেন।

বিশ্বের সকল পদার্থের মতো সংঘাত পদার্থেরও ছুই প্রান্ত আছে--

১৪

ভারতবর্ষে ইতিহাসের ধারা

তাহার এক প্রান্তে বিচ্ছেদ, আর-এক প্রান্তে মিলন তাই এই সংঘাতের প্রথম অবস্থায় স্বর্ণের ভেদরক্ষার দিকে আর্দের যে আত্মসংকোচন জন্মিয়াছিল সেইখানেই ইতিহাস চিরকাল থামিয়৷ থাকিতে পারে না। বিশ্বছন্দ-তন্বের নিয়মে আত্মপ্রসারণের পথে মিলনের দিকে ইতিহাসকে একদিন ফিরিতে হইয়াছিল

অনার্দের সহিত বিরোধের দিনে আধসমাজে খাহার1 বীর ছিলেন, জানি না তীহার1 কে। তীহাদের চরিতকাহিনী ভারতবর্ষের মহাকাব্য কই তেমন করিয়। তো বণিত হয় নাই। হয়তো জনমেজয়ের সর্পসত্রের কথার মধ্যে একট! প্রচণ্ড প্রাচীন যুদ্ধইতিহাস প্রচ্ছন্ন আছে। পুরুষান্ুক্রমিক শত্রুতার প্রতিহিংসা সাধনের জন্য সর্প-উপাসক অনা নাগজাতিকে একেবারে ধ্বংস করিবার জন্ত জনমেজয় নিদারুণ উদ্যোগ করিয়াছিলেন এই পুরাণকথায় তাহ! ব্যক্ত হইয়াছে বটে, তবু এই রাজ! ইতিহাসে তো কোনে! বিশেষ গৌরব লাভ করেন নাই

কিন্তু অনাধদের সহিত আর্দের মিলন ঘটাইবার অধ্যবসায়ে যিনি সফলত1 লাভ করিয়াছিলেন তিনি আজ পধস্ত আমাদের দেশে অবতার বলিয়! পূজা পাইয়! আসিতেছেন।.

আর্ধ-অনার্ষের যোগবন্ধন তখনকার কালের যে একটি মহাউদ্যোগের অঙ্গ, রামায়ণ-কাহিনীতে সেই উদ্যোগের নেতারূপে আমর! তিনজন ক্ষত্রিয়ের নাম দেখিতে পাই জনক বিশ্বামিত্র রামচন্দ্র এই তিন জনের মধ্যে কেবলমাত্র একটা ব্যক্তিগত যোগ নহে, একটা এক অভিপ্রায়ের যোগ দেখা! যায়। বুঝিতে পারি রামচন্দ্রের জীবনের কাজে বিশ্বামিত্র দীক্ষাদাতাঁ_ এবং বিশ্বামিত্র রামচন্দ্রের সম্মুথে যে লক্ষ্যস্থাপন করিয়াছিলেন তাহা তিনি জনক-রাজার নিকট হইতে লাভ করিয়াছিলেন

১৫

ইতিহাস

এই জনক বিশ্বামিত্র রামচন্দ্র যে পরস্পরের সমসাময়িক ছিলেন সে কথা হয়তো বা কালগত ইতিহাসের দিক দিয়া সত্য নহে, কিন্তু ভাবগত ইতিহাসের দিক দিয়া এই তিন ব্যক্তি পরম্পরের নিকটবতী | আকাশের যুগ্মনক্ষত্রগুলিকে কাছে হইতে দেখিতে গেলে মাঝখানকার ব্যবধানে তাহাদিগকে বিচ্ছিন্ন করিয়। দেখার__ তাহার। যে জোড়। তাহ? দূর হইতে সহজেই দেখ! যায়। জাতীয় ইতিহাসের আকাশেও এইরূপ অনেক জোড়া নক্ষত্র আছে, কালের ব্যবধানের দিক দিয়। দেখিতে গেলে তাহাদের এঁক্য হারাইয়! যায়__ কিন্তু আভ্যন্তরিক যোগের আকর্ষণে তাহার! এক হুইয়! মিলিয়াছে। জনক বিশ্বামিত্র রামচন্দ্রের যোগও যদি সেইরূপ কালের যোগ ন] হইয়া ভাবের যোগ হয় তবে তাহ। আশ্চধষ নহে

এইরূপ ভাবগত ইতিহাসে ব্যক্তি ক্রমে ভাবের স্থান অধিকার করে। ব্রিটিশ পুরাণ-কথায় যেমন রাজা! আর্ধার। তিনি জাতির মনে ব্যক্তিনূপ ত্যাগ করিয়া ভাবরূপ ধারণ করিয়াছেন জনক বিশ্বামিত্র সেইরূপ আর্ধ-ইতিহাস-গত একটি বিশেষ ভাবের রূপক হুইয়| উদ্িয়াছেন। রাজা আর্থার মধ্যযুগের যুরোপীয় ক্ষত্রিয়দের একটি বিশেষ খুস্টীয় আদর্শ-দবারা অনুপ্রাণিত হইয়া তাহাকেই জয়যুক্ত করিবার জন্য বিরুদ্ধ পক্ষের সহিত লড়াই করিতেছেন এই যেমন দেখি, তেমনি ভারতে একদিন ক্ষত্রিয়দল ধর্মে এবং আচরণে একটি বিশেষ উচ্চ আদর্শকে উদ্ভাবিত করিয়] তুলিয়! বিরোধীদলের সহিত দীর্ঘকাল ঘোরতর সংগ্রামে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন ভারতীয় ইতিহাসে তাহার আভাস পাওয়া যায়। এই সংগ্রামে ব্রাহ্মণেরাই যে তাহাদের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিলেন তাহারও প্রমাণ আছে।

তখনকার কালের নবক্ষত্রিযমলের এই ভাবট1 কী, তাহার পুরাপুরি সমস্তট1 জানা এখন অসম্ভব, কেননা বিপ্লবের জয়পরাজয়ের পরে আবার

১৬

ভারতবর্ষে ইতিহাসের ধারা

যখন সকল পক্ষের মধ্যে একট1 রফা হইয়! গেল তখন সমাজের মধ্যে বিরোধের বিষয়গুলি আর পৃথক হইয়! রহিল না এবং ক্ষতচিহৃগুলি যত শীঘ্র জোড়া লাগিতে পারে তাহারই চেষ্টা চলিতে লাগিল। তখন নৃতন দলের আদর্শকে ব্রাঙ্মণের! স্বীকার করিয়া" লইয়া পুনরায় আপন স্থান গ্রহণ করিলেন

তথাপি ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়ের মধ্যে আদর্শের প্রভেদ কোন্‌ পথ দিয়! কী আকারে ঘটিরাছিল তাহার একট! আভাপ পাওয়] যায়। যজ্জবিধিগুলি কৌলিকবিদ্ঠ।। এক-এক কুলের আধদলের মধ্যে এক-একটি কুলপতিকে আশ্রয় করিয়া বিশেষ বিশেষ স্তবমন্ত্র দেবতার্দিগকে সন্তষ্ট করিবার বিধিবিধান রক্ষিত ছিল। যাহারা এই-সমস্ত ভালে! করিয়া জানিতেন পৌরোহিত্যে তাহাদেরই বিশেষ যশ ধন -লাভের সম্ভাবন। ছিল স্তরাং এই ধর্মকার্ধ একট] বৃত্তি হইয়। উঠিয়াছিল এবং কপণের ধনের মতো! ইহ] সকলের পক্ষে স্থগম ছিল ন1। এই-সমস্ত মন্ত্র যজ্ঞানুষ্ঠানের বিচিত্র বিধি বিশেষরূপে আয়ত্ত তাহ প্রয়োগ করিবার ভার স্বভাবতই একটি বিশেষ শ্রেণীর উপর ছিল। আত্মরক্ষা যুদ্ধবিগ্রহ দেশ-অধিকারে ধাহার্দিগকে নিয়ত নিযুক্ত থাকিতে হইবে তাহারা এই কাজের ভার লইতে পারেন ন।, কারণ, ইহা! দীর্ঘকাল অধ্যয়ন অভ্যাস সাপেক্ষ কোনোৌ-এক শ্রেণী এই-সমস্তকে রক্ষা! করিবার ভার যদি না লন তবে কৌলিকমুত্র ছিন্ন হ্ইয়! যায় এবং পিতৃপিতামহদের সহিত যোগধারা নষ্ট হইয়! সমাজ শৃঙ্খলাভ্র্ট হইয়! পড়ে এই কারণে যখন সমাজের এক শ্রেণী দ্ধ প্রভৃতি উপলক্ষ্যে নব নঘ অধ্যবসায়ে নিযুক্ত তখন আর-এক শ্রেণী বংশের প্রাচীন ধর্ম এবং সমস্ত স্মরণীয় ব্যাপারকে বিশ্তদ্ধ অবিচ্ছিন্ন করিয়া রাখিবার জন্যই বিশেষভাবে প্রবৃত্ত হইলেন

১৭

ইতিহাস

কিন্ত যখনই বিশেষ শ্রেণীর উপর এইরূপ কাজের ভার পড়ে তখনই সমস্ত জাতির চিত্তবিকাশের সঙ্গে তাহার ধর্মবিকাশের সমতানতায় একট" বাধ! পড়িয়া! যায়। কারণ, সেই বিশেষ শ্রেণী ধর্মবিধিগুলিকে বাঁধের মতো! এক জায়গায় দু করিয়া বাঁধিয়া রাখেন, সুতরাং সমস্ত জাতির মনের অগ্রসরগতির সঙ্গে তাহার সামঞ্জস্য থাকে না। ক্রমে ক্রমে অলক্ষ্য- ভাবে এই সামঞ্জশ্ত এতদূর পর্যস্ত নষ্ট হইয়া! যায় যে, অবশেষে একট। বিপ্লব ব্যতীত সমন্বয়সাধনের উপায় পাওয়া যায় না। এইবরূপে একদা ব্রাহ্মণের যখন আর্ধদের চিরাগত প্রথ1 পুজাপদ্ধতিকে আগলাইয়া বসিয়া ছিলেন, যখন সেই-সমস্ত ক্রিয়াকাণ্ডকে ক্রমশই তীহার। কেবল জটিল বিস্তারিত করিয়া তুলিতেছিলেন, তখন ক্ষত্রিয়ের! সর্বপ্রকার প্রাকৃতিক মানিক বাধার সঙ্গে সংগ্রাম করিতে করিতে জয়োল্লাসে অগ্রমর হইয়া চলিতেছিলেন। এইজন্যই তখন আরধদের মধ্যে প্রধান মিলনের ক্ষেত্র ছিল ক্ষত্রিয়সমাজ। শক্রর সহিত যুদ্ধে যাহারা এক হইয়া প্রাণ দেয় তাহাদের মতো! এমন মিলন আর কাহারও হইতে পারে না। মৃত্যুর সম্মুখে যাহারা একত্র হয় তাহার] পরস্পরের অনৈক্যকে বড়ো করিয়! দেখিতে পারে না। অপর পক্ষে সুক্াতিসুক্ম্রভাবে মন্ত্র দেবতা যজ্ঞকার্ধের স্বাতত্ত্য -রক্ষার ব্যবসায় ক্ষতিয়ের নহে, তাহারা মানবের বন্ধুরদুর্গম জীবনক্ষেত্রে নব নব ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্যে মানুষ, এই কারণে প্রথামূলক বাহ্ানুষ্ঠানগত ভেদদের বোধটা! ক্ষত্রিয়ের মনে তেমন হুদৃঢ় হইয়া উঠিতে পারে না অতএব আত্মরক্ষ/ উপনিবেশ- বিস্তারের উপলক্ষ্যে সমস্ত আর্ধদলের মধ্যকার এক্যন্থত্রটি ছিল ক্ষত্রিয়দের হাতে এইরূপে একদিন ক্ষত্রিয়েরাই সমস্ত অনৈক্যের অভ্যন্তরে একই যে সত্যপদার্থ, ইহ1 অনুভব করিয়াছিলেন এইজন্য ্রহ্মবিদ্! বিশেষভাবে ক্ষত্রিয়ের বিদ্যা হইয়া উঠিয়া খক্‌ যজুঃ সাম প্রভৃতিকে অপরাবিষ্াা বলিয়া

১৮

ভারতবর্ষে ইতিহাসের ধারা

ঘোষণ] করিয়াছে এবং ব্রাক্ষণকতৃক সযত্বে রক্ষিত হোম যাগ যজ্ঞ প্রভৃতি কর্মকাগ্ডকে নিক্ষল বলিয়া! পরিত্যাগ করিতে চাহিয়াছে। ইহ! হইতে স্পষ্টই দেখা যায়, একদিন পুরাতনের সহিত নৃতনের বিরোধ বাধিরাছিল।

সমাজে যখন একট] বড়ে! ভাব সংক্রামকরূপে দেখা দেয় তখন তাহা একান্তভাবে কোনো গণ্ডিকে মানে নাঁ। আর্জাতির নিজেদের মধ্যে একট] এক্যবোধ যতই পরিস্ফুট হইয়! উঠ্ভিল ততই সমাজের সর্বত্রই এই অন্থভূতি সঞ্চারিত হইতে লাগিল যে, দেবতার! নামে নানা, কিন্তু সত্যে এক; অতএব বিশেষ দেবতাকে বিশেষ স্তব বিশেষ বিধিতে সন্ত করিয়া! বিশেষ ফল পাওয়া যায় এই ধারণ] সমাজের সর্বত্রই ক্ষয় হইয়! দলভেদে উপাসনাভেদ স্বভাবতই ঘুচিবার চেষ্টা করিল। তথাপি ইহা! সত্য যে বিশেষভাবে ক্ষত্রিয়ের মধ্যেই ব্রহ্মবিদ্যা অন্কুল আশ্রয় লাভ করিয়াছিল এবং সেইজ্যই ব্রহ্মবিদ্য! রাজবিদ্যা নাম গ্রহণ করিয়াছে

ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয়ের মধ্যে এই প্রভেদটি সামান্ত নহে। ইহ1 একেবারে বাহিরের দিক অন্তরের দিকের ভেদ। বাহিরের দিকে যখন আমরা দৃষ্টি রাখি তখনই আমর1 কেবলই বুকে বিচিত্রকে দেখিতে পাই, অন্তরে যখন দেখি তখনই একের দেখা পাওয়া যায়। যখন আমরা বাহশক্তিকেই দেবতা বলিয়া জানিয়াছি তখন মন্ত্রতত্ত্র নানা বাহ্‌ প্রক্রিয়ার দ্বার! তাহাদিগকে বাহির হইতে বিশেষভাবে আপনাদের পক্ষতুক্ত করিবার চেষ্টা করিয়াছি। এইজন্য বাহিরের বহু শক্তিই যখন দেবতা তখন বাহিরের নানা অনুষ্ঠানই আমাদের ধর্মকাধ এবং এই অনুষ্ঠানের প্রভেদ তাহারই গুটশক্তি-অন্ুসারেই ফলের তারতম্য-কল্পনা

এইরূপে সমাজে যে আদর্শের ভেদ হইয়া! গেল, সেই আদর্শভেদের মৃতিপরিগ্রহ-স্বরূপে আমর! ছুই দেবতাকে দেখিতে পাই। প্রাচীন বৈদিক

৯৪

ইতিহাস

মন্ত্রত্তর ক্রিয়াকাণ্ডের দেবতা ব্রদ্ধা এবং নব্যদলের দেবতা বিষু। প্রন্ধার চারি মুখ চারি বেদ-_ তাহা চিরকালের মতো ধ্যানরত স্থির; আর বিষ্ণুর চারি ক্রিয়াশীল হস্ত কেবলই নব নব ক্ষেত্রে মঙ্গলকে ঘোষিত করিতেছে, এক্যচত্রকে প্রতিষ্ঠিত করিতেছে, শাসনকে প্রচারিত করিতেছে এবং সৌন্দর্যকে বিকাশিত করিয়া তুলিতেছে।

দেবতারা যখন বাহিরে থাকেন, যখন মানুষের আত্মার সঙ্গে তাহাদের আত্মীয়তার সম্বন্ধ অনুভূত ন! হয়, তখন তাহাদের সঙ্গে আমাদের কেবল কামনার সম্বন্ধ ভয়ের সন্বন্ধ। তখন তীহাদিগকে স্তবে বশ করিয়! আমরা হিরণ্য চাই, গো চাই, আয়ু চাই, শক্রপরাভব চাই ; যাগধজ্ঞ- অনুষ্ঠানের ত্রুটি অসম্পূর্ণতায় তাহারা অপ্রসন্ন হইলে আমাদের অনিষ্ট করিবেন এই আশঙ্কা তখন আমার্দিগকে অভিভূত করির1 রাখে এই কামনা এবং ভয়ের পুজা বাহা পুজা, ইহা পরের পুজ।| দেবতা যখন অন্তরের ধন হইয়| উঠেন তখনই অন্তরের পূজা! আরম্ভ হয়__ সেই পৃজাই ভক্তির পূজা

ভারতবর্ষের ব্রহ্মবিগ্ভার মধ্যে আমরা ছুইটি ধার! দেখিতে পাই, নির্গুণ ব্রহ্ম সপগ্ণ ব্রহ্ম, অভেদ ভেদাভেদ এই ব্রহ্মবিদ্ঠা কখনো একের দিকে সম্পূর্ণ ঝু'কিয়াছে, কখনে! দুইকে মানিয়া সেই ছুইয়ের মধ্যেই এককে দেখিয়াছে। ুইকে না মানিলে পূজা! হয় না, আবার ছুইয়ের মধ্যে এককে না মানিলে ভক্তি হয় না। দ্বৈতবাদী যিহুদিদের দূরবর্তী দেবত1 ভয়ের দেবতা, শাসনের দেবতা, নিয়মের দেবত]। সেই দেবতা নৃতন টেস্টামেন্টে যখন মানবের সঙ্গে এক হইয়া মিশিয়! আত্মীয়ত। স্বীকার করিলেন তখনই তিনি প্রেমের দেবতা, ভক্তির দেবতা হুইলেন। বৈদিক দেবতা যখন মানুষ হইতে পৃথক তখন তাহার পুজ! চলিতে পারে, কিন্তু পরমাত্ম! ও.

কট

ভারতবর্ষে ইতিহাসের ধারা

জীবাত্ম! যখন আনন্দের অচিস্ত্যরহম্তলীলায় এক হইয়াও ছুই, ছুই হইয়াও এক, তখনই সেই অন্তরতম দেবতাকে ভক্তি কর] চলে এইজন্য ব্রহ্মবিদ্যার আন্ুষঙ্গিকরূপেই ভারতবর্ষে প্রেম-ভক্তির ধর্ম আরম্ভ হয়। এই ভক্তিধর্মের দেবতাই বিষ্ুু। ্‌

বিপ্রবের অবসানে বৈষ্ণবধর্মকে ব্রাহ্মণেরা আপন করিয়া! লইয়াছেন, কিন্ত গোড়ায় যে তাহ1 করেন নাই তাহার কিছু কিছু প্রমাণ এখনও অবশিষ্ট আছে। বিজুর বক্ষে ব্রাঙ্গণ ভূগ্ত পদাঘাত করিয়াছিলেন এই কাহিনীর মধ্যে একটি বিরোধের ইতিহাস সংহত হইয়া আছে। এই ভৃগু যজ্জকর্তা যজ্ঞফলভাগীদের আদর্শবূপে বেদে কথিত আছেন। ভারতবর্ষে পূজার আসনে ব্রহ্ধার স্থানকে সংকীর্ণ করিয়! বিষুই যখন তাহা অধিকার করিলেন __ বহুপল্লবিত যাগযজ্জ-ক্রিয়াকাণ্ডের যুগকে পশ্চাতে ফেলিয়া! ভক্তিধর্মের যুগ যখন ভারতবর্ষে আবির্ভত হইল তখন সেই সন্ধিক্ষণে একটা বড়ো! ঝড় আসিয়াছিল। আসিবারই কথা এই বিচিত্র ক্রিয়াকাণ্ডের অধিকার যাহাদের হাতে এবং সেই অধিকার লইয়1 ধাহার! সমাজে একটি বিশেষ আদর পাইয়াছিলেন তাহারা সহজে তাহার বেড়া ভাঙিতে দেন নাই

এই ভক্তির বৈষ্ণবধর্ম যে বিশেষভাবে ক্ষত্রিয়ের প্রবতিত ধর্ম তাহার একটি প্রমাণ, একদা ক্ষত্রিয় শ্রীকৃষ্ণকে এই ধর্মের গুরুরূপে দেখিতে পাই__ এব* তাহার উপদেশের মধ্যে বৈদিক মন্ত্র আচারের বিরুদ্ধে আঘাতেরও পরিচয় পাওয়] যায়। তাহার দ্বিতীয় প্রমাণ এই, প্রাচীন ভারতের পুরাণে যে দুইজন মানবকে বিষ্ণুর অবতার বলিয়া স্বীকার করিয়াছে তাহারা দুইজনেই ক্ষত্রিয়-_- একজন শ্রীরুষ্ণ, আর-একজন শ্রীরামচন্দ্র। ইহা হইতে স্পষ্ট বুঝা! যাঁয় ক্ষত্রিয়দলের এই ভক্তিধর্ম, যেমন শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ তেমনি রামচন্দ্রের জীবনের দ্বারাও বিশেষভাবে প্রচারলাভ করিয়াছিল

নখ

ইতিহাস

বুত্তিগত ভেদ হইতে আরম্ভ করিয়া ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়ের মধ্যে এই চিত্তগত ভেদ এমন একট] সীমায় আসিয়। দাড়াইল যখন বিচ্ছেদের বিদারণ-রেখা! দিয়া সামাজিক বিপ্লবের অগ্নিউচ্ছৃসি উদ্গিরিত হইতে আরম্ভ করিল। বশিষ্ঠ-বিশ্বামিত্রের কাহিনীর মধ্যে এই বিপ্রবের ইতিহাস নিবদ্ধ হইয়া আছে।

এই বিপ্লবের ইতিহাসে ব্রাহ্মণপক্ষ বশিষ্ট নামটিকে ক্ষত্রিয়পক্ষ বিশ্বামিত্র নামটিকে আশ্রয় করিয়াছে পূর্বেই বলিরাছি, ব্রাহ্গণ ক্ষত্রিয় মাত্রই যে পরম্পরের বিরুদ্ধ দলে যোগ দিয়াছে তাহ! নহে এমন অনেক রাজা ছিলেন ধাহার। ব্রাঙ্ষণদের সপক্ষে ছিলেন। কথিত আছে ব্রাহ্মণের বিদ্য! বিশ্বামিত্রের দ্বার পীড়িত হইয়া! রোদন করিতেছিল, হরিশ্তন্দ্র তাহাদিগকে রক্ষা করিতে উদ্যত হইয়াছিলেন ; অবশেষে রাজ্য সম্পদ সমস্ত হারাইয়। বিশ্বামিত্রের কাছে তাহাকে সম্পূর্ণ হার মানিতে হইয়াছিল

এপ দৃষ্টান্ত আরও আছে। 'প্রাচীনকালের এই মহাবিপ্রবের আর যে-একজন প্রধান নেত! শ্রীকৃষ্ণ কর্মকাণ্ডের নিরর৫থকত। হইতে সমাঙ্কে মুক্তি দিতে দীড়াইয়াছিলেন তিনি একদিন পাগুবদের সাহায্যে জরাসন্ধকে বধ করেন। সেই জরাসন্ধ রাজা তখনকার ক্ষত্রিয়দলের শব্রপক্ষ ছিলেন তিনি বিস্তর ক্ষত্রিয় রাজাকে বন্দী পীড়িত কৰিয়াছিলেন। ভীমার্জুনকে লইয়া শ্রকৃষ্ণ যখন তাহার পুরযধ্যে প্রবেশ করিলেন তখন তাহাদিগকে ব্রাহ্মণের ছন্মবেশ ধরিতে হইয়াছিল। এই ব্রাঙ্গণ-পক্ষপাতী ক্ষত্রবিদ্বেষী রাজাকে শ্রীকুষ্ণ পাগুবদের দ্বারা যে বধ করাইয়াছিলেন এট! একট! খাপছাড়। ঘটনামাত্র নহে। শ্রীকষ্ণকে লইয়! তখন ছুই দল হ্ইয়াছিল। সেই দুই দলকে সমাজের মধ্যে এক করিবার চেষ্টায় যুধিষ্ঠির যখন রাঙ্গস্থয়

২২

ভারতবর্ষে ইতিহাসের ধারা

যজ্জ করিয়াছিলেন তখন 'শিশুপাল বিরুদ্ধদলের মুখপাত্র হইয়! শ্রীরুষ্ণকে অপমান করেন। এই যজ্জে সমস্ত ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয়, সমস্ত আচার্য রাজার মধ্যে শ্রীকষ্ষকেই সর্বপ্রধান বলিয়! অর্ধ্য দেওয়া হইয়াছিল। এই যজ্ঞে তিনি ত্রাঙ্গণের পদগ্ষালনের জন্য নিযুক্ত ছিলেন পরবর্তীকালের সেই অত্বাক্তির প্রয়াসেই পুরাঁকালীন ত্রাহ্ষণ-ক্ষত্রিয়-বিরোধের ইতিহাস স্পষ্ট দেখা যায়। কুরুক্ষেত্রযুদ্ধের গোড়ায় এই সামাজিক বিবাদ। তাহার এক দিকে শ্রীকুষ্ণের পক্ষ, অন্য দিকে শ্রীরুষ্ণের বিপক্ষ বিরুদ্ধপক্ষে সেনাপতিদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন ব্রাহ্মণ দ্রোণ_ কপ অশ্বথামাও বড়ে। সামান্য ছিলেন না।

অতএব দেখ| যাইতেছে, গোড়ায় ভারতবর্ষের ছুই মহাকাব্যেরই মূল বিষয় ছিল সেই প্রাচীন সমাজবিপ্লব। অর্থাৎ সমাজের ভিতরকার পুরাতন নৃতনের বিরোধ রামায়ণের কালে রামচন্দ্র নৃতন দলের পক্ষ লইয়াছিলেন তাহ। স্পষ্ট দেখা যায়। বশিষ্ঠের সনাতন ধর্মই ছিল রামের কুলধর্ম, বশিষ্ঠবংশই ছিল তাহাদের চিরপুরাতন পুরোহিতবংশ, তথাপি অল্পবয়সেই রামচন্দ্র সেই বশিষ্ঠের বিরুদ্ধপক্ষ বিশ্বামিত্রের অনুসরণ করিয়াছিলেন। বস্তত বিশ্বামিত্র রামকে তাহার পৈতৃক অধিকার হইতে ছিনাইয়া লইয়াছিলেন। রাম যে পন্থা লইয়াছিলেন তাহাতে দশরথের সম্মতি ছিল ন', কিন্ত বিশ্বামিত্রের প্রবল প্রভাবের কাছে তীহার আপতিত টিকিতে পারে নাই পরবর্তীকালে এই কাব্য ষখন জাতীয়সমাজে বুহৎ ইতিহাসের স্থৃতিকে কোনো এক রাজবংশের পারিবারিক ঘরের কথ! করিয়া আনিয়াছিল তখনই দুর্বলচিত্ত বৃদ্ধ রাজার অদ্ভুত স্ৈণতাকেই রামের বনবাসের কারণ বলিয্া! রটাইয়াছে।

রামচন্দ্র যে নব্যপন্থা গ্রহণ করিয়াছিলেন ইতিহাসে তাহার আর-এক

২৩

ইতিহাস

প্রমাণ আছে। একদা যে ব্রাহ্মণ ভৃগু বিষ্ণুর বক্ষে পদাঘাত করিয়াছিলেন তাহারই বংশোদ্ভব পরশুরামের ব্রত ছিল ক্ষত্রিয়বিনাশ। রামচন্দ্র ক্ত্রিয়ের এই দুর্ধর্ষ শত্রুকে নিরস্ব করিরাছিলেন 1 এই নিষ্র ব্রাহ্ষণবীরকে বধ না করিয়া তিনি তীহাকে যে বশ করিয়াছিলেন তাহাতে অনুমান করা যায়, এক্যসাধনব্রত গ্রহণ করিয়া রামচন্দ্র তাহার প্রথম পর্বেই কতক বীর্ধবলে কতক ক্ষমাগ্ডণে ব্রাহ্ণ-ক্ষত্রিয়ের বিরোধভঞ্জন করিয়াছিলেন। রামের জীবনের মকল কাধেই এই উদার বীর্ধবান্‌ সহিষু্তার পরিচয় পাওয়া! যায়।

বিশ্বামিত্রই রামচন্দ্রকে জনকের গুহে লইয়। গিয়াছিলেন এবং এই বিশ্বামিত্রের নেতৃতেই রামচন্দ্র জনকের ভূকর্ষণজাত কন্তাকে ধর্মপত্বীরূপে গ্রহণ করিয়াছিলেন। এই-সমস্ত ইতিহাসকে ঘটনামূলক বলিয়। গণ্য করিবার কোনে1 প্রয়োজন নাই, আমি ইহাকে ভাবমূলক বলির! মনে করি। ইহার মধ্যে হয়ত! তথ্য খু'জিলে ঠকিব, কিন্তু সত্য খুঁজিলে পাওয়। যাইবে!

মূল কথা এই, জনক ক্ষত্রিয় রাজার আদর্শ ছিলেন ব্রহ্মবিদ্য! তাহাকে আশ্রয় করিয়৷ বিকাশলাভ করিয়াছিল বিদ্যা কেবলমাব্র তাহার জ্ঞানের বিষয় ছিল ন1) বিদ্য1 তাহার সমন্ত জীবনে রূপ গ্রহণ করিয়াছিল; তিনি তাহার রাজ্যসংসারের বিচিত্র কর্মের কেন্দ্রস্থলে এই ব্রঙ্গজ্ঞানকে অবিচলত করিয়া রক্ষা করিয়াছিলেন ইতিহাসে তাহা কীতিত হইয়াছে চরমতম জ্ঞানের সঙ্গে ভক্তির সঙ্গে প্রাত্যহিক জীবনের ছোটে। বড়ো সমস্ত কর্মে আশ্চর্য যোগসাধন ইহাই ভারতবর্ষের ক্ষত্রিয়দের সর্বোচ্চ কীতি। আমাদের দেশে ধাহার! ক্ষত্রিয়ের অগ্রণী ছিলেন তাহার] ত্যাগকেই ভোগের পরিণাম করিয় কর্মকেই মুক্তিলাভের শ্রেষ্ঠ উপায় বলিয়! প্রচার করিয়াছিলেন

এই জনক এক দিকে ব্রহ্গঙ্ঞানের অন্থশীলন, আর-এক দিকে স্বহস্তে

২৪

ভারতবর্ষে ইতিহাসের ধার!

হলচালন করিয়াছিলেন ।. ইহা! হইতেই জানিতে পারি কুষিবিস্তারের ছারা আধসভ্যত। বিস্তার কর! ক্ষত্রিয়দের একটি ব্রতের মধ্যে ছিল। একদিন পশুপালন আর্দের বিশেষ উপজীবিকা ছিল। এই ধেন্ুই অবণ্যাশ্রম- বাসী ব্রাঙ্ষণদের প্রদান সম্পদ বলিয়। গণ্য হইত। বনভূমিতে গোচারণ সহজ; তপোবনে যাহার! শিশ্ান্পপে উপনীত হইত গুরুর গোপালনে নিযুক্ত থাকা তাহাদের প্রধান কাজ ছিল।

অবশেষে একদিন রণজয়ী ক্ষত্রিয়ের| আধাবত হইতে অরণ্যবাপ! অপসারিত করিয়] পশুসম্পদের স্থলে কৃষিসম্পদকে প্রবল করিয়| তুলিলেন। আমেরিকায় স্কুরোগীয় ওপনিবেশিকগণ যখন অরণ্যের উচ্ছেদ করিয়| কৃষি- বিস্তারের ক্ষেত্র প্রশস্ত করিতেছিলেন তখন যেমন মুগয়াজীবী আরণ্যকগণ পদে পদে তাহাদিগকে বাধ! দিতেছিল__- ভারতবর্ষেও সেরূপ আরণ্যকদের সহিত কৃষকদের বিরোধে কৃষিবাপার কেবলই বিদ্বসংকুল হইয়! উঠিয়াছিল। ধাহার। অরন্যের মধ্যে কৃষিক্ষেত্র উম্ুক্ত করিতে যাইবেন তাহাদের কাজ সহজ ছিল না। জনক মিথিলার রাজ] ছিলেন-__ ইহা হইতেই জানা যায় আধাবর্তের পূর্বপ্রান্ত পধস্ত আঘ উপনিবেশ আপনার সীমায় আসিয়া ঠেকিয়াছিল। তখন দুর্গম বিদ্ধ্যাচলের দক্ষিণভাগে অরণ্য অক্ষত ছিল এবং দ্রাবিডসভ্যতা সেই দ্রিকেই প্রবল হইয়া! আর্ধদের 'প্রতিদন্দী হইয়া উঠিয়াছিল। রাবণ বীরপরাক্রমে ইন্দ্র প্রভৃতি বেদের দেবতাকে পরাস্ত করিয়া আর্ধদের যজ্ঞের বিদ্ব ঘটাইর়া নিজের দেবতা শিবকে জয়ী করিয়াছিলেন। যুদ্ধজয়ে স্বকীয় দলের দেবতার প্রভাব প্রকাশ পায় পৃথিবীতে সকল সমাজেরই বিশেষ অবস্থায় এই বিশ্বাস দৃঢ় থাকে__ কোনো পক্ষের পরাভবে সে পক্ষের দেবতারই পরাভব গণ্য হয়। রাবণ আধদেবতাদিগকে পরাস্ত করিয়াছিলেন এই-যে লোকশ্রুতি আমাদের

ক্খ৫

ইতিহাস

দেশে প্রচলিত আছে ইহার অর্থই এই যে, তীহার রাজত্বকালে তিনি বৈদ্দিক দেবতার উপাসকর্দিগকে বারম্বার পরাভূত করিয়াছিলেন

এমন অবস্থায় সেই শিবের “হরধন্ু” ভাঁঙিবে কে, একদিন এই এক প্রশ্ন আর্সমাজে উঠিয়াছিল। শিবোপাসকদের প্রভাবকে নিরস্ত করিয়! খিনি দক্ষিণথণ্ডে আধদের কৃষিবিচ্য| ব্রহ্মবিদ্ভাকে বহন করিয়া লইয়া! যাইতে পারিবেন তিনিই যথার্থ ভাবে ক্ষত্রিয়ের আদর্শ জনকরাজার অমানুষিক মানসকন্যার সহিত পরিণীত হইবেন বিশ্বামিত্র রামচন্দ্রকে সেই হরধন্ু ভঙ্গ করিবার ছুঃসাধা পরীক্ষার লইয়! গিয়াছিলেন। রাম যখন বনের মধ্যে গিয়| কোনে! কোনে! প্রবল দূর্ধর্ষ শৈববীরকে নিহত করিলেন তখনই তিনি হরধনুুভঙ্গের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইলেন এবং তখনই তিনি সীতাকে অর্থাৎ হলচালনরেখাকে বহন করিয়! লইবার অধিকারী হইতে পারিলেন। তখনকার অনেক বার রাজাই এই সীতাকে গ্রহণ করিবার জন্য উদ্যত হইয়াছিলেন কিন্তু তীহার! হরধস্থ ভাঙিতে পারেন নাই, এইজন্য রাজষি জনকের কন্তাকে লাভ করিবার গৌরব হইতে তাহার! বঞ্চিত হইয়| ফিরির1 গিয়াছেন। কিন্তু এই ছুঃসাধা ব্রতের অধিকারী কে হইবেন, ক্ষত্রিয় তপস্বীগণ সেই সন্ধান হইতে বিরত হন নাই। একদা বিশ্বামিত্রের সেই সন্ধান রানচন্দ্রের মধ্যে আসিয়। সার্থক হইল।

বিশ্বামিত্রের সঙ্গে রামচন্দ্র যখন বাহির হইলেন তখন তরুণ বয়সেই তিনি তীহার জীবনের তিনটি বড়ো! বড়ে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়াছিলেন। প্রথম, তিনি শৈব রাক্ষসদিগকে পরাস্ত করিয়। হরধন্ু ভঙ্গ করিয়াছিলেন? দ্বিতীয়, বে ভূমি হুলচালনের অযোগ্যরূপে অহুল্যা! হইয়া, পাষাণ হইয়া পড়িয়। ছিল, সেই কারণে দক্ষিণাপথের প্রথম অগ্রগামীদের মধ্যে অন্যতম খষি গৌতম যে ভূমিকে একদ। গ্রহণ করিম়াও অবশেষে অভিশপ্ত

ভারতবর্ষে ইতিহাসের ধারা

বলিয়! পরিত্যাগ করিয়া যাওয়াতে যাহ! দীর্ঘকাল বার্থ পড়িয়া ছিল, রামচন্দ্র সেই কঠিন পাথরকেও সজীব করির] তুলির! আপন কৃষিনৈপুণ্যের পরিচয় দিয়্াছিলেন ;১ তৃতীর, ক্ষত্রিরদলের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণদের যে বিদ্বেষ প্রবল হইয়া উঠিতেছিল তাহাকেও এই ক্ষত্রথষি বিশ্বামিত্রের শিষ্য আপন ভূঙজবলে পরাস্ত করিয়াছিলেন

অকন্মাৎ যৌব্রাজ্য-অভিষেকে বাধ] পড়িয়া রামচন্দ্রের যে নির্বাসন ঘটিল তাহার, মধ্যে সম্ভবত তখনকার ছুই প্রবল পক্ষের বিরৌধ স্থচিত হইয়াছে রামের বিরুদ্ধে যে-একটি দল ছিল তাহা নিঃসন্দেহ অত্যন্ত প্রবল এবং স্বভাবতই অন্তঃপুরের মহিষীদের প্রতি তাহার বিশেষ প্রভাব ছিল। বুদ্ধ দ্শরথ ইহাঁকে উপেক্ষা করিতে পারেন নাই এই- জন্য একান্ত অনিক্ছা সন্বেও তাহার প্রিরতন বীর পুত্রকেও তিনি নির্বাসনে পাঠাইতে বাধা হইয়াছিলেন। সেই নির্বাসনে রামের বীরত্বের সহায় হইলেন লক্ষ্মণ তীহার জীবনের সঙ্গিনী হইলেন সীতা অর্থাৎ তাহার সেই ব্রত। এই সীতাকেই তিনি নানা বাধা নানা শত্রর আক্রমণ হইতে বীাগাইয়। বন হইতে বনান্তরে খষিদের আশ্রম রাক্ষসদের আবাসের মধ্য দিয়! অগ্রসর করিয়া লইয়1 যাইতে লাগিলেন।

আধ-অনার্ধের বিরোধকে বিদ্বেষের দ্বার! জাগ্রত রাখিয়] যুদ্ধের দ্বারা, নিধনের দ্বার। তাহার সমাধানের প্রয়াস অন্তহীন ছুশ্টেষ্টা। প্রেমের দ্বারা, মিলনের দ্বার। ভিতরের দ্দিক হইতে ইহার মীমাংস! হইলেই এত বড়ে। বৃহৎ

* অঙ্সদিন হইল “রাক্ষস-রহস্ত” নামক একটি স্বাধীনচিন্তাপূর্ণ প্রবন্ধ আমি পাওুলিপি আকারে দেখিতে পাই, তাহার মধ্যেই “অহল্যা” শব্দটির এই তাৎপর্যব্যাখ্যা আমি দেবিলাম। লেখক আপনার নাম প্রকাশ করেন নাই-- তাহার নিকট সামি কৃতজ্ঞত। স্বীকার করিতেছি। প্র

ইতিহাস

ব্যাপারও সহজ হুইয়] যায়। কিন্ত ভিতরের মিলন জিনিসটা তো ইচ্ছ! করিলেই হয় না। ধর্ম যখন বাহিরের জিনিস হয়, নিজের দেবত1 যখন নিজের বিষয়সম্পত্তির মতো অত্যন্ত স্বকীয় হুইয়] থাকে, তখন মানুষের মনের মধ্যকার ভেদ কিছুতেই ঘুচিতে চায় না। জ্যু'দের সঙ্গে জেণ্টাইলদের মিলনের কোনে! সেতু ছিল ন1। কেননা, জ্যু'রা জিহোভাকে বিশেষভাবে আপনাদের জাতীয় সম্পত্তি বলিয়াই জানিত এবং এই জিহোভার সমস্ত অনুশীসন, তাহার আদি সমস্ত বিধিনিষেধ বিশেষভাবে জ্যু-জাতিরই পালনীয় এইরূপ তাহাদের ধারণা ছিল। তেমনি আধ- দেবত। আধবিপ্রিবিধান যখন বিশেষ-জাতি-গত-ভাবে সংকীর্ণ ছিল তখন আধ-অনার্ধের পরম্পর সংঘাত, এক পক্ষের সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ছাড় কিছুতেই মিটিতে পারিত ন!। কিন্তু ক্ষত্রিয়দের মধ্যে দেবতার ধারণ। যখন বিশ্ব- জনীন হইয়া! উঠিল, বাহিরের ভেদ-বিভেদ একাস্ত সত্য নহে এই জ্ঞানের দ্বারা মানুষের কল্পনা হইতে দৈব বিভীষিকাসকল যখন চলিয়! গেল, তখনই আর্ধ-অনার্ধের মধ্যে সত্যকার মিলনের সেতু স্থাপিত হওয়] সম্ভব- পর হইল। তখনই বাহিক ক্রিয়াকর্মের দেবতা অন্তরের ভক্তির দেবত] হইয়া! উঠিলেন এবং কোনে! বিশেষ শান্ধ শিক্ষা জাতির মধ্যে তিনি আবদ্ধ হইরা রহিলেন না।

ক্ষত্রিয় রামচন্দ্র একদিন গুহক চগ্ালকে আপন মিত্র বলিয়া গ্রহণ করিয়াছিলেন এই জনশ্র্তি আজ পর্যন্ত তাহার আশ্চর্য উদারতার পরিচয় বলিয়া চলিয়। আসিয়াছে পরবর্তী যুগের সমাজ উত্তরকাণ্ডে তাহার এই চবিতের মাহাত্ম্য বিলুপ্ত করিতে চাহিয়াছে; শুদ্ধ তপম্বীকে তিনি বধদগু দিয়াছিলেন এই অপবাদ রামচন্দ্রের উপর আরোপ করিয়। পরবর্তাঁ সমাজরক্ষকের দল রামচরিতের দৃ্টান্তকে স্বপক্ষে আনিবার চেষ্টা করিয়াছে

ধুতে

ভারতবর্ষে ইতিহাসের ধারা

যে সীতাকে রামচন্দ্র স্থখে দুঃখে রক্ষা করিয়াছেন প্রাণপণে শত্রহস্ত হইতে উদ্ধার করিয়াছেন সমাজের প্রতি কতব্যের অনুরোধে তাহাকেও তিনি বিনা অপরাধে পরিত্যাগ করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন উত্তরকাণ্ডের এই কাহিনীস্ষ্টির ছবারাও স্পষ্টই বুঝিতে পারা! যার, আজাতির বীরশ্রেষ্ঠ আদর্শচরিত্রূপে পুজ্য রামচন্দ্রের জীবনীকে একদ| সামাজিক আচাররক্ষার অন্থকুল করিয়! বর্ণনা করিবার বিশেষ চেষ্টা জন্মিয়াছিল। রামচরিতের মধ্যে যে-একটি সমাজবিপ্রবের ইতিহাস ছিল, পরবর্তীকালে যথাসম্ভব তাহার চিহ্ন মুছিয়! ফেলিয়৷ তাহাকে নব্যকালের সামাজিক আদর্শের অন্তগত করা! হইয়়াছিল। সেই সময়েই রামের চরিত্রকে গৃহধর্মের সমাজধর্মের আশ্রয়রূপে প্রচার করিবার চেষ্টা জাগিয়াছিল এবং রামচন্দ্র যে একদ| তাহার স্বজাতিকে বিখেষের সংকোচ হইতে প্রেমের প্রসারণের দিকে লইয়া গিয়াছিলেন সেই নীতির দ্বারা একটি বিষম সমস্যার সমাধান করিয়! সমস্ত জাতির নিকট চিরকালের মতো] বরণীয় হইয়াছিলেন সে কথাট! সরিয়] গিয়াছে এবং ক্রমে ইহাই ফ্াড়াইয়াছে যে, তিনি শাস্ান্থ- মোদিত গাহৃস্থ্যের আশ্রয় লোকান্থমোদিত আচারের রক্ষক; ইহার মধ্যে অদ্ভুত ব্যাপার এই, এক কালে বে রামচন্দ্র ধর্মনীতি কৃষিবিদ্ভাকে নৃতন পথে চালন! করিয়াছিলেন, পরবর্তীকালে তাহারই চরিতকে সমাজ পুরাতন বিধিবন্ধনের অন্থকুল করিয়া ব্যবহার করিয়াছে একদিন সমাজে যিনি গতির পক্ষে বীর্ধ প্রকাশ করিয়াছিলেন আর-একদিন সমাজ তীাহাকেই স্থিতির পক্ষে বীর বলিয়! প্রচার করিয়াছে বন্তৃত রামচন্দ্রের জীবনের কাধে এই গতিস্থিতির সামগ্বস্ত ঘটিয়াছিল বলিয়াই এইরূপ হওয়া সম্ভবপর হইয়াছে

তৎসত্বেও কথা! ভারতবর্ষ ভূলিতে পারে নাই যে তিনি চণ্ডালের

০)

ইতিহাস

মিতা, বানরের দেবতা, বিভীষণের বন্ধু ছিলেন। তিনি শত্রুকে ক্ষয় করিয়াছিলেন তাহার গৌরব নহে, তিনি শক্রকে আপন করিয়াছিলেন তিনি আচারের নিষেধকে, সামজিক বিদ্বেষের বাধাকে অতিক্রম করিয়াছিলেন; তিনি আর্ধ-অনাধের মধ্যে প্রীতির সেতু বন্ধন করিয় দিয়াছিলেন।

নৃতত্র আলোচন| করিলে দেখা যাঁয় বর্বর জাতির অনেকেরই মধ্যে এক-একটি বিশেষ জন্ত পবিত্র বলিয়| পূজিত হয় অনেক সময়ে তাহার! আপনার্দিগকে সেই জন্তর বংশধর বলিয়া গণ্য করে। সেই জন্তর নামেই তাহারা আখ্যাত হইয়| থাকে ভারতবর্ষে এইরূপে নাগবংশের পরিচয় পাওয়া যায়। কিক্বিদ্ধ্যায় রামচন্দ্র যে অনাধদলকে বশ করিয়াছিলেন তাহারাও যে এইরূপ কারণেই বানর বলিয়! পরিচিত তাহাতে সন্দেহ নাই। কেবল তে। বানর নহে, রামচন্দ্রের দলে ভল্গুকও ছিল। বানর যদি অবজ্ঞাস্চক আখ্যা হইত তবে ভন্ুকের কোনে অর্থ পাওয়। যায় না।

রামচন্দ্র এই-যে বানরদ্দিগকে বশ করিয়াছিলেন তাহা রাজনীতির দ্বার! নহে, ভক্তিধর্মের দ্বারা। এইরূপে তিনি হনুমানের ভক্তি পাইয়া দেবতা হইয়| উঠিয়াছিলেন | পৃথিবীর সবত্রই দেখ! যায়, যে-কোনে। মহাত্মাই বাহধর্মের স্থলে ভক্তিধর্মকে জাগাইয়াছেন তিনি স্বয়ং পূজা! লাভ করিয়াছেন। শ্রীকুষ্ণ, খুস্ট, মহম্মদ, চৈভন্ত প্রভৃতি তাহার অনেক দৃষ্টান্ত আছে। শিখ, সুফী, কবীরপন্থী প্রভৃতি সর্বত্রই দেখিতে পাই, ভক্তি ধাহাদিগকে আশ্রয় করিয়। প্রকাশ পায় অন্ুবর্তীদের কাছে তাহার! দেবত প্রাপ্ত হন। ভগবানের সহিত ভক্তের অন্তরতম যোগ উদ্ঘাটন করিতে গিয়! তাহারাও যেন দেবত্বের সহিত মন্গম্যত্বের ভেদসীমা অতিক্রম করিয়।

৬০

ত্জ

ভারতবর্ষে ইতিহাসের ধার!

থাকেন। এইরূপ হনুমান বিভীষণ রামচন্দ্রের উপাসক ভক্ত বৈষ্ণবরূপে খ্যাত হইয়াছেন

রামচন্দ্র ধর্মের ছ্বারাই অনার্ধদিগকে জয় করিয়া! তাহাদের ভক্তি অধিকার করিয়াছিলেন তিনি বাহুবলে তাহাদিগকে পরান্ত করিয়! রাজ্যবিস্তার করেন নাই। দক্ষিণে তিনি কৃষিস্থিতিমূলক সভ্যত! ভক্তিমূলক একেশ্বরবাদ প্রচার করিয়াছিলেন। তিনি সেই-যে বীজ রোপণ করিয়া আসিয়াছিলেন বহু শতাব্দী পরেও ভারতবর্ষ তাহার ফল লাভ করিয়াছিল এই দাক্ষিণাত্যে ক্রমে দারুণ শৈবধর্মও ভক্তিধর্মের রূপ গ্রহণ করিল এবং একদ। এই দাক্ষিণাতা হইতেই ব্রহ্মবিদ্যার এক ধারায় ভক্তিআ্োত আর- এক ধারায় অদ্বৈতজ্ঞান উচ্ছৃসিত হইয়া সমস্ত ভারতবর্ষকে প্লাবিত করিয়া দিল।

আমর! আধদের ইতিহাসে সংকোচ প্রসারণের এই একটি রূপ দেখিলাম মানুষের এক দিকে তাহার বিশেষত্ব, আর-এক দিকে তাহার বিশ্বত্ব, এই ছুই দিকের টানই ভারতবর্ষে যেমন করিয়া কাজ করিয়াছে তাহা যদি আমরা আলোচন। করিয়া না দেখি তবে ভারতবর্ধকে আমর! চিনিতেই পারিব না একদিন তাহার এই আত্মরক্ষণশক্তির দিকে ছিল ব্রাঙ্গণ আস্মপ্রসারণশক্তির দিকে ছিল ক্ষত্রিয়। ক্ষত্রিয় যখন অগ্রসর হইয়াছে তখন ব্রাহ্ধণ তাহাকে বাধ! দিয়াছে, কিন্তু বাধা অতিক্রম করিয়াও ক্ষত্রিয় যখন সমাজকে বিস্তারের দিকে লইয়া! গিয়াছে তখন ব্রাহ্মণ পুনরায় নৃতনকে আপন পুরাতনের সঙ্গে বীধিয়া সমস্তটাকে আপন করিয়া লইয়া! আবার একটা সীম বাঁধিয়া লইয়াছে। মুরোপীয়েরা' যখন ভারতবর্ষে চিরদিন ্রাক্মণদের এই কাজটির আলোচনা করিয়াছেন তাহারা এমনি ভাবে করিয়াছেন যেন এই ব্যাপারটা! ব্রাহ্মণ-নামক একটি বিশেষ ব্যবসায়ী দলের

৩১

ইতিহাস

চাতুরী। তাহারা ইহা! ভুলিয়া যান যে, ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয়ের যথার্থ জাতিগত ভেদ নাই, তাহার একই জাতির ছুই স্বাভাবিক শক্তি। ইংলগ্ডে সমস্ত ইংরেজ জাতি লিবারাল কন্সারুভেটিভ এই ছুই শাখায় বিভক্ত হইয়! রাষ্্রনীতিকে চালনা করিতেছে_ ক্ষমত1 লাভের জন্য এই ছুই শাখার প্রতিযোগিতার মধ্যে বিবাদও আছে, কৌশলও আছে, এমন-কি, ঘুষ এবং অন্তায়ও আছে, তথাপি এই ছুই সম্প্রদায়কে যেমন ছুই স্বতন্ত্র বিরুদ্ধ পক্ষের মতো! করিয়| দেখিলে ভূল দেখ] হয়-_- বস্তৃত তাহার] প্রকৃতির আকর্ষণ বিকর্ষণ -শক্তির মতো বাহিরে দেখিতে বিরুদ্ধ, কিন্ত অন্তরে একই স্জন- শক্তির পিঠ, পিঠ, তেমনি ভারতবর্ষে সমাজের স্বাভাবিক স্থিতি গতি -শক্তি দুই শ্রেণীকে অবলম্বন করিয়! ইতিহাসকে স্ুষ্টি করিয়াছে কোনো পক্ষেই তাহা কৃত্রিম নহে

তবে দেখা গিয়াছে বটে ভারতবর্ষে এই স্থিতি গতি -শক্তির সম্পূর্ণ সামগ্রস্ত রক্ষিত হয় নাই, সমস্ত বিরোধের পর ত্রাহ্মণই এখানকার সমাজে প্রাধান্ত লাভ করিয়াছে। ব্রাক্ষণের বিশেষ চাতুর্ধই তাহার কারণ এমন অদ্তুত কথা নিতান্তই ইতিহাসবিরুদ্ধ কথ] তাহার প্রকৃত কারণ ভারতবর্ষের বিশেষ অবস্থার মধ্যেই রহিয়াছে ভারতবর্ষে যে জাতিসংঘাত ঘটিয়াছে তাহ। অত্যন্ত বিরুদ্ধ জাতির সংঘাত তাহাদের মধ্যে বর্ণের আদর্শের ভেদ এতই গুরুতর যে এই প্রবল বিরুদ্ধতার আঘাতে ভারতবর্ষের আন্ম- রক্ষণীশক্তিই বলবান হইয়! উঠিয়াছে। এখানে আত্মপ্রসারণের দিকে চলিতে গেলে আপনাকে হারাইবার সম্ভাবনা ছিল বলিয়! সমাজের সতর্কতাবৃত্তি পদে পদে আপনাকে জাগ্রত রাখিয়াছে।

তুষারাবৃত আল্পস্‌ গিরিমালার শিখরে যে দুঃসাহসিকেরা আরোহণ করিতে চেষ্টা করে তাহারা! আপনাকে দড়ি দিয়! বাঁধিয়া বাঁধিয়া অগ্রসর

৩২

ভারতবর্ষে ইতিহাসের ধার!

হয়__ তাহারা চলিতে চলিতে আপনাকে বাধে, বাঁধিতে বাধিতে চলে-_ সেখানে চলিবার উপায় স্বভাবতই এই প্রণালী অবলম্বন করে, তাহা চালকদের কৌশল নহে। বন্দীশালায় যে বন্ধনে স্থির করিয়! রাখে দুর্গম পথে সেই বন্ধনই গতির সহায়। ভারতবর্ষেও সমাজ কেবলই দড়িদড়া লইয়া আপনাকে বাধিতে বাধিতে চলিয়াছে, কেননা নিজের পথে অগ্রসর হওয়] অপেক্ষা পিছলিয়া অন্যের পথে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তাহার সম্পূর্ণ ছিল। এইজন্যই ভারতবর্ষে স্বভাবের নিয়মে আত্মরক্ষণীশক্তি আত্ম প্রসারণী-শক্তির অপেক্ষা বড়ে। হইয়। উঠিয়াছে।

রামচন্দ্রের জীবন-আলোচনায় আমর] ইহাই দেখিলাম যে, ক্ষত্রিয়েরা একদিন ধর্মকে এমন একট। এক্যের দিকে পাইয়াছিলেন যাহাতে অনার্ধদের সহিত বিরুদ্ধতাকে তীহার। মিলননীতির দ্বারাই সহজে অতিক্রম করিতে পারিয়াছিলেন। ছুই পক্ষের চিরন্তন প্রাণাস্তিক সংগ্রাম কখনে! কোনে]! সমাজের পক্ষে হিতকর হইতে পারে না_- হয় এক পক্ষকে মারিতে, নয় ছুই পক্ষকে মিলিতে হইবে ভারতবর্ষে একদ। ধর্মকে আশ্রয় করিয়া সেই মিলনের কাজ আরম্ভ হইয়াছিল। প্রথমে এই ধর্ম এই মিলননীতি বাধা পাইয়াছিল, কিন্তু অবশেষে ব্রাঙ্ষণের ইহাকে স্বীকার করিয়া আত্মসাৎ করিয়া লইলেন

আর্ধে অনার্ধে যখন অল্প অল্প করিয়া যোগ স্থাপন হইতেছে তখন অনার্ধদের ধর্মের সঙ্গেও বোঝাপড়া করার প্রয়োজন ঘটিয়াছিল। এই সময়ে অনার্দের দেবত। শিবের সঙ্গে আর্ধ-উপাঁসকদের একটা বিরোধ চলিতেছিল, এবং সেই বিরোধে কখনে। আর্ধেরা কখনো অনার্ধের] জয়ী হইতেছিল। কৃষ্ণের অন্ুবর্তাী অর্জুন কিরাতদের দেবতা! শিবের কাছে একদিন হার মানিয়াছিলেন। শিবভক্ত বাণ-অস্থরের কন্যা উষাকে কৃষ্ণের

৩৩

ইতিহাস

পৌত্র অনিরুদ্ধ হরণ করিয়াছিলেন-_ এই সংগ্রামে কৃষ্ণ জয়ী হইয়াছিলেন। বৈদিক যজ্জঞে অনার্য শিবকে দেবতা বলিয়া স্বীকার কর]! হয় নাই, সেই উপলক্ষ্যে শিবের অনার্ধ-অনুচরগণ যজ্ঞ নষ্ট করিয়াছিল। অবশেষে শিবকে বৈদিক রুদ্রের সহিত মিলাইয়! একদিন তাহাকে আপন করিয়া লইয়া আর্ধ-অনার্ধের এই ধর্মবিরোধ মিটাইতে হইয়াছিল তথাপি দেবতা যখন অনেক হুইয়1 পড়েন তখন তাহাদের মধ্যে কে বড়ো কে ছোটে] সে বিবাদ সহজে মিটিতে চায় না। তাই মহাভারতে করুদ্রের সহিত বিষ্লর সংগ্রামের উল্লেখ আছে-__ সেই সংগ্রামে কুত্র বিষুণকেই শ্রেষ্ট বলিয়া স্বীকার করিয়াছিলেন

মহাভারত আলোচন1 করিলে স্পষ্টই দেখা যায় বিরোধের মধ্য দিয়াও আরদের সহিত অনাধদের রক্তের মিলন ধর্মের মিলন ঘটিতেছিল। এইরূপে যতই বর্ণসংকর ধর্মসংকর উৎপন্ন হইতে.লাগিল ততই সমাজের আত্মরক্ষণীশক্তি বারম্বার সীমানির্ণয় করিয়! আপনাকে বাচাইতে চেষ্টা করিয়াছে যাহাকে ত্যাগ করিতে পারে নাই তাহাকে গ্রহণ করিয়া বাধ বীধিয়! দিয়াছে মন্থতে বর্সংকরের বিরুদ্ধে যে চেষ্ট। আছে এবং তাহাতে মৃত্িপৃ্জা-ব্যবসায়ী দেবল ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে যে দ্বণ! প্রকাশিত হইয়াছে তাহ] হইতে বুঝা যায় রক্তে ধর্মে অনার্ধদের মিশ্রণকে গ্রহণ করিয়াও তাহাকে বাধ] দিবার প্রয়াস কোনে। দিন নিরস্ত হয় নাই। এইরূপে প্রসারণের পরমুহূর্তেই সংকোচন আপনাকে বারম্বার অত্যন্ত কঠিন করিয়! তুলিয়াছে।

একদিন ইহারই একট] প্রবল প্রতিক্রিয়া ভারতবর্ষের ছুই ক্ষত্রিয় রাজসন্ন্যাসীকে আশ্রয় করিয়] প্রচণ্ডশক্তিতে প্রকাশ পাইয়াছে। ধর্মনীতি যে একট সত্য পদার্থ, তাহা যে সামাজিক নিয়মমাত্র নহে-- সেই

৩৪

ভারতবর্ষে ইতিহাসের ধার!

ধর্মনীতিকে আশ্রয় করিয়াই যে মানুষ মুক্তি পায়, সামাজিক বাহ প্রথাপালনের ছারা নহে-_ এই ধর্মনীতি যে মানুষের সহিত মানুষের কোনে। ভেদকে চিরস্তন সত্য বলিয়া গণ্য করিতে পারে না, ক্ষত্রিয় তাপস বুদ্ধ মহাবীর সেই মুক্তির বাতাই. ভারতবর্ষে প্রচার করিয়াছিলেন। আশ্চর্য এই যে তাহ! দেখিতে দেখিতে জাতির. চিরন্তন সংস্কার বাধা অতিক্রম করিয়া সমস্ত দেশকে অধিকার করিয়া লইল। এইবার অতি দীর্ঘকাল পর্যন্ত ভারতবর্ষে ক্ষত্রিয়গুরুর প্রভাব ব্রাহ্মণের শক্তিকে একেবারে অভিভূত করিয়া! রাখিয়াছিল।

সেটা সম্পূর্ণ ভালো! হইয়াছিল এমন কথা কোনোমতেই বলিতে পারি না। এইরূপ এক পক্ষের একাস্তিকতায় জাতি প্ররুতিস্থ থাকিতে পারে না, তাহার স্বাস্থ্য নষ্ট হইতে বাধ্য। এই কারণেই বৌদ্ধযুগ ভারতবর্ধকে তাহার সমস্ত সংস্কারজাল হইতে মুক্ত করিতে গিয়। যেরূপ সংস্কারজালে বদ্ধ করিয় দিয়াছে এমন আর কোঁনোৌকালেই করে নাই। এতদিন ভারতবর্ষে আর্ধ-অনার্ষের যে মিলন ঘটিতেছিল তাহার মধ্যে পদে পদে একট। সংযম ছিল-_- মাঝে মাঝে বাধ বাধিয়] গ্রলয়স্রোতকে ঠেকাইয়া রাখা হইতেছিল। আর্ধজাতি অনার্ধের কাছ হইতে যাহা-কিছু গ্রহণ করিতেছিল তাহাকে আব করিয়। লইয়া আপন প্রকৃতির অন্গগত করিয়া! লইতেছিল-_ এমনি করিয়! ধীরে ধীরে একটি প্রাণবান জীতীয় কলেবর গড়িয়া! আর্ধে অনার্ধে একটি আন্তরিক সংশ্রব ঘটিবার সম্তাবন হুইয়! উঠিতেছিল। নিশ্চয়ই সেই মিলন-ব্যাপারের মাঝখানে কোনো-এক সময়ে বাঁধাবাধি বাহ্িকতার মাত্রা অত্যন্ত বেশি হইয়া পড়িয়াছিল, নহিলে এত বড়ো বিপ্লব উৎপন্ন হইতেই পারিত না এবং সে বিপ্লব কোনো 'সৈ্যবূল আশ্রয় না করিয়! কেবলমাত্র ধর্মবলে সমস্ত দেশকে এমন করিয়া

৩৫

ইতিহাস

আচ্ছন্ন করিতে পারিত না নিশ্যয়ই তংপূর্বে সমাজের শ্রেণীতে শ্রেণীতে মানুষের অন্তরে বাহিরে বৃহৎ একট] বিচ্ছেদ ঘটিয়! স্বাস্থ্াকর সামগ্রম্ত নষ্ট হইয়াছিল। কিন্ত ইহার প্রতিক্রিয়াও তেমনি প্রবল হইয়া একেবারে সমাজের ভিত্তিতে গিয়! আঘাত করিল। রোগের আক্রমণও যেমন নিদারুণ, চিকিৎসার আক্রমণও তেমনি সাংঘাতিক হইয়! প্রকাশ পাইল।

অবশেষে একদিন এই বৌদ্ধপ্রভাবের বন্যা খন সরিয়! গেল তখন দেখ! গেল সমাজের সমস্ত বেড়াগুল। ভাঙিয়। গিয়াছে যে-একটি ব্যবস্থার ভিতর দিয়! ভারতবর্ষের জাতিবৈচিত্র্য এক্যলাভের চেষ্টা করিতেছিল সেই ব্যবস্থাটা ভূমিপাৎ হইয়াছে বৌদ্ধধর্ম এঁক্যের চেষ্টাতেই এক্য নষ্ট করিয়াছে। ভারতবর্ষে সমস্ত অনৈক্যগুলি অবাধে মাথা তুলিয়া উঠিতে লাগিল-- যাহ! বাগান ছিল তাহা জঙ্গল হইয়! উঠিল।

তাহার প্রধান কারণ এই, একদিন ভারতসমাজে কখনো ব্রাহ্মণ কখনো ক্ষত্রিয় যখন প্রাধান্ত লাভ করিতেছিলেন তখনও উভয়ের ভিতরকার একটা জাতিগত এঁক্য ছিল। এইজন্য তখনকার জাতি- রচনাকার্য আর্দের হাতেই ছিল। কিন্তু বৌদ্ধপ্রভাবের সময় কেবল ভারতবর্ষের ভিতরকার অনাষেরা নহে, ভারতবর্ষের বাহির হইতেও অনার্ধদের সমাগম হইয়া তাহার। এমন একটি প্রবলতা লাভ করিল যে আর্ধদের সহিত তাহাদের স্থ্বিহিত সামগ্রন্ত রক্ষা! কর! কঠিন হুইয়! উঠিল। যতদিন বৌদ্ধধর্মের বল ছিল ততদিন এই অসামগ্তস্ত অস্বাস্থ্য-আকারে প্রকাশ পায় নাই, কিন্তু বৌদ্ধধর্ম যখন ছূর্বল হুইয়! পড়িল তখন তাহ নানা অদ্ভুত অসংগতিরূপে অবাধে সমস্ত দেশকে একেবারে ছাইয়! ফেলিল।

ভারতবর্ষে ইতিহাসের ধার৷

অনার্ধের| এখন সমস্ত বাধ! ভেদ করিয়! একেবারে সমাজের মাঝখানে আসিয়া বসিয়াছে; সুতরাং এখন তাহাদের সহিত ভেদ মিলন বাহিরের নহে, তাহা! একেবারে সমাজের ভিতরের কথ! হইয়া পড়িল।

এই বৌদ্ধপ্লাবনে আধসমাজে কেবলমাত্র ব্রাহ্মণসম্প্রদায় আপনাকে স্বতন্ত্ রাখিতে পারিয়াছিল, কারণ, আধঙগাতির স্বাতন্ত্য রক্ষার ভার চিরকাল ব্রাহ্মণের হাতে ছিল। যখন ভারতবর্ষে বৌদ্ধযুগের মধ্যাহু তখনও ধর্মসমাজে ব্রাহ্মণ শ্রমণ ভেদ বিলুপ্ত হয় নাই। কিন্তু তখন সমাজে আর-সমস্ত ভেদই লুপ্তপ্রায় হইয়াছিল। তখন ক্ষত্রিয়েরা জনসাধারণের সঙ্গে অনেক পরিমাণে মিলাইয়! গিয়াছিল।

অনার্ধের সহিত বিবাহসন্বন্ধে ক্ষত্রিয়ের প্রায় কোনে বাধা ছিল না তাহা পুরাণে স্পষ্টই দেখা যায়। এইজন্য দেখা যায় বৌদ্ধযুগের পরবর্তী অধিকাংশ রাজবংশ ক্ষত্রয়বংশ নহে

এদিকে শক হুন প্রভৃতি বিদেশীয় অনার্ধগণ দলে দলে ভারতবর্ষে প্রবেশ করিয়! সমাজের মধ্যে অবাধে মিশিয়! যাইতে লাগিল-_ বৌদ্ধধর্মের কাট। খাল দিয়া এই-সমস্ত বন্যার জল নান] শাখায় একেবারে সমাজের মর্মস্থলে প্রবেশ করিল। কারণ. বাধা দিবার ব্যবস্থাটা তখন সমাজ- প্রকৃতির মধ্যে দুর্বল। এইরূপে ধর্মেকর্মে অনা্ধসম্মিশ্রণ অত্যন্ত প্রবল হওয়াতে সর্বপ্রকার অদ্ভুত উচ্ছঙ্খলতার মধ্যে ষখন কোনো! সংগতির সুত্র রহিল না তখনই সমাজের অস্তরস্থিত আধপ্রকৃতি অত্যন্ত পীড়িত হইয়] আপনাকে প্রকাঁশ করিবার জন্য নিজের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করিল। আর্ধপ্রকৃতি নিজেকে হারাইয়া! ফেলিয়াছিল বলিয়াই নিজেকে হুম্পষ্টবূপে আবিষ্কার করিবার জন্য তাহার একটা চেষ্টা উদ্যত হইয়। উঠিল

আমর] কী এবং কোন্‌ জিনিসট1 আমাদের-__ চারি দিকের বিপুল

৩৭

ইতিহাস

বিশ্লিষ্টতার ভিতর হইতে এইটেকে উদ্ধার করিবার একটা মহাষুগ আফসিল। সেই যুগেই ভারতবর্ষ আপনাকে ভারতবর্ষ বলিয়৷ সীমাচিহ্িত করিল তৎপূর্বে বৌদ্ধসমাজের যোগে ভারতবর্ষ পৃথিবীতে এত দূরদূরান্তরে ছড়াইয়! পড়িয়াছিল বে সে আপনার কলেবরটাকে সুস্পষ্ট করিয়। দেখিতেই পাইতেছিল না। এইজন্য আর্ব-জনশ্রুতিতে-প্রচলিত কোনে! পুরাতন চক্রবর্তী সম্রাটের রাজ্যসীমার মধ্যে ভারতবর্ষ আপনার ভৌগোিক সত্তাকে নিদিষ্ট করিয়! লইল। তাহার পরে, সামাজিক প্রলয়ঝড়ে আপনার ছিন্নবিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ধ সুত্রগুলিকে খুঁজিয়া লইয়া জোড়৷ দিবার চেষ্টা চলিতে লাগিল। এই সময়েই সংগ্রহকর্তীদের কাজ দেশের প্রধান কাজ হইল। তখনকার যিনি ব্যাস নৃতন রচন। তাহার কাজ নহে, পুরাতন সংগ্রহেই তিনি নিধুক্ত এই ব্যাস এক ব্যক্তি না হইতে পারেন, কিন্ধ ইনি সমাজের একই শক্তি। কোথায় আধসমাজের স্থিরপ্রতিষ্ঠ। ইনি তাহাই খুঁজিয়। একত্র করিতে লাগিলেন

সেই চেষ্টার বশে ব্যাস বেদ সংগ্রহ করিলেন। যথার্থ বৈদিককালে মন্ত্র যজ্ঞানুষ্ঠটানের প্রণালীগুলিকে সমাজ বত্ব করিয়া শিখিয়াছে£ও রাখিয়াছে, তবু তখন তাহ] শিক্ষণীয় বিগ্যামাত্র ছিল এবং সে বিগ্যাকেও সকলে পরাবিদ্ধা বলিয়া! মানিত ন|।

কিম্ত একদিন বিশ্রিষ্ট সমাজকে বাঁধিয়া তুলিবার জন্য এমন একটি পুরাতন শাগ্বকে মাঝখানে দাড় করাইবার দরকার হইয়াছিল যাহার সম্বন্ধে নানা লোক নানা প্রকার তর্ক করিতে পারিবে না__ যাহা আর্সমাজের সর্বপুরাতন বাণী; যাহাকে দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করিয়! বিচিত্র বিরুদ্ধসম্প্রদায়ও এক হইয়া! দরাড়াইতে পারিবে এই জন্য বেদ যদিচ প্রাত্যহিক ব্যবহার হইতে তখন অনেক দূরবর্তী হুইয়! পড়িয়াছিল তথাপি দূরের জিনিস

৩৮

ভারতবর্ষে ইতিহাসের ধারা

বলিয়াই তাহীকে দূর হইতে মান্য করা সকলের পক্ষে সহজ হইয়াছিল। আসল কথা, যে জাতি বিচ্ছিন্ন হইয়া গিয়াছিল কোনে! একটি দৃঢ়নিশ্চল কেন্দ্রকে স্বীকার না করিলে তাহার পরিধি-নির্ণ় কঠিন হয়। তাহার পরে আর্ধসমাজে বত-কিছু জনশ্রুতি খণ্ড খণ্ড আকারে চারি দিকে ছড়াইয়! পড়িয়া ছিল তাহাদিগকেও একত্র করিয়া! মহাভারত নামে সংকলিত করা হইল। যেমন একটি কেন্দ্রের প্রয়োজন তেমনি একটি ধারাবাহিক পরিধিস্থত্রও তে। চাই-_ সেই পরিধিস্থত্রই ইতিহাস। তাই ব্যাসের আর-এক কাজ হইল ইতিহাঁস সংগ্রহ করা আর্ধসমাজের যত-কিছু জনশ্রুতি ছড়াইয়া পড়িয। ছিল তাহাদিগকে তিনি এক করিলেন। শুধু জনশ্রুতি নহে; আধ্সমাজে প্রচলিত সমস্ত বিশ্বাস তর্কবিতর্ক চারিত্রনীতিকেও তিনি এই সঙ্গে এক করিয়া একটি জাতির সমগ্রতার এক বিরাট মৃতি এক জারগায় খাড়া করিলেন। ইহার নাম দিলেন মহাভারত এই নামের মধ্যেই তখনকার আধজাতির একটি এক্য-উপলন্ধির চেষ্টা বিশেষভাবে প্রকাশ পাইতেছে। আধুনিক পাশ্চাত্ত্য সংজ্ঞা অনুসারে মহাভারত ইতিহাস না হইতে পারে, কিন্তু ইহা যথার্থই আর্দের ইতিহাস। ইহা কোনো! ব্যক্তিবিশেষের রচিত ইতিহাস নহে, ইহা একটি জাতির স্বরচিত স্বাভাবিক ইতিবৃত্তান্ত। কোনো! বুদ্ধিমান্‌ ব্যক্তি যদি এই-সমস্ত জনশ্র্তিকে গলাইয়া পোড়াইয়! বিশ্লিষ্ট করিয়া ইহা! হইতে তথ্যমূলক ইতিহাস রচনা করিবার চেষ্টা করিত তবে আধ্সমাজের ইতিহাসের সত্য স্বরূপটি আমর] দেখিতে পাইতাম না। মহাভারত সংগ্রহের দিনে আর্ধজাতির ইতিহাস আর্মজাতির স্থৃতিপটে যেরূপ .রেখায় আক! ছিল, তাহার মধ্যে কিছু বা স্পষ্ট কিছু বা লুপ্ত, কিছু বা স্থুসংগত কিছু বা পরস্পরবিরুদ্ধ, মহাভারতে সেই সমস্তেরই প্রতিলিপি একত্র করিয়া রক্ষিত হইয়াছে।

৩০৯

ইতিহাস

এই মহাভারতে কেবল যে নিবিচারে জনশ্রুতি সংকলন কর] হইয়াছে তাহাও নহে আতস-কাচের এক পিঠে যেমন ব্যাপ্ত কূর্যালোক এবং আর- এক পিঠে যেমন তাহারই সংহত দীপ্তিরশ্রি, মহাভারতেও তেমনি এক দিকে ব্যাপক জনশ্রুতিরাশি, আর-এক দ্বিকে তাহারই সমস্তটির একটি সংহত জ্যোতি-_ সেই জ্যোতিটিই ভগবদ্গীতা। জ্ঞান কর্ম ভভ্তির যে সমন্বয়- যোগ তাহাই সমস্ত ভারত-ইতিহাসের চরমতত্ব নিঃসন্দেহই পৃথিবীর সকল জাতিই আপন ইতিহাসের ভিতর দিয়া কোনে! সমস্তার মীমাংসা, কোনো তত্বশির্ণয় করিতেছে__ ইতিহাসের ভিতর দিয় মানুষের চিত্ত কোনো-একটি চরম সত্যকে সন্ধান লাভ করিতেছে__ নিজের এই সন্ধানকে সত্যকে সকল জাতি স্পষ্ট করিয়া জানে না; অনেকে মনে করে পথের ইতিহাসই ইতিহাস, মূল অভিপ্রায় চরম গম্যস্থান বলিয়া! কিছুই নাই। কিন্ত ভারতবর্ষ একদিন আপনার সমস্ত ইতিহাসের একটি চরমতন্্রকে দেখিয়া ছিল। মানুষের ইতিহাসে জ্ঞান ভক্তি কর্ম অনেক সময়ে স্বতন্ত্রভাবে, এমন-কি পরস্পরবিরুদ্ধভাবে আপনার পথে চলে; দেই বিরোধের বিপ্রব ভারতবর্ষে খুব করিয়াই ঘটিয়াছে বলিয়াই এক জায়গায় তাহার সমন্বয়টিকে স্পষ্ট করিয়া সে দেখিতে পাইয়াছে। মানুষের সকল চেষ্টাই কোন্থানে আসিয়। অবিরোধে মিলিতে পারে মহাভারত সকল পথের চৌমাথায় সেই চরম লক্ষ্যের আলোকটি জালাইয়া ধরিয়াছে। তাহাই গীতা এই গীতার মধ্যে মুরোগীয় পণ্তিতের1 লজিক-গত অসংগতি দেখিতে পান। ইহাতে সাংখ্য বেদান্ত এবং যোগকে যে একত্রে স্থান দেওয়া হইয়াছে তাহার মনে করেন সেট? একট] জোড়াতাড়া ব্যাপার-_ অর্থাৎ, তাহাদের মতে ইহার মূলটি সাংখ্য যোগ, বেদাস্তটি তাহার পরবর্তাঁ কোনো সম্প্রদায়ের দ্বারা যোজন করা হইতেও পারে, মূল ভগবদ্গীত! ভারতবর্ষের

৪8৩5

ভারতবর্ষে ইতিহাসের ধারা

সাংখ্য যোগতত্বকে আশ্রয় করিয়া উপদিষ্ট, কিন্ত মহাভারত-সংকলনের যুগে সেই মূলের বিশুদ্ধতা-রক্ষাই প্রধান উদ্দেন্ট ছিল নাঁ_ সমস্ত জাতির চিত্তকে সমগ্র করিয়া এক করিয়৷ দেখাই তখনকার সাধনা ছিল। অতএব থে গ্রন্থে তত্বের সহিত জীবনকে মিলাইয়! মানুষের কর্তব্যপথ নির্দেশ করা হইয়াছে সে গ্রন্থে বেদান্ততত্বকে তাহার! বাদ দিতে পারেন নাই সাংখ্যই হোক, যোগই হোক, বেদান্তই হোক, সকল তত্বেরই কেন্দ্রস্থলে একই বস্তু আছেন; তিনি কেবলমাত্র জ্ঞান বা ভক্তি ব! কর্মের আশ্রয় নহেন, তিনি পরিপূর্ণ মানবজীবনের পরমাগতি, তাহাতে আসিয়! না মিলিলে কোনো! কথাই সত্যে আসিয়া পৌছিতে পারে না__ অতএব ভারতচিত্তের সমস্ত প্রয়াসকেই সেই এক মূল সত্যের মধ্যে এক করিয়! দেখাই মহাভারতের দেখা। তাই মহাভারতের এই গীতার মধ্যে লঙ্জিকের এক্যতত্ব সম্পূর্ণ না থাকিতেও পারে, কিন্তু তাহার মধ্যে বৃহৎ একটি জাতীয় জীবনের অনির্বচনীয় এক্যতত্ব আছে। তাহার স্পষ্টত1 অস্পষ্টতা, সংগতি অসংগতির মধ্যে গভীরতম এই একটি উপলব্ধি দেখা যাঁয় যে, সমস্তকে লইয়াই সত্য, অতএব এক জায়গায় মিল আছেই এমনকি, গীতায় যজ্ঞকেও সাধনা ক্ষেত্রে স্থান দিয়াছে। কিন্তু গীতায় যজ্ঞব্যাপার এমন একটি বড়ে! ভাব পাইয়াছে যাহাতে তাহার সংকীর্ণতা ঘুচিয়া সে একটি বিশ্বের সামগ্রী হুইয়। উঠিয়াছে। যে-সকল ক্রিয়াকলাপে মানুষ আত্মশক্তির দ্বার বিশ্বশক্তিকে উদ্‌বোধিত করিয়। তোলে তাহাই মানুষের যজ্জ। গীতাকার যদি এখনকার কালের লোক হুইতেন তবে সমস্ত আধুনিক বেজ্ঞানিক অধ্যবসায়ের মধ্যে তিনি মানুষের সেই যজ্জঞকে দেখিতে পাইতেন। যেমন জ্ঞানের দ্বারা অনস্ত জ্ঞানের সঙ্গে যোগ, কর্মের ছারা অনন্ত মঙ্গলের সঙ্গে যোগ, ভক্তির দ্বারা অনস্ত ইচ্ছার সঙ্গে যোগ, তেমনি যজ্ঞের দ্বারা অন্ত শক্তির সঙ্গে আমাদের ৪১

ইতিহাস

যোগ__ এইরূপে গীতায় ভূমার সঙ্গে মানুষের সকল প্রকারের যোগকেই সম্পূর্ণ করিয়া দেখাইয়াছেন-__ একদ] যজ্ঞকাণ্ডের ঘ্বারা মান্থষের যে চেষ্টা বিশ্বশক্তির সিংহদ্ারে আঘাত করিতেছিল গীত। তাহাকেও সত্য বলিয় দেখিয়াছেন

এইরূপে ইতিহাসের নান বিশ্ষিপ্ততার মধ্য হইতে তখনকার কালের প্রতিভা যেমন একটি মূলস্থত্র খু'জিয়। বাহির করিয়াছিল তেমনি বেদের মধ্য হইতেও তাহ) একটি স্ত্র উদ্ধার করিয়াছিল তাহাই ত্রহ্গন্থত্র তখনকার ব্যাপের এও একটি কীতি। তিনি যেমন এক দিকে ব্য্টিকে রাখিয়াছেন আর-এক দিকে তেমনি সমষ্টিকেও প্রত্যক্ষগোচর করিয়াছেন ; তাহার সংকলন কেবল আয়োজনমাত্র নহে, তাহ। সংযোজন ; শুধু সঞ্চয় নহে, তাহা পরিচয় সমস্ত বেদের নানা পথের ভিতর দিয়! মানুষের চিত্তের একটি সন্ধান একটি লক্ষ্য দেখিতে পাওয়া যায়__ তাহাই বেদান্ত তাহার মধ্যে একটি ছৈতেরও দিক আছে একটি অদ্বৈতৈরও দিক আছে, কারণ, এই ছুইটি দিক ব্যতীত কোনে1একটি দিকও সত্য হইতে পারে না। লজিক ইহার কোনো সমন্বয় পায় না, এইজন্য যেখানে ইহার সমন্বয় সেখানে ইহাকে অনির্বচনীয় বল। হয়। ব্যাসের ব্রদ্ষহত্রে এই দ্বৈত অদ্বৈত ছুই দিককেই রক্ষা কর! হইয়াছে এইজন্ত পরবতীকালে এই একই ব্রহ্মস্ত্রকে লজিক নান বার্দবিবাদে বিভক্ত করিতে পারিয়াছে। ফলত ্রহ্মহ্ুত্রে আ্ধধর্মের মূলতব্রটি-দবারা সমস্ত আধধর্মশাস্্কে এক আলোকে আলোকিত করিবার চেষ্টা কর! হইয়াছে কেবল আধধর্ম কেন, সমস্ত মানবের ধর্মের ইহাই এক আলোক

এইরূপে নান? বিরুদ্ধতার দ্বারা পীড়িত আর্ধপ্রকৃতি একদিন আপনার সীম। নির্ণয় করিয়া! আপনার মূল এঁক্যটি লাভ করিবার জন্য একান্ত যত্বে

১০০০৬১১০১০১

ভারতবর্ষে ইতিহাসের ধারা

প্রবৃত্ত হইয়াছিল তাহার লক্ষণ স্পষ্টই দেখিতে পাওয়1 যায়। তাই আর্য জাতির বিধিনিষেধগুলি যাহ কেবল স্থৃতিরূপে নানা স্থানে ছড়াইয়া ছিল এই সময়ে তাহাঁও সংগৃহীত হইম্ম| লিপিবদ্ধ হইতে লাগিল।

আমরা এই-যে মহাভারতের কথ এখানে আলোচনা করিলাম ইহাকে কেহ যেন কালগত যুগ না মনে করেন__ ইহা ভাবগত যুগ-_- অর্থাৎ আমরা! কোনো-একটি সংকীর্ণ কালে ইহাকে বিশেষভাবে নির্দিষ্ট করিতে পারি না। বৌদ্ধমুগের যথার্থ আরস্ত কবে তাহা স্থম্পষ্টর্ূপে বলা অসম্ভব ; শাক্যসিংহের বহু পূর্বেই যে তাহার আয়োজন চলিতেছিল এবং তাহার পূর্বেও যে অন্য বুদ্ধ ছিলেন তাহাতে সন্দেহ নাই। ইহ একটি ভাবের ধারাপরম্পর! যাহা গৌতমবুদ্ধে পূর্ণ পরিণতি লাভ করিয়াছিল মহাভারতের যুগও তেমনি কবে আরম্ভ তাহা স্থির করিয়া বলিলে তুল বলা হইবে। পূর্বেই বলিয়াছি, সমাজের মধ্যে ছড়ানে| কুড়ানো! এক সঙ্গেই চলিতেছে যেমন পূর্ব-মীমাংস1! উত্তর-মীমাংসা। ইহা যে পুরাতন পক্ষ নৃতন পক্ষের বোঝাপড়1 তাহাতে সন্দেহ নাই এক পক্ষ বলিতেছেন, যে-সকল মন্ত্র কর্মকাণ্ড চলিয়া আসিয়াছে তাহা অনাদি, তাহার বিশেষ গুণবশতই তাহার দ্বারাই চরম সিদ্ধি লাভ করা যায়। অপর পক্ষ বলিতেছেন, জ্ঞান ব্যতীত আর কোনে উপায়ে মুক্তি নাই যেছুই গ্রন্থ আশ্রয় করিয়া এই ছুই মত বর্তমানে প্রচলিত আছে তাহার রচনাকাল যখনই হউক, এই মতদ্বৈধ যে অতি পুরাতন তাহ] নিঃসন্দেহ। এইরূপ আধসমাজের যে উদ্যম আপনার সামগ্রীগুলিকে বিশেষভাবে সংগৃহীত শ্রেণীবদ্ধ করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছে এবং যাহ! সুদীর্ঘকাল ধরিয়া ভিন্ন ভিন্ন পুরাণ সংকলন করিয়া ্বজাতির প্রাচীন পথটিকে চিহিত করিয়া আসিয়াছে তাহা বিশেষ কোনো সময়ে সীমাবদ্ধ নহে। আর্ধ-অনার্ষের চিরস্তন সংমিঅণের সঙ্গে সঙ্গেই

৪৩

ইতিহাস

ভারতবর্ষের এই ছুই বিরুদ্ধ শক্তি চিরকালই কাজ করিয়া আসিয়াছে ইহাই আমাদের বক্তব্য |

কথা কেহ যেন না মনে করেন যে অনার্ধেরা আমাদিগকে দিবার মতো! (কোনে! জিনিস দেয় নাই বস্তৃত প্রাচীন দ্রাবিড়গণ সভ্যতায় হীন ছিল না। তাহাদের সহযোগে হিন্দুসভ্যতা রূপে বিচিত্র রসে গভীর হইয়াছে। দ্রাবিড় তত্রঙ্ঞানী ছিল না, কিন্তু কল্পন1! করিতে, গান করিতে এবং গড়িতে পারিত। কলাবিগ্ভায় তাহার! নিপুণ ছিল এবং তাহাদের গণেশ-দেবতার বধূ ছিল কলাবধূ। আর্যদের বিশুদ্ধ ততজ্ঞানের সঙ্গে দ্রাবিড়ের রসপ্রবণতা রূপোদ্ভাবনী শক্তির সন্মিশ্রণ-চেষ্টায় একটি বিচিত্র সামগ্রী গড়িয়া উঠিয়াছে। তাহা সম্পূর্ণ আর্ধও নহে, সম্পূর্ণ অনার্ধও নহে, তাহাই হিন্দু। এই ছুই বিরুদ্ধের নিরস্তর সমন্বয়-প্রয়াসে ভারতবর্ষ একটি আশ্চর্ম সামগ্রী পাইয়াছে। তাহা অনন্তকে অস্তের মধ্যে উপলব্ধি করিতে শিখিয়াছে এবং ভূমাকে প্রাত্যহিক জীবনের সমস্ত তুচ্ছতার মধ্যেও প্রত্যক্ষ করিবার অধিকার লাভ করিয়াছে এই কারণেই ভারতবর্ষে এই ছুই বিরুদ্ধ যেখানে ন1 মেলে সেখানে মূঢ়তা অন্ধ সংস্কারের আর অন্ত থাকে না; যেখানে মেলে সেখানে অনন্তের অন্তহীন রসরূপ আপনাকে অবাধে সর্বত্র উদ্ঘাটিত করিয়া দেয়। এই কারণেই ভারতবর্ষ এমন একটি জিনিস পাইয়াছে যাহাকে ঠিকমত ব্যবহার করা সকলের সাধ্যায়ত্ত নহে, এবং ঠিকমত ব্যবহার করিতে না পারিলে যাহা জাতির জীবনকে যৃঢ়তার ভারে ধূলিলুষ্ঠিত করিয়া দেয়। আর্য দ্রাবিড়ের এই চিত্তবৃত্তির বিরুদ্ধতাঁর সম্মিলন যেখানে সিদ্ধ হইয়াছে সেখানে সৌন্দর্য জাগিয়াছে, যেখানে হওয়। সম্ভবপর হয় নাই সেখানে কদর্ধতার সীম] দেখি না। কথাও মনে রাখিতে হইবে, শুধু দ্রাবিড় নহে, বর্বর অনার্ধদের সামগ্রীও একদিন দ্বার

6৪

ভারতবর্ষে ইতিহাসের ধার৷

খোল! পাইয়া! অসংকোচে আর্ধসমাজে প্রবেশলাভ করিয়াছে এই অনধিকার-প্রবেশের বেদনাবোধ বহুকাল ধরিয়া আমাদের সমাজে স্ৃতীব্র হইয়। ছিল।

যুদ্ধ এখন বাহিরে নহে, যুদ্ধ এখন দেহের মধ্যে-_ কেননা, অস্থ এখন শরীরের মধ্যেই প্রবেশ করিয়াছে, শক্র এখন ঘরের ভিতরে আর্ধ- সভ্যতার পক্ষে ব্রাঙ্গণ এখন একমাত্র এইজন্য এই সময়ে বেদ যেমন অভ্রান্ত ধর্মশাস্ত্র্ূপে সমাজস্থিতির সেতু হইয়া দাঁড়াইল, ত্রা্গণও সেইরূপ সমাজে সর্বোচ্চ পূজ্যপদ গ্রহণের চেষ্ট| করিতে লাগিল তখনকার পুরাণে ইতিহাসে কাব্যে সর্বত্রই এই চেষ্টা এমনি প্রবল আকারে পুনঃপুনঃ প্রকাশ পাইতেছে যে স্পষ্টই বুবা ঘায় যে, তাহা একট! প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে প্রয়াস, তাহ! উজান-শ্রোতে গুণ টানা, এইজন্য গুণবন্ধন অনেকগুলি এবং কঠিন টানের বিরামমাত্র নাই। ব্রাহ্মণের এই চেষ্টাকে কোনো-একটি সম্প্রদায়বিশেষের স্বার্থসধন ক্ষমতাল'ভের চেষ্ট। মনে করিলে ইতিহাসকে সংকীর্ণ মিথ্য। করিয়া দেখা হয়। চেষ্টা তখনকার সংকট গ্রস্ত আধজাতির অন্তরের চেষ্টা ইহ] আত্মরক্ষার প্রাণপণ প্রযত্ব। তখন সমস্ত সমাজের লোকের মনে ব্রাঙ্ষণের প্রভাবকে সর্বতোভাবে অক্ষুণ্ন করিয়া তুলিতে না! পারিলে যাহ! চারি দিকে ভাঙিয়! পড়িতেছিল তাহাকে জুড়িয়। তুলিবার কোনে। উপায় ছিল ন1।

এই অবস্থায় ব্রাক্মণদের ছুইটি কাজ হুইল। এক, পূর্বধারাকে রক্ষ! করা; আর-এক, নৃতনকে তাহার সহিত মিলাইয়া! লওয়|। জীবনীপ্রক্রিয়ার এই ছুইটি কাজই তখন অত্যন্ত বাধাগ্রস্ত হইয়া উঠিয়াছিল বলিয়াই ব্রাহ্মণের ক্ষমতা অধিকারকে এমন অপরিমিত করিয়া তুলিতে হইয়াছিল। অনার্ধদেবতাকে বেদের প্রাচীন মঞ্চে তুলিয়া লওয়! হইল, বৈদিক রুদ্র

৪৫

ইতিহাস

উপাধি গ্রহণ করিয়। শিব আর্দেবতার দলে স্থান পাইলেন। এইরূপে ভারতবর্ষে সামাজিক মিলন ব্রহ্মা বিষণ মহেশ্বরে বূপ গ্রহণ করিল। ব্রক্ধায় আধসমাজের আরম্ভকাল, বিষ্ণতে মধ্যাহুকাল, এবং শিবে তাহার শেষ পরিণতির রূপ রহিল

শিব যদিচ রুদ্রনামে আধসমাজে প্রবেশ করিলেন তথাপি তাহার মধ্যে আর্য অনার্য এই ছুই মুতিই স্বতন্ত্র হইয়া রহিল। আর্ধের দিকে তিনি যোগীশ্বর, কামকে ভম্ম করিয়! নির্বাণের আনন্দে নিমগ্ন; তাহার দিগ্বাস সন্যাসীর ত্যাগের লক্ষণ; অনার্ধের দিকে তিনি বীভৎস, রক্তাক্তগজাজিন- ধারী, গঞ্জিকা ভাঙ-ধুতুরায় উন্মত্ত আর্ধের দিকে তিনি বুদ্ধেরই প্রতিরূপ এবং সেই রূপেই তিনি সর্বত্র সহজেই বুদ্ধমন্দিরসকল অধিকার করিতেছেন ; অন্য দিকে তিনি ভূত প্রেত প্রভৃতি শ্মশানচর সমস্ত বিভীষিকা এবং সর্পপূজা! বুষপুজ| বৃক্ষপূজ, লিঙ্গপূজা প্রভৃতি আত্মসাৎ করিয়া সমাজের অন্তর্গত অনার্ধদের সমস্ত তামসিক উপাসনাকে আশ্রয় দান করিতেছেন। এক দিকে প্রবৃত্তিকে শান্ত করিয়! নির্জনে ধ্যানে জপে তীহার সাধনা; অন্ত দিকে চড়কপৃজা! প্রভৃতি ব্যাপারে নিজেকে প্রমত্ত করিয়া শরীরকে নানা প্রকারে ক্রেশে উত্তেজিত করি] নিদারুণভাবে তীহার আরাধন]।

এইরূপে আধ-অনারধের ধারা গঙ্গাযমুনার মতে। একত্র হইল, তবু তাহার ছুই রঙ পাশাপাশি রহিয়! গেল! এইরূপে বৈষ্ণব ধর্মের মধ্যে কৃষ্ণের নামকে আশ্রয় করিয়া যে-সমস্ত কাহিনী প্রবেশ করিল তাহ! পাগুবসথা। ভাগবতধর্মপ্রবর্তক বীরশ্রেষ্ঠ ছবারকাপুরীর এরুষ্ের কথা নহে। বৈষ্ণব ধর্মের এক দিকে ভগবদগীতার বিশুদ্ধ অবিমিশ্র উচ্চ ধর্মতত্ব রহিল, আর- এক দিকে অনার্ধ আভীর গোপজাতির লোক প্রচলিত দেবলীলার বিচিত্র কথা তাহার সহিত যুক্ত হইল শৈব ধর্মকে আশ্রয় করিয়া যে জিনিসগুলি মিলিত

৪৬

ভারতবর্ষে ইতিহাসের ধার!

হইল তাহ] নিরাভরণ এবং নিদ্ারণ ; তাহার "শান্তি এবং তাহার মত্ততা, তাহার স্থাখুবৎ অচল স্থিতি এবং তাহার উদ্দাম তাগুবনৃত্য, উভয়ই বিনাশের ভাবস্থত্রটিকে আশ্রয় করিয়া গাথ। পড়িল। বাহিরের দিকে তাহ! আসক্তি- বন্ধন ছেদন মৃত্যু, অন্তরের দিকে তাহা! একের মধ্যে বিলয়__ ইহাই আর্ধ সভ্যতার অদ্বৈতস্থত্র ইহাই নেতি-নেতির দিক; ত্যাগ ইহার 'আভরণ, শ্মশানেই ইহার বাস। বৈষ্ণব ধর্মকে আশ্রয় করিয়া লোক প্রচলিত যে পুরাণকাহিনী আর্ধসমাজে প্রতিষ্ঠিত হইল তাহার মধ্যে প্রেমের, সৌন্দর্ধের এবং যৌবনের লীল]; প্রলয়পিনাকের স্থলে সেখানে বাশির ধ্বনি; ভূতপ্রেতের স্থলে সেখানে গোপিনীদের বিলাস; সেখানে বুন্দাবনের চিরবসন্ত এবং গোলকধামের চির-এশ্বর্ধ ; এইখানে আর্ধসভ্যতার দ্বৈতসূত্র |

একটি কথ। মনে রাখা আবশ্তক এই-যে আভীরসম্প্রদথায়-প্রচলিত কৃষ্ণকথ! বৈষ্ণব ধর্মের সহিত মিশিয়া গিয়াছে তাহার কারণ এই যে, এখানে পরস্পর মিশিবার একাট সত্য পথ ছিল। নায়ক-নায়িকার সম্বন্ধকে জীব ভগবানের স্বন্ধের রূপক ভাবে পুথিবীর নান। স্থানেই মানুষ স্বীকার করিয়াছে আযবৈষ্ণব ভক্তির এই তন্বটিকে অনাধদের কাহিনীর সঙ্গে মিলিত করিয়। সেই-সমস্ত কাহিনীকে একটি উচ্চতম সত্যের মধ্যে উত্তীর্ণ করিয়া লইল। অনাধের চিত্তে যাহা কেবল রসমাদকতারূপে ছিল আর্ধ তাহাকে সত্যের মধ্যে নিত্যপ্রতিষ্ঠ করির1 দেখিল-_ তাহ। কেবল বিশেষ জাতির বিশেষ একটি পুরাণকথারূপে রহিল ন। তাহ! সমস্ত মানবের একটি চিরন্তন আধ্যাত্মিক সত্যের রূপকরূপে প্রকাশ পাইল আর্য এবং দ্রাবিড়ের সন্মিলনে এইরূপে হিন্দুসভ্যতায় সত্যের সহিত রূপের বিচিত্র সম্মিলন ঘটিয়! আসিয়াছে-- এইখানে জ্ঞানের সহিত রসের, একের সহিত বিচিত্রের অন্তরতর সংযোগ ঘটিয়াছে।

৪৭

ইতিহাস

আর্ধসমাজের মূলে পিতৃশাসনতন্ত্র অনার্ধমাজের মূলে মাতৃশাসনতন্ত্র এইজন্য বেদে স্ত্রীদেবতার প্রাধান্ত নাই আর্ধসমাজে অনার্যপ্রভাবের সঙ্গে এই স্ত্রীদেবতাদের প্রাহুর্তাব ঘটিতে লাগিল! তাহা লইয়া যে সমাজে বিস্তর বিরোধ ঘটিয়াছে, প্রারুত সাহিত্যে তাহার নিদর্শন দেখিতে পাঁওয়! যাঁয়। এই দেবীতন্বের মধ্যেও এক দিকে হৈমবতী উমার স্থশোভন1 আরধমৃতি, অন্য দিকে করালী কালিকার কপালমালিনী বিবসনা অনার্ধমৃতি

কিন্তু সমস্ত অনার্ধ অনৈক্যকে তাহার সমস্ত কল্পনাকাহছিনী আচার পুজাপদ্ধতি লইয়া! আর্ধভাবের এক্যস্থত্রে আদ্যোপান্ত মিলিত করিয়! তোল! কোনোমতেই সম্ভবপর হয় নাঁ_ তাহার সমস্তটাকেই রক্ষা করিতে গেলে তাহার মধ্যে শত সহম্স অসংগতি থাকিয়। যায়। এই-সমস্ত অসংগতির কোনোপ্রকার সমন্বয় হয় নাঁ_ কেবল কালক্রমে তাহ অভ্যস্ত হইয়! যায় মাত্র। এই অভ্যাসের মধ্যে অসংগতিগুলি একত্র থাকে, তাহাদের মিলিত করিবার প্রয়ো্নবোধও চলিয়া যায়। তথন ধীরে ধীরে এই নীতিই সমাজে প্রবল হইয়া উঠে যে, যাহার যেরূপ শক্তি প্রবৃত্তি মে সেইরূপ পূজা আচার লইয়াই থাক্‌। ইহা! এক প্রকার হাল-ছাড়িয়াঁদেওয়]! নীতি যখন বিরুদ্ধগুলিকে পাশে রাখিতেই হইবে অথচ কোনোমতেই মিলাইতে পারা যাইবে না, তখন এই কথ! ছাড়! অন্য কথা হইতেই পারে না।

এইরূপে বৌদ্ধ যুগের প্রলয়াবসানে বিপর্যস্ত সমাজের নৃতন পুরাতন সমস্ত বিচ্ছিন্ন পদার্থ লইয়া! ব্রাহ্মণ যেমন করিয়া! পারে সেগুলিকে সাজাইয়| শৃঙ্খলাবদ্ধ করিতে বসিল। এমন অবস্থায় স্বভাবতই শৃঙ্খল অত্যন্ত কঠিন হইয়! উঠে। যাহার! ব্বতই স্বতন্ত্র যাহার! নানা জাতির নানা! কালের সামগ্রী, তাহাদিগকে এক করিয়া বাধিতে গেলে বাধন অত্যন্ত ভাট

৪৮৮

ভারতবর্ষে ইতিহাসের ধারা!

করিয়া রাখিতে হয়__- তাহার! জীবনধর্মের নিয়ম-অনুসারে আপনার যোগ আপনিই সাধন করে না।.

ভারতবর্ষে ইতিহাসের আরম্তযুগে যখন আর্ধ-অনার্ষে যুদ্ধ চলিতেছিল তখন ছুই পক্ষের মধ্যে একট] প্রবল বিরোধ ছিল। এই-প্রকার বিরোধের মধ্যেও এক প্রকারের সমকক্ষতা থাকে মান্য যাহার সঙ্গে লড়াই করে তাহাকে তীব্রভাবে দ্বেষ করিতে পারে, কিন্তু তাহাকে মনের সঙ্গে অবজ্ঞা করিতে পারে না। এইজন্য ক্ষত্রিয়ের অনার্ধের সহিত যেমন লড়াই করিয়াছে তেমনি তাহাদের সহিত মিলিতও হুইয়াছে। মহাভারতে ক্ষত্রিয়দের বিবাহের ফর্দ ধরিলেই তাহ! বুঝা যাইবে

কিন্ত ইতিহাসে পরবর্তী যুগে খন আর-একদ্িন অনার্ধবিরোধ তীব্র হইয়া উঠিয়াছিল অনার্ধেরা তখন আর বাহিরে নাই, তাহারা একেবারে ঘরে ঢুকিয়! পড়িয়াছে। ্তরাং তখন যুদ্ধ করিবার দিন আর নাই এইজন্য সেই অবস্থায় বিদ্বেষ একান্ত একট! ঘ্বণার আকার ধরিয়াছিল। এই স্বণাই তখন অস্ত্র। দ্বণার দ্বার! মানুষকে কেবল যে দূরে ঠেকাইয়া রাখা যায় তাহা নহে, যাহাকে সকল প্রকারে ঘ্বণা করা যায় তাহারও মন আপনি খাটে হইয়া! আসে; সেও আপনার হীনতার মংকোচে সমাজের মধ্যে কুন্ঠিত হইয়| থাকে ; যেখানে সে থাকে সেখানে সে কোনোরূপ অধিকার দাবি করে না। এইরূপে যখন সমাজের এক ভাগ আপনাকে নিকষ বণিয়াই স্বীকার করিয়! লয় এবং আর-এক ভাগ আপনার আধিপত্যে কোনে! বাধাই পায় না তখন নীচে যে থাকে সে যতই অবনত হয় উপরে যে থাকে সেও ততই নামিয়া পড়িতে থাকে ভারতবর্ষে আত্ম- প্রসারণের দিনে যে অনাধবিদ্ধেষ ছিল এবং আত্মসংকোচনের দিনে যে অনাধবিদ্বেষ জাগিল উহার মধ্যে অত্যন্ত প্রভেদ। প্রথম বিদ্বেষের

৪৭

ইতিহাস

সমতল-টানে মম্ুয্যত্ব খাঁড়া থাকে, দ্বিতীয় বিদ্বেষের নীচের টানে মনুষ্যত্ব নামিয়া যায়। যাহাকে মারি সে যখন ফিরিয়া মারে তখন মানুষের মঙ্গল, যাহাকে মারি সে যখন নীরবে সে মার মাথা পাতিয়া লয় তখন বড়ো দুর্গতি। বেদে অনার্ধদের প্রতি যে বিদ্বেষপ্রকাশ আছে তাহার মধ্যে পৌরুষ দেখিতে পাই, মন্ুসংহিতায় শত্রের প্রতি যে একাত্ত অন্যায় নিষ্ঠুর অবজ্ঞা দেখা যায় তাহার মধ্যে কাপুরুষতারই লক্ষণ ফুটিয়াছে। মানুষের ইতিহাসে সর্বত্রই এইরূপ ঘটে যেখানেই কোনো-এক পক্ষ সম্পূর্ণ একেশ্বর হয়, যেখানেই তাহার সমকক্ষ প্রতিপক্ষ কেহই থাকে না, সেখানেই কেবল বন্ধনের পর বন্ধনের দিন আসে? সেখানেই একেশ্বর প্রত নিজের প্রতাপকে সকল দিক হইতেই সম্পূর্ণ বাধাহীনরূপে নিরাপদ করিতে গিয়া নিজের প্রতাপই নত করিয়া ফেলে বস্তত মানুষ যেখানেই মানুষকে '্বণা করিবার অপ্রতিহত অধিকার পায় সেখানে যে মাদক বিষ তাহার প্রকৃতির মধ্যে প্রবেশ করে তেমন নিদারুণ বিষ মাল্ষের পক্ষে আর কিছুই হইতে পারে না। আর্ধ অনা, ব্রাহ্মণ শূত্র, মুরোপীয় এসিয়াটিক, আমেরিকান নিগ্রো, যেখানেই এই দুর্ঘটন1 ঘটে সেখানেই দুই পক্ষের কাপুরুষতা পুগ্তীভূত হইয়! মা্গযের সর্বনাশকে ঘনাইয়! আনে। বরং শত্রুতা শ্রেয়, কিন্ত ঘ্বণ। ভয়ংকর

্রাহ্মণ একদিন সমস্ত ভারতবর্াঁয় সমাজের একেশ্বর হইয়া উঠিল এবং সমাজবিধি সকলকে অত্যন্ত কঠিন করিয়া বাধিল। ইতিহাসে অত্যন্ত প্রসারণের যুগের পর অত্যন্ত সংকোচনের যুগ স্বভাবতই ঘটিল।

বিপদ হইল এই যে, পূর্বে সমাজে ব্রাহ্গণ ক্ষত্রির এই ছুই শক্তি ছিল। এই ছুই শক্তির বিরুদ্ধতার যোগে সমাজের গতি মধ্যপথে নিয়ন্ত্রি হইতেছিল এখন সমাজে সেই ক্ষত্রিয়শক্তি আর কাজ করিল না।

৫০

ভারতবর্ষে ইতিহাসের ধারা

সমাজের অনার্ধশক্তি ব্রাহ্মণশক্তির প্রতিযোগীরূপে দাঁড়াইতে পারিল না_ ব্রাহ্মণ তাহাকে অবঙ্ঞার সহিত স্বীকার করিয়া! লইয়া আপন পরাভবের উপরেও জয়স্তস্ত স্থাপিত করিল। .

দিকে বাহির হইতে যে বীর জাতি এক সময়ে ভারতবর্ষে প্রবেশ করিয়া রাজপুত নামে ভারতবর্ষের প্রায় সমস্ত সিংহাসনগুলিই অধিকার করিয়া লইয়াছে, ব্রাঙ্মগণগণ অন্যান্য অনার্ধদের ন্যায় তাহাঁদিগকেও স্বীকার করিয়! লইয়া! একটি কৃত্রিম ক্ষত্রিয় জাতির স্ষ্টি করিল। এই ক্ষত্রিয়গণ বুদ্ধিপ্রকৃতিতে শ্রাক্ষণদের সমকক্ষ নহে। ইহার! প্রাচীন আর্য ক্ষত্রিয়দের স্তায় সমাজের স্ষ্টিকার্ধে আপন প্রতিভা প্রয়োগ করিতে পারে নাই, ইহারা সাহস বাহুবল লইয়া ব্রাঙ্গণশক্তির সহায় অনুবর্তী হইয়া! বন্ধনকে দৃঢ় করিবার দিকেই সম্পূর্ণ যোগ দিল।

এরূপ অবস্থায় কখনোই সমাজের ওজন ঠিক থাকিতে পারে না। আত্মগ্রসারের পথ একেবারে অবরুদ্ধ হুইয়! একমাত্র আত্মরক্ষণীশক্তি সংকোচের দ্রিকেই যখন পাকের পর পাক জড়াইয়া৷ চলে তখন জাতির প্রতিভা স্ফূতি পাইতে পারে না। কারণ মমাজের এই বন্ধন একটা কৃত্রিম পদার্থ ; এইরূপ শিকল দিয়া বাধার দ্বারা কখনো কলেবর গঠিত হয়না ইহাতে কেবলই বংশাহুক্রমে জাতির মধ্যে কালের ধর্মই জাগে জীবনের ধর্মই হ্রাস পায়; এরূপ জাতি চিন্তায় কর্মে কতৃত্বভাবের অযোগ্য হইয়া পরাধীনতার জন্যই সর্বতোভাবে প্রস্তুত হইতে থাকে। আর্ধ-ইতিহাসের প্রথম যুগে যখন সমাজের অভ্যাস-প্রবণত বিস্তর বাহিরের জিনিস জমাইয়া তুলিয়া চলিবার পথ বন্ধ করিয়া দিতেছিল তখন সমাজের চিন্তবৃত্তি তাহার মধ্যে দিয়! এক্যের পথ সন্ধান করিয়! এই বহুর বাধ! হইতে আপনাকে মুক্ত করিয়াছিল। আজও সমাজে তেমনি আর-এক দিন

৫৯

ইতিহাস

আসিয়াছে আজ বাহিরের জিনিস আরও অনেক বেশি এবং আরও অনেক অসংগত। তাহ। আমাদের জাতির চিত্তকে ভারপগ্রস্ত করিয়! দিতেছে অথচ সমাজে স্থুদীর্ঘকাল ধরিয়া যে একমাত্র শক্তি আধিপত্য করিতেছে তাহা রক্ষণীশক্তি। তাহ! যাঁকিছু আছে তাহাকেই রাখিয়াছে, যাহ! ভাঙিয়া পড়িতেছে তাহাকেও জমাইতেছে, যাহ। উড়িয়া আসিয়! পড়িতেছে তাহাঁকেও কুড়াইতেছে। জাতির জীবনের গতিকে এই-সকল অভ্যাসের জড়সঞ্চয় পদে পদে বাধ। না দিয়া থাকিতে পারে ন|; ইহা! মানুষের চিন্তাকে সংকীর্ণ কর্মকে সংরুদ্ধ করিবেই ; সেই দুর্গতি হইতে বাচাইবার জন্ত এই কালেই সকলের চেয়ে সেই চিত্তশক্তিরই প্রয়োজন হইয়াছে যাহা জটিলতার মধ্য হইতে সরলকে, বাহিকতার মধ্য হইতে অন্তরকে এবং বিচ্ছিন্তার মধ্য হইতে এককে বাধামুক্ত করিয়া বাহির করিবে অথচ আমাদের ছুূর্ভাগযক্রমে এই চিত্তশক্তিকেই অপরাধী করিয়! তাহাকে সমাজ হাজার শিকলে কারাগারেখবন্দী করিয়া রাখিয়াছে। কিন্ত তবু এই বন্ধনজর্জর চিত্ত একেবারে চুপ করিয়া থাকিতে পারে না। সমাজের একান্ত আত্মসংকোচনের অচৈতন্যের মধ্যেও তাহার আত্মপ্রসারণের উদ্বোধনচেষ্টা ক্ষণে ক্ষণে যুঝিয়াছে, ভারতবর্ষের মধ্যযুগে তাহার দৃষ্টান্ত দেখিয়াছি। নানক কবীর প্রভৃতি গুরুগণ সেই চেষ্টাকেই আকার দিয়াছেন কবীরের রচনা জীবন আলোচন| করিলে স্পষ্টই দেখা যায় তিনি ভারতবর্ষের সমস্ত বাহ্‌ আবর্জনাকে ভেদ করিয়! তাহার অন্তরের শ্রেষ্ট সামগ্রীকেই ভারতবর্ষের সত্যসাধন! বলিয়া উপলব্ধি করিয়াছিলেন, এইজন্য তীহার পশ্থীকে বিশেষরূপে ভারতপন্থী বল! হুইয়াছে। বিপুল বিক্ষিপ্ততা অসংলগ্তার মধ্যে ভারত যে কোন্‌ নিভৃতে, সত্যে, প্রতিষ্ঠিত আছেন তাহা যেন ধ্যানযোগে তিনি স্ুম্পষ্ট ৫২

ভারতবর্ষে ইতিহাসের ধারা

দেখিতে পাইয়াছিলেন। সেই মধ্যযুগে পরে পরে বারবার সেইরূপ গুরুরই অভ্যুদয় হইয়াছে-₹ তাহাদের একমাত্র চেষ্টা এই ছিল, যাহ] বোঝা! হইয়] উঠিয়াছে তাহাকেই সোজ| করিয়া তোল।। ইহারাই লোকাচার শাস্মবিধি সমস্ত চিরাভ্যাসের রুদ্ধ দ্বারে করাঘাত করিয়া মত্য ভারতকে তাহার বাহ্‌ বেষ্টনের অন্তঃপুরে জাগাইয়া তুলিতে চাহিয়াছিলেন।

সেই যুগের এখনও অবসান হয় নাই, সেই চেষ্টা এখনও চলিতেছে এই চেষ্টাকে কেহ রোধ করিতে পারিবে না; কারণ ভারতবর্ষের ইতিহাসে আমর] প্রাচীনকাল হইতেই দেখিয়াছি, জড়ত্বের বিরুদ্ধে তাহার চিত্ত বরাবরই যুদ্ধ করিয়। আসিয়াছে; ভারতের সমস্ত শ্রেষ্ঠ সম্পদ, তাহার উপনিষদ, তাহার গীতা, তাহার বিশ্বপ্রেমমূলক বৌদ্ধ ধর্ম, সমস্তই এই মহাযুদ্ধে জয়লন্ধ সাম গ্রী ; তাহার শ্রীকুষ্ণ, তাহার শ্রীরামচন্দ্র এই মহাযুদ্ধেরই অধিনায়ক ; আমাদের চিরদিনের সেই মুক্তিপ্রিয় ভারতবর্ষ বহুকালের জড়ত্বের নান! বোঝাকে মাথায় লইয়া! একই জায়গায় শতাব্দীর পর শতাব্দী নিশ্চল পড়িয়া! থাকিবে, ইহা কখনোই তাহার প্রকৃতিগত নহে। ইহ তাহার দেহ নহে, ইহ! তাহার জীবনের আনন্দ নহে, ইহা তাহার বাহিরের দায়।

আমর! পূর্বেই বলিয়াছি, বহুর মধ্যে আপনাকে বিক্ষিপ্ত করিয়৷ ফেলা ভারতবর্ষের স্বভাব নহে, সে এককে পাইতে চায় বলিয়৷ বাছুল্যকে একের মধে/ স্যত করাই ভারতের সাধনা ভারতের অস্তরতম সত্যপ্রক্কতিই ভারতকে এই-সমস্ত নিরর্থক বাহুল্যের ভীষণ বোঝ! হইতে বীচাইবেই। তাহার ইতিহাস তাহার পথকে যতই অসাধ্যরূপে বাধাসংকুল করিয়] তুলুক- না, তাহার প্রতিভা নিজের শক্তিতে এই পর্বতপ্রমাণ বি্ব্যহ ভেদ করিয়াই বাহির হইয়া যাইবে-_ যত বড়ে সমস্তা তত বড়োই তাহার তগন্তা

€৩

ইতিহাস

হইবে। যাহ] কালে কালে জমিয়! উঠিয়াছে তাহারই মধ্যে হাল ছাড়িয়া ডুবিয়! পড়িয়া! ভারতবর্ষের চিরদিনের সাধনা এমন করিয়া চিরকালের মতো হার মানিবে না। এন্সপ হার মান] যে মৃত্যুর পথ। যাহ! যেখানে আসিয়। পড়িয়াছে তাহ] যদি শুদ্ধমাত সেখানে পড়িয়াই থাকিত তবে সে অস্থবিধা কোনোমতে সহ্য করা যাইত-_- কিন্তু তাহাকে বে খোরাকি দিতে হয়। জাতিমাত্রেরই শক্তি পরিমিত সে এমন কথ। যদি বলে যে যাহ! আছে এবং যাহ! আসে সমস্তকেই আমি নিবিচারে পুষিব", তবে এত রক্তশোষণে তাহার শক্তিক্ষয় না হুইয়! থাকিতে পারে না। বে সমাজ নিরুষ্টকে বহন পোঁষণ করিতেছে উতকুষ্টকে সে উপবাসী রাখিতেছে তাহাতে সন্দেহ নাই মূট়ের জন্ত মূঢ়তা, ছূর্বলের জন্য দুর্বলতা, অনাধের জন্য বীভংসত] সমাজে রক্ষা করা কঙব্য কথ] কানে শুনিতে মন্দ লাগে না, কিন্তু জাতির প্রাণভাগ্ডার হইতে যখন তাহার খাগ্য জোগাইতে হয় তখন জাতির যাহা-কিছু শ্রেষ্ট প্রত্যহই তাহার ভাগ নষ্ট হয় এবং প্রত্যহই জাতির বুদ্ধি দুর্বল বীধ মৃতপ্রায় হুইয়! আসে। নীচের প্রতি যাহ! প্রশ্রয় উচ্চের প্রতি তাহাই বঞ্চন1!$ কখনোই তাহাকে ওঁদার্য বলা যাইতে পারে না; ইহাই তামসিকতা, এবং এই তামসিকতা কখনোই ভারতবর্ষের সত্য সামগ্রী নহে।

ঘোরতর দুর্যোগের নিশীথ-অন্ধকারেও এই তামসিকতার মধ্যে ভারতবর্ষ সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করিয়। পড়িয়! থাকে নাই। যে-সমস্ত অদ্ভুত ছুঃস্বপ্রভার তাহার বুক চাপিয়! নিশ্বাস রোধ করিবার উপক্রম করিয়াছে তাহাকে ঠেলিয়! ফেলিয়! সরল সত্যের মধ্যে জাগিয়া উঠিবার জন্য তাহার অভিভূত চৈতন্যও ক্ষণে ক্ষণে একান্ত চেষ্টা! করিয়াছে। আজ আমরা যে কালের মধ্যে বাস করিতেছি সে কালকে বাহির হইতে স্থম্পষ্ট করিয়া দেখিতে

৫৪

টু ভারতবধে ইতিহাসের ধার!

পাই ন1; তবু অনুভব করিতেছি, ভারতবর্ষ আপনার সত্যকে, এককে, সামঞ্তস্তকে ফিরিয়া পাইবার জন্য উদ্যত হইয়| উঠিয়াছে। নদীতে বাঁধের উপর বাঁধ পড়িয়াছিল, কতকাল হইতে তাহাতে আর স্রোত খেলিতেছিল ন|, আছ কোথায় তাহার প্রাচীর ভাঙিয়াছে-_ তাই আজ এই স্থির জলে আবার যেন মহাসমুদ্রের সংশ্রব পাইয়াছি, আবার যেন বিশ্বের জোয়ার- ভাটার আনাগে।ন| আরম হইয়াছে এখনই দেখ! যাইতেছে আমাদের সমস্ত নব্য উদ্যোগ সজীবহৃ২পিগুচালিত রক্তআোতের মতো একবার বিশ্বের দিকে ছুটিতেছে একবার আপনার দিকে ফিরিতেছে, একবার সার্বজাতিকতা তাহাকে ঘরছাড়| করিতেছে একবার স্বাজাতিকতা৷ তাহাকে ঘরে ফিরাইর] আনিতেছে। একবার সে সবত্বের প্রতি লোভ করিয়া নিজত্বকে ছান্ডিতে চাহিতেছে, আবার সে দেখিতেছে নিত্বকে ছাড়ির। রিক্ত হইলে কেবল নিজত্বই হারানো হয়, সর্বত্বরকে পাওয়া যায় ন1। জীবনের কাঁজ আরম্ভ হইবার এই তে| লক্ষণ। এমনি করিয়] ছুই ধাক্কার মধ্যে পড়িয়৷ মাঝখানের সত্য পথটি আমাদের জাতীয় জীবনে চিহ্নিত হইয়!। যাইবে এবং এই কথা উপলব্ধি করিব যে স্বজাতির মধ্য দিয়াই সধজাতিকে সর্বজাতির মধ্য দিয়াই স্বজাতিকে সত্যরূপে পাওয়া যায়-_ এই কথা নিশ্চিতরূপেই বুঝিব যে আপনাকে ত্যাগ করিয়। পরকে চাহিতে যাঁওয়! যেমন নিক্ষল ভিক্ষুকতা, পরকে ত্যাগ করিয়া আপনাকে কুধিত করিরা রাখ! তেমনি দারিত্যের চরম ছূর্গতি।

৫৫

শিবাজী মারাঠা জাতি

ভারতবর্ষের যে ইতিহাস আমর! বিদ্যালয়ে পড়িয়। থাকি তাহ রাজাদের জীবনবৃত্তীস্ত, দেশের ইতিবৃত্ত নহে।

দেশের লোকের সমগ্র চিত্তে খন কোনো-একটি অভিপ্রায় জাগিয়া উঠে এবং সর্বসাধারণে সচেষ্ট হইয়া সেই অভিগ্রায়কে সার্থক করিতে চায় সেই অভিপ্রায়কে প্রতিকূল আঁঘাত হইতে বাচাইবার জন্য ব্যুহবদ্ধ হইয়া উঠে, তখনই সে দেশ যথার্থভাবে ইতিহাসের ক্ষেত্রে আসিয়া দাড়ায়

এইরূপ কোনো-একটি এক-অভিপ্রায়কে লইয়া! ভারতবর্ষের কোনো- একটি প্রদেশ আপনাকে একচিত্ বলিয়। উপলব্ধি করিয়াছে, এরূপ অবস্থ ভারতবর্ষের ভাগ্যে অধিক ঘটে নাই।

কোনো! দেশের লোক যখন এইরূপে এঁক্য উপলব্ধি করে তখন তাহারা স্বভাবতই সেই উপলব্ধিকে ইতিহাসে প্রকাশ না করিয়া থাকিতে পারে না। যে-সকল ঘটন! বিচ্ছিন্ন, যাহা আকস্মিক, দেশের লোকের চিত্তে যাহার কোনো অখণ্ড তাৎপর্য নাই, দেশের লোক তাহাকে সহজেই ইতিহাসরূপে গাথিয়! রাখে না, কারণ গীথিয়! রাখার কোনো-একটি স্থত্র তাহারা নিজেদের মনের মধ্যে পায় না।

এইজন্য আধুনিক ভারতের রাজকীয় বৃত্তান্ত অধিকাংশই বিদেশীর লেখা দেশের সাধারণ লোকে এই-সকল বৃত্তান্ত স্মরণীয় করিয়া রাখিবার জন্য কোনে। উৎসাহ বোধ করে নাই।

সমগ্র দেশের কোনো৷ বিশেষ কালের ইতিহাসকে রক্ষা করিবার স্বতঃ- প্রবৃত্ত চেষ্টা দেশের লোকের দ্বার! যদি ভারতবর্ষের কোথাও ঘটিয়া থাকে, সে মহারাষ্ট্র দেশে। মহারাষ্ট্রের 'বখর'গুলি তাহার নিদর্শন

যে সময় লইয়া এই-সকল জাতীয় ইতিবৃত্ত রচিত হইতেছিল সেই

৫৩

শিবাজী মারাঠা জাতি

সময়ে দেশের লোকে যে আপনাদের একটি অঙ্গবদ্ধ স্পষ্টসত্তা অনুভব করিয়াছিল, তাহ! এই ইতিহাস লিখিবার প্রবৃত্তির ছ্বারাই নিশ্চিত সপ্রমাণ হইতেছে।

রাজপুতনাতেও ইতিহাসের টুক্র। পাওয়! যায়, কিন্তু তাহ! এক-একটি দলের, এক-একটি খণ্ড রাজোর ইতিহাস; সমস্ত রাজপুত জাতির ইতিহাস নছে। কিন্তু মারাঠাদের সম্মিলিত পরিচয় আছে; তাহা কেবল এক- একটি গোত্রবিশেষের গৌরবকীর্তন নহে।

শিখগুরুদের ইতিহাসের মধ্যে শিখদের জাতীয় ইতিহাস রচিত হইয়াছে, কিন্তু মারাঠার ইতিহাসের মতো! এমন ব্যাপক এবং সাঙ্গোপাঙ্গ হইয়া উঠে নাই। শিখের ইতিহাসে বীরত্বের মহত্বের অনেক পরিচয় আছে, কিন্তু তাহাতে স্থপরিণত রাষ্ট্রগঠনের ইতিবৃত্ত পাওয়া যায় না। মারাঠারা কেবলমাত্র বীরত্ব করে নাই, তাহারা রাষ্ট্রের সৃষ্টি করিয়াছিল।

অতএব আধুনিক ভারতের যদি কোনো প্রদেশের ইতিহাস থাকে, এবং সেই ইতিহাস হইতে যদি এতিহাসিক তত্ব কিছু শিক্ষা করা যাইতে পারে, তবে তাহ] মারাঠার ইতিহাস হইতে

ইতলগ্ডে এক সময়ে বুটনেরা ছিল-_ ডেন্দের সহিত শ্যাকৃসনদের সহিত তাহাদের লড়াই চলিত। মাঝে হইতে রোমানেরা কিছুদিন তাহাদের উপর আধিপত্য করিয়া! গেল। তাহার পরে নর্মানেরা এই দ্বীপ অধিকার করিয়া লইল। এই-সকল কাড়াকাড়ি ছেড়াছেড়ির বৃত্তান্তে ইতিহাসের মৃতি প্রশ্ফুট নহে। কিন্তু ইংলগ্ডে যখন হইতে জাতি গড়িয়া উঠিতে লাগিল, নান! শক্তির মন্থনে যখন হইতে দেশের চিত্ত সজাগ হইয়া আপনার লক্ষ্য নির্ণয় তাহার পথ পরিষ্কার করিতে প্রবৃত্ত হইল, তখন

৫৭

ইতিহাস

হইতে ইংলগ্ডের ইতিহাস যেন দেহ ধারণ করিল এবং এই ইতিহাস মানুষের শিক্ষার বিষয় হইয়! উঠিল।

ভারতবর্ষেও মৌগল পাঠানে মিলিয়া রক্তবর্ণ নাট্যমঞ্চে যে অভিনয় করিয়া গিয়াছে তাহাতে রসের অভাব নাই, কিন্ত তাহাতে ইতিহাস জমিয়! উঠে নাই। স্ৃতরাং তাহ। পড়িয়া আমাদের কৌতুহল চরিতার্থ হইতে পারে, কিন্ত আমাঁদের এতিহাসিক শিক্ষা! লাভ হয় ন]।

ভারতবর্ষে কেবল মারাঠ! জাতির শিখজাতির কিছুকালের ইতিহাসে যথার্থ এতিহাসিকতা আছে কী নিয়মে কিসের প্রেরণায় জাতি গড়িয়। উঠে, কিসের শক্তিতে তাহার উন্নতি হয় এবং কিসের অভাবে তাহার পতন ঘটে, ঘরের দৃষ্টান্ত লইয়! যদি কেহ সেই তব্বের আলোচন| ভারতবর্ষে করিতে চায়, তবে কেবলমাত্র মারাঠ| শিখের ইতিহাস তাহার সন্বল।

অথচ বাংলার বিদ্ভালয়ে ভারতবর্ষের যে ইতিহাস পড়ানো হয় তাহাতে মোগল-পাঠানের বৃত্তান্ত সকলের চেয়ে বড়ে! জায়গ| জুড়িয়। আছে; সেই বৃত্তান্ত দেশের লোকের বৃত্তান্ত নহে; সেই বৃত্তান্তে ভারতবর্ষ কেবল উপলক্ষ্য মাত্র; অর্থাৎ ভারতবর্ষ এই বৃত্তান্তের ফ্রেম মাত্র, ছবি নহে। এই বিদেশী রাজাদের কীতি-কাহিনীর সংশ্রবে মারাঠ। শিখের যেটুকু ইতিহাস আমাদের ছাত্রের পড়িতে পায় তাহ! অতি অকিঞ্চিংকর। অথচ আধুনিক ভারতবর্ষের কেবল এই অংশমাত্রেই দেশের লোকের ইতিহাস বলিতে যদি কিছু থাকে তাহ। আছে।

প্রায়ই জাতীয় অস্াানের মূলে এক বাঁ একাধিক মহাপুরুষ আমর। দেখিতে পাই কিন্ত কথ! মনে রাখিতে হইবে, সেই-সকল মহাপুরুষ আপন শক্তিকে প্রকাশ করিতেই পারিতেন না, যি দেশের মধ্যে মহৎ ভাবের ব্যাণ্চি না হইত। চারি দিকে আয়োজন অনেক দিন হইতেই হয়;

৫৮

শিবাজী মারাঠা জাতি

সেই আয়োজনে ছোটে! বড়ো অনেকেরও যোগ থাকে; অবশেষে শক্তিশালী লোক উঠিয়| সেই আয়োজনকে বাবহারে প্রয়োগ করেন।

মারাঠার ইতিহাসে আমর] শিবাজীকেই বড়ে করিয়া দেখিতে পাই কিন্তু শিবাজী বড়ো হইয়! উঠিতে পারিতেন না, যদি সমস্ত মারাঠ] জাতি তাহাকে বড়ো করিয়। ন| তুলিত। বহু দিন হইতে বহু ধর্মবীর দেশের উচ্চ- নীচের, ব্রা্দণশূদ্রের কৃত্রিম ব্যবধান ভেদ করিয়1 পরস্পরের মধ্যে যোগ- সাধন করিতেছিলেন। ভক্তির রাজপথকে তাহারা ইতর বিশিষ্ঁ সকলেরই জন্বা উনুক্ত করিয়া দিয়াছিলেন। এক ভগবানের অধিকারে তাহার। দেশের সকলকে সমান গৌরবের অধিকারী করিয়াছিলেন মারাঠায় ধর্মান্দোলনে দেশের সমস্ত লোক একত্র মথিত হইতেছিল। শিবাজীর প্রতিভ| সেই মন্থন হইতে উদ্ধৃত হুইয়াছে। তাহ! সমস্ত দেশের ধর্মেদবোধনের মহিত জড়িত, এইজন্তই দেশের শক্তিতে তিনি ধন্য তাহার শক্তিতে দেশ ধন্য হইয়াছে।

যদি কথা সত্য হইত যে, শিবাজী প্রতিভাশালী দন্থ্য মাত্র, তিনি নিজের স্বার্থসাধন ক্ষমতাবিস্তারের জন্য অসামান্ত কৌশল প্রয়োগ করিয়ছিলেন, তবে তীহার সেই দক্থ্যতাকে অবলম্বন করিয়| কখনোই সমস্ত মারাঠ| জাতি এক হইয়! উঠিত ন]| বিশেষত, শিবাজী যখন অওরঙ্গজেবের জালে জড়িত হুইয়! বন্দী হৃইয়াছিলেন এবং দীর্ঘকাল তাহাকে রাজ্য হইতে দুরে যাপন করিতে হইয়াছিল তখনও যে তাহার কীতি ভাঙিয়! ভূমিসাৎ হয় নাই তাহার একমাত্র কারণ, সমস্ত দেশের ধর্মুদ্ধির সহিত তাহার চেষ্টার যোগ ছিল। বস্তত, তীহার সাধন! সমস্ত দেশেরই ধর্ম- সাধনার একটি বিশেষ প্রকাশ এই ধর্মনাধনার আহ্বানেই খণ্ড খণ্ড মারাঠ। আপনার বিচ্ছিন্ন শক্তিকে একত্র সম্মিলিত করিয়া মঙগল-উদ্দেশ্ঠের

৫৯

ইতিহাস

নিকট নিবেদন করিতে পারিয়াছিল; লুষ্ঠনের ভাগ লইয়া, ক্ষমতার ভাগ লইয়া, পরস্পর মারামারি কাটাকাটি করে নাই

অবশেষে যখন একদিন এই ধর্মসাধন] স্বার্থসাধনে বিকৃত হইয়! গেল, যখন সমন্ত দেশের শক্তি আর একত্র মিলিতে পারিল না, তখন পরম্পর অবিশ্বাস ঈর্ষ। বিশ্বাসঘাতকতা৷ বটগাছের কুটিল শিকড়জালের মতো মাঁরাঁঠা- প্রতাপের বিশাল হম্যকে ভিত্তিতে ভিত্তিতে দীর্ঘ বিদীর্ণ করিয়া দিল। ধর্ম সমস্ত জাতিকে এক করিয়াছিল, এবং স্বার্থ তাহাকে বিশ্লিষ্ট করিয়া দিয়াছে ইছাই মারাঠা- অভ্যখান পতনের ইতিহাস। ব্যক্তিগত মহাশক্তির সঙ্গে দেশের শক্তিকে মিলাইতে পারে ধর্মের যোগ; কিন্তু ব্যক্তিগত শক্তি যখন স্বার্থকে অবলম্বন করে তখন সমস্ত দেশের শক্তি কখনোই তাহার সঙ্গে এক হইয়! মিলিতে পারে না

ধর্মের উদার এঁক্য দেশের ভেদবুদ্ধিকে নিরস্ত করিয়া দিলে তবেই দেশের অন্তনিহিত সমস্ত শক্তি একত্র মিলিত হইয়া অভাবনীয় সফলত। লাভ করে, ইহাই মহারাষ্ট্রইতিহাসের শিক্ষা, ইহার ব্যতিক্রম ঘটিলে প্রবল প্রতাপও আপনাকে রক্ষা করিতে পারে না।

৬৪

শিবাজী গুরু গোবিন্দসিংহ

শিখ-ইতিহাসের সহিত মারাঠাইতিহাসের প্রধান প্রভেদ এই যে, যিনি মারাঠাইতিহাসের প্রথম প্রধান নায়ক সেই শিবাজী হিন্দুরাজ্য স্থাপনের উদ্দেশ্টকে মনের মধ্যে স্থুপরিস্ফুট করিয়া! লইয়াই ইতিহাসের রঙজক্ষেত্রে মারাঠা জাতির অবতারণা করিয়াছিলেন; তিনি দেশজয়, শক্র- বিনাশ, রাজ্যবিস্তার প্রভৃতি যাহা কিছু করিয়াছেন সমস্তই ভারতব্যাপী একটি বৃহৎ সংকল্লের অঙ্গ ছিল

আর, গোড়ায় ধর্মের ইতিহাসরূপে শিখ-ইতিহাসের আরম্ভ হইয়াছিল ।. বাবা নানক যে স্বাধীনতা অন্তরে উপলদ্ধি করিয়াছিলেন তাহা রাষ্থ্ীয স্বাধীনতা নহে; যে .দেবপুজ। কেবল দেশবিশেষের, জাতিবিশ্যের কল্পন| অভ্যাসের দ্বার সীমাবদ্ধ, পৃথিবীর সকল মানুষের চিত্ত যাহার মধ্যে অধিকার পায় না এবং বাধ! পায়, নাঁনকের ধর্মবুদ্ধি তাহার মধ্যে আপনাকে সংকুচিত করিতে পারে নাই; এই-সকল সংকীর্ণ পৌরাণিক ধর্মের বন্ধন হইতে তাহার হৃদয় মুক্তিলাভ করিয়াছিল এবং সেই মুক্তি তিনি সকলের কাছে প্রচার করিবার জন্য জীবন উৎসর্গ করিয়াছিলেন।

নানকের উপদেশে আকুষ্ট হইয়] যাহার! তীহার নিকটে ধর্মদীক্ষা গ্রহণ করিয়াছিল তাহারাই শিখ অর্থাৎ শিন্য বলিয়! গণ্য হইয়াছিল

জাতিনিবিচারে সকলেই শিশ্যত্ব গ্রহণ করিতে পারিত। অতএব নানকের অনুবর্তীদিগকে লইয়া! কোনে! জাতিগত ইতিহাস যে গড়িয়া উঠিবে, এপ লক্ষণ প্রথমে দেখা যায় নাই।

কিন্ত মোগলদিগের নিকট হইতে অত্যাচার পাইয়! এই নানক-শিয্ের দল একটি বিশেষ সম্প্রদায়ে সংহত হইয়! দ্াড়াইল এবং সেই কারণেই সর্বসাধারণের নিকট ধর্মপ্রচার অপেক্ষা আত্মদলকেই বিনাশ উপত্রব

৬১

ইতিহাস

হুইতে রক্ষা করাই তাহাদের প্রধান চেষ্টা হইল। এইরূপে বাহির হইতে চাপ পাইয়াই শিখ একটি ঘনিষ্ঠ জাতি হইয়া দাড়াইল।

শিখদের যিনি শেষ গুরু ছিলেন এই কাজেই তিনি বিশেষভাবে লাগিলেন সর্বমানবের মধ্যে ধর্মপ্রচার কার্কে সংহত করিয়া লইয়! শিখদিগকে বলিষ্ঠ করিয়া তোলাই তাহার জীবনের ব্রত ছিল৷

কাজ প্ররুতপক্ষে ধর্মপ্রচারকের নহে; ইহ! প্রধানত সেনানায়ক এবং রাজনীতিজ্ঞের কাজ। গুরু গোবিন্দের মধ্যে সেই গুণ ছিল। তিনি অসাধারণ অধাবসায়ে দল বাঁধিয়া তুলিয়া! বৈরনির্যাতনের উপযুক্ত যোদ্ধা ছিলেন। তিনিই ধর্মসম্প্রদায়কে বুছৎ সৈন্তদলে পরিণত করিলেন এবং ধর্মপ্রচারক গুরুর আসনকে শূন্য করিয়! দিলেন।

গুরু নানক যে মুক্তির উপলন্ধিকে সকলের চেয়ে বড়ে! করিয়। জানিয়া- ছিলেন, গুরু গোবিন্দ তাহার প্রতি লক্ষ স্থির রাখিতে পারেন নাই শক্রহস্ত হইতে মুক্তিকামনাকেই তিনি তাহার শিষ্যদের মনে একান্তভাবে মুদ্রিত করিয়! দিলেন

ইহাতে ক্ষণকালের জন্য ইতিহাসে শিখদের পরাক্রম উজ্জল হইয়াছিল সন্দেহ নাই, ইহাতে তাহাদিগকে রণনৈপুণ্য দান করিয়াছে তাহাও সত্য, কিন্তু বাবা নানক যে পাথেয় দিয়া তাহাদিগকে একটি উদার পথে প্রেরণ করিয়াছিলেন সেই পাথেয় তাহারা এইখানেই খরচ করিয়! ফেলিল এবং তাহাদের যাত্রাও তাহার] এইখানেই অবসান করিয়া দিল।

ইহার পর হইতে কেবল লড়াই এবং রাষ্ট্রবিস্তারের ইতিহাস। দ্রিকে মোগল শক্তিও ক্ষীণ হইয়া আসিতেছিল এবং শিখদল তাহাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে যতই কৃতকার্য হইতে লাগিল ততই আত্মরক্ষার চেষ্টা শ্ুচিয়া গিয়া ক্ষমতাবিস্তারের লোলুপতা বাড়িয়া উঠিতে লাগিল।

শিবাজী গুরু গেোবিন্দসিংহ

যতদিন বিরুদ্ধপক্ষ প্রবল থাকাতে আত্মরক্ষার চেষ্টাই একান্ত হইয়! উঠে ততদিন এক বিপদের তাড়নায় নিজেদের মধ্যে এক্যবন্ধন দৃঢ় থাকে বাহিরের সেই চাপ সরিয়া গেলে এই বিজয়মদমত্ততাকে কিসে ধারণ করিয়া রাখিতে পারে? আত্মরক্ষাচেষ্টায় যে যুদ্ধশক্তি সঞ্চিত হইয়ী উঠে অন্যকে আঘাত করিবার উদ্যম হইতে নিবৃত্ত করিয়া! নিজেকে গড়িয়া তুলিবার চেষ্টায় সেই শক্তিকে কে নিযুক্ত করিতে পারে ?

যে শক্তি তাহ! পারিত আশ্ু-গ্রয়োজন-সাধনের অতিলোলুপতায় গুরু গোবিন্দ তাহাকে খর্ব করিয়াছিলেন। গুরুর পরিবর্তে তিনি শিখদিগকে তরবারি দান করিলেন। তিনি যখন চলিয়া গেলেন তখন নানকের প্রচারিত মহাসত্য গ্রন্থসাহেবের মধ্যে আবদ্ধ হইল, তাহ] গুরু- পরম্পরায় জীবনপ্রবাহে ধাবিত হইয়া! মানবসমাজকে ফলবান্‌ করিবার জন্য অপ্রতিহত গতিতে সম্মুখে অগ্রসর হইতে থাকিল না; এক জায়গায় তাহ! অবরুদ্ধ হইয়া গেল।

শক্তি তখন দেখিতে দেখিতে লুব্ধ এবং অসংযত হইয়! উঠিল। তখন দেবতার তিরোধানে অপদেবতার প্রাছুর্তাব হইল, কাড়াকাড়ি দলাদলি উদ্দাম হুইয়! উঠিল।

এই উচ্ছঙ্খল আত্মঘাতসাধনের মধ্যে রণজিংসিংহের অস্থ্যদয় হইল। তিনি কিছুদিনের জন্য বিচ্ছিন্ন শিখদিগকে এক করিয়াছিলেন, কিন্ত সে কেবলম।ত্র বলের দ্বারা তিনি সকলের চেয়ে বলশালী বলিয়া! সকলকে দমন করিয়াছিলেন।

বলের দ্বারা যে লোক এক করে সে অন্তকে ছুর্বল করিয়াই এক করে; শুধু তাই নয়, এক্যের যে চিরন্তন মূলতত্ব প্রেম তাহাকেই পরাস্ত করিয়া পঙ্গু করিয়া নিজের প্রয়োজন সাধন করে। রণজিতসিংহ

৬৩

ইতিহাস

্বার্থপু্টর জন্তই সমস্ত শিখকে ছলে-বলে-কৌশলে নিবিড় করিয়া বাধিয়াছিলেন। |

শিখ সম্প্রদায়ের চিত্তে তিনি এমন কোনো মহৎ ভাবের সঞ্চার করেন নাই যাহাতে তাহার অবর্তমানেও তাহাদিগকে একত্র ধারণ করিয়া রাখিতে পারে। কেবলমাত্র অপ্রতিহত চাতুরী-প্রভাব এবং স্বার্থপাধন সম্বন্ধে সতর্ক অধ্যবসায়ের দৃষ্টান্ত তিনি দেখা ইয়াছিলেন।

তাহার লোভের সীম! ছিল ন1 এবং তাহার ভোগন্পৃহ! অসংযত ছিল। একটিমাত্র তাহার প্রশংসার বিষয় এই যে, তিনি যাহা চাহিয়াছিলেন তাহা পাইয়াছিলেন, কিছুতেই তাহাকে ঠেকাইতে পারে নাই। একটি- মাত্র স্থানে তিনি আপনার দুর্দম ইচ্ছাকে সংযত করিয়/ছিলেন _- অত্যন্ত লুব্ধ হইয়াও ভারত-মানচিত্রে তিনি ইংরাজের রক্তগণ্তীকে লঙ্ঘন করেন নাই, তাহার স্বার্থবুদ্ধি এইখানে তাহাকে টানিয়! রাখিয়াছিল।

যাহা হউক, তিনি কৃতকার্য হইয়াছিলেন। কৃতকাধতার দৃষ্টান্ত মান্ষকে যত বিপদে ফেলিয়াছে এমন আর কিছুতেই না। এই দৃষ্টান্তে মানুষের মঙ্গলবুদ্ধিকে পরাস্ত এবং তাহার লুব্ধ প্রবুত্তিকে অশান্ত করিয়। তোলে__- ইহা! অপঘাত মৃত্যুরই পথ।

যাহ! হইতে শিখ সম্প্রদায় আরম্ভ হইয়াছিল সেই নানক অকৃতকার্ধতার উজ্জল দৃষ্টান্ত এইজন্য তিনি তাহার বণিকৃপিতার কাছে বথেষ্ট লাঞ্ছন! ভোগ করিয়াছিলেন। লবণের কারবারে নানক কিরূপ লাভ করিয়াছিলেন সে কথা সকলেরই জানা আছে। তিনি দরিদ্র ছিলেন, কিন্তু যে শক্তিতে জাঠ কৃষকেরা প্রাণকে তুচ্ছ করিয়া! ছুখকে অবজ্ঞ| করিয়া বড়ো হইয়া উঠিয্লাছিল সে শক্তি এই কাগুজ্ঞানহীন অকিঞ্চন তাপসই সঞ্চার করিয়া- ছিলেন।

৬৪

শিবাজী গুরু গোবিন্দসিংহ

আর, যে মহারাজ কৃতকারধতার আদরশস্থল-_- শিখদের চিরন্তন শক্রকে যিনি দমন করিয়াছিলেন, কোনে। পরাভবেই ধাহার ইচ্ছাকে নিরস্ত করিতে পারে নাই-_ এক দিকে মোগলরাজ্যাবসান অন্য দিকে ইংরেজ-অভ্যুদয়ের সন্ধ্যাকাশকে ধাহার আকম্মিক প্রতাপ রক্তরশ্মিতে বঞ্িত করিয়! তুলিয়াছিল, তিনি শিখদের মধ্যে কী রাখিয়া গেলেন? অনৈক্য, অবিশ্বাস, উচ্ছ জ্খলতা।

শিখদের যাহারা নায়ক ছিল তাহারা এই কৃতকার্য রাজার দৃষ্টান্তে ইহাই শিখিয়াছিল, জোর যার মুলুক তার। তাহারা ত্যাগ শিখিল না, আত্মসমর্পণ শিখিল না, “যতোধর্মস্ততোজয়ঃ মন্ত্র ভূলিয়া গেল, অর্থাৎ দীনহীন নানক যে শক্তি-ছ্বারা তাহাদিগকে বাধিয়াছিলেন, মহাপ্রতাপশালী মহারাজ তাহাতে আগুন লাগাইয়া! দিলেন এবং ইতিহাসের আকাশে শিখ-জ্যোতিষ্ক ক্ষণকালের জন্য জলিয়! ক্ষণকালের মধ্যে নিবিয়! গেল।

আজ শিখের মধ্যে আর কোনো অগ্রসর-গতি নাই তাহারা একটি কুদ্র সম্প্রদায়ে বাধিয়া গেছে; তাহার! আর বাড়িতেছে না; তাহাদের মধ্যে বু শতাব্কালেও আর কোনে! মানবগুরুর আবির্ভাব হইল না_ জ্ঞানে ধর্মে কর্মে মানবের ভাগ্ারে তাহারা কোনো নৃতন সম্পদ সঞ্চিত করিল না। |

নানক-শিষ্তেরা আজ যুদ্ধ করিতে পারে তাহাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু ভাহার শিশ্কাদ্ল ফৌজে ঢুকিয়! কখনে] কাবুলে, কখনে। চীনে, কখনে! আফ্রিকায় লড়াই করিয়া বেড়াইবে, নানকের ধর্মতেজে উদ্দীপ্ত উত্তর- বংশীয়দের এই পরিণামই যে গৌরবজনক, এমন কথা৷ আমরা মনে করিতে পারি না। মন্থসত্বের উদার ক্ষেত্রে তাহারা কেবল বারিকে বসিয়া কুচ- কাওয়াজ করিবে এজন্য নানক জীবন উৎসর্গ করেন নাই

৬৫

ইতিহাস

নানক তীহার শিষ্তদিগকে স্বার্থপরতা হইতে, ধর্ম বোধের সংকীর্ণত। হইতে, আধ্যাত্মিক অসাড়তা হইতে মুক্ত হইবার জন্য আহ্বান করিয়া" ছিলেন__ তিনি তাহাদের মনুষ্যত্বকে বুছদ্ভাবে সার্থক করিতে চাহিয়।- ছিলেন গুরুগোবিন্দ এই শিখদিগকে বিশেষ একটি প্রয়োজনের উপযোগী করিয়! বাধিয়! দিলেন, এবং যাহাতে তাহারা সেই প্রয়োজনকে কিছুতে বিস্থৃত ন1 হয় সেইজন্য তাহাদের নামে বেশে ভূষায় আচারে নান। প্রকারে সেই প্রয়োজনটিকে তাহাদের চিত্তের মধ্যে বিশেষরূপে মুদ্রিত করিয়। দিলেন। এইরূপে শিখদের মনুত্যত্বের উদ্ভমধারাকে অন্ত সকল দিক হইতে প্রতিহত করিয়! তিনি একট] বিশেষ দিকে প্রবাহিত করিলেন ইহার ছ্বার| একটা! প্রয়োজনের ছাচের মধ্যে শিখ জাতি বদ্ধ হইয়। শক্ত হইয়। তৈরি হইল

যখন শিখের। মুক্ত মানুষ না হইয়! বিশেষ প্রয়োজনযোগ্য মানুষ হইল তখন প্রবল রাজা তাহাদিগকে নিজের প্রয়োজনে লাগাইলেন এবং এইরূপে আজ পর্যস্তও তাহারা প্রবলকতৃক বিশেষ প্রয়োজনেই লাগিতেছে। স্পার্টায় গ্রীস যখন নিজের মানবত্বকে বিশেষ প্রয়োজনের অনুসারে সংকুচিত করিয়াছিল তখন সে যুদ্ধ করিতে পারিত বটে, কিন্ত আপনাকে খর্ব করিয়াছিল; কারণ, যুদ্ধ করিতে পারাই মানুষের শেষ লক্ষ্য নহে। এইরূপে মানুষ আশ্ব প্রয়োজনের জন্য নিজের শ্রেয়কে নষ্ট করে এমন উদাহরণ অনেক আছে, এবং আজ পর্যন্ত এই অনূরদর্শী লুব্ধতার তাড়নায় সকল সমাজেই মনুষ্যবলি চলিতেছে যে নররক্তপিপাস্থ অপদেববেতা এই বলি গ্রহণ করে সে কখনো সমাজ, কখনে1 রাষ্র, কখনে। ধর্ম এবং কখনো! তৎকালপ্রচলিত কোনোঁএকট সর্বজনমোহকর নাম ধরিয়! মানুষকে নষ্ট করিয়! থাকে

৬৩

শিবাজী গরু গোবিন্দসিংহ

শিখ-ইতিহাসের পরিণাম আমার কাছে অত্যন্ত শোকাবহ ঠেকে যে নদী সমুদ্রে যাইবে বলিয়। অন্রভেদী পর্বতের পবিত্র শুভ্রশিখর হইতে নিঃশ্যত হইয়াছিল সে যখন পথের মধ্যে বালুকারাশির অভ্যন্তরে লুপ্ত হইয়| তাহার গতি হারায়, তাহার গান ভুলিয়া যায়, তখন সেই ব্যর্থতা যেমন শোচনীয়, তেমনি ভক্তের হৃদয় হইতে যে শুন্র নির্মল শক্তিধারা বিশ্বকে পবিত্র উর্বর করিতে বাহির হইয়াছিল আজ তাহা যখন সেন্তের বারিকে রক্তবর্ণ পঙ্ষের মধ্যে পরিশোধিত হইয়া! গেল তখন মানুষ ইহার মধ্যে কোনে৷ গৌরব বা! আনন্দ অন্থুভব করিতে পারে ন।।

এই শিখ-ইতিহাস একদিন প্রতিজিঘাংসা অথবা অন্য কোনে| সংকীর্ণ অভিগ্রায়ের আকর্ষণে লক্ষ্যন্র্ হইয়! মানব-সফলতার ক্ষেত্র হইতে স্মলিত হইয়াছে, কিন্তু তাহ। অপেক্ষ। নিম্নতর ষে জাতীয় সফলতার ক্ষেত্র সেখানেও কোনে! গৌরবলাভ করিতে পারে নাই। রণজিংসিংহ যে রাজ্য বাধিয়াছিলেন তাহ! রণজিংসিংহেরই রাজ্য, গোবিন্দসিংহ মোগলদের সঙ্গে যে সংগ্রাম করিয়াছিলেন তাহ। কেবলমাত্র শিখ সম্প্রদায়েরই সংগ্রাম নিজের শিষ্যদলের বাহিরে তিনি সংকল্পকে প্রসারিত করেন নাই।

এইখানে মারাঠা-ইতিহাঁসের সঙ্গে শিখ-ইতিহাসের প্রভেদ লক্ষিত হয়। শিবাজী যে চেষ্টায় প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন তাহা! কোনো! ক্ষুদ্র দলের মধ্যে আবদ্ধ ছিল না। তাহার প্রধান কারণ, তিনি যে হিন্দুজাতি হিন্দুধর্মকে মুসলমান-শাসন হইতে মুক্তিদান করিবার সংকল্প করিয়াছিলেন তাহ। আয়তনে খিখ জাতি ধর্ম অপেক্ষা অনেক বেশি ব্যাপক, স্থুতরাং মমগ্র ভারতের ইতিহাসকেই নূতন করিয়া গড়িয়া! তোলাই তাহার লক্ষের বিষয় ছিল ইহাতে সন্দেহ নাই

গুরু গোবিন্দ এবং শিবাজী উভয়েই প্রায় সমসাময়িক তখন

৬৭

ইতিহাস

আকবরের উদার বাষ্্রনীতির অবসান হইয়াছিল এবং সেইজন্যই মোগল- শাসন তখন ভারতবর্ষের অমুসলমান ধর্ম সমাজকে আত্মরক্ষায় জাগরূক করিয়া তুলিয়াছিল।

বস্তুত তখন ভিতরে বাহিরে আঘাত পাইয়া সমস্ত ভারতবর্ষে নান! স্থানেই একট] যেন ধর্মচেষ্টার উদ্বোধন হইয়াছিল। হিন্দুধর্মসমাজে তখন যে-একটি জীবনচাঞ্চল্য ঘটিয়াছিল, বিশেষভাবে দাঁক্ষিণাত্যে তাহা নান! সাধুভক্তকে আশ্রয় করিয়া! নব নব ধর্মোৎসাহে প্রকাশ পাইয়াছিল। সেইরূপ সচেতন অবস্থায় গুরঙ্গজেবের অত্যাচারে শিবাজীর ন্যায় বীরপুরুষ যে ভারতবর্ষে স্বধর্মকে জয়যুক্ত করিবরি জন্য ব্রত গ্রহণ করিবেন, ইহ! স্বাভাবিক।

আবার ভারতবর্ষের পশ্চিম প্রান্তে এই স্ময়ে নবভাবোদ্দীপ্ত শিখধর্মের প্রভাবে শিখ সম্প্রদায়ের চিন্ত প্রাণ পূর্ণ হইয়| উঠিয়াছিল। সেই কারণেই মোগল-শাসনের পীড়ন তাহাকে দমন করিতে পারে নাই, বরঞ্চ তাড়নাপ্রাপ্ত অগ্থির ন্যায় তাহাঁকে উদ্যত করিয়! তুলিয়াছিল।

কিন্তু বদিচ ভিতরকার প্রভাব বাহিরের আঘাত উভয়েরই পক্ষে একই-রকম ছিল, তথাপি তাহার ক্রিয়া গুরু গোবিন্দ এবং শিবাঁজীর মধ্যে এক ভাবে প্রকাশ পায় নাই।

গুরু গোবিন্দ মোগলদের সঙ্গে অনেক লড়াই করিয়াছেন, কিন্ত তাহ! কেমন খাপছাড়া-মতো!। প্রতিহিংসা! এবং আত্মরক্ষা -সাধনই তাহার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল।

কিন্তু শিবাজী যে-সকল যুদ্ধবিগ্রহে প্রবৃত্ত হ্ইয়াছিলেন তাহ! সোপানপরম্পরার মতো; তাহ? রাগারাগি লড়ালড়ি মাত্র নহে। তাহ! সমস্ত ভারতবর্ষকে এবং দূর কালকে লক্ষ্য করিয়া একটি বুহৎ আয়োজন

৬৮

শিবাজী গুরু গোবিন্দসিংহ

বিস্তার করিতেছিল, তাহার মধ্যে একটি বিপুল আন্ুপূবিকতা ছিল। তাহা কোনো সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার প্রকাশ নহে, তাহ! একটি বৃহৎ অভিপ্রায় সাধনের উদ্যোগ

কিন্তু তংসত্বেও দেখ! যাইতেছে, শিখ মারাঠা! উভয় জাতিরই ইতিহাস একই সময়ে একই প্রকার ব্র্থতার মধ্যে সমাপ্ত হইয়াছে

ইহার কারণ কী? কারণ এই যে, যে উদ্দেশ্ঠ সমস্ত দেশকে অধিকার করিতে চাহে তাহা কেবল একজন ব। কয়েকজন মাত্র মনম্বী লোককে আশ্রয় করিয়। সফল হইতে পারে ন|। স্ফুলিক্গকে শিখ! করিয়| তুলিতে হইলে কেবল প্রবল শক্তিতে চক্মকি ঠুকিলেই চলে না, উপযুক্ত পলিতারও আবশ্যক হয়। শিবাজীর চিত্ত সমস্ত দেশের লোকের সহিত আপনার যোগ স্থাপন করিতে পারে নাই। এইজন্য শিবাজীর অভিপ্রায় যাহাই থাক্‌-না, তাহার চেষ্টা! সমস্ত দেশের চেষ্টাক্ূপে জাগ্রত হইতে পারে নাই এইজন্যই মারাঠার এই উদ্যোগ পরিণামে ভারতের অন্ান্ত জাতির পক্ষে বগির উপদ্রব-রূপে নিদারুণ হইয়। উঠিয়াছিল।

ঘে মঙ্গল সকলের তাহাকে সকলের চিস্তের মখ্ো যদি প্রতিষ্ঠিত ন। কর! হয়, যদি তাহ। কেবল আমার ব1। আমার দলের কয়েক জনের মধ্যেই বদ্ধ থাকে, তবে তাহার মঙ্গলরূপ ঘুচিয়! যায় এবং অন্যের পক্ষে ক্রমে তাহ! উৎপাত হইয়| উঠে।

শিবাজীর মনে যাহ বিশুদ্ধ ছিল, পেশওয়াদের মধ্যে তাহা ক্রমে ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা-রূপে কলুষিত হইয়া উঠিল। এমন বিকার কদাচ ঘটিত ন৷ যদি এই ভাবটি দেশের সর্বসাধারণের মনে প্রসারিত হইবার পথ প্রশস্ত থাকিত। তাহ হইলে বৃহ আঁধারের মধ্যে বৃহৎ ভাব আপনার স্থান এবং খান্ত পাইত) তাহা হইলে একট1 কাঠ যখন নিবিবার

৬৯

ইতিহাস

মতো! হইত তখন কোথা হইতে আর-একট1 কাঠ আপনি জলিয়া উঠিত।

আমাদের দেশে বারম্বার ইহাই দেখা! গিয়াছে যে, এখানে শক্তির উদ্ভব হয় কিন্তু তাহার ধারাবাহিকত1 থাকে না। মহাপুরুষেরা আসেন এবং তাহারা চলিয়। যান-_ তাহাদের আবির্ভীবকে ধারণ করিবার, পালন করিবার, তাহাকে পূর্ণ পরিণত করিয়৷ তুলিবার স্বাভাবিক স্থযোগ এখানে নাই।

ইহার কারণ আমাদের বিচ্ছিন্নতা যে মাটিতে আঠা একেবারেই নাই সেখানেও বায়ুর বেগে বা পাখির মুখে বীজ আসিয়! পড়ে, কিন্তু তাহ] অঙ্কুরিত হয় না, অথবা দু-চারটি পাত] বাহির হইয়| মুষড়িয় যায়। কারণ, সেখানকার আলগ! মাটি রস ধারণ করিয়া! রাখিতে পারে না। আমাদের সমাজের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার আর অন্ত নাই; ধর্মে কর্মে আহারে বিহারে, আদানে প্রদানে সর্বত্রই বিচ্ছিন্নতা এইজন্য ভাবের বন্য! নামে, কিন্ত বালুর মধ্যে শুধিয়া যায়; তেজের স্ফুলিঙ্গ পড়ে, কিন্তু ইতস্তত সামান্য ধোওয়] জাগাইয়। নিবিয়া যায়। এইজন্য মহৎ চেষ্টা বৃহৎ চেষ্টা হইয়া উঠে ন1 এবং মহাপুরুষ দেশের সর্বসাধারণের অক্ষমতাকে সমুজ্ঘল ভাবে সপ্রমাণ করিয়! নির্বাণ লাভ করেন।

যাহা হউক, মারাঠা শিখের অস্থ্যথান পতনের কারণ সম্বন্ধে তুলন1 করিয়! বলিতে হইলে এই বল! যায় যে, শিখ একদা একটি অত্যন্ত বৃহৎ ভাবের আহ্বানে একত্র হুইয়াছিল__ এমন একটি সত্যধর্মের বার্তা তাহারা শুনিয়াছিল যাহা! কোনো স্থানবিশেষের চিরাগত প্রথার মধ্যে বন্ধ নছে এবং যাহা! কোনো সময়বিশেষের উত্তেজন1 হইতে প্রস্থত হয় নাই-_

1০

শিবাজী গুরু গোবিন্দসিংহ

যাহা চিরকালের এবং সকল মানবের, যাহা ছোটে! বড়ো সকলেরই অধিকারকে প্রশস্ত করে, .চিত্তকে মুক্তি দেয় এবং যাহাকে স্বীকার করিলে প্রত্যেক মান্্যই মনুষ্যত্বের পূর্ণতম গৌরবকে উপলদ্ধি করে। নানকের এই উদার ধর্মের আহ্বানে বহু শতাব্দী ধরিয়া খিখ বহু দুঃখ সহ করিয়] ক্রমশ প্রসার লাভ করিতেছিল। এই ধর্মবোধ ছুঃখভোগের গৌরবে শিখদের মধ্যে অলক্ষ্যে একটি মহৎ এক্যের ভিত্তি স্থাপিত হইয়াছিল।

গুরু গোবিন্দ শিখদের এই ধর্মবোধের এক্যান্ভৃতিকে কর্মপাধনার স্থযোগে পরিণত করিয়| তুলিলেন। তিনি একটি বিশেষ সাময়িক প্রয়োজনের প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া ধর্মপমাঙ্গের এক্যকে রাষ্ট্রীয় উন্নতি-লাভের উপায়রূপে খর্ব করিলেন কিন্তু এই উপলক্ষ্যে সম্প্রদায়কে সংকীর্ণ করিয়। লইয়! তিনি তাহার এক্যকে ঘনিষ্ঠ করিয়। লইলেন ; যে জাতিভেদ তাহার প্রবল অন্তরায় ছিল তাহাকে সমূলে উৎপাটিত করিলেন।

গুরু গোবিন্দ তাহার শিষ্ুসমাজের মধ্য হইতে এই-যে ভেব্বিভাগকে এক কথায় দূর করিতে পারিয়াছিলেন তাহার প্রধান কারণ এই যে, নানকের উদার ধর্মের প্রভাবে পরম্পরের মধ্যে ভেবুদ্ধির ব্যবধান আপনিই তলে তলে ক্ষীণ হইয়া! আসিরাছিল। গুরু গোবিন্দ তাহাকে আঘাত করিবামাত্র তাহা! শতখণ্ড হইয়] পড়িয়া গেল। পূর্ব হইতে গভীরতররূপে যদি ইহার আয়োজন ন। থাকিত তবে সহত্র প্রয়োজন হইলেও গুরু গোবিন্দ কিছুই করিতে পারিতেন না। শুধু তাহাই নয়, সকল কর্মশাশা এই ভেদকে দূর করিতে হইবে এই সংকল্পমাত্রও তাহার মনে আকার গ্রহণ করিতে পারিত ন।।

কিন্তু গুরু গোবিন্দ কী করিলেন? এঁক্যকেই পাক1 করিলেন, অথচ

৭১

ইতিহাস

ষে মহাভাবের শক্তির সহায়তায় তাহা করা সম্ভব হুইল তাহাকে সিংহাসনচ্যুত করিলেন, অন্তত তাহার সিংহাসনে আর-একজন প্রবল শরিফ বসাইয়। দিলেন

এক্যই ভাবের বাহন। এই কারণে মহৎ ভাব মাত্রই সেই বাহনকে সষ্টি করিবার জন্য আপনার শক্তিকে নিযুক্ত করে! বাহনের গৌরব তাহার আরোহীর মাহাত্যে গুরু গোবিন্দ সাময়িক ক্রোধের উত্তেজনায় প্রয়োজন-বোধে বাহ্‌নকে প্রবল করিয়া তুলিলেন বটে, কিন্ত আরোহীকে খর্ব করিয়। দিলেন

তাহ! হইতে ফল এই হইল, উপস্থিতমত কিছু কিছু কাষসিদ্ধি ঘটিল, কিন্তু যাহা মুক্তির দিকে অগ্রসর হইতেছিল তাহ বন্ধনে পড়িল; শিখদের মধ্যে পরস্পরকে নিবিড় করিবার ব্যবস্থা রহিল, কিন্তু অগ্রসর করিয়৷ দিবার বেগ রহিল না। এইজন্য বহু শতাব্দী ধরিয়। যে শিখ পরম গৌরবে মানুষ হইবার দিকে চলিয়াছিল তাহারা হঠাৎ এক সময়ে থামিয়। সৈন্য হইয়! উঠিল-_ এবং এখানেই তাহাদের ইতিহাস শেষ হইয়া গেল।

শিবাজী যে উদ্দেশ্ঠ সাধনে তীহাঁর জীবন প্রয়োগ করিয়াছিলেন তাহ। কোনে। সংকীর্ণ সাময়িক প্রয়োজন-মূলক ছিল না এবং পূর্ব হইতেই দাক্ষিণাত্যের পর্মগুরুদের প্রভাবে তাহার ক্ষেত্র কতকট] প্রস্তুত হইয়াছিল। এইজন্য তীহার উত্সাহ কিছুকালের জন্য যেন সমস্ত মারাঠা জাতির মধ্যেই সঞ্চারিত হইতে পারিয়াছিল।

ফুট! পাত্রে জল ভরিয়! উঠিতে পারে, কিন্তু তাহাতে জল থাকে ন]|। ক্ষণকালের ভাবোচ্ছাসের প্রাবল্যে মনে হয় সমস্ত বুঝি ছাপাইয়া এক হইয়া গেল, কিন্তু ছিদ্রের কাজ ভিতরে ভিতরে চলিতে থাকে | ভারতবর্ষের সমাজ ছিত্রে পূর্ণ, কোনে! ভাবকে তাহ ধরিয়। রাখিতে পারে না, এই-

শিবাজী গুরু গোবিন্দসিংহ

জন্য সমাজে প্রাণময় ভাবের পরিবর্তে শ্ু্দ নিজাঁব আচারের এমন নিদারুণ প্রাহৃভাব।

শিবাজী তাহার সমসাময়িক মারাঠা-হিন্দু সমাজে একট। প্রবল ভাবের প্রবর্তন এতট] পর্যন্ত করিয়াছিলেন যে, তাহার অভাবেও কিছুদিন পর্যন্ত তাহার বেগ নি:শেষিত হয় নাই কিন্তু শিবাজী সেই ভাবের আঁধারটিকে পাক1 করিয়! তুলিতে পারেন নাই, এমন-কি, চেষ্টামাত্র করেন নাই। সমাজের বড়ে। বড়ে। ছিদ্রগুলির দিকে না তাকাইয়া তাহাকে লইয় ক্ষুব্ধ সমুদ্রে পাড়ি দিলেন। তখনই পাড়ি ন। দ্রিলে নয় বলিয়া এবং পাড়ি দিবার আর-কোনে উপায় ছিল ন| বলিয়ই যে অগত্য। এই কাজ করিয়াছেন তাহ। নহে এই ছিদ্রকেই পার করা তাহার লক্ষ্য ছিল শিবাঁজী যে হিন্দু সমাজকে মোগল-আক্রমণের বিরুদ্ধে জয়যুক্ত করিবার চেষ্ট1! করিয়াছিলেন, 'আচারবিচারগত বিভাগ-বিচ্ছেদ সেই মমাজেরই একেবারে মূলের জিনিস। সেই বিভাগমূলক ধর্মসমাজকেই তিনি সমস্ত ভারতবর্ষে জয়ী করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন। ইহাকেই বলে বালির বাধ বাধা, ইহাই অপাধ্য সাধন

শিবাজী এমন কোনে। ভাবকে আশ্রয় প্রচার করেন নাই যাহা হিন্দু সমাজের মৃলগত ছিদ্রগুলিকে পরিপূর্ণ করিয়! দিতে পারে নিজের ধর্ম বাহির হইতে গীড়িত অপমানিত হইতেছে এই ক্ষোভ মনে লইয়া তাহাকে ভারতবর্ষের সর্বত্র বিজয়ী করিবার ইচ্ছা স্বাভাবিক হুইলেও তাহা সফল হইবার নহে; কারণ, ধর্ম যেখানে ভিতর হইতেই পীড়িত হইতেছে, যেখানে তাহার ভিতরই এমন-সকল বাধ! আছে যাহাতে মানুষকে কেবলই বিচ্ছিন্ন অপমানিত করিতেছে, সেখানে সে দিকে দৃষ্টিপাতমাত্র না করিয়া, এমন-কি, সেই ভেদবুদ্ধিকেই মুখ্যত ধর্মবুদ্ধি বলিয়া জ্ঞান করিয়া সেই শতদীর্দ

৭৩

ইতিহাস

ধর্মসমাজের ্বারাজ্য এই স্থুবৃহৎ ভারতবর্ষে স্থাপন করা কোনে। মানষেরই সাধ্যায়ত্ত নহে; কারণ, তাহা বিধাতার বিধানসংগত হইতে পারে না। কেবল আঘাত পাইয়া, ক্রুদ্ধ হইয়া, অভিমান করিয়া, কোনে জাতি বড়ে। হইতে, জয়ী হইতে পারে নাঁ_ যতক্ষণ তাহা'র ধর্মবুদ্ধির মধ্যেই অখগণ্ডতার তত্ব কাজ করিবার স্থান ন]| পায়, যতক্ষণ মিলনের শক্তি কোনো মহৎ ভাবের অমৃতরসে চিরসঙ্জীবিত হুইয়] সকল দিক দিয়াই অন্তরে বাহিরে তাহাকে এক করিবার অভিমুখে ন। লইয়! যায়, ততক্ষণ পযন্ত বাহিরের কোনো আঘাতে প্রতিভাশালী ব্যক্তিবশেষের কোনে! বীরত্বেই তাহাকে দৃঢ়ঘনিষ্ট, তাহাকে সজীবসচেতন করিয়! তুলিতে পারে না।

৭৪

ভারত-ইতিহাস-চ্চা

আমি অন্যত্র কথার আলোচন| করিয়াছি যে ভারতবর্ষের ইতিহাস ঠিক রাষ্ট্রীয় ইতিহাস নহে কেন.নহে তাহার কারণ আছে।

প্রত্যেক জাতির এক-একটি সাধনার বিষয় আছে। সেই মূলগত সাধনটি লইয়াই সেই জাতির সকল লোক ত্বাট বাধে নর্মানে স্তাক্মনে মিলিয়। ইংরেজ যখন এক হুইয়। গেল, ঘখন তাহাদের মধ্যে সমাজভেদ রহিল না, তখন তাহাদের মধ্যে একট। বড়ে! ভেদ রহিল-_ রাজার সঙ্গে প্রজার স্বার্থের ভেৰ। সেই ভের যখন একান্ত থাকে তখন রাজার খেয়ালের জন্য প্রজাদের ছুঃখ.ও ক্ষতি হইতে থাকে সেই ভেদ বিলুপ্ত করিয়া রাজ- শক্তিতে নানাপ্রকার বাধ বাধির] পরম্পরের মামগুস্ত সাধনের ইতিহাঁসই ইংলগ্ডের ইতিহাস অর্থাৎ, ইংলগ্ডের যে সমস্ত! প্রধান ছিল সেই সমস্যার সমাধান লইয়াই তাহার ইতিহাসের পরিখতি ঘটিয়াছে।

ইংরেজি ইস্থকুলের ছাত্র ভারতের ইতিহ।মে সেই রাষ্ট্রীয় ধারার পথই খুঁজিতে থাকে খুঁজিয়া না পাইলে বলে ভারতের ইতিহাস নাই কিন্তু কথ]! মনে রাখ দরকার ভারতের ইতিহাস সেখানেই ভারতের সমস্ত যেখানে

প্রত্যেক জাতির সমস্য] সেখানেই যেখানে তাহার অসামগ্রস্য | যাহার! বাহিরে পাশাপাশি আছে অন্তরে তাহানিগকে মিলিতেই হইবে এই মিলন-চেষ্টাই মানুষের ধর্ম, এই মিলনেই মানুষের সকল দিকে কল্যাণ। সভ্যতাই এই মিলন

আমাদের প্রাচীন ভারতে অসামঞ্তম্ত রাজায় 'প্রজায় ছিল ন!, সে ছিল এক জাতি-সম্প্রদায়ের সঙ্গে অন্য জাতি-সম্প্রদায়ের। এই-সকল নান উপজাতির বর্ণ ভাষ! আচার ধর্ম চরিত্রের আদর্শ ভিন্ন ভিন্ন ছিল। অথচ ইহারা সকলেই প্রতিবেশী ইহাতে এক দিকে যেমন পরস্পরের লড়াই

৭৫

ইতিহাস

চলিতেছিল তেমনি আর-এক দিকে পরস্পরের সমাজ ধর্মের সামঞ্জস্য- সাধন-চেষ্টারও বিশ্রাম ছিল না কী করিলে পরম্পরে মিলিয়! এক বুছৎ সমাজ গড়িয়। উঠে, অথচ পরস্পরের স্বাতন্ত্র্য একেবারে বিলুপ্ত না হয়, এই ছুঃসাধ্য-সাধনের প্রয়াস বহুকাল হইতে ভারতে চলিয়! আসিতেছে, আজও তাহার সমাধান হয় নাই

যুনাইটেড ন্টেটেসের ইতিহাসে যে এঁতিহাসিক প্রক্রিয়া চলিতেছে তাহার সঙ্গে ভারত-ইতিহাসের কিছু মিল আছে, কিন্তু অমিলও যথেষ্ট সেখানে যুরোপের নানা স্থান হইতে নান| জাতি মিলিতেছে। কিন্তু তাহার! 'একই বর্ণের, স্থতরাং তাহাদের মিলনের বাধা স্থগভীর নহে। তাহা ছাড়। মুরোপের মকল উপজাতির মধ্যে সভ্যতার বূপভেদ নাই নিগ্রোদের সমস্যার কোনো ভালে। মীমাংস! আজ পযন্ত সেখানে হয় নাই বলিয়! কেবলই হুখ অত্যাচার অবিচারের সৃষ্টি হইতেছে, ইহাতেই মনুষ্যত্বের পীড়া ঘটে এই গীড়া দুর্বল সবল উভয়কেই স্পর্শ করে। তাহা ছাড় এসিয়াবাসীদের সম্বন্ধে শুধু আমেরিকায় নহে যুরোপের সকল উপনিবেশেই বিরোধ চলিতেছে এপিয়াবাসীকে একেবারে নির্বাসিত করিয়া রাখিলে এই বিরোধ দেশের বাহিরে গিয়৷ কালক্রমে আরো প্রবল হইয়া জমিতে থাকিবে এবং একদিন ইহার হিমাব-নিকাশ করিতেই হইবে। আমেরিকার ইতিহাসে আর- একটা ব্যাপার দেখিতে পাই, তাহাকে এক্যসাধন ন| বলিয়! একাকারীকরণ বলা যায়। যে-কোনে! জাতীয় লোক আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বাস করিতে আসে ভাষায় আচারে ব্যবহারে তাহাকে সম্পূর্ণই আমেরিকান করিয়! তুলিবার চেষ্টা কর1 হয়। ইহাতে রাষ্ট্রীয় দিক হইতে স্থবিধ1! হইতে পারে, কিন্তু বৈচিত্র্যমূলক মানবসভ্যতার দ্রিক হইতে ইহাতে ক্ষতিই ঘটে। ষ্টিতত্বে যে পরিণতিক্রিয়! দেখি তাহাতে একাকারত্ব আরস্তে দেখা যায়,

৭৬

ভারত-ইতিহাস-চর্চ

কিন্ত বিকাশসাধনের সঙ্গে সঙ্গে একের মধ্যে বিভাগ সেই বিভাগের মধ্যে এক্য প্রকাশ হইতে থাঁকে। যদি রাষ্ট্রীয় এক্যের পক্ষে একাকারুত্বই একান্ত আবশ্যক বলিয়! ধর। হয় তবে বলিতেই হইবে, রাষ্ট্রীয় এক্য এক্যের আদর্শ নহে। ইহাতে একপ্রকার স্বাধীনতার লোভে মানুষের গভীরতর, স্বাধীনতাকে বলপূর্বক বলি দেওয়া হয়। সমস্যার ইহ] প্রকৃত সমাধান নহে বলিয়াই ইহাতে জগতে এত নিগুঢ দাসত্ব ব্যাপক দুঃখের সৃষ্টি হইতেছে।

ভারতবর্ষে নান| জাতির এই সংঘাত সামঞ্রস্তের ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়ায় বৈদিকমুগ বৌদ্বযুগে, বৌদ্ধযুগ পৌরাণিক যুগে পরিণত হুইয়াছে। এই স্ত্টির উদ্যমে রাঁজ। রাষ্ট্রনীতি প্রধান শক্তি নহে অবশ্য, বিদেশী রাজ! যখন হইতে ভারতে আসিয়াছে তখন হইতে এই স্বাভাবিক স্যষ্টিকায বাধা পাওয়ায় আর-একটি অসামঞ্জন্ত দেখ! দিয়াছে এইজন্যই ইংরেজ যাহাকে ইতিহাস বলিয়! গণ্য করে ভারতে সেই ইতিহাস মুসলমান-অধিকারের পরে। কিন্তু তাই বলিয়া! ইহার অর্থ এমন নহে যে বিদেশী দ্বাজত্বের পর হইতে ভারত-ইতিহাসের প্রক্লৃতিতে আমূল পরিবর্তন ঘটিয়াছে। এই পর্যন্ত বলা যায় যে পূর্বের চেয়ে আমাদের ইতিহাস জটিল হইয়াছে, আমাদের দুরূহ সমস্তায় আরে! একটি নৃতন গ্রস্থি পড়িয়াছে। এখনো আমাদের মধ্যে ভেদের সমস্ত! এই ভে সমাজের ভিতরে থাকাতেই অন্যদেণীয় বাষ্রনৈতিক ইতিহাসের অভিজ্ঞত| আমাদের দেশে কিছুতেই ঠিকমত খাটিতেছে না। আমরা অন্ত দেশের নকলে যে-সব পন্থা অবলম্বন করিতেছি, বারম্বার তাহা বার্থ হইতেছে।

যাহাই হউক, আমাদের দেশের এই সামাজিক ইতিহাসের ধার এখনো আমরা আগাগোড়া! অনুসরণ করিয়া দেখি নাই ; অনেকটাই অস্পষ্ট আছে.

৭৭

ইতিহাস

এবং অনেক জায়গাতেই ফাক পড়িযর়াছে। বিশেষত, যেহেতু আমাদের প্রকৃত ইতিহাস সামাজিক এবং ধর্মতন্্মলক সেইজন্ই আমাদের নিজেঠের আজন্মকাঁলীন সামাজিক সংস্কার ধর্মবিশ্বাস কুয়াশার মতো! আমাদের ইতিহাসের ক্ষেত্রকে আচ্ছন্ন করিরাছে। স্ত্যকে নিরপেক্ষভাবে স্পই করিয়। দেখিতে বাধা দিতেছে। যেটুকু গোচর হইয়! উঠিতেছে তাহ! বিদেশী এতিহাসিকদেরই চেষ্টায়

কিন্তু নিজের দেশের ইতিহাসের জন্য চিরদিনই কি এমন করিয়! পরের মুখ তাকাইয়] থাক। চলিবে ?

বৌদ্ধযুগ ভারত-ইতিহাসের একটি প্রধান যুগ। ইহ! আর্ধ-ভারতবর্ষ হিন্দু-ভারতবর্ষের মাঝখানকার যুগ। আবষুগে ভারতের আগন্তক আদিম অধিবাসীদের মধ্যে বিরোধ চলিতেছিল। বৌদ্ধযুগে নেই-সকল বিরুদ্ধ জাতিদের মাঝখানকার বেড়াগুলি একধর্মবন্যায় ভাঙিয়াছিল-_ শুধু তাই নয়, বাহিরের নান। জাতি এই ধর্মের আহবানে ভারতবাসীদের সঙ্গে মিশিয়াছিল। তার পরে এই মিশ্রণকে যথাসস্তব স্বীকার করিয়। এবং ইহাকে লইয়া একট! ব্যবস্থ। খাড়। করিয়। আধুনিক হিন্দৃযুগ মাথা তুলিয়াছে। বৈদিকযুগ এবং হিন্দুযুগের মধ্যে আচারে পৃজাতন্ত্রে যে গুরুতর পার্থক্য আছে তাহার মাঝখানের সন্িস্থল বৌদ্ধযুগ এই যুগে আর অনাধ এক গণ্ডির মধ্যে আসিয়। পড়িয়াছিল। ইহার ফলে উভয়ের মানসপ্রকৃতি বাহা আচারের মধ্যে আদানপ্রদান রফানিষ্পত্তির চেষ্ট। হইতে থাকে কাজট] অত্যন্ত কঠিন; তাই সকল দিকেই বেশ স্থসংগত রকমে রফ| হইয়| গিয়াছে তাহাও বলিতে পারি ন।। আভ্যন্তরিক নান। অসংগতির জন্য আমর] অন্তরে বাহিরে ছূর্বল রহিয়াছি; সামাজিক ব্যবহারে এবং ধর্মবিশ্বাসে পদে পদেই বিচারবুদ্ধিকে অন্ধ করিয়! আমাদিগকে

৭৮

চলিতে হয়__ যাহা-কিছু আছে তাহাকে বুদ্ধির দ্বারা মিলাইয়! লওয়া নহে, অভ্যাসের দ্বারা মানিয়! লওয়াই আমরা প্রধানত আশ্রয় করিয়াছি

যাহাই হউক, আমাদের এই বর্তমান যুগকে যদি ঠিকমত চিনিতে হয় তবে পূর্ববর্তী সদ্ধিযুগের সঙ্গে আমাদের ভালোরূপ পরিচয় হওয়! চাই একটা কারণে আমাদের দেশে এই পরিচয়ের 'ব্যাঘাত ঘটিয়াছে। ইংরেজ এতিহাসিকের! বৌদ্ধধর্মের যে সম্প্রদায়ের বূপটিকে বিশেষ প্রাধান্য দিয়া আলোচন] করিয়া থাকেন তাহা হীনযান সম্প্রদার। এই অসম্প্রদায় বৌদ্ধ- ধর্মের তত্বজ্ঞানের দিকেই বেশি ঝৌক দিয়াছে। মহাঘান সম্প্রদায়ে বৌদ্ধ- ধর্মের হৃদয়ের দ্রিকট প্রকাশ করে। সেইজন্য মানব-ইতিহাঁসের সৃষ্টিতে এই সম্প্রদায়ই 'প্রধানতর | শ্ঠাম চীন জাপান জাভ। প্রভাতি দেশে এই মহাযান সম্প্রদায়ই প্রভাব বিস্তার করিয়াছিল এইজন্যই মহাযান সম্প্রদায় এমন একটা প্রণালীর মতো হইয়াছিল যাহার ভিতর দিয়া নান! জাতির নানা ক্রিয়াকর্ম মন্ত্রত্ত্র পৃজার্চনা ভারতে প্রবাহিত এবং এক মন্থনদণ্ডের ছর| মথিত হইয়াছে।

এই মহাযান সম্প্রদায়ের শাস্ত্রগুলিকে আলোচন। করিয়া দেখিলে আমাদের পুরাণগুলির সঙ্গে সকল বিষয়েই তাহার আশ্চর্য সাদৃশ্য দেখিতে পাওয়া যায়। এই সাদৃশ্তের কিছু অংশ বৌদ্ধধর্মের নিজেরই বিশুদ্ধ স্বরূপ- গত, কিন্তু অনেকট| ভারতের অবৈদ্িক সমাজের সহিত মিশ্রণ-জনিত এই মিঞ্জণের উপাদানগুলি নৃতন নহে; ইহারাও অনেক কালের পুরাতন, মানবের শিশুকালের স্থষ্টি। দিনের বেলায় যেমন তারা দেখা যায় না তেমনি বৈদিক কালের সাহিত্যে এগুলি প্রকাশ পায় নাই, দেশের মধ্যে ইহার। ছড়ানে৷ ছিল। বৌদ্ধযুগে যখন নান| জাতির সম্মিশ্রণ হইল তখন ক্রমশ ইহাদের প্রভাব জাগিয়! উঠিল এবং বৌদ্ধমুগের শেষভাগে ইহারাই

৭9

ইতিহাস

আর-সমস্তকে ঠেলিয় ভিড় করিয়া দাড়াইল। সেই ভিড়ের মধ্যে শৃঙ্খলা করিবার চেষ্টা, যাহা নিতান্ত অনার্ধ তাহাকে আর্বেশ পরাইবার প্রয়াস, ইহাই হিন্দুযুগের এতিহাঁসিক সাধন]

অতএব, ভারতের প্ররুত ইতিহাসের ধারা ধাহারা অন্থসরণ করিতে চান তীহাদ্িগকে বিশেষ করিয়! এই মহাঁধান বৌদ্ধপুরাণসকলের অনুশীলন করিতে হইবে |".

৮৩

পরিশিষ্ট

কাজের লোক কে

আজ প্রায় চার-শে! বংসর হইল পঞ্জাবে তলবন্দী গ্রামে কালু বলিয়া একজন ক্ষত্রিয় ব্যাবস-বাঁণিজ্য করিয়া খাইত। তাহার এক ছেলে নানক নানক কিছু নিতান্ত ছেলেমান্ুষ নহে। তাহার বয়স হইয়াছে, এখন কোথায় সে বাপের ব্যাবসা-বাণিজ্য স্রাহাধ্য করিবে তাহ! নহে-- সে আপনার ভাবন। লইয়! দিন কাটায়, সে ধর্মের কথা লইয়াই থাকে।

কিন্তু বাপের মন টাকার দিকে, ছেলের মন ধর্মের দিকে_- স্থৃতরাং বাপের বিশ্বাস হইল ছেলেটার দ্বারা পৃথিবীর কোনো কাজ হইবে না। ছেলের ছূর্দশীর কথ! ভাবির] কালুর রাত্রে ঘুম হইত ন|। নানকেরও যে রাত্রে ভালে ঘুম হইত তাহা! নহে, তাহারও দিনরাত্রি একটা ভাবনা লাগিয়া ছিল।

বাব! যদিও বলিতেন ছেলের কিছু হইবে না, কিন্তু পাড়ার লোকেরা তাহ1 বলিত না তাহার একট| কারণ বোধ করি এই হইবে ষে। নানকের ধর্মে মন থাকাতে পাঁড়ার লোকের বাণিজ্য-ব্যাবসার বিশেষ ক্ষতি ইয় নাই। কিন্ত বোধ করি তাহারা নানকের চেহারা, নানকের ভাব দেখিয়া] আশ্চধ হইয়াছিল। এমন-কি নানকের নামে একটা গন্প রাষ্ট্র আছে। গল্পটা ষেসত্য নয় মে.আর কাহাকেও বলিতে হইবে না। তবে, লোকে যেন্নপ বলে তাহাই লিখিতেছি। একদিন নানক মাঠে গোরু চরাইতে গিয়! গাছের তলায় ঘুমাইয়। পড়িয়াছিলেন। সুধ অস্ত যাইবার সময় নানকের মুখে রোদ লাগিতেছিল। শুন! যায় নাকি একটা কালে। সাপ নানকের মুখের উপর ফণ। ধরিয়া! রোদ আড়াল করিয়াছিল। সে দেশের. রাজ! সে সময়ে পথ দিয়া যাইতোছিলেন, তিনি নাকি স্বচক্ষে এই ঘটনা দেখিয়াছিলেন। কিন্তু আমর! রাজার

৮৩

ইতিহাস নিজের মুখে কথা শুনি নাই, নানকও কখনো গল্প করেন নাই, এবং এমন পরোপকারী সাপের কথাও কখনো শুনি নাই-_ শুনিলেও বড়ো বিশ্বাস হয় না। কালু অনেক ভাবিয়া স্থির করিলেন, নানক যদি নিজের হাতে ব্যাবসা আরম্ভ করেন তবে ক্রমে কাজের লোক হইয়! উঠিতে পারেন। এই ভাবিয়া তিনি নানকের হাতে কিছু টাকা দিলেন; বলিয়| দিলেন, “এক গায়ে লুন কিনিয়া আর-এক গাঁয়ে বিক্রয় করিয়া! আইস।” নানক টাকা লইয়া বাঁলসিন্ধু চাকরকে সঙ্গে করিয়া লুন কিনিতে গেলেন। এমন সময়ে পথের মধ্যে কতকগুলি ফকিরের সঙ্গে নানকের দেখা হইল। নানকের মনে বড়ো আনন্দ হইল। তিনি ভাবিলেন, এই ফকিরদের কাছে ধর্মের বিষয় জানিয়| লইবেন। কিন্তু কাছে গিয়া! যখন তাহাদিগকে কথা জিজ্ঞাসা করিলেন তখন তাহার। কথার উত্তর দিতে পারে না। তিন দিন তাহার! খাইতে পায় নাই, এমনি ছুর্বল হইয়! গিয়াছে বে মুখ দিয়া কথা সরে না। নানকের মনে বড়ে৷ দয়া হইল। তিনি কাতর হ্ইয়! ত্বাহার চাকরকে বলিলেন, “আমার বাপ কিছু লাভের জন্য আমাকে লুনের ব্যাবস1 করিতে হুকুম করিয়াছেন। কিন্তু লাভের টাকা কতদিনই বা! থাকিবে! ছুই দিনেই ফুরাইয়। যাইবে আমার বড়ে| ইচ্ছা হইতেছে, এই টাকায় এই গরিবদের দুঃখ মোচন করিয়া যে লাভ চিরদিন থাকিবে সেই পুণ্য লাভ করি।” বালসিন্ধু কাজের লোক ছিল বটে, কিন্ত নানকের কথ! শুনিয়। তাহার মন গলিয়া গেল। সে কহিল, “এ বড়ো ভালে। কথ11 নানক তীহার ব্যাবসার সমস্ত টাক! ফকিরদের দান করিলেন তাহারা পেট ভরিয়া! খাইয়! যখন গায়ে জোর পাইল, তখন

নানককে ডাকিয়! ঈশ্বরের কথা শুনাইল। তাহার| নানককে বুঝাইয়! ৮৪

কাজের লোক কে

দিল, ঈশ্বর কেবল একমাত্র আছেন আর সমস্ত তাহারই স্থষ্টি। এই-সকল কথ] শুনিয়! নানকের মনে বড়ো! আনন্দ হইল।

তাহার পরদিন নানক বাড়ি ফিরিয়া আসিলেন। কালু জিজ্ঞাসা করিলেন, “কত লাভ করিলে ? নানক. বলিল, “বাবা, আমি গরিবদের খাওয়াইয়াছি। তোমার এমন ধনলাভ হইয়াছে যাহ চিরকাল থাকিবে !, কিন্তু সেরূপ ধনের প্রতি কালুর বড়ে। একট লোভ ছিল না। স্কৃতরাং সে রাগিয়! ছেলেকে মারিতে লাগিল। এমন সময়ে সে প্রদেশের ক্ষত রাজ! পথ দিয়া যাইতেছিলেন। তাহার নাম রায়বোৌলার। নানককে মারিতে দেখিয়। তিনি ঘরে প্রবেশ করিলেন জিজ্ঞাসা করিলেন, “কী হইয়াছে? এত গোল কেন? যখন সমস্ত ব্যাপার শুনিলেন তখন তিনি কালুকে খুব করিয়! তিরস্কার করিলেন। বলিলেন, “আর যদি কখনো নানকের গায়ে হাত তোল তো দেখিতে পাইবে এমন-কি, রাজা অত্যন্ত ভক্তির সহিত নানককে প্রণাম করিলেন। লোকে বলে যে, যখন সাপ নানককে ছাত। ধরিয়াছিল তখন রাজা তাহ দেখিয়াছিলেন, এই জন্যই নানকের উপর তাহার এত ভক্তি হইয়াছিল কিন্ত সে সাপের ছাতা-ধর! সমস্তই গুজব; আসল কথা, নানকের সমস্ত বৃত্তান্ত শুনিয়া রাজা বুঝিতে পারিয়াছিলেন যে নানক একজন মন্তলোক।

নানকের উপর আর তে। মারধোর চলে না। কালু অন্য উপায় দেখিতে লাগিলেন

জয়রাম নানকের ভগিনীপতি। পাগন দৌলতরখখার শস্তের গোলা জয়রামের জিম্মায় ছিল। কালু স্থির করিলেন, নানককেও জয়রামের কাজে লাগাইয়া দিবেন, তাহ! হইলে ক্রমে নানক কাজের লোক হইয়া উঠিবেন। নানকের বাপ যখন নানকের কাছে এই প্রস্তাব করিলেন তখন তিনি

৮৫

ইতিহাস

বলিলেন, “আচ্ছ1।” এই বলিয়া নানক সুলতানপুরে জয়রামের। কাছে গিয়া উপস্থিত। সেখানে দ্িনকতক বেশ কাজ করিতে লাগিলেন। সকলের ,পরেই তাহার ভালোবাসা ছিল, এইজন্য স্থলতানপুরের সকলেই তাহাকে ভালোবাসিতে লাগিল। কিন্তু কাজে মন দিয়! নানক তীহার আসল কাজটি ভুলেন নাই তিনি ঈশ্বরের কথা সর্দাই ভাবিতেন।

এমন কিছুকাল কাটিয়া গেল। একদিন সকালে নানক একলা বসিয়! ঈশ্বরের ধ্যান করিতেছেন, এমন সময়ে একজন মুসলমান ফকির আসিয়া তাহাকে বলিল, "নানক, তুমি আজকাল কী লইয়! আছ বলো দেখি। এ-সকল কাজকর্ম ছাড়িয়। দাও চিরদিনের যে যথার্থ ধন তাহাই উপার্জনের চেষ্টা করে|” ফকির যাহ] বলিলেন তাহার অর্থ এই যে, ধর্ম উপার্জন করো, পরের উপকার করো, পৃথিবীর ভালো! করো, ঈশ্বরে মন দাও__ টাক। রোজগার করিয়। পেট ভরিয়! খাওয়ার চেয়ে ইহাতে বেশি কাজ দেখে

ফকিরের এই কথাট। হঠাৎ এমনি নানকের মনে লাগিল যে তিনি চমকিয়া উঠিলেন, ফকিরের মুখের দিকে একবার চাহিয়া! দেখিলেন মৃছিত হইয়া পড়িলেন। মূছ্ণ ভাঙিতেই তিনি গরিব লোকদ্দিগকে ডাকিলেন শশ্ত যাহা-কিছু ছিল সমস্ত তাহাদিগকে বিলাইয়। দ্িলেন। নানক আর ঘরে থাকিতে পারিলেন না। কাজকর্ম সমস্ত ছাড়িয়! দিয় তিনি পলাইয়! গেলেন।

নানক পলাইলেন বটে কিন্তু অনেক লোক তীহার সঙ্গ লইল। ধাহার ধর্মের দিকে এত টান, এমন মধুর ভাব, এমন মহ্‌ৎ স্বভাব, তিনি সকলকে ছাঁড়িলেও তাহাকে সকলে ছাড়ে না মর্দান৷ তাহার সঙ্গে গেল; মে ব্যক্তি বীণ। বাজাইত, গান গাহিত। লেন! তাহার সঙ্গে গেল। সেই-ষে পুরানে। চাকর বালসিন্ধু ছেলেবেলায় নানকের সঙ্গে লুন বিক্রয় করিয়! টাক লাভ

৮৩৬

কাজের লোক কে

করিতে গিয়াছিল আজও সে নানকের সঙ্গে চলিল; এবারেও বোধ করি কিঞ্চিৎ ধনলাভের আশ] ছিল, কিন্তু যে-সে ধন নয়, সকল ধনের শ্রেষ্ঠ যে ধন সেই ধর্ম। রামদাসও নানককে ছাড়িতে পারিল ন1; তাহার বয়প বেশি হইয়াছিল বলিয়া সকলে তাহাকে বলিত বুড্া। আর কত নাম করিব, এমন ঢের লোক সঙ্কে গেল।

নানক যথাসাধ্য সকলের উপকার করিয়া সকলকে ধর্মোপদেশ দিয়া দেশে দেশে বেড়াইতে লাগিলেন হিন্দু মুসলমান সকলকেই তিনি ভালোবাসিতেন। হিন্দুধর্মের যাহা দৌষ ছিল তাহাও তিনি বলিতেন, মুসলমান ধর্মের যাহা দৌষ ছিল তাহাও তিনি বলিতেন। অথচ হিন্দু মুসলমান সকলেই তাহাকে ভক্তি করিত। নানক আমাদের বাংলাদেশেও আসিয়াছিলেন। শিবনাতূ বলিয়া! কোন্-এক দেশের রাজা নানা লোভ দেখাইয়| নানককে উচ্ছন্ন দিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন কিন্তু নানক তাহাতে ভুলিবেন কেন? উল্টিয়া রাজাকে তিনি ধর্মের দিকে লওয়াইলেন। মোগল সমাট বাবরের সঙ্গে একবার নানকের দেখ। হয়। সম্রাট নানকের সাধুভাব দেখিয়। সন্থষ্ট হইয়। তাহাকে বিস্তর টাকা পুরস্কার দিতে চাহিয়াছিলেন, কিন্ত নানক তাহ! লইলেন না; তিনি রলিলেন, “যে জগদীশ্বর সকল লোককে অন্ন দিতেছেন, অনুগ্রহ পুরস্কার আমি তীহারই কাছ হইতে চাই, আর- কাহারও কাছে চাই না।” নানক যখন মক্কায় বেড়াইতে গিয়াছিলেন তখন একদিন তিনি মদ্জিদের দিকে পা করিয়া ঘুমাইতেছিলেন। তাহাই দেখিয়া একজন মুসলমানের বড়ো রাগ হইল। সে তাহাকে জাগাইয়া বলিল, 'তুমি কেমন লোক হে! ঈশ্বরের মন্দিরের দিকে পা করিয়া তুমি ঘুমাইতেছ!” নানক বলিলেন, “আচ্ছা ভাই, জগতের কোন্‌ দিকে ঈশ্বরের মন্দির নাই একবার দেখাইয়া দাও 1, নানক লোক ভুলাইবার জন্য কোনো!

৮৭

ইতিহাস

আশ্চর্য কৌশল দেখাইয়া কখনো আপনাকে মন্ত লোক বলিয়া প্রচার করিতে চাহেন নাই। গল্প আছে একবার কেহ কেহ তাহাকে বলিয়াছিল, “আচ্ছা, তুমি ষে একজন মস্ত, সাধু, আমাদিগকে একট] কোনো! আশ্চর্য অলৌকিক ঘটন| দেখাও দেখি ।' নানক বলিলেন, “তোমাদিগকে দেখাইবার যোগ্য আমি কিছুই জানি না। আমি কেবল পবিত্র ধর্মের কথা জানি, আর কিছুই জানি ন1। ঈশ্বর সত্য, আর সমস্ত অস্থায়ী,

নানক অনেক দেশ বিদেশ ভ্রমণ করিয়া! দেশে ফিরিয়! আসিয়া গৃহস্থ 'হুইলেন। গৃহে থাকিয়া তিনি সকলকে ধর্মোপদেশ দিতেন। তিনি কোরান পুরাণ কিছুই মানিতেন না। তিনি সকলকে ডাকিয়। বলিতেন, এক ঈশ্বরকে পৃজা করো, ধর্মে মন দাও, অন্য সকলের দোষ মার্জনা করো, সকলকে ভালোবাসো এইরূপ সমস্ত জীবন ধর্মপথে থাকিয়া! সকলকে ধর্মোপদেশ দিয়! সত্তর বংসর বয়সে নানকের মৃত্যু হয়।

কালু বেশি কাজের লোক ছিল কি কালুর ছেলে নানক বেশি কাজের লোক ছিল আজ তাহার হিসাব করিয়া দেখো দেখি! আজ যে শিখ জাতি দেখিতেছ, যাহাদের স্বন্দর আকুতি, মহৎ মুখী, বিপুল বল, অসীম সাহস দেখিয়া! আশ্চর্য বোধ হয়, এই শিখ জাতি নানকের শিষ্ত নানকের পূর্বে এই শিখ জাতি ছিল না1। নানকের মহৎ ভাব ধর্মবল পাইয়া এমন একটি মহৎ জাতি উৎপন্ন হইয়াছে নানকের ধর্মশিক্ষার প্রভাবেই ইহাদের হৃদয়ের তেজ বাঁড়িয়াছে, ইহাদের শির উন্নত হইয়াছে, ইহাদের চরিত্রে ইহাদের মুখে মহৎ ভাব ফুটিয়া উঠিয়াছে। কালু যে টাকা রোজগার করিয়াছিল নিজের উদরেই তাহা খরচ করিয়াছে, আর নানক যে ধর্মধন উপার্জন করিয়াছিলেন আজ চার-শো বৎসর ধরিয়৷ মানবের তাহা ভোগ করিতেছে কে বেশি কাজ করিয়াছে !

৮৮

বীর গুরু

বনের একটা গাছে আগুন লাগিলে অন্ান্ট যেসকল গাছে উত্তীপ গ্রচ্ছন্ন ছিল সেগুলাও যেমন আগুন হইয়] উঠে, তেমনি যে জাতির মধ্যে একজন বড়োলোক উঠে, সে জাতির মধ্যে দেখিতে দেখিতে মহত্বের শিখা ব্যাপ্ত হইয়! পড়ে, তাহার গতি আর কেহই রোধ করিতে পারে ন1।

নানক যে মহত্ব লইয়! জন্মিয়াছিলেন সে তীহার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই নিবিয়। গেল না। তিনি যেধর্মের সংগীত, যে আনন্দ আশার গান গাহিলেন, তাহ। ধ্বনিত হইতে লাগিল। কত নৃতন নৃতন গুরু জাগিয়া উঠিয়। শিখদিগকে মহত্বের পথে অগ্রসর করিতে লাগিলেন

তখনকার যথেচ্ছাচারী মুসলমান রাজার। অনেক অত্যাচার করিলেন, কিন্তু নব্ধর্মোঘ্সাহে দীপ্ত শিখ জাতির উন্নতির পথে বাধা দিতে পারিলেন ন|। বাধা অত্যাচার পাইয়! শিখের! কেমন করিয়! বীর জাতি হইয় উঠিল তাহার গল্প বলি শুন।

নানকের পর পঞ্লাবে আটজন গুরু জন্গিয়াছেন, আটজন গুরু মরিয়াছেন, নবম গুরুর নাম তেগ্বাহাছুর। আমরা যে সময়কার কথা বলিতেছি তখন নিষ্ঠুর আরপ্তীব দিল্লির সম্রাট ছিলেন। রামরায় বলিয়া তেগ্বাহাদুরের একজন শত্রু সম্মাটের সভায় বাস করিত। তাহারই কথ! শুনিয়! সম্রাট তেগৃবাহাছুরের উপরে ক্ুদ্ধ হইয়াছেন, তাহাকে ডাকিতে পাঠাইয়।ছেন।

আরঞ্জীবের লোক যখন তেগ্বাহাদুরকে ডাকিতে আসিল তখন তিনি বুঝলেন যে তীহার আর রক্ষা নাই। যাইবার সময়ে তিনি তাহার ছেলেকে কাছে ডাকিলেন। ছেলের নাম গোবিন্দ, তাহার বয়স চোদ্দ বংসর। পূর্বপুরুষের তলোয়ার গোবিন্দের কোমরে বাধিয়। দিয়া তাহাকে বলিলেন, “তুমিই শিখেদের গুরু হইলে সম্রাটের আদেশে ঘাতক

৮৯

ইতিহাস

আমাকে যদি বধ করে তে! আমার শরীরট। যেন শেয়াল-কুকুরে নাখায়! আর এই অন্যায় অত্যাচারের বিচার তুমি করিয়ো, ইহার প্রতিশোধ তুমি লইয়ে| ৷” বলিয়। তিনি দিলি চলিয়া গেলেন

রাজসভায় তাহাকে তাহার গোপনীয় কথা সম্বন্ধে অনেক প্রশ্ন কর! ইইল। কেহ বা বলিল, “আচ্ছা, তুমি যে মস্ত লোক তাহার প্রমাণস্বরূপ একট। অলৌকিক কারখানা দেখাও দেখি! তেগ্বাহাছুর বলিলেন, “মে তে! আমার কাছ নহে। মানুষের কর্তব্য ঈশ্বরের শরণাপন্ন হইয়! থাক]। তবে তোমাদের অনুরোধে আমি একট] অদ্ত্ুত ব্যাপার দেখাইতে পারি একটা কাগজে মন্ লিখিয়। ঘাড়ে রাখিয়া দিব, সে ঘাড় তলোয়ারে বিচ্ছিন্ন হইবে ন।।” এই বলিয়। মন্ত্রলেখা! কাগজ ঘাড়ে রাখিয়া! তিনি ঘাড় পাতিয় দিলেন। ঘাতক তরবারি উঠাইয়৷ আঘাত করিল। মাথ! বিচ্ছিন্ন হইয়! গেল। কাগঞ্জ তুলিয়। লইয়! সকলে দেখিল, তাহাতে লেখ! আছে, “শির দিয়া, সির নেহি দিয়া। অর্থাৎ “মাথ| দিলাম, গুপ্তকথা দিলাম না|” এইরূপে মাথা দিয় তেগ্বাহাদুর রাঁজসভার প্রশ্নের হাত হইতে নিষ্কৃতি পাইলেন।

বালক গোবিন্দের মনে বড়ো আঘাত লাগিল। মুসলমানদের যথেচ্ছাচার নিবারণ করিবেন এই তাহার সংকল্প হইল। কিন্ত তাড়াতাড়ি করিলে তো কিছুই হয় না; এখনও সুসময়ের জন্য ধৈর্য ধরিয়া অপেক্ষ করিতে হইবে, আয়োজন করিতে হইবে, বহুদিন অবিশ্রাম চিন্তা করিয়া মনে মনে সমস্ত সংকল্প গড়িয়] তুলিতে হইবে, তবে যদি উদ্দেশ্ঠ সিদ্ধ হয়। যাহারা ছুই দিনেই দেশের উপকার করিয়! সমস্ত চুকাইয়। দিতে চায়, যাহাদের ধের্য নাই, যাহার! অপেক্ষ! করিতে জানে না, তাহাদের তড়িঘড়ি কাজ আড়ম্বর দেখিয়া লোকের চমক লাগিয়া যায়, কিন্ত

১৩

বীর গুরু

তাহার! বড়ো লোক নহে, তাহাদের কাজ স্থায়ী হয় না। তাহারা তাহাদের উদ্দেশ্টের জন্য সমস্ত জীবন দ্রিতে চাহে না, জীবনের গোটাকতক দিন দিতে চাহে মাত্র, অথচ তাড়াতাড়ি বড়ে! লোক বলিয়! খুব একট] প্রশংসা পাইতে চাহে। গোবিন্দ স্ত্রপ লোক ছিলেন না তিনি প্রায় কুড়ি বর ধরিয়। যমুনাতীরের ছো'টে। ছোটে! পাহাঁড়ের মধ্যে বিজনে পারস্তভাষ1-শিক্ষ। শাস্ব-অধ্যয়ন করিতে লাগিলেন; বাঘ বন্য শুকর শিকার করিয়। এবং মনে মনে আপনার সংকল্প স্থির করিয়! অবসরের জন্য প্রতীক্ষা করিয় রহিলেন।

গুরুগোবিন্দের শিষ্যের1! তাহার চারি দিকে জড়ে৷ হইতে লাগিল সমস্ত শিখজাতিকে একত্রে আহ্বান করিবার জন্য তিনি চারি দিকে তাহার শিষ্যদিগকে পাঠাইয়। দিলেন। এইরূপে সমস্ত পাঞ্জাব হইতে বিস্তর লোক আসিয়। তাহাকে চারি দিকে ঘিরিয়! দাড়াইল। তিনি তাহাদিগকে আহ্বান করিয়। বলিতে লাগিলেন, দেব-দৈত্য সকলেই নিজের উপাসন! প্রচলিত করিতে চায়; গোরখনাথ রামানন্দ প্রভৃতি ধর্মমতের প্রবর্তকের নিজের নিজের এক-একট] পন্থা! বাহির করিয়! গিয়াছেন। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থন। করিবার সময়ে মহম্মদ নিজের নাম উচ্চারণ করিতে আদেশ করিয়া গিয়াছেন। কিন্তু তিনি, গোবিন্দ, ধর্মপ্রচার, পুণ্যের জয়-বিস্তার পাপের বিনাশ-সাধনের জন্য আসিয়াছেন। অগ্ঠান্ত মানুষও যেমন তিনিও তেমনি একজন; তিনি পিতা পরমেশ্বরের দাস; এই পরমাশ্চয জগতের একজন দর্শক মাত্র ; তাহাকে ঈশ্বর বলিয়! যে পৃজা করিবে নরকে তাঁহার গতি হইবে। কোরান পুরাণ পাঠ করিয়।, প্রতিম। বা মৃত ব্যক্তির পূজা করিয়া» ঈশ্বরকে পাওয়া যায় না। শাস্কে বা কোনো প্রকার পুজার কৌশলে ঈশ্বর মিলে না। বিনয়ে ভক্তিতে ঈশ্বরকে পাওয়] যায় |

৯১

ইতিহাস

তিনি বলিলেন, 'আজ হইতে সমস্ত লোক এক হইয়া! গেল। উচ্চ নীচের প্রভেদ রহিল না। জাতিভেদ উঠিয়া গেল। সকলে অত্যাচারী তুর্ক জাতির বিনাশের ব্রত গ্রহণ করিলাম ।,

জাতিভেদ উঠিয়া গেল শুরনিয়] ব্রাঙ্গণ-ক্ষত্রিয়দের অনেকে অসস্তোষ প্রকাশ করিতে লাগিল, অনেকে রাগ করিয়া! চলিয়া গেল। গোবিন্দ বলিলেন, “যাহার! নীচে আছে তাহাদিগকে উঠাইব, যাহাদিগকে সকলে ঘ্বণা! করে তাহারা আমার পাশে স্থান পাইবে ইহ! শুনিয়া! নীচজাতির লোকেরা অত্যন্ত আনন্দ করিতে লাগিল এই সময়ে গোবিন্দ সমস্ত শিখ- জাতিকে সিংহ উপাধি দিলেন কুড়ি হাজার লোক গোবিন্দের দলে রহিল

এইরূপে গোবিন্দ শিখজাতিকে নৃতন উৎসাহে দীপ্ত করিনা ধনমানের আশা বিসর্জন করিয়! নিজের সংকল্প সাধনে প্রবৃত্ত হইলেন। গোবিন্দের যদি মনের আশা! থাকিত তাহা হইলে তিনি অনায়াসে আপনাকে দেবতা বলিয়! চালাইতে পারিতেন, কিন্তু তিনি তাহা করেন নাই ধনের প্রতি গোবিন্দের বিরাগ সম্বন্ধে একটা গল্প আছে বলি। গোবিন্দের একজন ধনী শিত্য তাহাকে পঞ্চাশ হাজার টাকার মূল্যের একজোড়া বলয় উপহার দিয়াছিল। গোবিন্দ তাহার মধ্য হইতে একটি বলয় লইয়! নদীর জলে ফেলিয়া দিলেন দৈবাৎ পড়িয়া গেছে মনে করিয়! একজন শিখ পাঁচশত টাকা পুরস্কারের লোভ দ্রেখাইয়! একজন ডুবারিকে সেই বলয় খুঁজিয়া আনিতে অনুরোধ করিল। সে বলিল, “আমি খুঁজিয়। আনিতে পারি, যদি আমাকে ঠিক জায়গাটা দেখাইয়] দেওয়া হয়। শিখ গোবিন্দকে ডাকিয়া আনিয়া জিজ্ঞাসা করিল, বাল] কোন্থানে পড়িয়া গেছে। গোবিন্দ অবশিষ্ট বালাটি লইয়। জলে ছুঁড়িয় ফেলিয়! বলিলেন, “ওইখানে শিখ তাহার মনের ভাব বুঝিতে পারিয়া আর খুঁজিল না।

৯২

বীর গুরু

হিমালয়ের ক্ষুদ্র পার্বত্য রাজাদের সঙ্গে গুরু গোবিন্দের এক যুদ্ধ হয়, তাহাতে গোবিন্দের জয় হয়। মুখোয়াল-নামক স্থানে থাকিয়া গোবিন্দ চারিটি নৃতন ছূর্গ নির্মাণ করিলেন ছুই বংসর যুদ্ধবিগ্রহ করিয়! চারি দিকের অনেক দেশ জয় অধিকার করিলেন। পর্বতের রাজারা ইহাতে ভয় পাইয়। দিল্লির সম্রাটের নিকট সাহাধ্য প্রার্থন! করিয়া এক দরখাস্ত পাঠাইয়া দিল। জবদন্তথ! শমৃদ্থা নামক ছুই আমীরকে সম্রাট পার্বত্য রাজাদের সাহায্যে নিয়োগ করিলেন এইরূপে ছুই মুসলমান আমীর এবং পৰ্তের রাজারা একত্র হইয়। মুখোয়াল তুর্গ ঘিরিয়া ফেলিল। দুর্গের বাহিরে সাত মাস ধরিয়। ক্রমাগত যুদ্ধ চলিল। অবশেষে গোবিন্দ তাহার দুর্গের ভিতর প্রবেশ করিয়! ছার রুদ্ধ করিলেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তাহার আহার ফুরাইয়৷ গেল। তাহ ছাড়া গোবিন্দের অনুচরেরা তাহাকে ছাড়িয়! যাইবে বলিয়! স্থির করিয়াছে দিকে তাহার মা গুজরী একদিন রাত্রে গোবিন্দের ছুটি ছেলে লইয়! দুর্গ হইতে পালাইয়! গেলেন। কিন্তু ছেলে ছুটিকে রক্ষা করিতে পারিলেন না। পথের মধ্যে সিহিন্দ-নাঁমক স্থানে মুসলমানেরা তাহাদিগকে জীবিত অবস্থায় পুতিয়া ফেলে। গুজরী সেই শোকে প্রাণত্যাগ করেন। দিকে আহারাভাবে গোবিন্দ অত্যন্ত বিপদে পড়িলেন। তীহার অনুচরেরা আর থাকিতে চাহে না। তিনি তাহাদিগকে ভীরু বলিয়! ভ€সন। করিলেন দুর্গের দরজা খুলিয়৷ ফেলিয়! বলিলেন, 'এস তবে আর-একবার যুদ্ধ করিয়! দেখা যাক যদি মরি তাহ] হইলে কীতি থাকিয়! যাইবে; যদ্দি জয়লাভ করি তবে আমাদের উদ্দেশ্য সফল হইল। বীরের মতো! মরিলে গৌরব আছে, ভীরুর মতো! মরা হীনতা।” কিন্তু গোবিন্দের কথ! কেহ মানিল না। তাহাকে একখানি চিঠি লিখিয়। অন্চরের! দুর্গ হইতে বাহির হইয়া! গেল। কেবল চল্লিশ

৮৩

ইতিহাস

জন গোবিন্দের সঙ্গে রহিল। গোবিন্দ তাহাদিগকে বলিলেন, “তোমরাও যাও! তাহারা বলিল, “যে শিখের! ছাড়িয়া পালাইয়াছে তাহাদিগকে মাপ করো গুরু, আমরা তোমার জন্ত প্রাণ দিব। এই চল্লিশ জন অন্থচর সঙ্গে লইয়। মুখোয়াল হইতে পালাইয়া গুরু চমকৌর দুর্গে আশ্রয় লইলেন। সেখানেও বিপক্ষের! তীহাদিগকে ঘিরিল। প্রাতঃকালে দুর্গের ছার খুলিয়1 তাহার! মুসলমানদের উপর গিয়! পড়িলেন। বিপক্ষ পক্ষের অনেকগুলিকে মারিলেন এবং তীহাদেরও অনেকগুলি মরিল। কেবল পাচ জন মাত্র বাকি রহিল। গোবিন্দের ছুই পুত্র রণজিৎ অজিত যুদ্ধে প্রাণত্যাগ করিলেন। গোবিন্দ আবার পলায়ন করিলেন। বহুদিন ধরিয়! পথে অনেক বিপদ-আপদ সহা করিয়া অবশেষে গোবিন্দ একে একে পলাতক শিপ্ঠপিগকে মংগ্রহ করিয়া লইলেন। এইরূপে গোবিন্দের অধীনে বারো হাজার সৈন্য জড়ো হইল। |

মুসলমানেরা এই খবর পাইয়| তাহাকে আবার আক্রমণ করিল। শিখের| বলিল, “এবার হয় জয় করিব নয় মরিব।” জয় হইল মুকতসরের নিকট যুদ্ধে মুসলমানদের সম্পূর্ণ হার হইল এই জয়ের খবর চারি দিকে রাষ্ট হইয়া! পড়িল। প্রত্যহ চারি দিক হইতে নৃতন সৈন্য আসিয়া গোবিন্দের দলে প্রবেশ করিতে লাগিল।

সা আরপ্ধীব তখন দক্ষিণে ছিলেন। গোবিন্দের জয়ের সংবাদ পাইয়া! অত্যন্ত বিরক্ত হইলেন। তীহার কাছে হাজির হইবার জন্ত গোবিন্দকে এক আদেশপত্র পাঠাইয়! দিলেন। গোবিন্দ তাহার উত্তরে লিখিয়া পাঠাইলেন, “তোমার উপরে আমার কিছুমাত্র বিশ্বাস নাই তুমি আমাদের প্রতি যে অন্তায়াচরণ করিয়াছ শিখেরা তাহার প্রতিশোধ লইবে ।, গোবিন্দ তাহার পত্রে, মোগলের! শিখগুরুদিগের প্রতি যেসকল অত্যাচার

৯৪

বীর গুরু

করিয়াছে তাহার উল্লেখ করিঘ্না বলিলেন, “আমার সন্তানেরা বিনষ্ট হইয়াছে ; আমার পৃথিবীর সমস্ত বদ্ধন বিচ্ছিন্ন হইয়াছে; মৃত্যুর জন্য অপেক্ষ! করিয়া! আছি; আমি কাহাকেও ভয় করি না, ভয় করি কেবল জগতের একমাত্র সম্রাট রাজার রাজাকে ভগবানের নিকট দরিদ্রের প্রার্থনা বিফল হয় না; তুমি যে-সকল অত্যাচার নিষ্ঠরতাচরণ করিয়াছ একদিন তাহার হিসাব দ্রিতে হইবে ।, এই পত্রে গোবিন্দ সম্াটুকে লিখিয়াছিলেন যে, “তুমি হিন্দুর্দিগকে মুসলমান করিয়া! থাক, আমি মুসলমানদিগকে হিন্দু করিব। তুমি আপনাকে নিরাপদ ভাবিয়া স্থথে আছ, কিন্তু সাবধান, আমি চড়াই পাখিকে শিখাইব বাজপাথিকে কী করিয়া ভূমিশায়ী করিতে হয়!” পাঁচ জন শিখের হাত দিয়! এই চিঠি গোবিন্দ সম্রাটের কাছে পাঠাইয়! দিলেন। সম্াট সেই চিঠি পড়িয়া ক্রুদ্ধ না হইয়! সন্তোষ প্রকাশ করিলেন সেই পাঁচজন শিখের হাত দিয়! গোবিন্দকে চিঠি সওগাত পাঠাইয়। দিলেন চিঠিতে লিখিয়| দিলেন যে, গোবিন্দ যদি দাক্ষিণাত্যে আসেন তবে সম্রাট তাহাকে সমাঁদরের লহিত অভ্যর্থনা করিবেন। এই চিঠি পাইয়| গোবিন্দ কিছুদিন শান্তি উপভোগ করিতে লাগিলেন। অবশেষে আরঞ্জাবের সহিত সাক্ষাৎ কর|ই স্থির করিলেন মেই অভিপ্রায় দক্ষিণে যাত্র। করিলেন। তিনি. যখন পথে তখন আরপ্তীবের মৃত্যু হইয়াছে দক্ষিণে উপস্থিত হইয়| দেখিলেন, বাহাছুরশ] সম্রাট হইয়াছেন। বাহাছুরশ। বহুবিধ সওগাত উপহার দিয়] গোবিন্দকে পাঁচ হাজার অশ্বারোহীর অধিপতি করিয়! দিলেন

গোবিন্দের মৃত্যুঘটনা বড়ো! শোচনীয়। কেহ কেহ বলে, ভ্রমাগত শোকে বিপদে নিরাশায় অভিভূত হইয়া! গোবিন্দ শেষ দশায় কতকটা পাগলের মতে হুইয়াছিলেন জীবনের প্রতি তাহার অতিশয় বিরাগ

৯৫

ইতিহাস

জন্মিয়াছিল। একদিন একজন পাঠান তাহার নিকট একটি ঘোড়া বিক্রয় করিতে আসিয়াছিল; গোবিন্দ সেই ঘোড়া কিনিয়া তাহার দাম দিতে কিছুদিন বিলম্ব করিয়াছিলেন। অবশেষে পাঠান ক্রুদ্ধ হইয়] তাহাকে গালি দিয়া তরবারি লইয়া! আক্রমণ করিল। গোবিন্দ পাঠানের হাত হইতে তরবারি কাড়িয়া লইয়। তাহাকে কাটিয়। ফেলিলেন।

এই অন্যায় কার্য করিয়! তাহার অত্যন্ত অনুতাপ উপস্থিত হইল তিনি সেই পাঠানের পুত্রকে অনেক অর্থ দান করিলেন। তাহাকে তিনি যথেষ্ট স্নেহ করিতেন এবং তাহার সহিত খেল করিতেন একদিন সেই পাঠান-তনয়কে তিনি বলিলেন, “আমি তোমার পিতাকে বধ করিয়াছি, তুমি যদি তাহার প্রতিশোধ না লও তবে তুমি কাপুরুষ, ভীরু |” কিন্তু সেই পাঠান গোবিন্দকে অত্যন্ত মান্য করিত, এইজন্য সে গোবিন্দের হানি ন! করিয়। মনে মনে পালাইবার সংকল্প করিল।

আর-একদিন সেই পাঠানের সহিত শতরঞ্চ খেলিতে খেলিতে গোবিন্দ তাহাকে তাহার পিতার মৃত্যুর প্রতিশোধ লইতে উত্তেজিত করিয়। দিলেন। সে আর থাকিতে না পারিয়া গোবিন্দের পেটে ছুরি বসাইয়া দিল।

গোবিন্দের অনুচরের সেই পাঠানকে ধরিবার জন্য চারি দিক হইতে ছুটিয়া আসিল। গোবিন্দ তাহাদিগকে নিবারণ করিয়। বলিলেন, “আমি উহার কাছে অপরাধ করিয়াছিলাম, তাহার প্রতিশোধ দিয়াছে। আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করিবার জন্য আমিই উহাকে এইরূপ পরামর্শ দিয়াছিলাম। উহাকে তোমরা ধরিয়ে! না।,

অন্থুচরের। গোবিন্দের ক্ষতস্থান সেলাই করিয়া দিল। কিন্তু জীবনের প্রতি বিরক্ত হইয়া গোবিন্দ এক দৃঢ় ধন্নক লইয়া সবলে নোওয়াইয়া

৪৬

বীর গুরু

ধরিলেন, সেই চেষ্টাতেই তাহার ক্ষতস্থানের সেলাই ছিড়িয়া গেল তাহার মৃত্যু হইল। .

গোবিন্দ যে সংকল্প সিদ্ধ করিতে তাঁহার জীবন অতিবাহিত করিয়াছিলেন সে সংকল্প বিফল হইল বটে, কিন্তু তিনিই প্রধানত শিখদিগকে যোদ্ধঙ্গাতি করিয়! তুঁলিয়।ছিলেন। তীহার মৃত্যুর পরে একদিন শিখের] স্বাধীন হইয়াছিল; সে স্বাধীনতার দ্বার তিনিই উদঘাটন করিয়া দিয়াছিলেন।

শিখ-বাধীনতা

গুরু গোবিন্দই শিখদিগের শেষ গুরু তিনি মরিবার সময় বন্দা নামক এক বৈরাগীর উপরে শিখদিগের কর্তৃত্ভার দিয়া যান। তিনি যে সংকল্প অসম্পূর্ণ রাখিয়া যান সেই সংকল্প পূর্ণ করিবার ভার বন্দার উপরে পড়িল। অত্যাচারী বিদেশীদের হাত হইতে স্বজাতিকে পরিত্রাণ কর গোবিন্দের এক ব্রত ছিল, সেই ব্রত বন্দ! গ্রহণ করিলেন।

বন্দার চতুর্দিকে শিখেরা সমবেত হইতে লাগিল। বন্দার প্রতাপে সমস্ত পঞ্জাব কম্পিত হইয়া! উঠিল। বন্দা সিহিন্দ হইতে মোগলদের তাড়াইয়! দ্রিলেন। সেখানকার শাসনকর্তাকে বধ করিলেন। সির্মুরে তিনি এক দুর্গ স্থাপন করিলেন। শতদ্র এবং যমুনার মধ্যবর্তী প্রদেশ অধিকার করিয়! লইলেন, এবং জিল! সাহারানপুর মরুভূমি করিয়! দিলেন।

মুসলমানদের সঙ্গে মাঝে মাঝে যুদ্ধ চলিতে পাগিল। লাহোরের উত্তরে জন্বু পর্বতের উপরে বন্দা নিবাস স্থাপন করিলেন, পঞ্জাবের অধিকাংশই তাঁহার আয়ত হইল।

এই সময়ে দিল্লির সমাট্‌ বাহাছুরশা*র মৃত্যু হইল। তাহার সিংহাসন লইয়! তাহার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে গোলযোগ চলিতে লাগিল। এই স্থযোগে শিখের! সমবেত হইয়! বিপাশা ইরাবতীর মধ্যে গুরুদাসপুর- নামক এক বৃহৎ দুর্গ স্থাপন করিল।

লাহোরের শাসনকর্তা বন্দার বিরুদ্ধে যাত্রা করিলেন। উভয় পক্ষে ঘোরতর যুদ্ধ হইল। এই যুদ্ধে মুসলমানদের জয় হইল। এই জয়ের পর সিহিন্দে একদল শিখসৈন্ পুনর্বার প্রেরিত হইল। সেখানকার শাসনকর্তা বয়াজিদ্খ! শিখদিগকে আক্রমণ করিলেন। একজন শিখ গোপনে বয়াজিদের তাস্থুর মধ্যে প্রবেশ করিয়া তাহাকে নিহত করিল। দিল্লীর সম্রাট কাশ্মীরের শাসনকর্তা আবছুল সম্মদ্খ! -নীমক এক পরাক্রান্ত

নিচ

শিখ-ন্বাধীনতা

তুরানিকে শিখদিগের বিরুদ্ধে যাত্রা করিতে আদেশ করিলেন। দিল্লী হইতে তীহার সাহাষ্যার্থে এক দল বাছা বাছা সৈম্ত প্রেরিত হইল। সম্মদ্‌- খাও সহম্্র সহস্র স্বজাতীয় তুরানি সৈন্য লইয়া যাত্রা! করিলেন। লাহোর হইতে কামান-শ্রেণী সংগ্রহ করিয়া তিনি শিখদিগের উপরে গিয়! পড়িলেন। শিখেরা প্রাণপণে যুদ্ধ করিল। আক্রমণকারীদের বিস্তর সৈন্য নষ্ট হইল। কিন্তু অবশেষে পরাজিত হইয়া বন্দ গুরুদাসপুরের ছূর্গে আশ্রয় গ্রহণ করিলেন। শক্রসৈন্ত তাহার দুর্গ সম্পূর্ণ বেষ্টন করিয়া ফেলিল। দুর্গে খাগ্-বাতায়াত্‌ বন্ধ হইল। সমস্ত খাছ্য এবং অখাগ্য পযন্ত যখন নিঃশেষ হইয়া গেল তখন বন্দ শক্রহস্তে আত্মসমর্পণ করিতে বাধ্য হইলেন। ৭৪০ জন শিখ বন্দী হইল। কথিত আছে, যখন বন্দীগণ লাহোরের পথ দিয়! যাইতেছিল তখন বয়াজিদ্থার বৃদ্ধা মাতা তাহার পুত্রের হত্যাকারীর মন্তকে পাথর ফেলিয়। দিয়া বধ করিয়াছিল। বন্দা যখন দিলীতে নীত হইলেন তখন শকত্রর! শিখদের ছিন্নশির বর্শাফলকে করিয়া! তীহার আগে আগে বহন করিয়া লইয়! যাইতেছিল। প্রতিদিন একশত করিয়া! শিখ বন্দী বধ কর! হইত। একজন মুসলমান এঁতিহাসিক লিখিয়াছেন যে, “শিখের1 মরিবার সময় কিছুমাত্র চাঞ্চল্য প্রকাশ করে নাই; কিন্তু অধিকতর আশ্চর্যের বিষয় এই যে, আগে মরিবার জন্য তাহারা আপনা- আপনির মধ্যে বিবাদ তর্ক করিত। এমন-কি, এইজন্য তাহার! ঘাতকের সঙ্গে ভাব করিবার চেষ্টা করিত।* অষ্টম দিনে বন্দা বিচারকের সমক্ষে আনীত হইলেন। একজন মুসলমান আমীর তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “এমন বুদ্ধিমান শাস্জ্জ হইয়াও এত পাপাচরণে তোমার মতি হইল কী করিয়া? বন্দা বলিলেন, "পাপীর শাস্তি-বিধানের জন্য ঈশ্বর আমাকে নিযুক্ত করিয়াছিলেন ঈশ্বরের আদেশের বিরুদ্ধে যাহ"

৪৪)

ইতিহাস

কিছু কাজ করিয়াছি তাহার জন্য আবার আমারও শাস্তি হইতেছে ।” বিচারকের আদেশে তাহার ছেলেকে তাহার কোলে বসাইয়| দেংওয়] হইল। তাহার হাতে ছুরি দিয়া ্বহন্তে নিজের ছেলেকে কাটিতে হুকুম হইল। অবিচলিত ভাবে নীরবে তাহার ক্রোড়স্থ ছেলেকে বন্দ| 'বধ করিলেন। অবশেষে দগ্ধ লৌহের সীড়াশি দিয়া তাহার মাংস ছিড়িয়! তাহাকে বধ করা হইল।

বন্দার মৃত্যুর পর মোগলেরা শিখদের প্রতি নিদারুণ অত্যাচার করিতে আরম্ভ করিল। প্রত্যেক শিখের মাথার জন্য পুরক্কার-ন্বরূপ মূল্য ঘোষণ! কর। হইল।

শিখের। জঙ্গলে ছুর্গম স্থানে আশ্রয় লইল। প্রতি ছয় মাস অন্তর তাহার! একবার করিয়! অমৃতপরে সমবেত হইত। পথের মধ্যে যেসকল জমিদার ছিল তাহার! ইহার্দিগকে পথের বিপদ হইতে রক্ষা! করিত। এই ষাণ্মাসিক মিলনের পর আবার তাহার] জঙ্গলে ছড়াইয় পড়িত।

পঞ্জাব জঙ্গলে আবৃত হইয়া উঠিল। নাদিরশ1] আফগানিস্থান হইতে ভারতবর্ষে আসিবার সময় পঞ্জাব দিয়া আসিতেছিলেন। নাদিরশ। জিজ্ঞাসা করিলেন, শিখদের বাসস্থান কোথায়? পঞ্জাবের শাসনকর্তা উত্তর করিলেন, ঘোড়ার পৃষ্ঠের জিনই শিখদের বাসস্থান।

নাদিরশাহের, ভারত-আক্রমণকালে শিখের1 ছোটে! ছোটে। দল বীধিয়া তাহার পশ্চাদ্বর্তী পারসীক সৈন্যদলকে আক্রমণ করিয়া লুটপাট করিতে লাগিল। এইরপ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যুদ্ধবিগ্রহে রত হইয়! শিখেরা পুনশ্চ দুঃসাহসিক হইয়া! উঠিল। এখন তাহারা প্রকাশ্ঠভাবে শিখতীর্থ অমতসরে যাতায়াত করিতে লাগিল। একজন মুসলমান লেখক বলেন-_ প্রায়ই দেখা যায়, অশ্বারোহী শিখ পূর্ণবেগে ঘোড়া ছুটাইয়! তাহাদের তীর্থ উপলক্ষে

১০০

শিখ-ন্বাধীনতা

চলিয়াছে। কখনে। কখনো! কেহ বা ধৃতও হইত, কেহ বা হতও হইত, কিন্তু কখনে। এমন হয় নাই যে, একজন শিখ ভয়ে তাহার স্বধর্ম ত্যাগ করিয়াছে। অবশেষে শিখের1 উত্তরোত্তর নিরভীক হইয়। ইরাবতীর তীরে এক ক্ষুদ্র দুর্গ স্থাপন করিল। ইহাতেও মুসলমানেরা বড়ে৷ একট! মনোযেগ দিল না কিন্তু তাহারা যখন বুহৎ দল বাঁধিয়া আমিনাবাদের চতুষ্পার্শবতী স্থানে কর আদায় করিতে সমবেত হুইল, তখন মুসলমান সৈন্য তাহাদের আক্রমণ করিল। কিন্তু মুসলমানের! পরাজিত হইল তাহাদের সেনাপতি বিনষ্ট হইল। মুসলমানের অধিকসংখ্যক সৈন্য লইয়া! দ্বিতীয়বার আক্রমণ করিল শিখদিগকে পরাভূত করিল। লাহোরে এই উপলক্ষে বিস্তর শিখবন্দী নিহত হয়। যেখানে এই বধ- কার্য সমাধ1 হয় লাহোরের সেই স্থান সুহিদগঞ্ নামে অভিহিত। এখনো সেখানে ভাই তরুসিংহের কবরস্থান আছে। কথিত আছে, তরুসিংহকে তীহার দীর্ঘ কেশ ছেদন করিয়! শিখধর্ম ত্যাগ করিতে বল] হয়। কিন্তু গুরুগোবিন্দের এই বৃদ্ধ অন্ুচর তাহার ধর্ম ত্যাগ করিতে অসম্মত হইলেন এবং শিখদের শাস্বাহছমোদিত জাতীয় চিহ্ৃম্বব্ূপ দীর্ঘ কেশ ছেদন করিতে রাজী হইলেন ন।। তিনি বলিলেন, “চুলের সঙ্গে খুলির সঙ্গে এবং খুলির সঙ্গে মাথার সঙ্গে যোগ আছে। চুলে কাজ কী, আমি মাথাট' দিতেছি ।'

এইবূপে ক্রমাগত জয়পরাজয়ের মধ্যে সমস্ত শিখ জাতি আন্দোলিত হইতে লাগিল, কিন্তু কিছুতেই তাহার! নিরুদ্ধম হইল না। এক সময়ে যখন তাহার! সিহিন্দের শাসনকর্তা জেইনখার উপরে ব্যাত্ত্রের স্তায় লক্ষ দিবার উদ্যোগ করিতেছিল, এমন সময়ে দুর্দান্তপরাক্রম পাঠান আমেদ- শ! তাহার বুহৎ সৈন্যদল সমেত তাহাদের উপর আসিয়। পড়িলেন। এই

১০১

ইতিহাস

যুদ্ধে শিখদের সম্পূর্ণ পরাজয় হয়, তাহাদের বিস্তর লোক মারা যায়। আমেদশী অমৃতসরের শিখ-মন্দির ভাঙিয়া দরিলেন। গোরক্ত ঢালিয়া অমুতসরের সরোবর অপবিত্র করিয়া দিলেন। শিখদের ছিন্ন শির স্বপাকার করিয়া সঙ্জিত করিলেন। এবং কাফের শকত্রদের রক্তে মস্জিদের ভিত্তি ধৌত করিয়। দিলেন

কিন্ত ইহাতেও শিখের] নিরুদ্যম হইল না। প্রতিদিন তাহাদের দল বাড়িতে লাগিল। প্রতিহিংসা-প্রবৃত্তি সমস্ত জাতির হৃদয়ে প্রজ্লিত হইয়া উঠিল। প্রথমে তাহারা কম্থর-নামক পাঠানদের উপনিবেশ আক্রমণ লুণ্ঠন গ্রহণ করিল। তাহার পরে তাভারা সিহিন্দে অগ্রসর হইল। সেখানকার শাসনকর্তা জেইনখার সহিত যুদ্ধ বাধিল। যুছ্ে পাঠান পরাজিত নিহত হইল। শতদ্র হইতে যমুন! পর্যন্ত সিহিন্দ প্রদেশ শিখদের করতলস্থ হইল লাহোরের শাসনকর্তী কাবুলি-মলকে শিখেরা দূর করিয়া দ্রিল। বঝিলম হইতে শতদ্র পর্যস্ত সমস্ত পঞ্জাব শিখদের হাতে আসিল। এই বিস্তৃত ভূখণ্ড সর্দারের মিলিয়! ভাগ করিয়] লইলেন। শিখেরা বিস্তর মস্জিদ ভাঙিয়! ফেলিল। শৃঙ্খলবদ্ধ আফগানদের ঘ্বারা শৃকররক্তে মস্জিদ-ভিত্তি ধৌত করানো! হইল। সর্দারের! অমৃতসরে সম্মিলিত হইয়া আপনাদের প্রভাব প্রচার এবং শিখ- মুদ্রা প্রচলিত করিলেন।

এতদিন পরে শিখের! সম্পূর্ণ স্বাধীন হইল। গুরু গোবিন্দের উদ্দেন্ঠ কিয়ৎপরিমাণে সফল হইল তার পরে রণজিৎসিংহের অভ্দয়। তার পরে ব্রিটিশ-সিংহের প্রতাপ। তার পরে ধারে ধীরে সমস্ত ভারতবর্ষ লাল হইয়| গেল। রণজিতের বিখ্যাত ভবিস্তদ্বাণী সত্য হইল। সে সকল কথ! পরে হইবে

১০২

ঝান্নীর রানী

আমর1 একদিন মনে করিয়াছিলাম যে, সহম্্বর্ষব্যাপী দাসত্বের নিপীড়নে রাজপুতদিগের বীর্যবহ্থি নিভিয়া গিয়াছে মহারাষ্্ীয়েরা তাহাদের দেশান্ুরাগ রণকৌশল ভুলিয়। গিয়াছে, কিন্তু সেদিন বিদ্রোহের ঝটিকার মধ্যে দেখিয়াছি কত বীরপুরুষ উৎসাহে প্রজলিত হইয়। স্বকার্ধ-সাধনের জন্য সেই গোলমালের মধ্যে ভারতবর্ষের প্রদেশে প্রদেশে যুঝাধুঝি করিয়! বেড়াইয়াছেন। তখন বুঝিলাম যে, বিশেষ বিশেষ জাতির মধ্যে যেসকল গুণ নিদ্রিতভাবে অবস্থিতি করে এক-একট] বিপ্লবে সেই-সকল গুণ জাগ্রত হইয়! উঠে। সিপাহি যুদ্ধের সময় অনেক রাজপুত মহা রাষ্ট্রীয় বীর তাহাদের বীর্ধ অথ। পথে নিয়োজিত করিয়াছিলেন কথা স্বীকার করিলেও মানিতে হইবে যে, তাহার] যথার্থ বীর ছিলেন। তাতিয়াটোপী কুমারসিংহ ক্ষুদ্র দুইটি বিদ্রোহী মাত্র নহেন, ইতিহাস লিখিতে হইলে পৃথিবীর মহা মহ1 বীরের নামের পার্থে তাহাদের নাম লিখা উচিত; যে অশীতিবর্ধীয় অশ্বারোহী কুমারসিংহ লোল ভ্র রজ্জ্বতে বীধিয়] ছুই হস্তে রূপাণ লইয়! হাইলগুর সৈন্দলকে ছিন্নভিন্ন করিয়! দিয়াছিলেন__ যে তাতিয়াটোপী কতকগুলি বিক্ষিপ্ত সৈম্তর্ল লইয়া, যখোচিত অস্ত্র নাই, আহার নাই, অর্থ নাই, অথচ ভারতবর্ষে বিদেশীয় শাসন বিচলিতপ্রায় করিয়াছিলেন-_- যদিও তীহাদের কাধ লইয়া গৌরব করিবার আমাদিগের অধিকার নাই, তথাপি তাহাদের বীর্ষের, উদ্যমের, জলম্ত উৎসাহের প্রশংস! ন1! করিয়া থাকিতে পারি না। কিন্তু ভারতবর্ষের কী দুর্ভাগ্য, এমন সকল বীরেরও জীবনী বিদেশীয়দের পক্ষপাতী ইতিহাসের পৃষ্ঠা হইতে সংগ্রহ করিতে হয়।

সিপাহি-যুদ্ধের সময় রাসেল টাইম্স্‌ পত্রে লিখেন যে, “তাতিয়াটোগী মধ্য-ভারতবর্ষকে বিপর্যস্ত করিয়া তুলিয়াছিলেন, বড়ো বড়ো! থানা

১৯০৩

ইতিহাস

ধনাগার লুঠ করিয়াছেন, অস্্রাগার শূন্য করিয়াছেন, বিক্ষিপ্ত সৈম্যাদল সংগ্রহ করিয়াছেন, বিপক্ষসৈন্য বলপূর্বক তাহার সমুদয় অপহরণ করিয়া লইয়াছে, আবার যুদ্ধ করিয়াছেন, পরাজিত হইয়াছেন, পুনরায় ভারতবর্ষীয রাজাদিগের নিকট হইতে কামান লইয়া! যুদ্ধ করিয়াছেন, বিপক্ষসৈন্যের! পুনরায় তাহা অপহরণ করিয়! লইয়াছে, আবার সংগ্রহ করিয়াছেন, আবার হারাইয়াছেন। তাহার গতি বিদ্যুতের ন্যায় দ্রুত। সপ্তাহ ধরিয়া তিনি প্রত্যহ কুড়ি-পঁচিশ ক্রোশ ভ্রমণ করিয়াছেন, নর্মদ1 পার হইতে পার», পার হইতে পার ক্রমাগত পার হইয়াছেন। তিনি কখনে। আমাদের সৈশ্ত-শ্রেণীর মধ্য পিয়া, কখনো! পারব দিয়, কখনে। সম্মুখ দিয়, সৈন্য লইয়! গিয়াছেন। পর্বতের উপর দিয়া, নদী অতিক্রম করিয়া, শৈলপথে, উপত্যকায়, জলার মধ্য দিয়া, কখনে! সম্মুখে, কখনে| পশ্চাতে, কখনো পার্খে, কখনে তির্যক্‌ ভাবে চলিয়াছেন। ডাকগাড়ির উপর পড়ি, চিঠি অপহরণ করিয়া, গ্রাম লুঠিয়া কখনে! ব। সৈন্য চালন| করিতেছেন, কখনে। বা পরাজিত হইয়। পলাইতেছেন, অথচ কেহ ভীাহাকে ধরিতে ছুঁইতে পারিতেছে ন।। এই অপামান্ত বীর যখন পারোনের জঙ্গলের মধ্যে ঘুমাইতেছিলেন তখন মানসিংহ বিশ্বাসঘাতকত1 করিয়। তাহাকে শত্রহস্তে সমর্পণ করিয়াছিল। গুরুভার শৃঙ্থলে আবদ্ধ হইয়, সৈনিক-বিচারালয়ে আহত হইয়] তিনি ফাসিকাষ্ঠে আরোহণ করিলেন মৃত্যু পযন্ত তাহার প্রকৃতি নিভীক প্রশান্ত ছিল। তিনি বিচারের প্রার্থন] করেন নাই, তিনি বলিয়াছিলেন যে, “আমি ব্রিটিশ গবর্নমেণ্টের হস্তে মৃত্যু ভিন্ন অন্য কিছুই আশ করি না। কেবল এইমাত্র প্রার্থন। ঘে, আমার প্রাণদণ্ড যেন শীঘ্রই সমাধ| হয় আমার জন্য যেন আমার নির্দোষী বন্দী পরিবারের। কষ্ট ভোগ ন। করে।,

ঝান্সীর রানী

ইতরাজেরা যদি স্বার্থপর বণিক্‌ জাতি ন| হইতেন, যদি বীরত্বের প্রতি তাহাদের অকপট ভক্তি থাকিত, তৰে হতভাগ্য বীরের এরূপ বন্দীভাবে অপরাধীর ন্যায় অপমানিত হইয়া মরিতে হইত না, তাহা হইলে তাহার প্রস্তরমৃতি এতদিনে ইংলগ্ডের চিত্রশালায় শ্রদ্ধার সহিত রক্ষিত হইত। ঘে ওদাধের সহিত আলেকজাগার পুরুরা্জের ক্ষত্রিয়োচিত স্পর্মা মার্জন! করিয়াছিলেন সেই ওুদাধের সহিত তাতিয়াটোপীকে ক্ষমা করিলে কি সভ্যতাভিমানী ইংরাজ জাতির পক্ষে আরে। গৌরবের বিষয় হইত ন।? যাহ1 হউক, ইংরাজেরা এই অসামান্ত ভারতব্ষীয় বীরের শোণিতে প্রাতি- হিংসারূপ পশুপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করিলেন

আমর] সিপাহি-যুদ্ধ -সময়ের আরে। অনেক বীরের নামোল্লেখ করিতে পারি ধাহারা ইউরোপে জন্মগ্রহণ করিলে, ইতিহাসের পৃষ্ঠায়, কবির সংগীতে, প্রস্তরের প্রতিমৃতিতে, অভ্রভেদী স্মরণস্তস্তে, অমর হইয়! থাকিতেন। বৈদেশিকদের লিখিত ইতিহাসের এক প্রান্তে তাহাদের জীবনীর দুই-এক ছত্র অনাদরে লিখিত রহিয়াছে, ক্রমে ক্রমে কালের ত্রোতে তাহা'ও ধৌত হইয়! যাইবে এবং আমাদের ভবিষ্যবংশীয়দের নিকট তাহাদের নাম পযন্ত অজ্ঞাত থাকিবে |

শংকরপুরের রানা বেণীমাধু লর্ড ক্লাইভের আগমনে নিজে দুর্গ পরিত্যাগ করিলেন এবং তাহার ধনসম্পত্তি অনুচরবর্গ কামান অন্তঃপুরচারিণী স্্ীলোকদিগকে সঙ্গে লইয়া! অযোধ্যার বেগম বিজিদ্‌ কাদেরের সহিত যোগ দিলেন। তিনি তাহাদিগকেই আপনার অধিপতি বলিয়া জানিতেন, এই নিমিত্ত তীহাদ্দিগকে রাজার ন্যায় মান্য করিবেন বলিয়। প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন। জীবনের শেষ দিন পর্যস্ত তাহার এই প্রতিজ্ঞা পালন করিয়াছিলেন। ব্রিটিশ গবনমেণ্ট তাহাকে তাহার রাজ্য

১০৫

ইতিহাস

প্রত্যর্পণ করিতে চাহিলেন, তাহাকে মৃত্যুদণ্ড হইতে অব্যাহতি দিবেন বলিয়া অঙ্গীকার করিলেন, তাহার ক্ষতি পূরণ করিতে প্রস্তুত হইলেন এবং তাহার কষ্টের কারণ অনুসন্ধান করিবেন বলিয়] স্বীকৃত হইলেন, কিন্তু রাজ! সমূদয় প্রস্তাব তুচ্ছ করিয়া বেগম তাহার পুত্রের জন্য টেরাই প্রদেশে আশ্রয়হীন রাজ্যহীন হইয়া ভ্রমণ করিতে লাগিলেন বেণীমাধু জীবনের বিনিময়েও তাহার প্রতিজ্ঞ! ভঙ্গ করেন নাই এবং ইংরাজদের হস্তে কোনোমতে আত্মসমর্পণ করেন নাই রাজপুত বীর নছিলে আপনার প্রতিজ্ঞ! পালনের জন্য কয়জন লোক এরপ ত্যাগ স্বীকার করিতে পারে ?

রয়ার রাজপুত অধিপতি নৃপংসিং খঞ্জ ছিলেন। তিনি যুদ্ধের সময় প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন যে, ঈশ্বর আমার একটি অঙ্গ লইয়াছেন, অবশিষ্ট অঙ্গগুলি আমার দেশের জন্য দান করিব ।,

কিন্তু আমরা সর্বাপেক্ষ। বীরাঙ্গন। ঝান্সীর রানী লক্ষমীবাঈকে ভক্তিপূর্বক নমস্কার করি। তাহার যথার্থ বিস্তারিত ইতিহাস পাওয়! দুষ্ধর, অনুসন্ধান করিয়! বাহ1 পাওয়! গেল তাহাই লিপিবদ্ধ করিয়। পাঠকদিগকে উপহার দিলাম।

লর্ড ড্যালহ্সী ঝান্সী রাজ্য ইংরাজ-শাসনতুক্ত করিলেন, এবং ঝান্সীর রানী লক্মীবাঈয়ের জন্য অনুগ্রহ করিয়! উপজীবিকান্বরূপ যংসামান্ত বৃত্তি নির্ধারিত করিয়া দিলেন। এই স্বল্প বৃত্তি রানীর সম্ত্রম-রক্ষার পক্ষে যথেষ্ট ছিল না, এই নিমিত্ত তিনি প্রথমে গ্রহণ করিতে অস্বীকৃত হন, অবশেষে অগত্যা তাহাকে গ্রহণ করিতে হুইল। কিন্তু ইংরাজ কতৃপক্ষীয়েরা ইহাতেই ক্ষান্ত হইলেন না, লক্ষ্মীবাঈয়ের মৃত স্বামীর যাহা- কিছু খণ ছিল তাহা রানীর জীবিক] হইতে পরিশোধ করিতে লাগিলেন। রানী ইহাতে আপত্তি করিলেন, কিন্তু তাহ] গ্রাহ হইল না। ইতরাজের!

১০৬

ঝান্সীর রানী

ট্াহার রাজ্যে গোহত্যা আরন্ত করিল, ইহাতে রাজ্জী নগরবাসীরা অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হইয়! ইহার বিরুদ্ধে আবেদন করিল, কিন্তু তাহাও গ্রাহ্য হইল ন]।

এইবূপে রাজ্যহীনা, সম্পত্তিহীনা, অভিমানিনী রাজ্ঞী নিষ্ঠুর অপমানে মনে মনে প্রতিহিংসার অগ্নি পোষণ করিতে লাগিলেন এবং যেমন শুনিলেন কোম্পানির সৈনিকের! বিদ্রোহী হইয়া উঠিয়াছে, অমনি তাহার অপমানের প্রতিশোধ দিবার জন্য স্থকুমার দেহ রণসঙ্জীয় সঙ্জিত করিলেন। লক্্মীবাঈ অত্যন্ত সুন্দরী ছিলেন তীহার বয়ঃক্রম বিংশতি বং্সরের কিছু অধিক, তাহার দেহ যেমন বলিষ্ঠ মনও তেমনি দৃঢ় ছিল।

রাজ্জী অতিশয় তীক্ষবুদ্ধিসম্পন্ন ছিলেন। রাজ্যপাঁলনের জটিল ব্যাপার- সকল অতি হুন্দররূপে বুঝিতেন | ইতরাজ কর্মচারীগণ তাহাদের জাতিগত স্বভাব-অনুসারে এই হ্ৃতরাজ্য রাজ্জীর চরিত্রে নানাবিধ কলঞ্ক আরোপ করিলেন, কিন্ত এখনকার এঁতিহাসিকের! স্বীকার করেন যে তাহার এক বর্ণও সত্য নছে।

ঝান্সী নগরী অতিশয় পরিপাঁটী পরিচ্ছন্ন, উহ] দৃঢ় প্রাচীরে পরিবেষ্টিত, এবং বৃহৎ বৃহৎ বৃক্ষের কুগ্ঠ সরোবরে সেই-সকল প্রাচীরের চতুদিক সুশোভিত ছিল। একটি উচ্চ শৈলের উপর দৃছুর্গবন্ধ রাজপ্রাসাদ দাঁড়াইয়া] আছে। নগরীতে বাণিঙ্যব্যবসায়ের প্রাছুর্তীব ছিল বলিয়! অনেক ইতরাজ অধিবাসী সেখানে বাস করিত। কাণ্ডেন ডান্লপের হস্তে ঝান্সী নগরীর রক্ষাভার ছিল। ভারতবর্ষে যখন বিদ্রোহ জলিয়া উঠিয়াছে তখন ইংরাজ কতৃপক্ষীয়ের। তাহাকে সতর্ক হইতে পরামর্শ দেন, কিন্তু বান্সীর শান্ত অবস্থা দেখিয়া তিনি তাহ! হাসিয়। উড়াইয়। দিলেন

এই প্রশান্ত ঝান্সী রাজ্যে বিধবা রাজ্জী তাহার ভূত্যবর্গের উত্তেজনায়

১০৭

ইতিহাস্‌

ভিতরে ভিতরে একটি বিষম বিপ্রব ধৃমায়িত হইতেছিল। সহসা! একদিন স্তব্ধ আগ্নেয়গিরির ন্যায় নীরব ঝান্সী নগরীর মর্মস্থল হইতে বিদ্রোহের অগ্রিতাব উদশীরিত হইল |

প্রকাশ্ঠ দিবালোকে কাণ্টনমেণ্টের মধ্যে দুইটি ডাকবাংল৷ বিদ্রোহীরা দ্ধ করিয়া! ফেলিল, যেখানে বারুদ ধনাগার রক্ষিত ছিল সেখান হইতে বিদ্রোহীদিগের ব্দুক-ধ্বনি শ্রুত হইল, একদল সিপাহী ছুর্গ অধিকার করিয়াছে, তাহারা উহা? কোনোমতে প্রত্যর্পণ করিতে চাহিল ন1। ইউরোপীয়ের! আপনাপন পরিবার সম্পত্তি লইয়া নগরী-ছুর্গে আশ্রয় লইল। ক্রমে ক্রমে সৈন্তেরা স্পষ্ট বিদ্রোহী হুইয়৷ অধিকাংশ ইংরাজ সেনানায়কদিগকে নিহত করিল বিদ্রোহীগণ দুর্গে উপস্থিত হইল।

ক্যাপ্টেন ডান্লপ হিন্দু সৈ্দিগকে নিরদ্ম করিতে আদেশ করিলেন, কিন্তু তাহারা সেইখানেই তাহাকে বন্দুকে হত করিল। ছূর্স্থ সৈম্তদের সহিত যুদ্ধ উপস্থিত হইল। মধ্যাহ্ছে বিদ্রোহী সৈন্যের! দুর্গের নিয্ন অংশ অধিকার করিয়! লইল। পরাজিত ইতরাজ সেনারা বিদ্রোহী সেনাদের হস্তে আত্মসমর্পণ করিল, কিন্তু উন্মত্ত সৈন্তের৷ তাহাদিগকে নিহত করিল। এই নিধনকার্ষে বাজ্জীর কোনো হস্ত ছিল না, এমন-কি সময়ে রাজ্ছীর কোনে। অনুচরও উপস্থিত ছিল ন1। যখন রাজ্যে একটিও ইংরাজ অবশিষ্ট রহিল না তখন রাজ্জী এই অন্যায়কারীদিগকেও রাজ্য হুইতে বহিষ্কৃত করিয়। দিলেন। এক্ষণে কথা উঠিল, কে রাজ্য অধিকার করিবে ? রাজ্জী সিংহাসনে অধিরোহণ করিলেন ; সদাশিব রাও নামে একজন রাজ্যের প্রার্থী কুরার] ছুর্গ অধিকার করিল। পরে রাজ্জীর সৈম্তকতৃক তাড়িত হইয়| সিদ্ধিয়ারাজ্যে পলায়ন করিল। এইবূপে ইংরাজের! ছিন্নবিচ্ছিনন হত তাড়িত হইলে পর ১৮৫৭ খু. অন্দে লক্ষমীবাঈ হৃত সিংহাসনে

১০৮

ঝান্সীর রানী

পুনরায় আরোহণ করিলেন। কিছুকাল রাজত্ব করিয়া লক্ষমীবাঈ ১৮৫৮ খৃষ্টাব্দে পুনরায় ইতরাজ সৈন্যদের সহিত যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইলেন।

ইতরাজ সেনানায়ক সার হিউ রোজ সৈন্যদ্ল সমভিব্যাহারে ঝান্সী নগরীতে আপিয়! উপস্থিত হইলেন। প্রন্তরময় নগরপ্রাচীরে ব্রিটিশ কামান গোলা-বর্ষণ আরম্ভ করিল। দুর্ণস্থ লোকেরা আক্রমণ-প্রতিরোধের জন্য প্রাণপণে চেষ্ট! করিতে লাগিল। পুরমহিলাগণ ছর্গপ্রাকার হইতে কামান ছুঁড়িতে আরম্ভ করিল এবং সৈন্যদের খাগ্যাদি বণ্টন করিতে লাগিল, এবং সশস্্ ফকিরগণ নিশান হস্তে লইয়া! জয়ধ্বনি করিতে লাগিল

৩১শে মার্চ রানী দেখিলেন, তাতিয়াটোপী বানপুরের রাজ অল্প- সংখ্যক সৈন্যদল লইর। ইংরাজ-শিবির-পার্শে নিবেশ স্থাপন করিয়! সংকেত-অগ্নি প্রলিত করিয়। দিয়াছেন। হ্র্ধবনি তোপের শব্দে ঝান্দী দুর্গ প্রতিধ্বনিত হইয়া উঠিল। তাহার পরদিন ইংরাজ সৈন্যদের সহিত তাতিয়! টোপীর ঘোরতর যুদ্ধ বাধিল, এই যুদ্ধে তাতিয়৷ টোপীর ১৫০০ সৈন্য হত হইল এবং তিনি পরাজিত হইয়। বেতোয়ার পরপারে পলায়ন করিলেন।

যুদ্ধে প্রত্যহ রাজ্জীর পর্শ-ষাট জন করিয়! লোক মরিতে লাগিল। তাহার সর্বোৎকৃষ্ট কামানগুলির মুখ বন্ধ করা হইয়াছে এবং ভালো! ভালো গোলন্দাজের! হত হইয়াছে।

ক্রমে ইতরাজ সেন্তেরা গোলার আঘাতে নগর-প্রাচীর ভেদ করিল এবং প্রাসাদ নগরীর প্রধান প্রধান অংশ অধিকার করিল। প্রাসাদের মধ্যে ঘোরতর সম্মুখযুদ্ধ বাধিল। রানীর শরীররক্ষকদের মধ্যে চজিশ জন অশ্বশালার সম্মুখে দীড়াইয়! প্রাণপণে যুদ্ধ করিতে লাগিল। আহত সৈন্যের মুমূর্ু অবস্থাতেও ভূতলে পড়িয়া অস্ত্রচালনা করিতে লাগিল

১০৪৯

ইতিহাস

একে একে ৩৯ জন হত হইলে অবশিষ্ট একজন বারুদে আগুন লাগাইয়! দিল, আপনি উড়িয়া! গেল অনেক ইতরাজ সৈন্যও সেই সঙ্গে হত হইল।!

রাত্রেই রাজ্জী কতকগুলি অনুচরের সহিত ছুর্গ পরিত্যাগ করিয়! গিয়াছিলেন, শক্রর। তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ অনুসরণ করিয়াছিল এবং আর একটু হইলেই তাহাকে ধরিতে সক্ষম হইত। লেপ্টনেন্ট, বাউকর অশ্বারোহী সৈন্তাদলের সহিত ঝান্সী হইতে দশ ক্রোশ পর্যন্ত রাজ্জীর অনুসরণ করিয়াছিলেন অবশেষে দেখিলেন, অশ্বারোহী লক্ষমীবাঈ চারিজন অন্ুচরের সহিত গমন করিতেছেন; বহুসৈন্যবেষ্টিত বাউকর এই চারিজন অশ্বারোহী- কতৃক এমন আহত হইলেন যে, আর অগ্রসর হইতে পারিলেন না। এই সময়ে তাতিয়াটোপী কতকগুলি সৈন্য লইয়া! রনীর রক্ষক হইলেন।

চউঠ এপ্রিলে ইংরাজের। সমস্ত ঝান্সীনগরী অধিকার করিয়া! লইল। সৈনিকেরা নগরে দারুণ হত্য1 আরম্ভ করিল, কিন্তু নগরবাসীর। কিছুতেই নত হইল না। পাচ সহল্েরও অধিক লোক ব্রিটিশ বেয়নেটে বিদ্ধ হইয়া! নিহত হইল। নগরবাসীর! শক্রহস্তে আত্মসমর্পণ করা অপমান ভাবিয়! স্বহস্তে মরিতে লাগিল। অসভ্য ইংরাজ সৈনিকেরা স্ত্রীলোকদের প্রতি নিষ্ঠুর অত্যাচার করিবে জানিয়া৷ পৌরজনেরা স্বহস্তে স্্রীকন্তাগণকে বিনষ্ট করিয়! মরিতে লাগিল।

রাও সাহেব পেশোয়া'বংশের শেষ বাজিরাওর দ্বিতীয় পোস্থপুত্র। তিনি, তীতিয়াটোপী বান্সী-রানী বিক্ষিপ্ত সৈম্তদল সংগ্রহ করিয়! ব্রিটিশদিগকে প্রতিরোধ করিবার জন্য কুঞ্চ নগরে সৈন্য স্থাপন করিলেন অবিরল কামান বর্ণ করিয়! হিউ রোজ তাহাদের তাড়াইয়া দিল। চারি ক্রোশ রানীর পশ্চাৎ পশ্চাঁ তাড়না! করিয়! সেনাপতি চারিবার ঘোড়ার উপর হইতে মৃছিত হুইয়! পড়েন।

৯৯০

ঝান্সীর রানী

অবশেষে লক্ষ্মীবাঈ কাল্ীতে আসিয়! উপস্থিত হইলেন এবং তাহার এই শেষ অস্ত্রাগার রক্ষার জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করিলেন। মনে করিয়াছিলেন রাজপুতের! যোগ দিবে, কিন্ত তাহার! দিল না। ব্রিটিশ সৈন্যের! একত্র হইয়। আক্রমণ করিল, অবৃঢতুর্গ' কাল্পীতে রাজ্জীর সৈন্ত আর তিষ্ঠিতে পারিল না। |

কুঞ্ণের পরাজয়ের পর তাতিয়াটোপী যে কোথায় অদৃশ্য হইয়! গেলেন কেহ জানিতে পারিল না। তিনি এখন গোয়ালিয়রের বাজারে প্রচ্ছন্নভাবে ইংরাজদের মিত্ররাজ! সিদ্ধিয়াকে সিংহাসন্চ্যুত করিবার ষড়ঘন্ত্র করিতে- ছিলেন। তীতিয়াটোগী অধিবাসীদিগকে উত্তেজিত করিতে অনেকটা কৃতকাধ হইলে পর রাজ্জীকে সংবাদ দিলেন। রাজ্জী গোপালপুর হইতে রাজাকে বলিয়! পাঠাইলেন ফে, তীহার| রাজার সহিত শক্রতা করিতে যাইতেছেন না, তবে কিছু অর্থ খাগ্যা্দি পাইলেই তীহার। দক্ষিণে চলিয়। যাইবেন, রাজা তাহাদের যেন বাধ! ন। দেন, কারণ বাধা দেওয়! অনর্থক গোয়ালিয়রের লোকের! ইংরাজ-বিরুদ্ধে উত্তেজিত হইয়াছে। তাহার! তাহাদের নিকট হইতে দুইশত আহ্বানপত্র পাইয়াছেন। কিন্ত ইত্রাজ-ভক্ত সিন্ধিয়! তাহাতে অসম্মত হইলেন

রাও রানী দৃঢত্বরে তাহাদের অন্চরদিগকে সন্বোধন করিয়া কহিলেন, “আমরা বোধ হয় নাগরিকদিগের নিকট হইতে কোনে বাধা প্রাপ্ত হইব না, যদি পাই তবে তোমাদের ইচ্ছ! হয় তো পলাইও, কিন্তু আমরা মরিতে প্রস্তত হইয়াছি।,

পয়ল1 জুনে সিদ্ধিয়া ৮০০* লোক ২৪টি কামান লইয়া বিদ্রোহী- দিগকে আক্রমণ করিলেন কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে তাহার সৈন্যদল ছিন্নবিচ্ছিন্ন হইয়া গেল। সিক্ধিয়! তাহার শরীররক্ষকদিগকে যুদ্ধে প্রবৃত্ত করাইলেন,

১৯৭

ইতিহাস

কিন্ত তাহারা হত আহত হইল সিন্ধিয়া অশ্বারোহণে আগ্রার দিকে পলায়ন করিলেন মহারানীর মাত] “গুজ্জারাজা' সিদ্ধিয়। বিদ্রোহীদের হস্তে বন্দী হইয়াছেন মনে করিয়া, কূপাণ লইয়! অশ্বারোহণে তাহাকে মুক্ত করিতে গেলেন ; অবশেষে সি্ধিয়! পলায়ন করিয়াছেন শুনিয়]! নিবৃত্ত হইলেন ঝান্দী-রাজ্জীর সেম্তগণ সিঙ্ষিয়ার রাঁজকোষ হস্তগত করিল এবং তাহা হইতে রানী সৈন্যদের ছয় মাসের বেতন চুকাইয়| দিলেন নগরবাসীদিগকে পুরস্কার-দানে সন্তষ্ট করিলেন। কিন্তু তাতিয়াটোপী রাঙ্জী দুর্গরক্ষার কিছুমাত্র আয়োজন করেন নাই ; তীহার! প্রকাশ ক্ষেত্রেই সৈন্য স্থাপন করিয়াছিলেন; সমুদায় বন্দোবস্ত রানী একাকীই মম্পন্ন করিতেছিলেন। তিনি সৈনিকের বেশ পরিয়। যে রৌদ্রে ইংরাজ সেনাপতি চারিবার মৃছিত হুইয়| পড়েন সেই রৌদ্রে অপরিশ্রাস্ত ভাবে মুহৃত বিশ্রাম ন। করিয়া অখ্বারোহণে এখানে ওখানে পরিভ্রমণ করিয়। বেড়াইতেছেন।

সার হিউ রোজ যখন শুনিলেন যে গোয়ালিয়র শক্রহস্তগত হুইয়াছে, তখন সৈম্দল সংগ্রহ করিয়! রাজ্জী-সৈম্যের ছুর্বল ভাগ আক্রমণ করিলেন। ঘোরতর যুদ্ধ বাধিল। সেই যুদ্ধের দারুণ বিপ্লবের মধ্যে রাজ্জী অসি-হস্তে ইতস্তত অশ্বচালনা করিতেছেন। রাজ্জীর সৈন্যের! ভঙ্গ দিল; বিপক্ষ- সৈন্তদের গুলিতে রাজ্জী অত্যন্ত আহত হইলেন। তাহার অশ্ব সম্মুখে একটি খাত দেখিয়! কোনোমতে উহু। উল্লজ্ঘন করিতে চাহিল না; লক্ষমী- বাঈয়ের স্বষ্ধে বিপক্ষের তলবারের আঘাত লাগিল, তথাপি তিনি অশ্বপরিচালনা করিলেন। তাঁহার পার্খ্ববতিনী ভগিনীর মস্তকে তলবারের আঘাত লাগিল এবং উভয়ে পাশাপাশি রণক্ষেত্ত্রে পতিত হইলেন এই ভগিনী যুদ্ধের সময়ে কোনোক্রমে রাজ্ীর পার্খব পরিত্যাগ করেন নাই,

১১

ঝান্সীর রানী

অবিশ্রান্ত তাহারই সহযোগিতা করিয়া আসিয়াছেন। কেহ কেহ বলে যে, তিনি রাজ্জীর ভগিনী নহেন, তিনি তাহার স্বামীর উপপত্বী ছিলেন।

ইংরাজী ইতিহাস হইতে আমরা রাজ্জীর এইটুকু জীবনী সংগ্রহ করিয়াছি আমরা নিজে তীহার যেরূপ ইতিহাস সংগ্রহ করিয়াছি তাহ ভবিষ্যতে প্রকাশ করিবার বাসনা রহিল।

পরিশিষ্ট

এঁতিহাসিক যহকিঞ্চিং

বর্তমান-সংখ্যক১ ভারতীতে “এঁতিহাসিক যৎকিঞ্চিৎ' -নামক ক্ষুত্র প্রবন্ধটি যিনি২ লিখিয়াছেন, তিনি আধুনিক বাঙালী ইতিহাসলেখকণ্ণের শীর্বস্থানীয় তাহার প্রস্তাবটির প্রতি পাঠকগণ মনোযোগ করিবেন

ইতিহাসের সত্য মিথ্য! নির্ণয় কর] বড়ো কঠিন কথা সজীব পদার্থের মতে] বাড়িয়া চলে ; মুখে মুখে কালে কালে তাহার পরিবর্তন ঘটিতে থাকে স্থজনশক্তি মানুষের মনের স্বাভাবিক শক্তি_- যে-কোনো ঘটনা, যে-কোনে। কথ! তাহার হস্তগত হয় তাহাকে সে অবিকৃত রাখিতে পারে ন।; কতকট। নিজের ছীচে ঢালিয়। তাহাকে গড়িয়া লয়। এইজন্য আমর! প্রত্যহই একটি ঘটনার নান। পাঠীস্তর নান লোকের নিকট পাইয়া থাকি।

কেহ কেহ এইরূপ প্রাত্যহিক ঘটনার দৃষ্টান্ত দেখাইয়! ইতিহাসের সত্যতা সম্বন্ধে আগাগোড়া সন্দেহ প্রকাশ করেন। কিন্তু একটি কথা তাহারা ভুলিয়। যান, এঁতিহাসিক ঘটনার জনশ্রুতি বহুতর লোকের মন হইতে প্রতিফলিত হইয়া! আসে এবং সেই ঘটনার বিবরণে সাময়িক লোকের মনের ছাপ পড়িয়া যায়। তাহা হইতে ঘটনার বিশুদ্ধ সত্যতা আমর| না পাইতেও পারি, কিন্তু তৎসাময়িক অনেক লোকের মনে তাহা কিরূপ প্রতিভাত হইয়াছিল সেট? পাওয়। যাইতে পারে।

অতীত সময়ের অবস্থা কেবল ঘটনার দ্বার1 নির্ণয় হয় না, লোকের কাছে তাহ! কিরূপ ঠেকিয়াছিল সেও একট প্রধান দ্রষ্টব্য বিষয়। অতএব এতিহাসিক ঘটনার জনশ্রতিতে বাস্তব ঘটনার সহিত মানব-মন মিশ্রিত

হইয়া যে পদার্থ উদ্ভূত হয় তাহাই এঁতিহাসিক সত্য সেই সত্যের বিবরণই মানবের নিকট চিরস্তনকৌতুকাবহ এবং শিক্ষার বিষয়।

শপ পি শি পীসপশীশি শ্্প্প্পপিপ পেশি পে সী শী শট শস্প্প্পী? শি শী আন আশা পনির

বৈশাখ ১৩০৫ অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় ১১৭

ইতিহাস

এই বিচিত্র জনশ্রুতি এবং জীর্ণ উপকরণ -মূলক ইতিহাসে এমন অনেকট]1 অংশই থাকে যাহার প্রমাণ অগপ্রমাণ এঁতিহাসিকের ব্যক্তিগত প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। ছুই সাক্ষীর মধ্যে কোন্‌ সাক্ষীকে বিশ্বাস করিব তাহা! অনেক সময়ে কেবলমাত্র বিচারকের স্বভাব পূর্ব-সংস্কারের দ্বার! স্থিরীকৃত হয় ইংরাজ সাক্ষী মিথ্যা বলে না, ইংরাজ জজ ইহা কতকটা। স্বভাবত এবং কতকট টানিয়াও বিশ্বাস করেন; এই প্রবৃত্তি বিশ্বাস -বশত তাহার] অন্তদেশীয়দের প্রতি অনেক সময়ে অবিচার করিয়া থাকেন তাহা ইতরাজ ব্যতীত আর-সকলেই অনুভব করিতে পারেন।

ইতিহাসে এইপ্রকার ব্যক্তিগত সংস্কারের লীলা যখন অবশ্ন্তাবী তখন এই কথ| সহজেই মনে উদয় হয়, আমর। ক্রমাগত বিদেশীয় এঁতিহাসিকের বিজাতীয় সংস্কারের দ্বারা গঠিত ইতিহাস-পাঠের পীড়ন কেন সহা করিব? আমরা ঘে ইতিহাস সংকলন করিব তাহাঁও যে বিশুদ্ধ সত্য হইবে আশা করি না, কিন্তু ইতিহাসের যে অংশ প্রমাণ অপেক্ষা এতিহাসিকের মানসিক প্রকৃতির উপর বেশি নির্ভর করে সে অংশে আমাদের স্বজাতীয় প্রকৃতির স্থজনকর্তৃত্ব আমর] দেখিতে চাই

তাহা ছাড়, ইতিহাস একতরফা ন] হইয়1 ছুইতর্ফ1 হইলে সত্য- নির্ণয় সহজ হয়। বিদেশী এতিহাসিক একভাবে সাক্ষী সাজাইবেন এবং স্বদেশী এতিহাসিক অন্তভাবে সাক্ষী সাজাইবেন-_ তাহাতে নিরপেক্ষ তৃতীয় পক্ষের কাজের স্থবিধ! হুয়।

যাহা! হউক, বিদেশী-লিখিত ভারতবর্ষের ইতিহাসকে বিনা প্রশ্নে, বিনা বিচারে গ্রহণ মুখস্থ করিয়া, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া, ফার্ট প্রাইজ পাওয়া আমাদের গৌরবের বিষয় হইতেছে না। কোনে! ইতিহাসই কোনে কালে প্রশ্ন বিচারের অতীত হইতে পারে না। যুরোপীয় ইতিহাসেও

১২১৮৮

এঁতিহাসিক যৎকিঞ্চিৎ

ভুরি ভূরি চিরপ্রচলিত দৃনিবদ্ধ বিশ্বাস নব নব সমালোচনার দ্বারা তিরস্কৃত হইতেছে আমাদের দেশীয় ইতিহাস হইতে মিথ্য/ বাছিতে গেলে তাহার উজাড় হইবার সম্ভাবনা আশঙ্কা! করি।

লেখকমহাশয় আমাদের দেশীয় ইতিহাস সমালোচন সংকলনের, জন্য একটি এঁতিহাসিক সভা! -স্থাপনের প্রস্তাব করিয়াছেন।

আমাদের দেশে সভাস্থাপনের প্রতি আমাদের বডে1-একট] বিশ্বাস নাই লেখকমহাশয় তাহার প্রবন্ধে আমাদের দেশের মাটিতে শিব গড়িতে গিয়| কিরূপ লঙ্জ। পাইতে হয় তাহার উল্লেখ করিয়াছেন সভা- নামক বডে| শিব গড়িতে গিয়! আরে। কি বড়ে। প্রহসনের সম্ভাবনা নাই !

যে দেশে কোনে একটি বিশেষ বিষয়ে অনেকগুলি লোকের সুদৃঢ় উত্সাহ আছে সেই দেশে উৎসাহী লোকের একত্র হইয়! বৃহৎ কার্য সম্পন্ন করিতে পারেন যে দেশে উৎসাহী লোক শ্বল্প সে দেশে সভ1 করিতে গেলে ঠিক বিপরীত ফল ফলিবার সম্তাবন।। কারণ, সে সভায় অধিকাংশ ব।জে লোক জুটিয়! উৎসাহী লোকের উদ্যম খর্ব করিয়। দেয় মাত্র।

আমরা লেখকমহাশয় এবং তাহার ছুই-চারিজন সহযোগীর স্বতন্ত চেষ্টার প্রতিই লক্ষ করিয়া আছি। তীহারা নিজেদের উৎসাহের উদ্যমে ভুলিয়া যাইতেছেন যে, দেশের লোকের অধিকাংশের মনে এ-সকল বিষয়ে অক্ুত্রিম অন্থরাগ নাই অতএব তাহার] প্রথমে নিজের রচন1 দৃষ্টান্ত দ্বারা দেশে ইতিহাসানুরাগ বিস্তার করিয়! দিলে যথাসময়ে সভাস্থাপনের সময় হইবে।

সমবেত চেষ্টার জন্য উৎসাহী অনুরাগী লোক মাত্রেরই মন কাদে মানুষ কাজ করিবার যন্ত্র নহে-_ অন্য পাচজন মানুষের সহিত মিশিয়! পাঁচজনের সহানুভূতি সমাদর উৎসাহ দ্বার! বললাভ প্রাণলাভ করিতে হয়;

১১৪

ইতিহাস

জনহীন শুন সভায় এক দীড়াইয়া কেবলমাত্র কর্তব্য করিয়া! যাওয়া বড়ো কঠিন। কিন্তু বাংলাদেশে যাহারা কোনো মহৎ কার্ধের ভার লইবেন, লোকসঙ্গ লোকসাহায্যের স্থখ তাহাদের অৃষ্টে নাই

বিনা আড়ম্বরে, বিনা ঘোষণায়, “এতিহাসিক চিত্রাবলী' -নামক যে- কয়েকটি মূল্যবান ইতিহীসগ্রন্থ বাংলায় বাহির হইতে আরম্ত হইয়াছে তাহাই আমাদের বিপুল আশার কারণ। যাহার! “সিরাজদ্দৌলা' গ্রন্থখানি পাঠ করিয়াছেন তীহারাই বুঝিতে পারিবেন, সভার দ্বারা তেমন কাজ হয় না প্রতিভার দ্বার! যেমন হয়।

১২৩

সিরাজদ্দৌলা

স্কুলে ধাহাদিগকে ইতিহাস মুখস্থ করিতে হইয়াছে তাহাদের সকলকেই স্বীকার করিতে হইবে, ভারত-ইতিবৃত্তে ইংরাজ শাসনকালের বিবরণ সর্বাপেক্ষা নীরস। তাহার একট] কারণ, এই বিবরণে মানবস্বভাবের লীলা পরিস্ফুট দেখা যায় না -_গবর্ণর আসিলেন, যুদ্ধ হইল, জয়পরাঁজয় হইল, আইন হইল, পাঁচ বংসর কাটিয়া গেল, গবর্ণর চলিয়! গেলেন !

অবশ্ঠ, ব্যাপারট1 সত্যই এমন সম্পূর্ণ হবদয়সম্পর্কশূন্ত কলের কাণ্ড নহে। ভারত-শতরঞ্-মঞ্চে সাদা! কালে! ঘরে নান! পক্ষে যে-দকল বিচিত্র চাল চালিতেছিলেন, তাহার মধ্যে ভূলব্রাস্তি রাগদ্ধেষ লোভমোহের হাত ছিল ন! এমন নহে কিন্তু রাজভক্তি পাঠ্যসমিতির প্রতি লক্ষ রাখিয়া লেখক- দিগকে সংকীর্ণ সীমায় সভয়ে পদক্ষেপ করিতে হয়। সেইজন্য অন্তত বাংলায় রচিত ইতিহাসে ইংরাজ-শাসনের অধ্যায় অত্যন্ত শুফ এবং শীর্ণ।

আবুও একট] কথ! আছে। মোগল-পাঠানের সময় প্রত্যেক সমাট্‌ স্বতন্ত্র প্রতৃরূপে স্বেস্ছামতে রাজ্যশাসন করিতেন, স্বৃতরাং তাহাদের স্বাধীন ইচ্ছার আন্দোলনে ভারত-ইতিবৃত্তে পদে পদে রসবৈচিত্র্য তরঙ্গিত হইয়া উঠিয়াছিল। কিন্তু ইংরাজের ভারতবর্ষে ইংলগ্ডের রাজতন্ত্রের শাসন। তাহার মধ্যে হৃদয়ের লীলা অত্যন্ত গৌণ ব্যাপার মানুষ নাই, রাজ! নাই, কেবল একট! পলিসি অতি দীর্ঘ পথ দিয়া ডাক বসাইয়া চলিয়াছে, প্রতি পাচ বংসর অন্তর তাহার বাহক বদল হয় মাত্র।

সেই পলিসি কিরূপ হুম্দ্র জটিল সুদূরব্যাপী, এই মাকড়সাজালের স্তত্রগুলি জিবণ্টার ইজিপ্ট এড়েন গ্রভৃতি দেশ দেশাস্তর হইতে লম্বমান হইয়া কেমন করিয়া! ভারতবর্ধকে আপাদমস্তক ছাকিয়া ধরিয়াছে, তাহার বিবরণ আমাদের পক্ষে কৌতুকাবহ সন্দেহ নাই-- এবং সেই বিবরণ

১২১

ইতিহাস

লায়াল সাহেবের 'ভারতসাম্রাজ্য' গ্রন্থে যেমন সংক্ষেপে মনোরম আকারে বিবৃত হইয়াছে এমন আর কোথাও দেখি নাই |

কিন্তু এই বিবরণ মাঁনববুদ্ধির নৈপুণ্যব্যগ্রক এতিহাসিক যন্তত্__ তাহা পাঠকের চিরকৌতুকাবহ এঁতিহাসিক হৃদয়তব নহে। পশ্চিমদেশের কল পূর্বদেশে কিরূপ পুতুলবাজি করাইতেছে তাহার মধ্যে কিঞ্চিৎ হাস্যরস, কিঞ্চিৎ করুণরস এবং প্রভূত পরিমাণে বিশ্মরস আছে; কিন্ত প্রত্যক্ষ হৃদয়ের সহিত হৃদয়ের সংঘর্ষে যে ন।ট্যরসভূয়িষ্ঠ সাহিত্যের উপাদান জন্মে ইহাতে তাহা স্বল্প

ঈস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির আমলে সেই এঁতিহাসিক উপন্তাস -রস, ইতরাজিতে যাহাকে রোম্যান্স বলে, তাহ] যথেষ্ট পরিমাণে ছিল। তখন ইরাজের স্বাভাবিক-দূরদর্শী রাজ্যবিস্তারনীতির মধ্যেও ব্যক্তিগত স্বার্থ- লোভ রাগদেষের লীলায় ইতিহাসকে চঞ্চল উত্তপ্ত করিয়। তুলিয়াছিল।

শ্রীযুক্ত বাধু অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় তাহার “সিরাজদ্দৌলা গ্রন্থে এতিহাসিক রহস্তের যেখানে যবনিকা উত্তোলন করিয়াছেন সেখানে মোগল-সাআঙ্যের পতনোনুখ প্রাসাদদ্বারে ইংরাজ বণিকসম্প্রদায় অত্যন্ত দীনভাবে দপ্ডায়- মান। তখন ভারতক্ষেত্রে সংহারশক্তি যতপ্রকার বিচিত্র বেশে সঞ্রণ করিয়া ফিরিতেছিল তন্মধ্যে সর্বাপেক্ষা সাধু শান্ত দরিদ্র বেশ ছিল ইতরাজের | মারাঠি অশ্বপৃষ্ঠে দিগ্দিগন্তরে কালানল জালাইয়! ফিরিতে ছিল, শিখ ভারতের পশ্চিম প্রান্তে আপন দুর্জয় শক্তিকে পুণ্তীভূত করিয়! ভুলিতে- ছিল, মোগল-সমাটের রাঙপ্রতিনিধিগণ সেই যুগান্তরের সন্ধ্যাকাশে ক্ষণে ক্ষণে বিদ্রোহের রক্তধ্বজা আন্দোলন করিতেছিল-_ কেবল কয়েকজন ইতরাজ সওদাগর বাণিজোর বস্ত। মাথায় করিয়। সম্রাটের প্রাসাদসোপানে প্রসাদচ্ছায়ায় অত্যন্ত বিনম্রভাবে আশ্রয় লইয়াছিল।

১২২

সিরাজনদৌলা

মাতামহ আলিবদ্দির ক্রোড়ে নবাব-রাজহর্ম্যে সিরাজদ্দৌল1 যখন শিশু, তখন ভাবী ইংরাজ-বাজমহিনাও কলিকাতায় সওদাগরের কুঠিতে ভূমি হইয়! অসহায় শিশুলীল! যাপন করিতেছিল। উভয়ের মধ্যে একটি আনৃষ্ট বন্ধন বাঁধিয়া দরিয়া ভবিতব্যত। আপন নিদ্বাকণ কৌতুক গোপন করিয়া! রাখিয়াছিল।

প্রমোদের মোহমত্ততায় এই প্রলয়নাট্যের আরম্ভ হইল ভাগীরণীতটে হীরাঝিলের নিকুঞ্কবনে বিলাসিনীর কলকণ্ এবং নর্কীর নৃপুরধবনি মুখরিত হইয়] উঠিল। লালসার লুব্ধহস্ত গৃহস্থের রুদ্ধগৃহের মধ্যেও প্রসারিত হইল।

দিকে নেপথ্যে মাঝে মাঝে বগিদলের অশ্বক্ষুরধ্বনি শুনা ষায়, অন্ত্রঝঞ্চনা বাজিয়া উঠে। তাহাদের আক্রমণ ঠেকাইবার জন্য বৃদ্ধ আলিবদি দশ দিকে ছুটাছুটি করিতে লাগিলেন। এই উৎপাতের স্থযোগে ইতরাজ বণিক কাশিমব'জারে একটি ছুর্গ ফীদ্দিল এবং স্থানে স্থানে আত্ম- রক্ষার উপযোগী সৈন্য সমাবেশ করিতে লাগিল।

বণিকদের স্প্ধাও বাড়িতে লাগিল। তাহার! দেশী-বিদেশী মহাঁজন- দিগের নৌক] জাহাঁজ লুঠতরাজ করিবার চেষ্টা করিতে লাগিল। কোম্পানির কর্মচারীগণ আত্মীয়বন্ধুবান্ধব-সহ বিনাশুক্কে নিজ হিসাবে বাণিজ্য চালাইতে প্রবৃত্ত হইল

এমন সময়ে সিরাজদ্দৌল। যৌবরাজ্য গ্রহণ করিলেন এবং ইতরাজের স্বেচ্ছাচারিতা দমন করিবার জন্য কঠিন শাসন বিস্তার করিলেন

রাজমধাদাভিমানী নবাবের সহিত ধনলোলুপ বিদেশী বণিকের ছন্দ বাধিয়! উঠিল। এই ছ্বন্দে .বণিক-পক্ষে গৌরবের বিষয় কিছুই নাই। সিরাজদ্দৌলা যদিচ উন্নতচরিত্র মহৎ ব্যক্তি ছিলেন না, তথাপি এই ছন্দের হীনত]1 মিথ্যাচার প্রতারণার উপরে তাহার সাহস সরলতা,

১২৩

ইতিহাস

বীর্ধ ক্ষমা, রাজোচিত মহত্বে উজ্জল হুইয়! ফুটিয়াছে। তাই ম্যালিসন তাহার উল্লেখ করিয়া বলিয়াছেন, “সেই পরিণামদারুণ মহানাটকের প্রধান" অভিনেতাদের মধ্যে সিরাজদ্দৌলাই একমাত্র লোক ধিনি প্রতারণা করিবার চেষ্ট] করেন নাই |;

দ্বন্দের আরম্ভটি পত্রযুগলসমন্বিত তরুর অস্কুরের হ্যায় ক্ষুদ্র সরল, কিন্তু ব্রমশ নানা লোক নান মতলবের সমাবেশ হইয়া তাহা বৃহৎ বনম্পতির ন্যায় বিস্তৃত জটিল হইয়। পড়িল

নিপুণ সারথি যেমন এক কালে বহু অশ্ব যোজন। করিয়। রথ চালন। করিতে পারে, অক্ষয়বাবু তেমনি প্রতিভাবলে এই বহুনায়কসংকুল জটিল ছন্ঘবিবরণকে আরম্ভ হইতে পরিণাম পধস্ত সবলে অনিবাধবেগে ছুটাইয়! লইয়! গিয়াছেন।

তাহার ভাষা যেরূপ উজ্জল সরস, ঘটনাবিহ্তাসও সেইরূপ স্থসংগত, প্রমাণবিশ্লেষণও সেইরূপ স্থনিপুণ। যেখানে ঘটনাসকল বিচিত্র এবং নানাভিমুখী, প্রমাণসকল বিক্ষিণ্চ, এবং পদে পদে তর্কবিচারের অবতারণা আবশ্যক হুইয়া পড়ে, সেখানে বিষয়টির সমগ্রত1 সবত্র রক্ষা করিয়া তাহাকে ক্ষিপ্রগতিতে বহন করিয়া লইয়! যাঁওয়1 ক্ষমতাশালী লেখকের কাজ। বিশেষত প্রমাণের বিচারে গল্পের স্থত্রকে বিচ্ছিন্ন করিয়া! দেয়, কিন্ত সেই-সকল অনিবার্ধ বাধা-সত্বেও লেখক তাহার ইতিবৃত্তকে কাহিনীর স্যায় মনোরম করিয়া তুলিয়াছেন, এবং ইতিহাসের চিরাপরাধী-অপবাদ- গ্রস্ত দুর্ভাগা সিরাঁজদ্দৌলার জন্য পাঠকের করুণ] উদ্দীপন করিয়া তবে ক্ষান্ত হইয়াছেন।

কেবল একট বিষয়ে তিনি ইতিহাস-নীতি লঙ্ঘন করিয়াছেন। গ্রন্থকার যদিচ সিরাজ-চরিত্রের কোনে। দোষ গোপন করিতে চেষ্টা করেন

১২৪

সিরাজদ্দৌল৷

নাই, তথাপি কিঞিৎ উদ্যম-সহকারে তাহাঁর পক্ষ অবলম্বন করিয়াছেন শীস্তভাবে কেবল ইতিহাসের সাক্ষ্য-ঘারা সকল কথা! ব্যক্ত না করিয়া সঙ্গে সঙ্গে নিজের মত কিঞ্চিৎ অধৈর্য আবেগের সহিত প্রকাশ করিয়াছেন। রূঢ় প্রতিকূল সংস্কারের সহিত যুদ্ধ করিতে গিয়া এবং প্রচলিত বিশ্বাসের অন্ধ অন্যায়পরতার দ্বারা পদে পদে ক্ষুন্ধ হইয়া তিনি স্বভাবতই এইরূপ বিচলিত ভাব প্রকাশ করিয়াছেন। কিন্তু ইহাতে সত্যের শান্তি নষ্ট হইয়াছে এবং পক্ষপাতের অমূলক আশঙ্কীয় পাঠকের মনে মধ্যে মধ্যে ঈষৎ উদ্বেগের সঞ্চার করিয়াছে

শ্রীযুক্ত অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় মহাশয়ের “সিরাজদ্দৌলা” পাঠ করিয়া কোনো আংলো-ইগ্ডিয়ান পত্র ক্রোধ প্রকাশ করিয়াছেন

স্বজাঁতি সম্বন্ধে পরের নিকট হইতে নিন্দোক্তি শুনিলে ক্রোধ হইতেই পারে। সমূলক হইলেও

কিন্তু আমাঁদের সহিত উক্ত পত্রসম্পাদকের কত প্রভেদ ! আমাদিগকে বিদেশীলিখিত নিন্দোক্তি বাধ্য হইয়! অধ্যয়ন করিতে হয়, তাহা মুখস্থ করিয়! পরীক্ষা দিতে হয়। কিন্তু অক্ষযবাবুর সিরাজদ্দৌল! কোনে। কালে সম্পাদকমহাশয়ের সম্তানবর্গের পাঠ্যপুস্তকন্ধপে নির্ধারিত হইবার সম্ভাবন। দেখি না। বিশেষত অক্ষয়বাবু এই গ্রন্থ যখন বাংলায় রচনা করিয়াছেন তখন ইংরাজ পাঠককে ব্যথিত করিবার সম্ভাবনা আরও স্ুদ্বরপরাহত হইয়াছে।

কিন্তু এই বাংল! রচনাতেই সমালোচক আক্রোশের কারণ আরও দেখিতে পাইয়াছেন। তিনি আশঙ্কা করেন, ভাষানভিজ্ঞতাবশত যে-

১২৫

ইতিহাস

সকল বাঙালি পাঠকের নিকট মূল দলিল এবং এতিহাঁসিক প্রমাণসকল আয়ত্তাতীত, “সিরাজদ্দৌলা” গ্রন্থ পাঠে ইংরাজদিগের আচরণের প্রত্তি তাহাদের অশ্রদ্ধা জন্মিতে পারে

কিন্তু, ইহা ইতিহাস; যুক্তির দ্বারা, প্রমাণের দ্বারা ইহাকে আক্রমণ করিয়! ধ্বংস করিয়! দেওয়া কঠিন নহে এমন-কি, আইনের কোনে! অভাবনীয় ব্যাখ্যায় ইতিহাস-সমেত এঁতিহাসিককেও লোপ করিয়৷ দেওয়া অসম্ভব না হইতে পারে। কিন্তু, জিজ্ঞান্ত এই যে, তুলনায় কোন্টা গুরুতর__ ইতরাঁজ লেখকগণ গল্পে প্রবন্ধে ভ্রমণবৃত্তান্তে প্রাচ্জাতীয়দের প্রতি নানা আকারে যে নিন্দা অবজ্ঞা প্রকাশ করিতেছেন, যাহ অধিকাংশ স্থলেই যুক্তিগত তথ্যগত নহে, জাতীয় সংস্কারগত-__- অধিকাংশ স্থলেই যাহার স্থগভীর মূল-কারণ স্পেকুটেটর যাহাকে বলিয়াছেন “৮5 01511150001 91105+- ইহাই ? অথবা বাংল। ইতিহাস, যাহ] শিক্ষিত বাঙালিদেরও বারো আন! লোক বাংলায় লিখিত বলিয়াই পড়িতে অনাদর করিবে, তাহা?

আমাদের প্রতি ইংরাজের যে ধারণ1 জন্মিয়া থাকে তাহার ফল প্রত্যক্ষ__- কারণ, আমর! নিরুপায়ভাবে ইতরাজের হস্তগত একে দূর্বল অধীন আজ্ঞাবহের প্রতি স্বভাবতই উপেক্ষা জন্মে এবং সেই উপেক্ষা] সদ্বিচারের ব্যাঘাত ন। করিয়া থাকিতে পারে ন, তাহার পরে শিশুকাল হইতে ইংরাজ-সম্তান যে-সকল গ্রন্থ পাঠ করে তাহাতে ভারতবর্ষ সন্বন্ধে বীভৎসা এবং বিভীষিকার উদ্রেক করিয়] দেয় ভারতবর্ষের ধর্ম সমাজ এবং লোকচরিত্র সম্বন্ধে ভূয়োভুয়ঃ কাল্পনিক মিথ্যাবাদ অত্যুক্তি দ্বার! পরিপূর্ণ ইতরাজি গ্রন্থের পত্রসংখ্যার সহিত তুলিত হইলে বঙ্গসাহিত্যের ভালোমন্দ পাঠ্য-অপাঠ্ সমস্ত গ্রন্থ আপন ক্ষীণতাক্ষোভে লজ্জিত হইয়া উঠে।

১২৬

| সিরাজদোৌল। :

ইংরাজ আমাদের ক্ষমতাশালী প্রতু। সেই ক্ষমতা প্রভাবের প্রত্যক্ষ আকর্ষণ অত্যন্ত অধিক। এত অধিক যে, অন্যায় অত্যাচারও যদি ঘটে তথাপি তাহ। দুর্বল ব্যাক্তিদিগকে ভয়ে বিস্ময়ে এবং একপ্রকার অন্ধ আসক্তিতে অভিভূত করিয়া রাখে অতএব দেড় শত ব্সর পূর্বে ইংরাজ বণিক তৎকালীন রাজস্থানীয়দের প্রতি কিরূপ আচরণ করিয়াছিল তাহ। পাঠ করিম ইংরাজের প্রতি অশ্রদ্ধা পোষণ করিতে থাকিবে এমন ভারতবাসী নাই মুখে যাহাই বলি, কোনোদিন বিশেষ আঘাতের ক্ষোভে বিশেষ কারণে যেমনই তর্ক করি, ইংরাজের প্রবল প্রতাপের আকর্ষণ ছেদন করা আমাদের পক্ষে সহজ নহে।

অতএব, যতদিন আমর! দুর্বল এবং ইংরাজ সবল ততদিন আমাদের মুখের নিন্দায় তাহাদের ক্ষতি নাই বলিলেই হয়, তাহাদের মুখের নিন্দা আমাদের পক্ষে সাংঘাতিক ততদিন আমাদের সংবাদপত্র কেবল তাহাদের তাহাদের মেমসাহেবদের কর্ণগীড়। উৎপাদন করে মাত্র এবং তাহাদের সংবাদপত্র আমাদের মর্মস্থানের উপর বন্দুকের গুলি বর্ষণ করে

কিন্তু ইংরাজি সাহিত্যে একট] অন্যায় আচরিত হয় বলিয়া! আমর! তাহার অন্তায় প্রতিশোধ লইব ইহা স্থযুক্তির কথ! নহে-_ বিশেষত দুর্বলের পক্ষে সবলের অনুকরণ ভয়াবহ

ইংরাজের অন্যায় নিন্দা] “সিরাজদ্দৌলা গ্রন্থের উদ্দেশ্য নহে। তবে এমন একট? প্রসঙ্গের উত্থাপন করায় কী প্রয়োজন ছিল ! সেই প্রয়োজনীয়তা সমালোচক ঠিকভাবে বুঝিবেন এবং যথার্থভাবে গ্রহণ করিবেন: কিনা সন্দেহ।

ঘাতপ্রতিঘাতের একটা স্বাভাবিক নিয়ম আছে। প্রাচ্য চরিত্র, প্রাচ্য শাসননীতি সম্বন্ধে ইংরাজি গ্রন্থে ছোটে1বড়ো, স্পষ্ট-অস্পষ্ট, সংগত-

১২৭

ইতিহাস

অসংগত অজন্্ কটুক্তি পাঠ করিয়া শিক্ষিত-সাধারণের মনে যে-একট! অবমাননাজনিত ক্ষোভ জন্মিতে পারে কথা অল্প ইংরাজই কল্পনা! করেন।

অথচ, প্রথমশিক্ষাকালে ইংরাজের গ্রন্থ আমর বেদবাক্যস্বন্ধপ গ্রহণ করিতাম। তাহ! আমাদিগকে যতই ব্যথিত করুক তাহার যে প্রতিবাদ সম্ভবপর, তাহার যে প্রমাণআলোচণা আমাদের আয়ভ্তগত কথা আমাদের বিশ্বাস হইত না নীরবে নতশিরে আপনাদের প্রতি ধিক্কার- সহকারে সমস্ত লাঞ্ছনাকে সম্পূর্ণ সত্যজ্ঞানে বহন করিতে হইত।

এমন অবস্থায় আমাদের দেশের যে-কোনে৷ কৃতী গুণী ক্ষমতাশালী লেখক সেই মানসিক বন্ধন ছেদন করিয়াছেন, যিনি আমাদিগকে অন্ধ অন্ুবৃত্তি হইতে মুক্তিলাভের দৃষ্টান্ত দেখাইতে পারিয়াছেন, তিনি আমাদের দেশের লোকের কৃতজ্ঞতাপাত্র

তাহা ছাড়া! প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের সংঘর্ষে আমাদের ভাগে যে কেবলই কলঙ্ক সেট! সন্বদ্ধে সন্দেহ প্রকাশ করা এবং বিরুদ্ধ প্রমাণ আনয়ন কর! আমাদের নতশির ক্ষতহৃদয়ের পক্ষে একান্ত প্রয়োজনীয়

অক্ষয়বাবু ষে অন্ধকৃপহত্যার সহিত গ্লেন্কোর হত্যাকাণ্ড সিপাহি- বিদ্রোহকালে অমৃতসরের নিদারুণ নিধন-ব্যাপারের তুলনা করিয়াছেন ইতিহাসবিবুতিস্থলে তাহা অপ্রাসঙ্গিক হইতে পারে এবং ইতরাজ সমালেচকের তত্প্রতি ক্রুদ্ধ কটাক্ষপ।তও সংগত হইতে পারে, কিন্ত আমরা ইহাকে নিরর৫থক বলিতে পারি না। এইজন্য পারি ন1 যে, যে-সকল সমূলক অমূলক অতিরঞ্জিত বিবরণ পাঠ করিয় প্রাচ্য-চরিত্রের নির্দয় বর্বরতায় ইতরাজ-সম্তানগণ বংশানুক্রমে কণ্টকিত হইয়া আসিতেছেন এবং উচ্চ ধর্মমঞ্চ হইতে আমাদের প্রতি ভ€ংসন1 উদ্যত করিয়। রাখিয়াছেন, অন্ধকৃপহত্য! তাহার মধ্যে একটা প্রধান সেই আঘাতের একট] প্রতিঘাত করিতে

১২৮

সিরাজদ্দৌল! :

না পারিলে আত্মাবমাননার হস্ত হইতে নিষ্কৃতি পাওয়া যাঁর না। স্থযোগ বুঝিয়া কথ] বলিবার প্রলোভন আমর] সম্বণ করিতে পারি না যে, শত্রুর প্রতি অন্ধ হিংন্রত] বিরূত মানবচরিত্রের পশুপ্রবৃত্তি, তাহা বিশেষ- রূপে প্রাচ্য-চরিত্রের নহে সমালোচকের ধর্মঞ্চ কেবল একা কোনে! জাতির নহে। অবসর পাইলে আমরাও তাহার উপর চড়িয়া বিচারক মহাশয়ের কলঙ্ককালিমায় তর্জনী নির্দেশ করিতে পারি। খুস্টান-শাস্গ্ে বলে পরকে বিচার করিলে নিজেকেও বিচারাঁধীনে আসিতে হয়। ম্বীকার করি ইহ1 ইতিহীসনীতি নহে, কিন্তু ইহা! স্বভাবের নিয়ম

অবশ্য, ইহছাও ব্বভাবের নিয়ম যে, সবল দুর্বলকে যেমন ্বচ্ছন্দে নিশ্চিম্তচিত্তে বিচার করিয় থাঁকে, ছূর্ল সবলকে তেমন করিয়া বিচার করিতে গেলে সবলের ভ্রযুগল কুটিল এবং মুষ্টিযুগল উদ্যত হইয়া উঠিতে পারে। অক্ষয়বাবু হয়তো আদিম পপ্ররুতির সেই রূঢ় নিয়মের অধীনে আসিয়াছেন, কিন্ধু বাংলা ইতিহাসে তিনি যে স্বাধীনতার যুগ প্রবর্তন করিয়াছেন সেজন্য তিনি বঙ্গসাহিতো ধন্য হইয়া] থাকিবেন।

সমালোচক-মহাশয় কথ! ম্মরণ করাইয়। দিয়াছেন যে, মুসলমান- রাজ্যকাঁলে এরপ গ্রন্থ অক্ষয়বাবু লিখিতে পারিতেন ন1। হয়তে1 পারিতেন না। মুসলমান-রাজ্যকালে বিজিত হিন্দুগণ প্রধান মন্ত্রী, প্রধান সেনাপতি, রাজন্বসচিব প্রসতি উচ্চতর রাঁজকার্ষে অধিকারবান ছিলেন, কিন্তু কোনো নবাবি আমলে উক্ত নবাবের দেড়শতাব্দ-পূর্ববর্তী ইতিহাস, বাহিরের প্রমাণ অন্তরের বিশ্বাস -অনুসারে তীহার!1 হয়তো লিখিতে পারিতেন না। ইংরাজ-রাজস্বকালে অক্ষয়বাঁবু যদি সেই অধিকার লাভ করিয়া থাকেন তবে তাহা ইংরাজ-শাসনের গৌরব, কিন্তু তবে কেন সেই অধিকার ব্যবহারের জন্য সমালোৌচক-মহাঁশয় চক্ষু রক্তবর্ণ করিতেছেন ? এবং যদি সে অধিকার

১২৯

ইতিহাস অক্ষয়বাবুর না থাকে, যদি তিনি আইনের মর্যাদা লঙ্ঘন করিয়া থাকেন, তবে কেন সমালোচক-মহাশয় অধিকারদানের ওঁদার্য লইয়া গৌরব প্রকাশ করিতেছেন ? ফলত এই অধিকারের রেখ! এতই ক্ষীণ সুক্্ম হইয়া আসিয়াছে যে, বাহার আইনের অগুবীক্ষণ নিপুণভাবে প্রয়োগ করিতে পারেন তীহারাও সীমানির্ণয়ে মতভেদ প্রকাশ করিয়া! থাকেন-_ এমন অবস্থায় অস্তত আরও কিছুদিন সম্বন্ধে কোনো! কথ! না বলাই ভালে!

এঁতিহাসিক চিত্র

আমরা “এঁতিছাসিক চিত্র" -নামক একখানি এঁতিহাসিক পত্রের মুদ্রিত প্স্তাবন। প্রাণ্চ হইয়াছি। শ্রীযুক্ত অক্ষয়কুমার মেত্রেয় মহাশয়ের সম্পাদকতায় তাহা প্রকাশিত হইবে।

এই প্রস্তাবনায় লিখিত হইয়াছে-_ “আমাদের ইতিহাসের অনেক উপকরণ বিদেশীয় পরিব্রাজকগণের গ্রন্থে লিপিবদ্ধ ; তাহ] বহু ভাষায় লিখিত বলিয়া! আমাদের নিকট অপরিজ্ঞাত অনাদৃত। মুসলমান বা ইউরোপীয় সমসাময়িক ইতিহাস-লেখকগণ যে-সকল বিবরণ লিখিয় গিয়াছেন, তাহারও অগ্ভাপি বঙ্গান্বাদ প্রকাশিত হয় নাই পুরাতন রাজবংশের কাগজপত্রে মধ্যে যে-সকল এতিহাসিক তত্ব লুক্কায়িত আছে তাহার অনুসন্ধান লইবারও ব্যবস্থ। দেখা যায় না।

নান! ভাষায় লিখিত ভারতভ্রমণকাহিনী ইতিহাসাদি প্রামাণ্য গ্রন্থের অনুবাদ, অন্ুসন্ধানলব্ধ নবাবিষ্কৃত এঁতিহাসিক তথ্য, আধুনিক ইতিহাঁসাঁদির সমালোচন এবং বাঙালী রাজবংশ জমিদারবংশের পুরাতত্ব প্রকাশিত করাই ( এই প্রস্তাবিত পত্রের ) মুখ্য উদ্দেশ্ট |

বাংলা সাহিত্যে আজকাল ইতিহাসের চর্চা বিশেষরূপে প্রবল হইয়া উঠিয়াছে তাহার প্রমাণ পাওয়া যায়। অতএব বিক্ষিপ্ত উদ্ধমগ্ুলিকে একত্র করিয়৷ একখানি এতিহাঁসিক পত্র বাহির করিবার সময় উপস্থিত হুইয়াছে। উপযুক্ত সম্পাদক উপযুক্ত সময়ে কার্ষে অগ্রসর হইয়াছেন ইহা আমাদের আনন্দের বিষয়।

প্রাচীন গ্রীস রোম এবং আধুনিক প্রায় সকল সভ্যদেশেই ইতিহাসের প্রতি পক্ষপাত যেরূপ প্রকাশ পাইয়াছে ভারতবর্ষে কখনো! তেমন ছিল না, ইহাতে বোধ করি ছুই মত হইবে ন1। মান্ধাতার সসকালে আমাদের

১৩৬

ইতিহাস

দেশে হয়তো সবই ছিল__ তখন টেলিগ্রাফ, রেলগাড়ি, বেলুন, ম্যাক্সিম বন্দুক, ডারউইনের অভিব্যক্তিবাদ এবং গ্যানো-রচিত প্ররুতিবিজ্ঞান ছিল এমন অনেকে আভাস দিয়া থাকেন-_ কিন্তু, তখন ইতিহাস ছিল ন]। থাকিলে এমন-সকল কথা অল্প শুন যাইত

কিন্তু আধুনিক ভারতবর্ষে, যে সময়ে রাজপুতদের জনবন্ধন দুঢ় ছিল তখন তাহাদের মধ্যে, উপযুক্ত মাটিতে উপযুক্ত চাষের মতো! ইতিহাস আপনি উদ্ভিন্ন হইয়া উঠিত।

আধুনিক ভারতে যখন হইতে মারাঠারা শিবাজীর প্রতিভাবলে এক জনসম্প্রদায়র্ূপে বজের মতো বাধিয়] গিয়াছিল এবং সেই বজ যখন জীর্ণ মোগল-সাত্াজ্যের এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত বিছ্যুৎ-বেগে ভাঙিয়! পড়িতেছিল, তখন হইতে তাহাদের ইতিহাসরচনার স্বাভাবিক কারণ ঘটে তাহাদের “বখর' নাম-ধারী ইতিহাসগুলি প্রাচীন মহারাষ্ট্র-সাহিত্যের প্রধান অঙ্গ।

শিখদের ধর্মগ্রন্থ এবং তাহাদের জনসম্প্রদায়গঠনের ইতিহাস একত্র সম্মিলিত। তাহাদের ধর্মমতে একেশ্বরবাদের মহান্‌ এক্য স্বভাবতই জাতীয় এক্যের কারণ হইয়াছিল .তাহার1 যেমন ধর্মে এক তেমনি কর্মে এক, তেমনি বলে এক হইয়া উঠিয়াছিল। তাহাদের ধর্মগ্রন্থ একই কালে পুরাণ এবং ইতিহাস।

আসল কথ! এই যে, জীবের ধর্ম যেমন বর্তমানে জীবনরক্ষা এবং ভবিষ্যতে বংশান্ুক্রমে আপনাকে স্থায়ী করিবার চেষ্টা তেমনি যখন ব্‌- সংখ্যক বিচ্ছিন্ন লোককে কোনো-একটি বিশেষ মত ব] ভাব বা ধারাবাহিক শ্বৃতিপরম্পর! এক জীবন দিয়! এক জীব করিয়! তোলে তখন সে বৃহিঃশত্রর আক্রমণে খাঁড়1 হুইয়| দড়াইতে পারে এবং ভবিষ্যং-অভিমুখে আপন

১৩২

এতিহাসিক চিত্র

ব্যক্তিত্ব, আপন সম্প্রদায়গত এঁক্যকে প্রেরণ করিবার জন্য যত্্বান্‌ হইয়া উঠে। ইতিহাস তাহার অন্ততম' উপায়। এইজন্য কীটসমাজের পক্ষে বংশাহুক্রমে প্রবালশৈলরচনার স্তায় বিশেষ একাবদ্ধ জনসম্প্রদায়ের পক্ষে ইতিহাসরচন] প্রকৃতিগত ধর্ম।

শাস্্রপুরাণ জনসমাজের সম্পূর্ণ ইতিহাস ন| হইলেও তাহ! ধর্মপমাজের ইতিহাস। ধর্মমগ্ডলী আপন ধর্মের মহত্ব লৌন্দর্য প্রাচীনত] সাধুদৃষ্টাস্তমালা পুরাণে শাস্কে গ্রথিত করিয়া ধর্মমতপ্রবাহকে অখণ্ড আকারে কাল হইতে কালাস্তরে সঞ্চারিত করিয়! রাখে এবং সেই পুরাতন এক্হ্ত্রে আপন সম্প্রদায়কে দূরকালবদ্ধ বুহৎ এবং স্থ্দূঢ করিয়া তোলে

এইজন্য ঘটনার তথ্যত। রক্ষ| কর! পুরাণের উদ্দেশ্য নহে। তাহা কেবল ধর্মমত-ধর্মবিশ্বাসের ইতিবৃত্ত। তাহার কাল্পনিক অমূলক উক্তি- সকলও বণিত ধর্মনীতির আদর্শকেই ব্যক্ত করে। সাময়িক ঘটনাবলীর প্রকৃত বিবরণ তাহার লক্ষ্যের মধ্যে পড়ে না।

কিন্ত লোকেরা যখন কেবল ধর্মসম্প্রদায় বলিয়। নহে, জনসম্প্রদায় বলিয়। আপনার এক্য অনুভব করে-_ কেবল ধর্মরক্ষা নহে, জনগত আত্মরক্ষা তাহাদের পক্ষে স্বাভাবিক হইয়া! উঠে_- তখন তাহারা কেবল বিশেষ মত বা বিশ্বাস নহে, পরন্ত আপনাদের ক্রিয়াকলাপকীতি স্থখছুঃখ সাময়িক ঘটনাবলী লিপিবদ্ধ করিতে থাকে

যখন আধগণ প্রথম ভারতবর্ষে আসিয়াছিলেন, যখন উবাসীন স্বাতত্ত্র তীহাদের আদর্শ ছিল না, যখন প্রারুতিক বাধ। আদিম অনাধের সহিত সংগ্রামে তীহাদিগকে সচেষ্ট দলবদ্ধ হইতে হইয়াছিল, যখন বীরপুকরুষগণের স্থৃতি তীহাঁদিগকে বীর্যে উৎসাহিত করিত, তখন তীহাদের লিপিহীন সাহিত্যে ইতিহীপগাথার প্রাছূর্ডাৰ ছিল সন্দেহ নাই সেই-নকল অতি-

৯৩৩

ইতিহাস

পুরাতন খণ্ড-ইতিহাস বহুষুগ পরে মহাভারতে রামায়ণে নান। বিকার- সহকারে একত্র সংযোজিত হইয়াছিল

কিন্তু প্রতিপদক্ষেপে যখন আর বন ছিল না এবং বনে বখন আর রাক্ষম ছিল না, ধক্ষরক্ষকিন্নরগণ যখন দুর্গম পর্বতে নির্বাসিত হইয়। জনপ্রবাদে ক্রমশ অলৌকিক আকার ধারণ করিল, অর্জুনবিজয়ী কিরাতেশ্বর ধূর্জটি যখন দেবপদে উত্তীর্ণ হইলেন, প্রতিকূল প্রকৃতি এবং মানবের সংঘাত যখন দূর হইয়া গেল, যখন সুদীর্ঘ শাস্তিকালে হৃূর্ধকরোত্তপ্ত ভারতবর্ষে ্রাঙ্মণ সকলের প্রধান হইয়া আপন গুদাস্যধর্মের বিপুলজাল হিমালয় হইতে কুমারিক। পধন্ত নিক্ষেপ করিল, তখন হইতে আর ইতিহাস রহিল না। ব্রাহ্মণের ধর্ম শত শত নব নব পুরাণে গ্রথিত হইতে লাগিল, কিন্ত জনসংঘ ক্রমে শিথিলীভূত হইয়া! কোথায় ছড়াইয়। পড়িল, তাহাদের আর কোনে! কথাই নাই। অতীত হুইতেও তাহারা বিচ্যুত হইল, ভবিষ্যতের সহিতও তাহাদের যোগ রহিল ন]।

আসল কথা, এক্যের ধর্ম প্রাণধর্মের হ্যায় সে জড়ধর্মের ন্যায় কেবল একাংশে বদ্ধ থাকে না। সে যদি এক দিকে প্রবেশ লাভ করে তবে ক্রমে আর-এক দিকেও আপনার অধিকার বিস্তার করিতে থাকে সে যদি দেশে ব্যা্ধ হইতে পায় তবে কালেও ব্যাপ্ত হইতে চায়। সে যদিনিকট এবং দুরের মধ্যে বিচ্ছেদ পূরণ করিতে পারে তবে অতীত এবং ভবিষ্যতের সঙ্গেও আপন বিচ্ছিন্নতা দূর করিতে চেষ্টা করে।

এই অখগুতার চেষ্টা এত প্রবল যে, অনেক সময়ে তাহ! কল্পনার দ্বার! ইতিহাসের অভাব পুরণ করিয়! ইতিহাসকে ব্যর্থ করিয়! দেয়। এইজন্যই সুদীর্ঘ কল্পনাজাল বিস্তার করিয়া রাজপুতগণ চন্দ্রহরবংশের সহিত আপন সংযোগ সাধন করিয়াছিল

১৩৪

এঁতিহাসিক চিত্র

আমরাও বর্ণ এবং কুল -মর্ধাদা একটি সুক্ষ স্ত্রের মতে! অনেক দিন হইতে টানিয়৷ লইয়া 'চলিয়াছি। তাহার শ্রেণী-গোত্র-গাই-মেল-সন্বন্ধীয সংক্ষিপ্ত সাহিত্য ভাটেদের মুখে উত্তরোত্তর বাড়িয়া! চলিয়াছে। ইহা আমরা! ভুলিতে দিতে পারি না কারণ, আমাদের সমাজে যে এঁক্য আছে তাহ প্রধানত বর্ণগত। সেই স্থত্র আমরা স্মরণাতীত কাল হইতে টানিয়! আনিতে এবং অনন্ত ভবিষ্যতের সহিত বাধিয় রাখিতে চাই

কিন্ত আমাদের মধ্যে যদি জনগত এঁক্য থাকিত-_ যদ্দি পরম্পর সংলগ্ন হইয়া জয়ের গৌরব, পরাজয়ের লঙ্জা, উন্নতির চেষ্টা আমর! এক বৃছ্‌ৎ হৃদয়ের মধ্যে অনুভব করিতে পারিতাম, তবে সেই জনমগুলী স্বভাবতই উর্ণনাভের মতো! আপনার ইতিহাসতত্ত প্রসারিত করিয়া দূর-দূরাস্তরে আপনাকে সংযুক্ত করিত। তাহ! হুইলে আমাদের দেশের ভাটের! কেবল গাই-গোত্র-প্রবরের শ্লোক আওড়াইত না, কথকের| কেবল পুরাণ ব্যাখ্যা করিত না, ইতিহাস-গাথকেরা পূর্বকালের সহিত স্থখছুঃখগৌরবের যোগ বংশানুক্রমে ম্মরণ করাইয়! রাখিত

এক্ষণে আমাদের বিশেষ আনন্দের কারণ এই যে, সম্প্রতি বঙ্গসাহিত্যে যে-একটি ইতিহাঁস-উতসাহ জাগিয়া উঠিয়াছে তাহার মধ্যে সার্বজনীন স্থুলক্ষণ প্রকাশ পাইতেছে। তাহাকে আমরা আকস্মিক এবং ক্ষণস্থায়ী একটা বিশেষ ধরনের সংক্রামক রচন1-কণ্ডু বলিয়া স্থির করিতে পারি ন1। আজকাল সমস্ত ভারতবর্ষের মধ্যে শিক্ষা এবং আন্দোলনের যে জীবনশক্তি নানা আকারে কার্য করিতেছে, এই ইতিহাসক্ষুধা তাহারই একটি স্বাভাবিক ফল।

ইহাতে এই প্রমাণ হয় যে, কন্গ্রেস প্রভৃতির বিক্ষোভ যে আমাদের দেশে বাহক তাহা নহে। এক-এক সময়ে মনে আশঙ্কা জন্মে যে,

১৩৫

ইতিহাস

রাজ-দরবারে প্রতিবৎসর একঘেয়ে দরখাস্ত পেশ করিবার এই যেসকল বিপুল আয়োজন ইহা বার্থ; কারণ, সরকারের নিকট ইহা! প্রতিষ্ঠাভাজন হইতে পারে নাই এবং দেশের অন্তরের মধ্যেও ইহার স্থায়ী প্রভাব প্রবেশ করিতেছে না।

কিন্ত আমাদের অন্তরের মধ্যে শক্তিপুঞ্ণ কেমন করিয়া অলক্ষ্যে কাজ করিতেছে তাহাই আমরা সর্বাপেক্ষা অল্প জানি। যখন অঙ্কুর বাহির হইয়া পড়ে তখনই বুঝিতে পারি, বাতাসে কখন বীজ উড়িয়া আসিয়। মনের উর্বর প্রদেশে স্থানলাভ করিয়াছিল।

এই ইতিহাসবৃতূক্ষা, ইহা একটি অন্কুর। বুঝিতেছি যে, কন্গ্রেস বত্সর বখসর কেবল রাজপ্রাসাদে কতকগুলি বিফল দরখাস্ত বর্ণ করে নাই, ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশগুলিকে ক্রমশই ঘনিষ্ঠতর করিয়া! আনিয়া আমাদের অন্তঃকরণের মধ্যে ভাবের বীজ বপন করিতেছে

দেশব্যাপী বুহত্হৎস্পন্দন কিছুদিন হইতে আমর! যেন অনুভব করিতে আরস্ত করিয়াছি। ব্যক্তিগত পল্লীগত বিচ্ছিন্নত৷ ঘুচিয়৷ গিয়া আমাদের স্থখছুঃখ, আমাদের মান-অপমান, আমাদের চিন্তা, আমাদের চেষ্ট! ক্রমেই বৃহৎ পরিধি আশ্রয় করিতেছে জড়ীভূত1 অহল্য| রামচন্দ্রের স্পর্শে যেমন ভূমিতল হইতে মুতি ধারণ করিয়া দণ্ডারমান হইয়াছিল সেইরূপ একেশ্বর ইংরাজ-শাসনের সংস্পর্শে আমাদের ভারতবর্ষ বিমিশ্র অস্পষ্ট বিচ্ছিন্ন জড়পুঞ্জমধ্য হইতে ক্রমশ এক মৃতি গ্রহণ করিয়! দাড়াইয়! উঠিতেছে। জনহদয়ে সঞ্চরমাণ সেই-যে এক্যের বেগ, প্রাণের উচ্ছ্বাস, গ্রীতির বন্ধন- মুক্তি কর্তব্যের উদারতা-জনিত আনন্দ, তাহাই আমাদের উগ্ঘমকে জাগ্রত করিয়া তুলিয়াছে।

এখন আমর! বোম্বাই মাপ্রাজ পঞ্জাবকে যেমন নিকটে পাইতে চাই

২১৩৬

এতিহাসিক চিত্র

তেমনি অতীত ভারতবর্ষকেও প্রত্যক্ষ করিতে চাহি। নিজের সম্বন্ধে সচেতন হইয়। এক্ষণে আমর! দেশে এবং কালে এক রূপে এবং বিরাট্‌ রূপে আপনাকে উপলব্ধি করিতে উৎস্থক। এখন আমরা মোগল-রাজত্বের মধ্য দিয়া, পাঠান-রাজত্ব ভেদ করিয়া, সেনবংশ পালবংশ গুপ্তবংশের জটিল অরণ্যমধ্যে পথ করিয়া, পৌরাণিক কাল হইতে বৌদ্ধ কাল এবং বৌদ্ধ কাল হইতে বৈদিক কাল পর্যন্ত অখণ্ড আপনার অনুসন্ধানে বাহির হুইয়াছি। সেই মহৎ আবিষ্কারব্যাপারের নৌধাত্রায় “এতিহাসিক চিত্র' একটি তরণী। যে-সকল নিভাঁক নাবিক ইহাতে সমবেত হইয়াছেন ঈশ্বর তাহাদের আশীর্বাদ করুন, দেশের লোক তাহাদের সহীয় হউন এবং বাধাবিস্ব নিরুৎসাহের মধ্যেও অন্ুরাগপ্রবৃত্ত মহতকতবাসাধনের নিষষাম আনন্দ তীহাদিগকে ক্ষণকালের জন্য পরিত্যাগ না করুক

কথা কেহ না মনে করেন, গৌরব অনুসন্ধানের জন্ত পুরাবৃত্তের ছুর্গম পথে প্রবেশ করিতে হইবে। সেদিকে গৌরব না থাকিতেও পারে_ অনেক পরাভব, অনেক অবমানন। অনেক পতন বিকারের মধ্য দিয় বাঁকিয়৷ বাকিয়া ভারতবর্ষের সুদীর্ঘ ইতিহাস বহিয়! আসিয়াছে অনেক স্থলে সেই এক-হাটু পঙ্কের ভিতর দিয়া আমাদিগকে হাটিতে হইবে তবু আমাদিগকে এই পঞ্চিল জটিল বক্র পথের দিকে আকর্ষণ করিতেছে কে? জাতীয় আত্মশ্লাঘা নহে, স্বদেশের প্রতি নবজাগ্রত প্রেম আমর! দেশকে প্রকৃতূপে প্রত্যক্ষরূপে সম্পূর্ণরূপে জানিতে চাই-_ তাহার সমস্ত ছুঃখছ্রশী- হুর্গাতির মধ্যেও তাহাকে লক্ষ্য করিতে চাই-__- আপনাকে ভুলাইতে চাই না।

তথাপি আমার দৃবিশ্বাস, ইতিহাসের পথ বাহিয়। ভারতবর্ষকে যদি আমরা সমগ্রভাবে দেখিতে পাই আমাদের লঙ্জ| পাইবার কারণ ঘটিবে ন|।

১৩৭

ইতিহাস

তাহা হইলে আমরা এমন একটি নিত্য আদর্শ লাভ করিব যাহ? ভারতবর্ষের আদর্শ, যাহ|! সকল পরাভব অবমাননার উধ্র্বে আপন উচ্চশির অগ্রান রাখিতে পারিয়াছে

গ্রীক রোমকের! বীর জাতি ছিল, বিজয়ী জাতি ছিল, তাহার! বহুকাল নিয়ে প্রাণের মমতা ত্যাগ করিয়৷ দেশ জয় দেশ রক্ষ! করিয়। আসিয়াছিল। রাজনৈতিক স্বাধীনতা-রক্ষা' তাহাদের জাতীয় লক্ষ্য গৌরব ছিল। কিন্তু সেই দৃঢ় আদর্শ, সেই বহুকালের সফলত1 মহদদৃষ্টাস্ত, তাহাদিগকে পতনের পরাভবের হস্ত হইতে রক্ষা করিতে পারে নাই

ভারতবর্ম নিজেকে যে পথে লইয়! গিয়াছিল তাহ! কোনে। কালেই দেশরক্ষ! দেশজয়ের পথ নহে অতএব বহিঃশক্রর বাহুবলের নিকট ভারতবর্ষের যে পরাভব সে তাহার আত্ম-আদর্শের পরাভব নহে অবশ্য, বাহিরের উপপ্রবে, শক গ্রীক আরব মোগল ভারতবর্ষায় অনাধদের সংঘাতে, ভারতবর্ষের তপোভঙ্গ হইয়াছিল; যে আদর্শের এঁক্য ক্রমশ অভিব্যক্ত হইয়া, বিক্ষিপ্ততা হইতে ক্রমশ সংক্ষিপ্ত দৃঢ় হইয়া, হিন্দুজাতিকে একটি বিশেষ ভাবে গঠনে, শোভায় সামপ্তস্তে স্জন করিয়। তুলিতে পারিত, তাহ] বারম্বার ছিন্ন বিচ্ছিন্ন বিকীর্ণ হুইরা গিয়াছে, তথাপি নানা বিচ্ছেদের মধ্যে দিয়াও সেই মৃলম্ুত্রটি অন্ুসরণ করিতে পারিলে হয়তো বুঝিতে পারিব, বর্তমান যুরোপের আদর্শ-দ্বারা ভারতবর্ষের ইতিহাস পরিমেয় নহে।

মুরোপের আদর্শ যুরোপকে কোথায় লইয়1 যাইতেছে তাহ আমরা কিছুই জানি না; তাহা যে স্থায়ী নহে, তাহার মধ্যে যে অনেক বিনাশের বীজ অন্কুরিত হইয়| উঠিতেছে তাহা স্পষ্ট দেখা! যায়। ভারতবর্ষ প্রবৃত্তিকে দমন করিয়] শক্রহস্তে প্রাণত্যাগ করিয়াছে যুরোপ প্রবৃত্তিকে লালন

১৩০

এঁতিহাসিক চিত্র

করিয়া আত্মহত্যার উদ্যোগ করিতেছে নিজদেশ এবং পরদেশের প্রতি আমাদের আসক্তি ছিল না বলিয়া বিদেশীর নিকট আমরণ দেশকে বিসর্জন দিয়াছি-_ নিজদেশ পরদেশের প্রতি আসক্তি সত্বে পোষণ করিয়। যুরোপ আজ কোন্‌ রক্তসমুদ্রের তীরে আপিয় দাড়াইয়াছে! অস্ত্রে শঙ্কে সর্বাঙ্গ কণ্টকিত করিয়া তুলিয়া! তাহার কী বিকট মৃতি। কী সন্দেহ কী আতঙ্কের সহিত যুরোপের প্রত্যেক রাঙ্গশক্তি পরস্পরের প্রতি ক্তুর কটাক্ষপাত করিতেছে! রাজমন্ত্রীগণ টিপিয়! টিপিয় পরস্পরের মৃত্যুচাল "চালিতেছে ; রণতরীসকল মৃত্যুবাণে পরিপূর্ণ হইয়! পৃথিবীর সমস্ত সমুদ্রে যমদৌত্যে বাহির হইয়াছে আফ্রিকায় আসিয়ায় ফুরোপের ক্ষধিত লুন্ধগণ আসিয়! ধীরে ধীরে এক-এক পা বাড়াইয়া একট] থাবায় মাটি আক্রমণ করিতেছে এবং আর-একটা থাবা সন্মুখের লোলুপ অভ্যাগতের প্রতি উদ্যত করিতেছে যুরোপীয় সভ্যতার হিংসা! লোভে অগ্য পৃথিবীর চারি মহাদেশ দুই মহাসমুদ্র ক্ষুব্ধ হইয়! উঠিয়াছে। ইহার উপর আবার মহাঁজনদের সহিত মুরদের, বিলাসের সহিত দুভিক্ষের, দৃঢ়বদ্ধ সমাজনীতির সহিত' সোশ্যালিজ্ম্‌ নাইহিলিজ্ম্এর ছন্দ সুরোপের সর্বত্রই আঙন্ন হইয়। রহিয়াছে প্রবৃত্তির প্রবলতা, প্রতৃত্বের মত্ততা, স্বার্থের উত্তেজনা! কোনো কালেই শাস্তি পরিপূর্ণতায় লইয়া যাইতে পারে না; তাহার একট! প্রচণ্ড সংঘাত, একট] ভীষণ রক্তাক্ত পরিণাম আছেই অতএব ফুরোপের রাষ্ট্রনৈতিক আদর্শকে চরম আদর্শ বিবেচনাপূর্বক তদ্দ্বার! ভারতবর্ষকে মাপিয়! খাটে। করিয়। ক্ষোভ পাইবার হয়তে। প্রয়োজন নাই একটা কথ! আছে : জীর্রমন্নং প্রশংসীয়াখ।

যেমন করিয়াই হউক এখন ভারতবর্কে আর পরের চোখে দেখিয়! আমাদের সাস্বনা নাই কারণ, ভারতবর্ষের প্রতি যখন আমাদের প্রীতি

১৩৪৯

ইতিহাস

জাগ্রত হইয়! উঠে নাই তখন ভারতবর্ষের ইতিহাসকে আমর! বাহির হইতে দেখিতাম ; তখন আমর| পাঠান-রাজত্বের ইতিহাস, মোগল-রাজত্ের ইতিহাস পাঠ করিতাম। এখন সেই মোগল-বাজত্ব পাঠান-রাজত্ের মধ্যে ভারতেরই ইতিহাস অনুসরণ করিতে চাহি। ওদাসীন্ত অথব| বিরাগের দ্বারা তাহা কখনো সাধ্য নহে। সেই সমগ্র ধারণা কেবল বিচার গবেষণার দ্বারাও হইতে পারে না; কল্পন| এবং সহানুভূতি আবশ্যক |

বিচ্ছিন্ন ঘটনাবলীকে এক করিতে মৃততথ্যগুলিতে জীবনসঞ্চার করিতে যখন: কল্পনা সহানুভূতি নিতান্তই চাই তখন সে বিষয়ে আমরা পরের উপর নির্ভর করিলে চলিবে না সংগ্রহকার্ষে পরের সহায়তা লইতে আপত্তি নাই, কিন্তু স্থজনকার্ধে আপনার শক্তি প্রয়োগ করিতে হইবে। ভারতবর্ষীয়ের দ্বার ভারতবর্ষের ইতিহাঁস রচিত হইলে পক্ষপাতের আশঙ্কা আছে, কিন্তু পক্ষপাত অপেক্ষ! বিদেষে সহানুভূতির অভাবে ইতিহাসকে ঢের বেশি বিকৃত করে। তাহ! ছাড়! এক দেশের আদর্শ লইয়া! আর-এক দেশে খাটাইবার প্রবৃত্তি বিদেশীর লেখনীমুখে আপনি আসিয়। পড়ে, তাহাতেও শুভ হয় ন|।

হউক বা না-হউক, আমাদের ইতিহাসকে আমরা পরের হাত হইতে উদ্ধার করিব, আমাদের ভারতবর্কে আমর! স্বাধীন দৃষ্টিতে দেখিব, সেই আনন্দের দিন আসিয়াছে আমাদের পাঠকবর্গকে লেথ্ত্রিজ সাহেবের চটির মধ্য হইতে বাহির করিয়। ইতিহাসের উন্ুক্ত ক্ষেত্রের মধ্যে আনিয়া উপস্থিত করিব; এখানে তাহারা নিজের চেষ্টায় সতোর সঙ্গে সঙ্গে বদি ভ্রমও সংগ্রহ করেন সেও আমাদের পক্ষে পর-লিখিত পরীক্ষাপুস্তকের মুখস্থ বিদ্ধ অপেক্ষা অনেক গুণে শ্রেয়, কারণ, সেই স্বাধীন চেষ্টার উদ্যম আর- একদিন সেই ভ্রম সংশোধন করিয়! দিবে। কিন্তু পরদত্ত চোখের হুলি

|] ১৪৩

এতিহাসিক চিত্র

চিরদিন বীধা রাস্তায় ঘুরিবার যতই উপযোগী হউক, পরীক্ষার ঘানিবৃক্ষের তৈলনিষ্কাশনকল্পে যতই প্রয়োজনীয় হউক, নৃতন সত্য-অর্জন পুরাতন ভ্রম-বিবর্জনের উদ্দেশে অব্যবহার্য

'এীতিহাসিক চিত্র” ভারত-ইতিহাসের বন্ধনমোচন-জন্য ধর্মযুদ্ধের আয়োজনে প্রবৃত্ত আশ। করি ধর্ম তাহার সহায় হইয়া তাহাকে রক্ষা তাহার উদ্দেশ্ট সুসম্পন্ন করিবেন অথবা, ধর্মযুদ্ধে মৃতোবাপি তেন লোক- ত্রয়ং জিতম।

এতিহাসিক চিত্র

সুচন।

এঁতিহাসিক চিত্রের স্চন। লিখিবার জন্য সম্পাদক-দত্ত অধিকার পাইয়াছি, আর কোনো প্রকারের অধিকারের দাবি রাখি না। কিন্তু আমাদের দেশের সম্পাদক পাঠকবর্গ লেখকগণকে যেরূপ প্রচুর পরিমাণে প্রশ্রয় দিয়া থাকেন তাহাতে অনধিকার প্রবেশকে আর অপরাধ বলিয়া জ্ঞান হয় না।

এই এতিহাসিক পত্রে আমি যদি কিছু লিখিতে সাহস করি তবে তাহা সংক্ষিপ্ত সুচনাটুকূ। কোনো শুভ অনুষ্ঠানের উৎসব-উপলক্ষ্যে ঢাকীকে মন্ত্র পড়িতে হয় না, পরিবেশনও করিতে হয় নাঁ- সিংহদ্বারের বাহিরে দাড়াইয়! সে কেবল আননদপ্বনি ঘোষণা! করিতে থাকে সে যদিচ কর্তা- ব্যক্তিদের মধ্যে কেহই নহে, কিন্তু সর্বাগ্রে উচ্চকলরবে কার্ধারন্তের সচনা তাহারই হস্তে |

ধাহার1 কর্মকা, গীত! তাহাদিগকে উপদেশ দিয়াছেন যে: কর্মণ্যে- বাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন। অর্থাঘ কর্মে তোমার অধিকার আছে, ফলে কদাচ নাই। আমর] কর্মকর্তী নহি। আমাদের একট! স্থুবিধা এই যে, কর্মে আমাদের অধিকার নাই, কিন্তু ফলে আছে! সম্পাদক-মহাশয় যে অনুষ্ঠান যেরূপ আয়োজন করিয়াছেন তাহার ফল বাংলার, এবং আশা! করি অন্য দেশের, পাঠকমগুলী চিরকাল ভোগ করিতে পারিবেন

অগ্ধ “এতিহাসিক চিত্রের শুভ জন্মদিনে আমরা যে আনন্দ করিতে উদ্যত হুইয়াছি তাহ! কেবলমাত্র সাহিত্যের উন্নতিসাধনের আশ্বাসে নহে। তাহার আরো একটি বিশেষ কারণ আছে।

পরের রচিত ইতিহাস নিবিচারে আগ্যোপাস্ত মুখস্থ করিয়া! পণ্ডিত এবং

১৪২

এতিহাসিক চিত্র : সৃচন!

পরীক্ষায় উচ্চ নম্বর রাখিয়া কৃতী হওয়া যাইতে পারে, কিন্তু স্বদেশের ইতিহাস নিজেরা সংগ্রহ এবং রচন! করিবার যে উদ্যোগ সেই উদ্যোগের ফল কেবল পাণ্ডিত্য নহে। তাহাতে আমাদের দেশের মানসিক বদ্ধ জলাশয়ে শ্লোতের সঞ্চার করিয়া দেয়। সেই উদ্ভমে, সেই চেষ্টায় আমাদের স্বাস্থ্য-_- আমাদের প্রাণ। ্‌

বঙ্গদর্শনের প্রথম অত্যুদয়ে বাংলাদেশের মধ্যে একটি অভূতপূর্ব আনন্দ আশার সঞ্চার হইয়াছিল, একটি স্থদূরব্যাপী চাঞ্চলো বাংলার পাঠক- হৃদয় যেন কল্লোলিত হইয়া উঠিয়াছিল। সে আনন্দ স্বাধীন চেষ্টার আনন্দ। সাহিত্য যে আমাদের আপনাদের হইতে পারে, সেদিন তাহার ভালোরূপ প্রমান হইয়াছিল। আমরা সেদিন ইস্কুল হইতে, বিদেশী মাস্টারের শাসন হইতে, ছুটি পাইয়া! ঘরের দিকে ফিরিয়াছিলাম।

বঙ্গদর্শন হইতে আমরা “বিষবৃক্ষ' “চন্দ্রশেখর” “কমলাকান্তের দপ্তর এবং বিবিধ ভোগ্য বস্ত পাইয়াছি, সে আমাদের পরম লাভ বটে। কিন্তু সকলের চেয়ে লাভের বিষয় সাহিত্যের সেই স্বাধীন চেষ্টা। সেই অবধি আজ পধন্ত সে চেষ্টার আর বিরাম হয় নাই। আমাদের সাহিত্যের ভাবী আশার পথ চিরদিনের জন্ উন্মুক্ত হইয়। গিয়াছে

বঙ্গদর্শন আমাদের সাহিত্যপ্রাসাদের বড়ো সিহহদ্বারটা খুলিয়! দিয়াছিলেন। এখন আবার তাহার এক-একটি মহলের চাবি খুলিবার স্যয় আসিয়াছে “ইতিহাসিক চিত্র অগ্য “ভারতবর্ষের ইতিহাস” -নামক একটা প্রকাণ্ড কদ্ধবাতায়ন রহস্তাবৃত হর্ম্যশ্রেণীর ছ্বারদেশে দণ্ডায়মান

সম্পাদকমহাশয় তাহার প্রস্তাবনাপত্রে জানাইয়াছেন-_ “নানা ভাষায় লিখিত ভারতভ্রমণকাহিনী এবং ইতিহাসাি প্রামাণ্য গ্রন্থের বঙ্গান্থবাদ, অহ্নসন্ধানলব্ধ নবাবিষ্কৃত এভিহাসিক তথ্য, আধুনিক ইতিহাসাদির

১৪৩

ইতিহাস

সমালোচনা এবং বাঙালী রাজবংশ জমিদারবংশের পুরাতত্ব প্রকাশিত করাই মুখ্য উদ্দেশ্য |” |

এই তো প্রত্যক্ষ ফল। তাহার পর পরোক্ষ ফল সম্বন্ধে আশা করি যে, এই পত্র আমাদের দেশে এঁতিহাঁসিক স্বাধীন চেষ্টার প্রবর্তন করিবে। সেই চেষ্টাকে জন্ম দিতে ন1 পারিলে “এঁতিহাঁসিক চিত্র” দীর্ঘকাল আপন মাহাম্স্য রক্ষা! করিয়! চলিতে পারিবে নী সমস্ত দেশের সহকারিতা না পাইলে ক্রমে সংকীর্ণ শীর্ণ হইয়া! লুপ্ত হইবে সেই চেষ্টাকে জন্ম দিয় যদ্দি 'এতিহাসিক চিত্রে'র মৃত্যু হয়, তথাপি সে চিরকাল অমর হ্ইয়। থাকিবে।

সমস্ত ভারতবর্ষ সম্বন্ধে আশা করিতে পারি না, কিন্ত বাংলার প্রত্যেক জেল] যদি আপন স্থানীয় পুরাঁবৃত্ত সংগ্রহ করিতে আরম্ভ করে, প্রত্যেক জমিদার যদি তাহার সহায়তা করেন এবং বাংলার রাজবংশের পুরাতন দপ্তরে যে-সকল এঁতিহাসিক তথ্য প্রচ্ছন্ন হইয়া আছে “এঁতিহাসিক চিত্র” তাহার মধ্যে প্রবেশাধিকার লাভ করিতে পারে, তবেই এই ত্রৈমাসিক পত্র সার্থকতা প্রাপ্ত হইবে

এখন সংগ্রহ এবং সমালোচন] ইহার প্রধান কাজ। সমস্ত জনশ্রুতি, লিখিত এবং অলিখিত, তুচ্ছ এবং মহৎ, সত্য এবং মিথ্যা এই পত্রভাগ্ডারে সংগ্রহ হইতে থাকিবে যাহা তথ্য-হিসাবে মিথ্য। অথব! অতিরঞ্জিত, যাহ| কেবল স্থানীয় বিশ্বাস-রূপে প্রচলিত, তাহার মধ্যেও অনেক এঁতিহাসিক সত্য পাওয়! যায়। কারণ, ইতিহাস কেবলমাত্র তথ্যের ইতিহাস নছে, তাহ মানবমনের ইতিহাস, বিশ্বাসের ইতিহাঁস। আমর! একান্ত আশ করিতেছি, এই সংগ্রহকার্ষে 'এতিহাসিক চিত্র” সমস্ত দেশকে আপন সহায়তায় আকর্ষণ করিয়৷ আনিতে পারিবে

১৪৪

পু এতিহাসিক চিত্র : ূচনা

অর্থব্যবহারশাস্্ শ্রষকে ছুই ভাগে বিভক্ত করিয়াছে-_ বন্ধ এবং অবন্ধ্য (0:00001156 এবং 10100006152 )। বিলাসসামগ্রী যে শ্রমের দ্বারা উত্পন্ন তাহাকে বন্ধয বল] যায়; কারণ, ভোগেই তাহার শেষ, তাহা কোনোরূপে ফিরিয়া আসে না। আমরা আশা করিতেছি, “এতিহাসিক চিত্র” যে শ্রমে প্রবৃত্ত হইতেছে তাহ] বন্ধ্য হইবে না, কেবলমাত্র কৌতুহলপরিতৃত্তিতেই তাহার অবসান নহে। তাহা দেশকে যাহ! দান করিবে তাহার চতুর্গুণ প্রতিদান দেশের নিকট হইতে প্রাপ্ত হইবে, একটি বীজ রোপণ করিয়! তাহ! হইতে সহন্্ শস্ত লাভ করিতে থাকিবে

আমাদের দেশ হইতে বুট দ্রব্য বিলাতে গিয়! সেখানকার কারখানায় কারুপণ্যে পরিণত হুইয়! দেশে বহুমূল্যে বিক্রীত হয় তখন আমরা জানিতেও পারি না তাহার আদিম উপকরণ আমাদের ক্ষেত্র হইতেই সংগৃহীত। যখন দেশের কোনে! মহাজন এইখানেই কারখানা খোলেন তখন সেটাকে আমাদের সমস্ত দেশের একট সৌভাগ্যের কারণ বলিয়] জ্ঞান করি।

ভারত-ইতিহাসের আদিম উপকরণগুলি প্রায় সমস্তই এখানেই আছে; এখনো! যে কত নৃতন নৃতন বাহির হইতে পারে তাহার আর সংখ্য নাই। কিন্তু, কি বাণিজ্যে কি সাহিত্যে, ভারতবর্ষ কি কেবল আদিম উপকরণেরই মকর হুইয়া থাকিবে? বিদেশী আসিয়। নিঙ্গের চেষ্টায় তাহ! সংগ্রহ করিয়! নিজের কারখানায় তাহাকে ন] চড়াইলে আমাদের কোনে। কাজেই লাগিবে না?

'এঁতিহাসিক চিত্র” ভারতবর্ষের ইতিহাসের একটি স্বদেশী কারখানা- স্বরূপ খোলা হইল। এখনে ইহার মূলধন বেশি জোগাড় হয় নাই, ইহার

৯৩ ১৪৫

ইতিহাস

কল-বলও স্বল্প হইতে পারে, ইহার উৎপন্ন দ্রব্যও প্রথম প্রথম কিছু মোট! হওয়া! অসম্ভব নহে, কিন্ত ইহার দ্বার দেশের যে গভীর দেন্য-_ যে মুহৎ অভাব -মোচনের আশা! করা যায় তাহ] বিলাতের বস্তা বস্তা সন্ত স্থনিমিত পণ্যের দ্বারা সম্ভবপর নহে।

১৪৬

গ্রন্থ-সমালোচন। (ভারতবর্ষে মুনলমান রাজত্বের ইতিবৃত্ত প্রথম খণ্ড শ্রীআবছুল করিম বি. এ. প্রণীত

ভারতবর্ষে মুসলমান-প্রবেশের অনতিপূর্বে খুস্টশতাব্ীর আরম্তকালে ভারত-ইতিহাসে একট। রোমাঞ্চকর মহাশৃন্তত] দেখ যায়। দীর্ঘ দিবসের অবসানের পর একট] যেন চেতনাহীন স্থুযুষ্তির অন্ধকার সমস্ত দেশকে আচ্ছন্ন করিয়া ছিল-_ সেটুকু সময়ের কোনে! জাগ্রত সাক্ষী, কোনো! প্রামাণিক নিদর্শন পাওয়া যায় ন!। গ্রীক এবং শকগণের সহিত সংঘাত তাহার পৃবেই সমাপ্ত হইয়1 গিয়াছিল। যে দ্বন্বসংঘাতে চন্দ্রপ্ুপ্ত বিক্রমাদিত্য শালিবাহন সমস্ত ভারতবর্ষের চূড়ার উপরে জাগিয়া উঠিয়াছিলেন তাহা কেমন করিয়া একেবারে শান্ত নিরস্ত নিস্তরঙ্গ হইয়াছিল। নিকটবর্তী সময়ের মধ্যে কোনে! মহত ব্যক্তি ব1 বৃহৎ উদ্বোধনের আবির্ভাব হয় নাই মুসলমানগণ যখন ভারতবর্ষের ইতিহাস-যবনিক। সবলে ছিন্ন করিয়া উদ্ঘাটন করিল তখন রাজপুত-নামক এক আধুনিক সম্প্রদায় দেশের সমুদ্ধয় উচ্চ স্থানগুলি অধিকার করিয়! মান-অভিমানের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিরোধে দেশকে বিচ্ছিন্ন করিয়া তুলিতেছিল। সে জাতি কখন গঠিত হইল, কখন প্রবল হইল, কখন পঞ্জাব হইতে পূর্বদেশ পর্যন্ত ব্যাপ্ত হইল, তাহার! কাহাকে দূরীকৃত করিয়। কাহার স্থান অধিকার করিল, তাহা সমস্তই ভারতবর্ষের সেই এঁতিহাসিক অন্ধরজনীর কাহিনী, তাহার আন্গপুবিকতা প্রচ্ছন্ন মনে হয় ভারতবর্ষ তদানীং সহসা কোথা হইতে একট] নিষ্ঠর আঘাত, একট? প্রচণ্ড বেদনা পাইয়। নিঃশব্দ মৃছিত হইয়াছিল। তাহার পর হইতে আর সে নিজের পূর্বাবস্থা৷ ফিরিয়া পায় নাই; আর তাহার বীণায় সংগীত বাজে নাই, কোদণ্ডে টংকার জাগে নাই, নির্বাণহোমাগ্সি তপোবনে খধিললাট হইতে ব্রহ্মবিদ্। উদ্ভাসিত হয় নাই।

দিকে অনতিপূর্বে ভারতবর্ষের প্রতিবেশে ব্হতর খগুবিচ্ছিন্ন জাতি

১৪৭

ইতিহাস

মহাপুরুষ মহম্মদের প্রচণ্ড আকর্ষণবলে একীভূত হুইর1 মুসলমান-নামক এক বিরাট কলেবর ধারণ করিয়! উথ্িত হইয়াছিল। তাহারা যেন (ভিন্ন ভিন্ন ছূর্গম মরুময় গিরিশিখরের উপরে খণ্ড তুষারের ন্যায় নিজের নিকটে অপ্রবুদ্ধ এবং বাহিরের নিকটে অজ্ঞাত হইয়া বিরাজ করিতেছিল। কখন্‌ প্রচণ্ড স্থর্ষের উদয় হইল এবং দেখিতে দেখিতে নান। শিখর হইতে ছুটিয়। আসিয়৷ তুষারক্রত বন্য! একবার একত্রে স্ফীত হইয়! তাহার পরে উন্মত্ত সহন্স ধারায় জগংকে চতুদিকে আক্রমণ করিতে বাহির হইল !

তখন শ্রান্ত পুরাতন ভারতবর্ষে বৈদিক ধর্ম বৌদ্ধদের দ্বারা পরাস্ত এবং বৌদ্ধধর্ম বিচিত্র বিকৃত রূপান্তরে ক্রমশ পুরাণ-উপপুরাণের শতধা- বিভক্ত ক্ষুদ্র সংকীর্ণ বক্র প্রণালীর মধ্যে শ্োতোহীন মন্দগতিতে প্রবাহিত ' হইয়া] একটি সহস্্লাঙ্গুল শীতরক্ত সরীস্থপের ন্যায় ভারতবর্কে শতপাকে জড়িত করিতেছিল। তখন ধর্মে সমাজে শাস্কে কোনে। বিষয়ে নবীনত! ছিল না, গতি ছিল ন।, বৃদ্ধি ছিল না, সকল বিষয়েই যেন পরীক্ষা শেষ হইয়! গেছে, নৃতন আশ| করিবার বিষয় নাই। সে সময়ে নৃতনহষ্ মুসলমান জাতির বিশ্ববিহয়োদ্দীপ্ত নবীন বল সম্বরণ করিবার উপযোগী কোনে-একট] উদ্দীপন1 ভারতবর্ষের মধ্যে ছিল ন।

নবভাবোংপাহে এবং একা প্রবণ ধর্মবলে একটা জাতি যে কিরূপ ৃত্যুগুয়ী শক্তি লাভ করে পরবর্তীকালে শিখগণ তাহার দৃষ্টান্ত দেখাইয়াছিল।

কিন্তু ইতিহাসে দেখ! যায়, নিরুৎস্থক হিন্দুগণ মরিতে কুস্তিত হন নাই মুসলমানেরা যুদ্ধ করিয়াছে, আর হিন্দুর! দলে দলে আত্মহত্যা করিয়াছে। মুসলমানদের যুদ্ধের মধ্যে এক দিকে ধর্মোৎসাহ, অপর দিকে রাজ্য অথবা অর্থ -লোভ ছিল; কিন্ত হিন্দুরা চিতা জালাইয়। স্ত্ীকন্তা ধ্বংস করিয়া আবালবৃদ্ধ মরিয়াছে, মরা উচিত বিবেচনা করিয়া, বাচা তাহাদের

১৪৮

গ্রন্থ-সমালোচন।

শিক্ষাবিরুদ্ধ সংস্কারবিরুদ্ধ বলিয়া। তাহাকে বীরত্ব বলিতে পার, কিন্ত তাহাকে যুদ্ধ বলে ন1। তাহার মধ্যে উদ্দেশ্য অথব!। রাষ্ট্রনীতি কিছুই ছিল ন]।

শাস্বের উপদেশই যী বা অন্ত কোনো এতিহাসিক কারণ অথবা! জল- বায়-ঘটিত নিরুগ্যম -বশতই হউক, পৃথিবীর উপর হিন্দুদের লুরমুষ্টি অনেকট। শিথিল হইয়! আসিয়াছিল। জগতের কিছুর উপরে তেমন প্রাণপণ দাবি ছিল ন1। প্রবৃত্তির সেই উগ্রতা ন1 থাকিলে মাংসপেশীতেও যথোচিত শক্তি জোগায় না। গাছ যেমন সহস্র শিকড় দিয়া! মাটি কামড়াইয়া থাকে এবং চারি দ্রিক হইতে রস শুষিয়। টানে, যাহারা তেমনি আগ্রহে জগংকে খুব শক্ত করিয়! ন! ধরিতে পারে জগৎও তাহাদিগকে ধরিয়া! রাখে না। তাহাদের গোড| আলগ! হয়, তাহার! ঝড়ে উল্টাইয়! পড়ে। আমরা হিন্দুরা বিশেষ করিয়া কিছু চাহি না, অন্যের প্রাচীরের সদ্ধি বিদীর্ণ করিয়া দূরের দিকে শিকড় প্রসারণ করি না, সেইজন্য যাহারা চায় তাহাদের সহিত পারির1 উঠ! আমাদের কর্ম নহে।

যাহার! চায় তাহার কেমন করিয়। চায় এই সমালোচ্য গ্রন্থে তাহার ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত আছে। পৃথিবীর জন্য এমন ভয়ংকর কাড়াকাড়ি, রক্তপাত, এত মহাপাতক একত্রে আর কোথাও দেখা যায় না। অথচ এই রক্ত- স্রোতের ভীষণ আবর্তের মধ্য হইতে মাঝে মাঝে দয়া দাক্ষিণ্য ধর্মপরতা রত্বরাজির ন্যায় উতক্ষিপ্ত হইয়া! উঠে।

যুরোগীর খুষ্টান জাতির মধ্যেও এই বিশ্বগ্রাসী প্রবৃত্ত্ষুধা কিনূপ সাংঘাতিক তাহ! সমুদ্রতীরের বিলুপ্ত লুপ্তপ্রায় কৃষ্ণ রক্তকায় জাতিরা জানে। রূপকথার রাক্ষস যেমন নাসিক। উদ্যত করিয়া আছে, আমিষের স্রাণ পাইলেই গর্জন করিয়৷ উঠে হাউ মীউ খাঁউ মানুষের গন্ধ পা”,

১৪৯

ইতিহাস

ইহার! তেমনি কোথাও এক-টুকর! নৃতন জমির সন্ধান পাইলেই। দলে দলে চীৎকার করিয়া উঠে, “হাউ মীউ খাঁউ মাটির গন্ধ পাঁউ।* উত্তর- আমেরিকার ক্লণডাইক-নামক দুর্গম তুষারমরুর মধ্যে ন্বর্ণথনির সংবাদ পাইয়] লোভোন্সত্ত নরনারীগণ দীপশিখালুন্ধ পতঙ্গের মতো! কেমন উ্বশ্বাসে ছুটিয়াছে__ পথের বাধা, প্রাণের ভয়, অন্নকষ্ট কিছুতেই তাহাদিগকে রোধ করিতে পারে নাই, সে বৃত্তান্ত সংবাদপত্রে সকলেই পাঠ করিয়াছেন। এই-যে অচিন্তনীয় কষ্টসাধন__ ইহাতে দেশের উন্নতি হইতে পারে; কিন্তু ইহার লক্ষ্য দেশের উন্নতি, জ্ঞানের অর্জন অথবা আর-কোনো মহৎ উদ্দেশ্য নহে-_ ইহার উদ্দীপক দুর্দান্ত লোভ। দুর্ধোধনপ্রমুখ কৌরবগণ যেমন লোভের প্ররোচনায় উত্তরের গোগৃহে ছুটিয়াছিল, ইহারাও তেমনি ধরণীর স্বর্রস দোহন করিয়া লইবার জন্য মৃত্যুসংকুল উত্তরমেরুর দিকে ধাবিত হইয়াছে। |

অধিক দিনের কথ! নহে, ১৮৭১ খৃষ্টাব্দে একটি ইংরাজ দাসদস্থ্য- ব্যবসায়ী জাহাজে কিরূপ ব্যাপার ঘটিয়াছিল তাহার বর্ণন1 11) 105 ড/০]এ 11929210€ -নামক একটি নৃতন পত্রে প্রকাশিত হইয়াছে। ফিজিদ্বীপে ফুরোপীয় শস্তাক্ষেত্রে মন্ুয্য-পিছু তিন পাউওড করিয়। মূল্য দেওয়া হইত। সেই লোভে এক দল দাসচৌর যে কিরূপ অমানুষিক নিষ্ুরতার সহিত দক্ষিণসামুদ্রিক দ্বীপপুঞ্জে মনুষ্য শিকার করিত এবং একদ]| ষাট-সত্তর জন বন্দীকে কিরূপ পিশাচের মতে! হত্যা! করিয়! সমুদ্রের হাঙ্গর দিয়। খাওয়াইয়াছিল তাহার নিদারুণ বিবরণ পাঠ করিলে থুস্টান মতের অনন্ত- নরক-দণ্ডে বিশ্বাস জন্মে

যে-সকল জাতি বিশ্ববিজয়ী, যাহাদের অসস্তোষ এবং আকাজ্ষার সীম] নাই, তাহাদের সভ্যতার নিম্নকক্ষে শৃঙ্খলবদ্ধ হিংস্রতা উচ্ছৃঙ্খল

১৫৩

গ্রন্থ-সমালোচনা

লোভের যে-একট1 পশুশাল! গুপ্ত রহিয়াছে, মাঝে মাঝে তাহার আভাস পাইলে কণ্টকিত হইতে হ্য়।

তখন আমাদের মনের মধ্যে এই দ্বন্দের উদয় হয় যে, যে বৈরাগ্য ভারতবর্ষীয় প্রকৃতিকে পরের অন্নে হস্তপ্রসারণ হইতে নিবৃত্ত করিয়া রাখিয়াছে, ছুভিক্ষের উপবাসের দিনেও যাহ! তাহাকে শান্তভাবে মরিতে দেয়, তাহা স্বার্থরক্ষ] আত্মরক্ষার পক্ষে উপযোগী নহে বটে, তথাপি যখন মুসলমানদের ইতিহাসে দেখি উদ্দাম প্রবৃত্তির উত্তেজনার সম্মুখে, ক্ষমতা- লাভ স্বার্থসাধন সিংহাসনপ্রাপ্ধির নিকটে, স্বাভাবিক স্নেহ দয় ধর্ম সমস্তই তুচ্ছ হুইয়! যায়-_- ভাই-ভাই পিতা-পুত্র স্বামী-স্ত্রী প্রতৃ-ভূত্যের মধ্যে বিদ্রোহ বিশ্বাসঘাতকতা! প্রতারণ1 রক্তপাত এবং অকথ্য অনৈসগিক নির্মমতার প্রাছূর্তাব হয়__ যখন খুস্টান-ইতিহাসে দেখা যায় আমেরিকায় অন্টেলিয়ায় মাটির লোভে অসহায় দেশবাসীদিগকে পশ্ুদলের মতো উৎসাদিত করিয়! দেওয়! হইয়াছে, লোভান্ধ দাসব্যবসায়ীগণ মানুষকে মানুষ জ্ঞান করে নাই-_ যখন দেখিতে পাই পৃথিবীটাকে ভাঙিয়া-চুরিয়া শিজের কবলে পুরিবার জন্য সর্বপ্রকার বাধা অমান্য করিতে মানুষ প্রস্তত-_ ক্লাইভ হেট্টিংম তাহাদের নিক্ট মহাপুরুষ এবং সফলতালাভ রাজনীতির শেষ নীতি__ তখন ভাবি শ্রেয়ের পথ কোন্‌ দিকে যদিও জানি যে বল পশ্তত্বকে উত্তেজিত করে সেই বল সময়ক্রমে দেবত্বকে উদ্বোধিত করে, জানি যেখানে আসক্তি প্রবল সেইখানেই আসক্তিত্যাগ স্থমহৎ জানি বৈরাগ্যধর্মের উদাসীন যেমন প্রকৃতিকে দমন করে তেমনি মনুত্তাত্বে অসাড়ত1 আনে এবং ইহাঁও জানি অন্ুরাগধর্মের নিয়স্তরে যেমন মোহান্- কার তেমনি তাহার উচ্চশিখরে ধর্মের নির্লতম জ্যোতি, জানি যে যেখানে মনুযপ্রকৃতির বলশালিতা-বশত প্রবৃত্তি নিবৃত্তির সংঘর্ষ প্রচণ্ড

১৫১

ইতিহাস

সেইখানেই দেবগণের ভোগে বিশুদ্ধতম আধ্যাত্মিক অমৃত উন্মথিত হই! উঠে, তথাপি লোভ-হিংস'র ভীষণ আন্দোলন এবং বিলাসলালসার নিত চাঞ্চল্যের দৃষ্টান্ত দেখিলে ক্ষণকালের জন্য দ্বিধা! উপস্থিত হয়, মনে সন্দেহ জাগে যে পাপ-পুণ্যের ভালো-মন্দের এইরূপ উত্তুঙ্গ তরঙ্গিত অসাম্য শ্রেয় না অপাপের অমন্দের একটি নিজীব সুবুহৎ সমতল নিশ্চলতা শ্রেয়! শেষের দিকেই আমাদের অন্তরের আকর্ষণ-- কারণ, বিরাট সংগ্রামের উপযোগী বল আমর] অন্তঃকরণের মধ্যে অনুভব করি ন1; ধর্ম এবং অর্থ, কাম এবং মোক্ষ এই সব-ক"টাকে একত্রে চালনা করিবার মতো! উদ্যম আমাদের নাই; আমরা সর্বপ্রকার ছুরস্ত চেষ্টাকে নিবুত্ত করিয়া সম্পূর্ণ শান্তিলাভ করিবার প্রয়াসী। কিন্তু শাস্থে যখন ভারতবর্ষকে দু্গপ্রাচীরের মতে। রক্ষ। করিতে পারে ন, পরজাতির সংঘাত যখন অনিবাধ, যখন লোভের নিকট হইতে স্বার্থরক্ষা এবং হিংসার নিকট হইতে আত্মরক্ষ! করিতে আমর। বাধ্য, তখন মানবের মধ্যে যে দানবট1 আছে সেটাকে সকালে দন্ধ্যায় আমিষ খাপয়াইয়| কিছু ন! হউক দ্বারের বাহিরে প্রহরীর মতো বসাইয়! রাখ। সংগত। তাহাতে আর কিছু ন1 হউক, বলশালী লোকের শ্রদ্ধা আকর্ষণ করে।

কিন্তু হায়, ভারতবর্ষে দেব-দানবের যুদ্ধে দানবগুলো একেবারেই গেছে__- দেবতারাও যে খুব সজীব আছেন তাহা বোধ হয় না। অন্তত সর্বপ্রকার শঙ্ক| ছন্দ -শৃন্য হইয়। ঘুমাইয়| পড়িয়াছেন।

মুশিদাবাদ-কাহিনী শ্রীনিথিলনাথ রায় -প্রণীত

মুসলমানের রাজত্ব গিয়াছে অথচ কোথাও তাহার জন্ত শূন্য স্থান নাই। ইংরাজ-রাজত্বের রেলের বাঁশি, স্টিমারের বাশি, কারখানার বাঁশি চারি ১৫২

গ্রন্থ-সমালোচনা

দিকে বাজিয়! উঠিয়াছে-_ চারি দিকে আপিস-ঘর, আদালত-ঘর, থানাঘর মাথ| তুলিতেছে; ইংরীজের নৃতন চুনকাম-করা ফিট্ফাট ধব্ধবে প্রতাপ দেশ জুড়িয়। ভিত্তি গাড়িয়াছে-_ কোথাও বিচ্ছেদ নাই তথাপি নিখিল- বাবুর “মুখিদাবাদ-কাহিনী” পড়িতে পড়িতে মনে হয়, 'এই নৃতন কর্ম কোলাহুলময় মহিমা মরীচিকাবৎ নিঃশবেে অন্তহিত, তাহার পাটের কলের সমস্ত বাশি নীরব, কেবল আমাদের চতুদিকে মুসলমানদের পরিত্যক্ত পুরীর প্রকাণ্ড ভগ্রাবশেষ নিশ্তন্ধ দীড়াইয়!। নিঃশব্দ নহবতথানা, হৃস্তীহীন হস্তীশালা', প্রতুশূন্য রাজভক্ত, প্রজাশূন্য আমদরবার, নিধাণদীপ বেগমমহল একটি পরম বিষাদময় বৈরাগ্যময় মহত্বে বিরাজ করিতেছে মুসলমান- রাঁজলম্্মী যেন শতাধিক বংসর পরে তাহার সেই অনাথপুরীর মধ্যে গোপনে প্রবেশ করিয়৷ একে একে তাহার পূর্বপরিচিত কীতিমালার ভগ্ন চিহ্দকল অন্থুসরণ করিয়! সনিশ্বাসে দূরস্থতি-আলোচনায় নিরত হইয়াছে।

নিখিলবাবু তাহার অধিকাংশ প্রবন্ধে সেকাল-একালের তুলনা! বা ভালোমন্দ বিচারের অবতারণ! করেন নাই তিনি সেই প্রাচীন কালকে খণ্ড খণ্ড চিত্র-আকারে নিবদ্ধ করিয়! পাঠকদের সম্মুখে ধরিবার চেষ্টা করিয়াছেন। বইখানি যেন নবাবী আমলের ভগ্শেষের আযাল্বম। চিত্র- গুলি সেদিনকার অসীম এশ্বর্ধ এবং বিচিত্রব্যাপারসংকুল মহত প্রতাপের অবসানদ্রশার জন্য একটি স্সিগ্ধ করুণ] এবং গভীর বিষাদের উদ্রেক কারতেছে।

এপ্রকার এতিহাসিক চিত্র-গ্রন্থ বঙ্গভাষায় আর নাই। নিখিলবাবুর ৃষ্টাত্ত অনুসরণ করিয়া যদি ভিন্ন ভিন্ন জেল-নিবাসী লেখকগণ তাহাদের স্থানীয় প্রাচীন এতিহাসিক চিত্রাবলী সংকলন করিতে থাকেন তাহা হইলে বাংলাদেশের সহিত বঙ্গবাসীর যথার্থ স্থদূরব্যাপী পরিচয় সাধন হইতে

১৫৩

ইতিহাস

পারে। নিখিলবাবুর এই নদ্ষ্টাস্ত, তাহার এই গবেষণা অধ্যবসায়ের জন্য, বঙ্গসাহিত্য তাহার নিকট কৃতজ্ঞ

এই বুহত গ্রন্থে কেবল একটি নিন্দার বিষয় উল্লেখ করিবার আছে। নিখিলবাবু যেখানে সরলভাবে এতিহাসিক তথ্য বর্ণনা করিয়াছেন তাহার রচন! অব্যাহতভাবে পরিস্ফুট হইয়াছে কিন্তু যেখানে তিনি অলংকার- প্রয়োগের প্রয়াস পাইয়াছেন সেখানে তাহার লেখার লাবণ্য বুদ্ধি হয় নাই, পরন্ত তাহা ভারগ্রস্ত হইয়াছে।

ভারতবর্ষের ইতিহাস শ্রীহেমলত। দেবী

বিধাতা! স্্ীজাতিকে এত কোমল করিয়াছেন যে সেই কোমলতার অবশ্য- সহচর হূর্বলতার দ্বার] তাহারা অসহায় এবং পরাধীন তথাপি তাহ! যুগ যুগান্তর চলিয়া আসিতেছে, তাহার কারণ ছেলেদের মানুষ করিবার জন্য এই কোমলত] অত্যাবশ্যক মাকে কোমলকাস্ত করিয়! বিধাতা বলিয়াছেন, বাল্যাবস্থায় মাধুর্ষের আননদচ্ছট1 এবং ন্েহের সথধাভিষেকে মানুষ পালনীক্ব পীড়ন, শাসন, সংকীর্ণ নিয়মের লৌহশৃঙ্খল তখনকার উপযোগী নয়। খাঁওয়ানে। পরানে। -সন্বদ্ধীয় “মানুষ করা” চিরকালই এইভাবেই চলিয়া আসিতেছে কিন্তু ইতিমধ্যে মানুষের মন্ুয্ত্ব বিপুলবিস্তার লাভ করি- য়াছে। মানসিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এখন “মানুষ করা” ব্যাপারট। জটিল হইয়া উঠিয়াছে। এখন কেবল অন্পপান নহে, বিগ্া -দানেরও প্রয়োজন হইয়াছে। কিন্তু বিধাতার নিয়ম সমান আছে। বাল্যাবিস্থায় বিদ্যাশিক্ষার সঙ্গেও আনন্দের স্বাভাবিক স্ফতি এবং স্বাধীনতা অত্যাবশ্যক কিন্ত অবস্থাগতিকে পুরুষের হাতে বিগ্ঠাদানের ভার পড়িয়া! জগতে বহুল ছূঃখ ১৫৪

গ্রন্থ-সমালোচন৷

এবং অনর্থের স্থ্টি হইয়াছে। বালকের স্বাভাবিক মুগ্ধতার প্রতি পুরুষের ধৈর্য নাই, শিশুচরিত্রের মধ্যে পুরুষের সন্সেহ প্রবেশাধিকার নাই। আমাদের পাঠালয় এবং পাঠ্যনির্বাচনসমিতি তাহার নিষ্ুর দৃষ্টান্ত এইজন্য মানুষের বাল্যজীবন নিদারুণ নিরানন্দের আকর হুইয়? উঠিয়াছে। পুনরায় শিশু হ্ইয়। জন্সিয় বিদ্যালাভ করিতে হইবে এই ভয়ে পুনর্জন্মে বিশ্বাস করিতে আমাদের প্রবৃত্তি হয় না। আমাদের মত এই যে, মা মাসি দিদিরাই অন্নদান জ্ঞানশিক্ষার দ্বারা বিশেষ বয়স পর্ধস্ত ছেলেদের সর্বতোভাঁবে পালন পোষণ করিবেন তাহাই তাহাদের কর্তব্য | বেত্রবজ- ধর গুরুমহাঁশয় তাহাদের স্সেহন্বর্গের অধিকার হরণ করিয়া লইয়াছে। ছেলে যখন কাদিতে কাদিতে পাঠশালায় যায় মাকে কি কাদাইয় ঘায় না? এই প্ররুতিদ্রোহী অবস্থা কি চিরদিন জগতে থাকিবে?

সমালোচ্য বালাপাঠ্য গ্রস্থথানি শিক্ষিতমহিলার রচনা বলিয়া আমরা বিশেষ আনন্দলাভ করিয়াছি | পূর্বেই বলিয়াছি শিশুদিগকে শিক্ষাদান তাহাদের শিক্ষ[লাভের একটি প্রধান সার্থকতা। অধুনা আমাদের দেশের অনেক স্ত্রীলোক উচ্চশিক্ষা লাভ করিতেছেন, তাহাদের সেই শিক্ষা যদি তাহার! মাতৃভাষায় বিতরণ করেন তবে বঙ্গগৃছে লক্ষ্মীমৃতির সঙ্গে সঙ্গে তাহাদের সরম্থতীমূতি বিকশিত হৃইয়! উঠিবে।

শ্রীমতী হেমলত] দেবী যে ভারতবর্ষের ইতিহাস প্রণয়ন করিয়াছেন স্কুলে-প্রচলিত সাধারণ ইতিহাসের অপেক্ষা ছুই কারণে তাহা! শ্রেষ্ঠ। প্রথমত তাহার ভাষা সরল, দ্বিতীয়ত ভারতবর্ষের সমগ্র ইতিহাসের একটি চেহারা দেখাইবার জন্ত গ্রন্থকত্রী প্রয়াস পাইয়াছেন। আমাদের মতে ইতিহাসের নামাবলী ঘটনাবলী মুখস্থ করাইবার পূর্বে আর্ধ- ভারতবর্ষ, মুসলমান-ভারতবর্ধ এবং ইংরাজ-ভারতবর্ষের একটি পুষ্তীভূত

১৫৫

ইতিহাস

সরস সম্পূর্ণ চিত্র ছেলেদের মনে মুদ্রিত করিয়! দেওয়া! উচিত। ॥তবেই তাহারা বুঝিতে পারিবে এঁতিহাপিক হিসাবে ভারতবর্ষ জিনিসটা কী। এমন-কি আমরা বলি, ভারতবর্ষের ভূগোল ইতিহ!স এবং সমস্ত বিবরণ জড়াইয়! শুদ্ধমাত্র “ভারতবর্ষ” নাম দিয়া একখানি বই প্রথমে ছেলেদের পড়িতে দ্েওয়! উচিত। পরে ভারতবর্ষের ভূগোল ইতিহাস পৃথক ভাবে তন্ন-তন্র-রূপে শিক্ষা! দিবার সময় আসিবে আমর1 বোধ করি, ইংরাজিতে এপ গ্রন্থের বিস্তৃত আদর্শ সার উইলিয়ম হণ্টারের ইওিয়ান এম্পায়ার' এই সুসম্পূর্ণ সুন্দর পুস্তকটিকে যদি কোনে শিক্ষিত মহিলা শিশুদের অথব! তাহাদের পিতামাঁতাদের উপযোগী করিয়! বাংলায় রচন। করেন তবে বিস্তর উপকার হয়।

কিন্তু টেক্স্ট্বুককমিটির খাতিরে গ্রন্থকত্রী' তাহার বইখানিকে যে সম্পূর্ণ নিজের মনের মতো করিয়া! লিখিতে পারেন নাই তাহা! বেশ বুঝা! যায়। ইস্কুলে ছেলেদের ঘে-সকল সম্পূর্ণ অনাবশ্তক শুষ্ক তথ্য মুখস্থ করিতে দেওয়। হয় লেখিক। তাহার সকলগুলি বর্জন করিতে সাহসী হন নাই আমর] ভরস] করিয়! বলিতে পারি যে, মোগল রাজত্বের পূর্বে তিন শত বংসর -ব্যাপী কালরাত্রে ভারত-সিংহাসনে দাসবংশ হইতে লোদীবংশ পর্যন্ত পাঠান রাজন্যবর্গের যে রক্তবর্ণ উন্কাবুষ্টি হইয়াছে তাহ! আগ্যোপাস্ত কাহারই বা! মনে থাকে এবং মনে রাখিয়াই বা ফল .কী? অন্তত, ইতিহাসে তাহার একট! মোটামুটি বর্ণন| থাঁকিলেই ভালে। হইত। নীরস ইংরাজ-শাসন-কাল সম্বন্ধেও আমাদের এই মত।

ছাত্রপাঠ্য গ্রন্থে আধ-ইতিবৃত্তের তারিখ সম্বপ্ধে মৌনাবলম্বনই শ্রেয়। 'ুন্টজন্মের প্রায় ২০০ বৎসর পূর্বে আর্ধগণ উত্তরপশ্চিম দিক দিয়া ভারতবর্ষে প্রবেশ করিয়াছিলেন” “ভারতবর্ষে আসিবার এক হাজার বং্সর

১৫৬

গ্রন্থ-সমালোচন।

পরে তাহার! মিথিলা প্রদেশ পর্বস্ত আসিয়াছিলেন__ এ-সমস্ত সম্পূর্ণ আন্থমানিক কালনির্দেশ আমর! অসংগত জ্ঞান করি।

সিরাজদ্দৌলার রাজ্যশাসনকালে অন্ধকৃপছৃত্যার বিবরণ লেখিকা অসংশয়ে প্রকাশ করিয়াছেন ' তিনি যদি শ্রীযুক্ত বাবু অক্ষয়ক্মার মৈত্রের “সিরাজদ্দৌলা” পাঠ করিতেন তবে ঘটনাকে ইতিহাসে স্থান দিতে নিশ্চয়ই কুন্তিত হইতেন।

১৫৭

: ইতিহাপকথা

আমাদের দেশে লোকশিক্ষ] দিবার যে-ছুটি সহজ উপায় অনেক দিন হইতে প্রচলিত আছে, তাহ যাত্র! এবং কথকতা! কথা স্বীকার করিতেই হইবে, প্রকৃতির মধ্যে কোনে শিক্ষাকে বদ্ধমূল করিয়! দিবার পক্ষে এমন সুন্দর উপায় আর নাই আজকাল শিক্ষার বিষয় বৈচিত্র্য লাভ করিয়াছে_- একমাত্র পুরাণ কথার ভিতর দিয়া সকলপ্রকার উপদেশ চালানো যায় না। অথচ শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত দলের মধ্যে ভেদ যদি যথাসম্ভব লোপ করিয়! দেওয়াই * শ্রেয় হয়, তবে যাহারা শিক্ষা হইতে বঞ্চিত তাহাদের মধ্যে এমন অনেক জ্ঞান প্রচার করা আবশ্তক যাহ! লাভ করিবার উপায় তাহাদের নাই একবারে গোড়াগুড়ি ইস্কুলে পড়িয়া সেই-সকল জ্ঞানলাভের প্রত্যাশা কর] দুরাশ|| সাধারণ লোকের ভাগ ইন্কুলে পড়ার সুযোগ তেমন করিয়া! কখনোই ঘটিবে না। তা ছাড়া, ইস্কুলে-পড়া জ্ঞান প্রকৃতির মধ্যে যথেষ্ট গভীরভাবে প্রবেশ করে ন]। ভালে! করিয়! ভাবিয়! দেখিলে আমাদের দেশে শিক্ষিত অশিক্ষিতের মধ্যে যে জ্ঞানের বৈষম্য সব-চেয়ে বেশি করিয়! অনুভব করা যায়, তাহ! ইতিহাসজ্ঞান। ন্বদেশে বিদেশে মানুষ কী করিয়! বড়ে! হইয়াছে, প্রবল হইয়াছে, দল বাধিয়াছে, যাহা শ্রেয় জ্ঞান করিয়াছে তাহা কী করিয়া পাইয়াছে, পাইয়! কী করিয়া রক্ষা করিয়াছে, সাধারণ লোকের এ-সমন্ত ধারণ! ন! থাকাতে তাহার! শিক্ষিত লোকের অনেক ভাবনাচিন্তার কোনো অর্থ খুঁজিয়। পাইতেছে না এবং তাহাদের কাজ-কর্মে যোগ দিতে পারিতেছে না। পৃথিবীতে মানুষ কী করিয়াছে কী করিতে পারে, তাহা ন! জানা মানুষের পক্ষে শোচনীয় অজ্ঞতা।

১৫৮

ইতিহাসকথা

কথ। এবং যাত্রার সাহায্যে জনসাধারণকে ইস্থুলে না পড়াইয়াও ইতিহাস শেখানো যাইতে পারে। এমন-কি, সামান্ত ইস্কুলে যতটুকু শিক্ষা দেওয়] সম্ভব তার চেয়ে অনেক ভালে করিয়াই শেখানো যাইতে পারে। |

আজকাল যুরোপে 'এতিহাসিক উপন্যাস নাটক ইতিহাসশিক্ষার প্রকৃষ্ট উপকরণ বলিয় গৃহীত হইয়াছে ইতিহাসকে কেবল জ্ঞানে নহে, কল্পনার দ্বার] গ্রহণ করিলে তবেই তাহাকে যথার্থভাবে পাওয়া যায়__ কথ। সকলেই স্বীকার করেন।

সেই কল্পনার সাহায্যে সরলভাবে জ্ঞানদানের প্রণালী, জ্ঞানের বিষয়কে হৃদয়ের সামগ্রী করিয়। তুলিবার উপায়, আমাদের দেশে অনেক দিন হইতেই চলিত আছে-_ মুরোপ আজ সেইরূপ সরস উপায়ের দিকে ঝোক দিয়াছে আর আমরাই কি আমদের জ্ঞানপ্রচারের স্বাভাবিক পথগুলিকে পরিত্যাগ করিয়! কল্পনালোকবজিত ইস্কুল-শিক্ষার শরণ লইব ?

আমার প্রস্তাব এই যে, ইতিহাসকে কথ! যাত্রার আকারে, স্থান কালের উজ্জ্বল বর্ণনার দ্বারা সজীব সরস করিয়!, দেশের সবত্র প্রচার করিবার উপার অবলম্বন করা হউক আমরা আজকাল কেবল মাসিক কাগজে ছাপানো গ্রন্থে সাহিত্য-প্রচারের চেষ্টা করিয়া থাকি, কিন্তু যদি কোনে! কথা বা যাত্রার দল ইতিহাস সাহিত্য দেশের সর্বত্র প্রচার করিয়| দিবার ভার গ্রহণ করেন তবে প্রচুর সার্থকতা লভ করিবেন। আজকালকার দিনে কেবলমাত্র পৌরাণিক যাত্রা! কথ! আমাদের সম্পূর্ণ উপযোগী নহে। ইতিহাস, এমন-কি, কাল্পনিক আখ্যায়িকা অবলম্বন করিয়! আমাদিগকে লোকশিক্ষা বিধান করিতে হইবে

যদি বিদ্যানুন্দরের গল্প আমাদের দেশে যাত্রায় প্রচলিত হইতে পারে,

১৫৯

ইতিহাস

তবে পূর্থীরাজ, গুরু গোবিন্দ, শিবাজি, আকবর প্রভৃতির কথাই বা লোকের মনোরঞ্রন না করিবে কেন % এমন-কি, আনন্দমঠ রাজসিংহ প্রভৃতির হ্যায় উপন্যাসই স্থগায়ক কথকের মুখে পরম উপাদেয় না হইবে কেন?

গ্রন্থপরিচয়

ভারতবর্ষের ইতিহাস -প্রসঙ্গে রচিত রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধাবলী এই গ্রন্থে সংকলিত হইল। ইহার কোনে। কোনে! রচনা! পূর্বে অন্য গ্রন্থে প্রকাশিত হইয়াছে, কতকগুলি রবীন্দ্-রচনাবলীর বিভিন্ন খণ্ডে মুদ্রিত হইর্নাছে, অধিকাংশই এযাবৎ কোনো! গ্রন্থে সংকলিত হয় নাই। এগুলির সাময়িক পত্রাদিতে প্রকাশের বিবরণ দেওয়া গেল-__

ভারতবর্ষের ইতিহাস ভারতবর্ষে ইতিহাসের ধার' শিবাজী মারাঠ! জাতি

শিবাজী গুরু গোবিন্দসিংহ ভারত-ইতিহাস-চর্চ

রে বেত ছিত

পরিশিষ্ট

কাজের লোক কে বীর গুরু

শিখ-্বাধীনতা

ঝান্সীর রানী

পরিশিষ্ট

* এঁতিহাসিক যংকিঞ্চিৎ সিরাজদ্দোল। : ১.

সিরাজদ্দৌল। : এঁতিহাসিক চিত্র

৯৯

চা

চা

বঙ্গদর্শন প্রবাসী

প্রবাসী শান্তিনিকেতন

বালক

বালক

ভারতী

ভারতী ভারতী ভারতী ভারতী ৪০

ভাদ্র ১৩০৭৪ বৈশাখ ১৩১৯

চৈত্র ১৩১৬ চৈত্র ১৩২৬

বৈশাখ ১২৯২

শ্রাবণ ১২৯২

আশ্বিন কাতিক ১২৯২

অগ্রহায়ণ ১২৮৪

বৈশাখ ১৩০৫ জ্যেষ্ঠ ১৩০৫ আবণ ১৩০৫ ভাদ্র ১৩০৫

১৪ এঁতিহাসিক চিত্র : স্চন। এঁতিহাসিক চিত্র জানুয়ারি ১৮৯৯ ১৫ গ্রন্থ-সমালোচন! : |

ভারতবর্ষে মুসলমান রাজত্বের ইতিবৃত্ত ভারতী শ্রাবণ ১৩০৫ মুশিদাবাদ-কাহিনী ভারতী শাবণ ১৩০৫ ভারতবর্ষের ইতিহাস ভারতী জ্যৈষ্ঠ ১৩০৫ ১৬ ইতিহাসকথা ভাগার আষাঢ় ১৩১২

এই প্রবন্ধ 'গত [ ১৩০৯ ] জ্যৈষ্টমাসে মজুমদার লাইব্রেরির সংস্থট আলোচন1-সমিতিতে বঙ্গদর্শন-সম্পাদক [ রবীন্দ্রনাথ ] কতৃক পঠিত" হয়। এই প্রবন্ধ অংশতঃ পরিমাজিত হইয়া রবীন্দ্রনাথের “ভারতবর্ষ” (১৩১২) পুস্তকে প্রথম সংকলিত হয়। পরে রবীন্দ্রনাথের "গগ্গ্রন্থাবলী'র দ্বাদশ ভাগ স্বদেশ ( ১৯০৮ : ১৩১৫ ) পুস্তকে সন্নিবিষ্ট হয়, এই সময় রবীন্দ্রনাথ রচনাটির অনেক অংশ নৃতন করিয়! বর্জন করেন। বর্তমান গ্রন্থের পাঠ স্বদেশ গ্রন্থের অনুযায়ী। পুর্বোল্লিখিত “ভারতবর্ষ” রবীন্দ্-রচনাবলী চতুর্থ খণ্ডে পুনরুমু্রিত হইয়াছে, উহাতে রচনাটির পূর্ণতর পাঠ পাওয়। যাইবে।

এই রচনা “চৈতন্য লাইব্রেরির অধিবেশন উপলক্ষ্যে ওভাট,ন হলে, ওরা ঠত্র [ ১৩১৮ ] তারিখে পঠিত" হয়। প্রবন্ধটি উপলক্ষা করিয় তৎকালীন সাময়িকপত্রাদিতে নান] বাদপ্রতিবাদের কষ্ট হ্ইয়াছিল। অপর পক্ষে, শ্রীযুক্ত যদুনাথ সরকার মহাশয় প্রবন্ধটি ইংরেজিতে অনুবাদ (115 [115001500102. 0 10120. 1119601% ) করিয়! “মডার্ন রিভিউ' পত্রে ( অগস্ট সেপ্টেম্বর, ১৯১৩) প্রকাশপূর্বক রচনাটির প্রতি বৃহত্তর পাঠকসমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কবির জ্যেষ্ঠ সহোদর দ্বিজেন্্রনাথ ঠাকুর মহাশয় প্রবন্ধটির সম্বন্ধে মন্তব্য করেন__

| ২]

'আমার মনে হইল ষে, প্রাচীন ভারতের রহস্তপূর্ণ ইতিহাসের নানা রঙের বহিরাঁবরণের মধ্য হইতে মস্তক উত্তোলন করিয়া! তাহার ভিতরের কথাটি যাহ1 এতদিন সহশ্র চেষ্টা করিয়াও আলোকাভাবে আপনাকে প্রকাশ করিতে পারিয়। উঠিতেছিল ন।, এইবার তাহার সে চেষ্টা বাঞ্ানুরূপ সাফল্য লাভ করিবে তাহার অরুণোদয় দেখ। দিয়াছে... ভারতের প্রকৃত ইতিহাসের এই যে একটা সম্ভবমতে! পাক। রকমের গোড়াপত্তন হইল, ইহা বঙ্গ- সরম্বতীর ভক্ত সন্থানদিগের কত ন। আনন্দের বিষয়'

এপ ভূমিকার পর, রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধের প্রসঙ্গক্রমে দ্িজেন্ত্রনাথ আর৪ যাহ! লেখেন তাহার প্রধান অংশ পরে সংকলিত হইল-_

মহাদেবের আদিম পীঠস্থান দক্ষিণ অঞ্চলে কি উত্তর অঞ্চলে?

'রবীন্দ্রনাথের লেখার আভাসে আমার এইরূপ মনে হয় যে, তাহার মতে মহাদেবের আদিম গীঠস্থান দক্ষিণ অঞ্চলে। তিনি যাহ] আ্বাচিয়াছেন তাহ! একেবারেই অমূলক বলিয়া উ্াইয়! দিবার কথা! নহে, যেহেতু বাস্থবিকই রা্সসাঁদি ক্রর জাতিদিগের মধ্যে বিষুর স্মৃতি উপাস্য দেবতার আদর্শ পদবীতে স্থান পাইবার অনুপযুক্ত; দুর্দান্ত রাক্ষস জাতিপ্িগের মনৌরাঞ্যের সিংহাসন শিবের রুত্রমৃতিরই উপযুক্ত অধিষ্ঠান- মঞ্চ। কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও আমর! দেখিতে পাই যে, এক দিকে যেমন রক্ষ, আর-এক দিকে তেমনি ক্ষ। প্রাচীন ভারতের দক্ষিণ অঞ্চল যেমন রক্ষদিগের দলবলের প্রধান সংগমস্থান (11681008167 ) ছিল-- উত্তর অঞ্চল তেমনি ধক্ষদিগের দূলবলের প্রধান সংগম-স্থান ছিল। ভারতব্ষায় আর্ধদিগের চক্ষে দক্ষিণের দ্রাবিড়াদি জাতিরা যেমন রাক্ষস-বানরাদি মৃতি ধারণ করিয়াছিল, উত্তরের মোগলাদি জাতিরা তেমনি যক্ষ-কিন্গরাদি মৃতি ধারণ করিয়াছিল__ ইহা দেখিতেই পাওয়া যাইতেছে। বিকটাকার-বিষয়ে

[ ৩]

দক্ষিণের রক্ষ এবং উত্তরের যক্ষের মধ্যে যেমন মিল আছে, কিন্তৃত- কিমাকার-বিষয়ে তেমনি দক্ষিণের বানর এবং উত্তরের কিন্নরের সঙ্গে মিল আছে।

এখন কথা হইতেছে এই যে, যক্ষদিগের রাজধানীতে-_ কুবেরপুরীতে__ মহাদেবের অধিষ্টানের কথা কাব্যপুরাণাদি শাস্মে ভূয়োভূয় উল্লিখিত হইয়াছে তা ছাড়া কৈলাসশিখর মহাদেবের প্রধান গীঠস্থান।

'রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধ পাঁঠে একটি বিষয়ে আমার চক্ষু ফুটিয়াছে; সে বিষয়টি এই যে, জনক রাজা যে কেবল ব্রহ্ষজ্ঞানী ছিলেন তাহা নহে, সেই সঙ্গে তিনি ভারতে কৃষিকার্ধ প্রবর্তনের প্রধান নেতা ছিলেন; আর, তাহার গুরু ছিলেন বিশ্বামিত্র। পক্ষান্তরে দেখিতে পাই যে, হিমালয় প্রদেশের কিরাত জাতিরা ব্যাধবুত্তি অবলম্বন করিয়া জীবিক1-নির্বাহ করিত-_ তাহার! কৃষিকার্ষের ধারই ধারিত না। কিরাত জাতি মোগল এবং তাতারদিগের সহোদর জাতি ইহ! বল! বাহুল্য এটাও দেখিতেছি যে, হিমালয়ের উপত্যকায় মহাদেব অর্জুনকে কিরাত-বেশে দেখ! দিয়াছিলেন। মহাদেব কিরাতদিগের দলে মিশিয়া কিরাত হইয়াছিলেন। মহাদেব পশ্রহন্তাও বটেন, পশুপতিও বটেন। মহাদেব যে অংশে কিরাতদিগের ইষ্ট দেবতা ছিলেন সেই অংশে তিনি পশুহস্তা; আর, যে অংশে তিনি খাস মোগলদিগের ইঠ্ট দেবতা ছিলেন সেই অংশে তিনি পশুপতি। পুরাকালের মোগল এবং তাতার জাতিরা জীবিকালাভের একমাত্র উপায় জানিত-- পশুপালন, তা বই, কষিকার্ষের অক্ষরও তাহার! জানিত নাঁ_ ইহা সকলেরই জানা কথা তবেই হইতেছে ষে, মোগল এবং ভাতার জাতিরাঁ_ সংক্ষেপে বক্ষেরা- একপ্রকার পশুপতির দল ছিল; স্থতরাঁং পশুপতি-মহাদেব বিশিষ্টরূপে তাহাদেরই দেবত1 হওয়া

| ]

উচিত; আর, পুরাণাদিকে যদি শাক বলিয়া মানিতে হর, তবে ছিলেনও তিনি তাই যক্ষরাজ: কুবেরের রূপ ছিল অনাধোচিত ; আর, তিনি ধনপতি নামে বিখ্যাত। প্রাচীন ভারতে ধন শবে বিশিষ্টব্ূপে গো মেষাদি পণুধনই বুঝাইত। ইহাতেই বুঝিতে পার! যাইতেছে যে, পশ্ত- জীবী মোগল তাতার প্রস্তুতি জাতিরাই প্রাচীন ভারতের আর্ধদিগের ইতিহাসে ধক্ষ নাম প্রাপ্ত হইয়াছিল। কি পশুহস্তা কিরাত জাতি, কি পশুপালক মোগল জাতি_-উভয়েই কৃষিকাধ-বিষয়ে সমান অনভিজ্ঞ ছিল। এখন জিজ্ঞাম্ত এই যে, ধনুঙ্গের ব্যাপারটিকে কোন্প্রকার বিষ্বভঙ্গ বলিব? কিরাতদিগেরু পশুঘাতী ধনুর্ঙ্গ বলিব? না রাক্ষসদিগের বিষ- দাত-ভঙ্গ বলিব? আমার বোধ হয়__ প্রাচীনকালে ভারতের উত্তর- দক্ষিণের মধ্যে একটা এতিহাসিক যোগসেতু বর্তমান ছিল; কেনন। লঙ্কাপুরী প্রথমে কুবেরের ছিল, পরে তাহা রাবণ বলপূর্বক হস্তগত করিয়াছিল। রাবণ এবং কুবের যে একই পিতার পুত্রদ্ধয় ইহ! কাহারও অবিদিত নাই ।'

--আলেচন]। প্রবাসী : ১৩১৯ আষাঢ়

পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ বিষয়টি লইয়! পুনরায় আলোচন1 করেন, তাহা & ড15107. ০৫ [20195 1715019 নামে বিশ্বভারতী কোয়াটালি পঞ্রে (১৯২৩ এপ্রিল )ও পরে নামে পুস্তকাকারে (১৯৫১ নভেম্বর ) প্রকাশিত হয়।

বাংল! প্রবন্ধটি পরিচয় পুস্তকে ( ১৯১৬ : ১৩২৩) প্রথম সংকলিত হয়, পরে সমাজ গ্রন্থের নূতন সংস্করণে (১৩৪৪ ) গৃহীত হয়। ্‌

এই রচনা শাস্তিনিকেতন ব্রহ্ষচ্যাশ্রমের প্রাক্তন অধ্যাপক

| ৫]

পরলোকগত শরংকুমার রায়ের 'শিবাঁজী মারাঠ জাতি' গ্রন্থের (১৩১৫ ) ভূমিকারূপে ব্যবহৃত হুইয়াছে।

এই রচনা শরতকুমার রায়ের 'শিখগুরু শিখজাতি গ্রন্থের (১৩১৭ ) ভূমিকারূপে ব্যবহৃত হইয়াছে। বর্তমান গন্থে মুদ্রিত প্রবন্ধের শেষ অংশ (“যাহা হউক, মারাঠ1! শিখের. তুলিতে পারে ন1।”) প্রবাসী পত্জিকাঁয় নাই, উক্ত ভুমিকায় অতিরিক্ত আছে। এই প্রবন্ধটি শ্রীযুক্ত যছুনাথ সরকার মহাশয় ইংরেজিতে অনুবাদ করিয়। মডারুন্‌ রিভিউ পত্রে( ১৯১১ এপ্রিল ) 1০ [159 8170. 7011 0 016 91) 7০০1 নামে প্রকাশ করিয়াছিলেন।

বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠাকালে তথায় 'ভারতের প্রন্তত ইতিহাস'- অধ্যয়ন অধ্যাপনার ব্যবস্থার কথা যে কালে কবি পদালোচনা করিতেছিলেন, সেই সময় এই প্রবন্ধ রচিত। 'প্রবন্ধশেষে লিখিয়ছিলেন-_ ণবিশ্বভারতীতে কোনে ছাত্র যদি এই [ মহাধান বৌদ্ধপুরাণসকলের ] অনুশীলনে নিযুক্ত হইতে পারেন তবে আনন্দের বিষয় হইবে এখানে বৌদ্বশাগ্বঅধ্যাপনার জন্য সিংহলের মহাস্থবির মহাশয় আছেন এবং বিধুশেখর শাস্বী মহাশয় সংস্কৃত অধ্যাপনার অদ্যক্ষতা করিতেছেন, অতএব এখানে এই কাজ আরস্ত করার সুযোগ আছে ।”

৬-৮ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পত্রী জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর সম্পাদনায় রবীন্দ্রনাথের কাধাধ্যক্ষতায় প্রকাশিত “বালকদের পাঠ্য সচিত্র কাগজ" বালকে মুদ্রিত এই প্রবন্বগুলি, তৎকাল-প্রচলিত শিখজাতির ইতিহাস "সম্বন্ধীয় গ্রন্থসমূহের ভিত্তিতে রচিত ॥। পরবর্তীকালে এই ইতিহাস সম্বন্ধে আরও তথ্য প্রকাশিত হইয়াছে এই-সকল প্রবন্ধে তথ্যগত অসম্পূর্ণতার সম্ভাবন] কোথাও কিছু থাকিলেও ইহাদের অন্য বিশেষ একটি মূল্য আছে।

[ ৬]

শিখ-ইতিহাসকাহিনী লইয়া! পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ একাধিক কবিতা রচন। করিয়াছেন-_ এই প্রবন্ধগুলি তাহারই একরপ.খসড়া-লিপি বলা চলে। মানসী কাব্যের 'গুরুগোবিন্দ', “নিক্ষল উপহার” এবং কথা কাব্যে শেষ শিক্ষা” 'প্রার্থনাতীত দান” 'বন্দীবীর, প্রভৃতি স্মরণ করা যাইতে পারে। শিখগুরুগণ “যে ধর্মের সংগীত, যে আনন্দ আশার গান গাহিলেন-. কত নৃতন নূতন গুরু জাগিয়! উঠিয়া শিখদিগকে মহত্বের পথে অগ্রসর করিতে লাগিলেন” সেই কাহিনী কিশোরচিত্তে দৃঢ়মুদ্রিত করিয়া দেওয়াই রবীন্জনাথের উদ্দেশ্য ছিল। সেই বিবেচনায় যেমন উক্ত বহুখ্যাত কবিতা'গুলির তেমনি এই রচনাগুলিরও রক্ষণ প্রচার আবশ্যক |

“কাজের লোক কে" ছুটির পড়া (১৯০৯ : ১৩১৬) পুস্তকে প্রকাশিত হইয়াছিল।

রূচনাটি ভ' (অর্থাৎ, ভাগসিংহ, রবীন্দ্রনাথের ছদ্মনাম ) স্বাক্ষরে প্রকাশিত হইয়াছিল। রবীন্দ্রনাথের জীবিতকালেই ইহা তাহার রচনা বলিয়া স্বীরুত হয়; দরষ্টব্য-_ ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় শ্রীনজনীকান্ত দাস কক সংকলিত 'রবীন্দ্-রচনাপদ্থী”, শনিবারের চিঠি, কাতিক ১৩৪৬। রচনাটির রবীন্দ্রনাথের স্বহস্তলিখিত প্রাথমিক খসড়া শান্তিনিকেতন রবীন্ত্র- সদনে রক্ষিত আছে। ্‌

রচনাটি প্রকাশিত হইবার সময় রবীন্দ্রনাথের বয়স কিঞ্িদর্ব ফোলো বহ্সর প্রথম পরিশিষ্টের প্রবন্ধগুলির শ্ায় ইহাও তৎকাল-প্রচলিত ইতিহাস-গরন্থা্দির ভিত্তিতে রচিত

১০ ভারতী পত্রে 'প্রসঙ্গকথা” নামে প্রকাশিত। রচনাটি রবীন্দ্- রচনাবলী দ্বাদশ খণ্ডে শিক্ষা গ্রন্থের পরিশিষ্টে 'প্রসঙ্গকথা ২, নামে মুদ্রিত হইয়াছে।

চি

১১-১২ এই রচনা! ছুইটি নবম খণ্ড রবীন্তর-রচনাবলীর "আধুনিক সাহিত্য” অংশে মুদ্রিত হইয়াছে। ১২-সংখ্যক রচনা ভারতীতে পপ্রসঙ্গকথা! নামে প্রকাশিত।

১৩ ভারতী পত্রে 'প্রসঙ্গকথা' নামে মুক্রিত। এতিহাসিক চিত্র নামে রবীন্দর-রচনাবলীর নবম খণ্ডে “আধুনিক সাহিত্য” অংশে প্রকাশিত।

১৪ এঁতিহাসিক চিত্রের প্রথম সংখ্যায় "সুচনা" নামে প্রকাশিত। অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় কর্তৃক সম্পাদিত রাজশাহী হইতে প্রকাশিত এই ত্রৈমাসিক পত্র “এক বংসরের অধিক চলে নাই ।,

১৫. প্রথম সমালোচনাটি “আধুনিক সাহিত্য পুস্তকে মুসলমান রাজত্বের ইতিহাস? নামে মুদ্রিত 'আছে। ভারতী পত্রেও নামে প্রকাশিত।

১৬ এই প্রবন্ধ রবীন্দ্র-রচনাবলী দ্বাদশ খণ্ডে শিক্ষা গ্রন্থের পরিশিষ্টে মুদ্রিত হুইয়াছে।

বীন্দনাথের আরও অনেক রচনায় ইতিহাস-গ্রসঙ্গ আলোচনা আঁছে--যেমন, “আদিম আর্ধনিবাস” রবীন্দ্-রচনাবলী ১২, সমাজ গ্রন্থের পরিশিষ্ট "গটিকত গল্প” (তর "ছুটির পড়া”, অচলগড়ের রাজা) বালক, বৈশাখ ১২৯২। ১৩১২ বৈশাখ-সংখ্যা ভাগডার পত্রে প্রকাশিত মনম্তত- মূলক ইতিহাস" সংকলন রবীন্দ্রনাথের রচনা হওয়াই সম্ভব ভুষ্টব্য প্রবন্ধের পাদটীকা সাহিত্য গ্রন্থের অন্তর্ভূক্ত 'সাহিত্যের সামগ্রী 'সৌন্দ্যবোধ প্রবন্ধে, ধর্ম পুস্তকে প্রকাশিত উৎসবের দিন? প্রবন্ধে, পথের মঞ্চয়'-এ 'খাত্রার পূর্বপত্রে' অশোক তাহার রাজত্বকালের গরসঙ্গ আছে শিক্ষা'র. অতি 'তৌবিন প্রবন্ধে বিক্রমাদরিতকার সপ সম্বন্ধে প্রসঙ্গ আছে।